খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান
তিব্বত সম্রাট
সম-য়ে বৌদ্ধবিহারে অবস্থিত খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের মূর্তি
পূর্বসূরিখ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সান
উত্তরসূরিমু-নে-ব্ত্সান-পো
পূর্ণ নাম
খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান
তিব্বতীཁྲི་སྲོང་ལྡེ་བཙན
ওয়াইলিkhri srong lde btsan
পিতাখ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সান

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান (তিব্বতি: ཁྲི་སྲོང་ལྡེ་བཙནওয়াইলি: khri srong lde btsan) (রাজত্বকাল ৭৫৫ - ? ৭৯৭/৮০৪) খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সানের পরবর্তী তিব্বত সম্রাট ছিলেন। তিনি তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচারকারী তিনজন ধর্মরাজার মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তিব্বতে তিনি তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের র্ন্যিং মা সম্প্রদায় নামক প্রাচীনতম লাল টুপি ধর্মসম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজ্যাভিষেক[সম্পাদনা]

মন্ত্রী স্তাগ-স্গ্রা-ক্লু-খোং দ্বারা নির্মিত ঝোল-র্দো-রিংস ফ্যি-মা নামক স্তম্ভে উৎকীর্ণ রয়েছে যে ৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দে 'বাল-ল্দোং-ত্সাব (ওয়াইলি: rlang myes zigs) এবং র্লাং-ম্যেস-জিগ্স (ওয়াইলি: rlang myes zigs) নামক দুইজন মহামন্ত্রী তিব্বত সম্রাট খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সানকে হত্যা করেন।[১]: খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সানের মৃত্যুর পর তাঁর বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পুত্র খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান তিব্বতের সম্রাট হয়ে এই দুই মন্ত্রীর বিদ্রোহ দমন করেন। [২]:২৫৪[৩]:৭,৯

পরিবার[সম্পাদনা]

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের পাঁচজন রাণীই তিব্বতী অভিজাত বংশোদ্ভূত ছিলেন।[৪] এঁদের মধ্যে কার্চেনের রাজকুমারী য়ে-শেস-ম্ত্শো-র্গ্যালকে বৌদ্ধগুরু পদ্মসম্ভবকে তার আধ্যাত্মিক সঙ্গী হওয়ার জন্য প্রদান করা হয়। য়ে-শেস-ম্ত্শো-র্গ্যাল পদ্মসম্ভবের শিক্ষা লিখে রাখেন [৫] এবং পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্ম সম্বন্ধে তিনি জ্ঞানলাভ করেন।[৬] খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের অপর এক রাণী বোন ধর্মাবলম্বী ত্সে পোংজা বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী ছিলেন।

বৌদ্ধধর্ম প্রসার[সম্পাদনা]

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠা ও প্রচারকারী তিনজন ধর্মরাজার মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি চীনভারত থেকে বৌদ্ধ পন্ডিতদের তিব্বতে আনিয়ে বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার স্থাপন করান এবং তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থগুলির অনুবাদ করান। নেপালের বৌদ্ধনাথ স্তূপ নির্মাণের সঙ্গেও তাঁর নাম জড়িয়ে আছে।

চীনা বৌদ্ধধর্ম[সম্পাদনা]

৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান ই-চৌ অঞ্চলে কোরীয় চান গুরু কিম হো-শাংয়ের নিকটে একটি দলকে পাঠালে সিচুয়ান শহরে কিম হো-শাংয়ের কাছ থেকে তিনটি চীনা বৌদ্ধ পুঁথি সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। [৭] ৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট চীনে দ্বিতীয় দল পাঠান। স্বা পরিবার গোষ্ঠীর গ্সাল-স্নানের নেতৃত্বে এই দল ই-চৌ অঞ্চলে চেংদুর পাও টাং বৌদ্ধবিহারের প্রতিষ্ঠাতা চান গুরু পাও-টাং ঊ-চুর (চীনা: 無住) নিকট হতে বৌদ্ধ শিক্ষা নিয়ে আসেন। [৭]

ভারতীয় বৌদ্ধধর্ম[সম্পাদনা]

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের আমন্ত্রণে ভারত থেকে শান্তরক্ষিত, পদ্মসম্ভববিমলমিত্র তিব্বত গমন করে সেখানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শান্তরক্ষিতপদ্মসম্ভব সম-য়ে বৌদ্ধবিহার স্থাপন করেন, শান্তরক্ষিতবিমলমিত্র সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগুলি অনুবাদ করেন। [৮]:৬৬

লাসা পরিষদ[সম্পাদনা]

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান সম-য়ে বৌদ্ধবিহারে ৭৯২ থেকে ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর ব্যাপী লাসা পরিষদ নামে এক ধর্মীয় বিতর্কসভার আয়োজন করেন। এই বিতর্ক চৈনিক বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে চান গুরু হেশাং মোহেয়ান এবং ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে শান্তরক্ষিতের শিষ্য কমলশীলের মধ্যে সংগঠিত হয়। বিতর্কের শেষে কমলশীল বিজয়ী ঘোষিত হন।[৮]:৬৬

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের মু-ত্রি-ব্ত্সান-পো, মু-নে-ব্ত্সান-পো, মু-তিগ-ব্ত্সান-পো এবং খ্রি-ল্দে-স্রোং-ব্ত্সান নামক চার পুত্র ছিল। এঁদের মধ্যে বড় মু-ত্রি-ব্ত্সান-পো কম বয়সে মারা যান। খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান ৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনের উত্তরাধিকার তাঁর দ্বিতীয় পুত্র মু-নে-ব্ত্সান-পোকে দিয়ে যান। খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের মৃত্যু এবং মু-নে-ব্ত্সান-পোর রাজত্বকালের সঠিক সময়কাল সম্বন্ধে ঐতিহাসিক তথ্য যথেষ্ট নয়। দ্বা ব্ঝেদ গ্রন্থানুসারে মু-নে-ব্ত্সান-পো তাঁর পিতার অন্তিম সংস্কার বোন ধর্মরীতি অনুসারে না করে বৌদ্ধ ধর্মরীতি অনুসারে করেন। [৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Richardson, Hugh (1981). A Corpus of Early Tibetan Inscriptions Royal Asiatic Society, London. ISBN 0-94759300/4.
  2. Ancient Tibet: Research materials from the Yeshe De Project. 1986. Dharma Publishing, California. আইএসবিএন ০-৮৯৮০০-১৪৬-৩
  3. Richardson, Hugh E. (1985). A Corpus of Early Tibetan Inscriptions. Royal Asiatic Society. ISBN 0 94759300/4.
  4. Stein, R. A. (1972) Tibetan Civilization, p. 63. Stanford University Press. আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৮০৬-১ (cloth); আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৯০১-৭ (pbk)
  5. Tsogyal, Yeshe (২০০৪)। Lotus Born: The Life Story of Padmasambhava। Rangjung Yeshe Publications। আইএসবিএন 978-962-7341-55-0 
  6. Changchub, Gyalwa (২০০২)। Lady of the Lotus-born: The Life and Enlightenment of Yeshe Tsogyal। Shambhala Books। আইএসবিএন 978-1-57062-544-2  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  7. Ray, Gary L.(2005). The Northern Ch'an School and Sudden Versus Gradual Enlightenment Debates in China and Tibet. Source: [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জুলাই ২০০৮ তারিখে (accessed: December 2, 2007)
  8. Stein, R. A. (1972) Tibetan Civilization, Stanford University Press. আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৮০৬-১ (cloth); আইএসবিএন ০-৮০৪৭-০৯০১-৭ (pbk)
  9. dBa' bzhed: The Royal Narrative Concerning the Bringing of the Buddha's Doctrine to Tibet. Translation and Facsimile Edition of the Tibetan Text by Pasang Wangdu and Hildegard Diemberger. Verlag der Österreichischen Akadamie der Wissenschafen, Wien 2000. আইএসবিএন ৩-৭০০১-২৯৫৬-৪.

বহিসংযোগ[সম্পাদনা]

রাজত্বকাল শিরোনাম
পূর্বসূরী
খ্রি-ল্দে-গ্ত্সুগ-ব্ত্সান
খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান
রাজত্বকাল ৭৫৫ - ? ৭৯৭/ ৮০৪
উত্তরসূরী
মু-নে-ব্ত্সান-পো