আবু মনসুর আল-মাতুরিদি
ইমাম আবু মানসুর আল-মাতুরিদি | |
---|---|
উপাধি | ইমাম আল-হুদা শায়খুল ইসলাম |
জন্ম | ৮৫৩ সমরকন্দ, সামানিদ সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ৯৪৪ (বয়স ৯০–৯১) সমরকন্দ, সামানিদ সাম্রাজ্য |
সমাধি স্থান | ইমাম মাতুরিদির সমাধি সৌধ, সমরকন্দ |
সম্প্রদায় | সুন্নি ইসলাম |
মাজহাব | হানাফি |
আন্দোলন | মাতুরিদি |
লক্ষণীয় কাজ | কিতাবুত তাওহিদ তাফসির আল-মাতুরিদি |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন |
আবু মানসুর মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন মাহমুদ আল-সমরকন্দী (৮৫৩–৯৪৪ খ্রি.) (আরবি: أبو منصور محمد بن محمد بن محمود الماتریدي السمرقندي الحنفي) ছিলেন একজন সুন্নি হানাফি ধর্মতত্ত্ববিদ, বিচারপতি এবং তাফসীর ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ। তিনি আবু মনসুর আল মাতুরিদি বা ইমাম মাতুরিদি নামেই বেশি পরিচিত। আল মাতুরিদি ফিকহ শাস্ত্রের প্রবর্তকদের মধ্যে অন্যতম[১] এবং তার লেখা দুটি গ্রন্থ এই শাস্ত্রের মৌলিক গ্রন্থ[২] হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি তার সমকালীন এবং সমধর্মীয় পন্ডিতদের মধ্যে অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।[৩]
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]আল মাতুরিদি আনুমানিক ৮৫৩ সালে সমরকন্দ এর নিকটবর্তী মাতুরিদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৪] তিনি ইসলামী ধর্মতত্ত্ব, তাফসীর এবং ফিকহ বিষয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। সেই সময় সমরকন্দ ছিল সামানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং এই শহরের অধিকাংশ অধিবাসী ছিল তাজিক, যদিও আশেপাশের বেশির ভাগ মানুষ ছিল তুর্কিভাষী।
আবু নাসর আহমাদ বিন আব্বাস বিন হুসাইন আল ইয়াযি, আবু বকর আহমদ বিন ইসহাক বিন সালেহ আল জুযজানি (আল ফারক ওয়াত তাময়ীয গ্রন্থের লেখক), নুসাইর বিন ইয়াহইয়া আল বালখি এবং কাদি আল-কুদাত (প্রধান বিচারপতি) মুহাম্মাদ বিন মুকাতিল আর-রাযি প্রমূখ ইসলামি শিক্ষাবিদগণ ছিলেন তার শিক্ষক । আবু নাসর আল ইয়াযি ছিলেন তার শিক্ষক এবং বন্ধু। আবু বকর আল জুযজানি ছিলেন আবু সুলাইমান মুসা বিন সুলাইমান আল জুযজানি এর ছাত্র, যিনি ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ আশ শায়বানির ছাত্র ছিলেন। এছাড়া মুহাম্মাদ বিন মুকাতিলও ইমাম মুহাম্মাদ আল শায়বানির নিকট শিক্ষাগ্রহণ করেন।
পুরো নাম
[সম্পাদনা]তাঁর পুরো নাম হল: আবু মনসুর মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন মাহমুদ আল-মাতুরিদি আল-হানাফি। আল মাতুরিদি হল নিসবাহ, অর্থাৎ তার জন্মভূমির প্রতি সম্পৃক্ত করে এই উপাধি দেওয়া হয়েছে। মাতুরিদ সমরকান্দের একটি এলাকা। সেই জায়গার প্রতি সম্পৃক্ত করেই তাকে আল মাতুরিদি বলা হয়। পরবর্তীতে তাঁর আকিদা-দর্শন ও অনুসারিদের এই নামেই ডাকার প্রচলন হয়। বলা হয়, মাতুরিদি আকিদা (দর্শন)।
শিক্ষকগণ
[সম্পাদনা]তিনি যে সকল শিক্ষকের অধীনে অধ্যয়ন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেম, মুহাম্মাদ বিন মুকাতিল আল-রাজি (মৃ.:২৪৮ হি/৬৬২ খ্রি.), আবু নসর আল-আয়াজি আল-সামারকান্দি (মৃ.:২৬০ হি।), নুসায়ের বিন ইয়াহিয়া আল-বালখি (মৃ.২৬০ হি.) এবং আবু বকর আল-জুজানি (মৃ.২৫০ হি.)।[৫][৬][৭][৮] তিনি ইমাম আবু হানিফার কিতাব আল-আলিম ওয়াল মুতায়াল্লিম আবু বকর আল-জুজ্জানি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি তা মুহাম্মদ ইবনে মুকাতিল আর-রাজি ও আবু সুলায়মান আল-জুজ্জানি থেকে বর্ণনা করেছেন।[৫][৬][৯]
উক্ত গ্রন্থে ইমাম আবু হানিফা পর্যন্ত তার সনদগুলি নিম্নরূপে দেওয়া হল:[৬][১০]
- তিনি (ইমাম মাতুরিদি) মুহাম্মদ বিন মুকাতিল আল-রাজি (মৃ. ২৪৮ হি.), তিনি মুহাম্মদ আল-শায়বানী থেকে (মৃ.১৮৯ হি.) এবং তিনি ইমাম আবু হানিফা (মৃ.১৫০ হি.) থেকে শুনেছেন।
- তিনি ( ইমাম মাতুরিদি) আবু নাসর আল-আয়াজি (মৃ.২৬০হি.) থেকে,[৬] তিনি ( আল আয়াজি) নুসাইর আল-বালখি (মৃ.২৬৮ হি.) ও আবু বকর আল-জুজ্জানি (মৃ.২৫০ হি) থেকে,[৬] এঁরা উভয়ই আবু সুলায়মান আল-জুজ্জানি (মৃ.২০০ হি.?) থেকে,[৬] তিনি ইমাম মুহাম্মদ আল-শায়বানী এবং আবু ইউসুফ (মৃ. ১৮২ হি.) উভয়ের কাছ থেকে এবং ইমাম শায়বানী ও আবু ইউসুফ উভয়েই আবু হানিফা থেকে শুনেছেন।
- তিনি ( মাতুরিদি) মুহাম্মদ বিন মুকাতিল আল-রাজি ও নুসায়র আল-বালখির কাছ থেকে, এঁরা উভয়ই আবু মুতি আল-হাকাম আল-বালখি (মৃ. ১৯৯ হি.) ও আবু মুকাতিল হাফস আল-সামারকান্দি থেকে এবং এঁরা উভয়েই আবু হানিফা থেকে শুনেছেন।
- তিনি ( মাতুরিদি) আবু নসর আল-আয়াজি থেকে, তিনি আবু আহমাদ বিন ইসহাক আল-জুজানি থেকে, তিনি সরাসরি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মদ আল-শায়বানী থেকে এবং মুহাম্মাদ আল শায়বানী ইমাম আবু হানিফা থেকে শুনেছেন।
প্রসিদ্ধ ছাত্র
[সম্পাদনা]তাঁর ছাত্রদের মধ্যে আলী বিন সাইদ আবু আল-হাসান আল-রুস্তুগফানি, আবু মুহাম্মাদ আবদাল-করিম বিন মুসা বিন ঈসা আল-বাজদাবী এবং আবু আল-কাসিম আল-হাকিম আল-সামারকান্দি প্রসিদ্ধ।[৮]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]আল মাতুরুদী যখন বেড়ে উঠছিলেন, তখন ইসলাম ধর্মের কতিপয় মাযহাবের বিরুদ্ধে উঠতি প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান ছিল, [১১] তন্মধ্যে মুতাজিলা, কারামতি, এবং শিয়া মাযহাবের নাম উল্লেখযোগ্য। সুন্নি চিন্তাবিদগণ ইমাম আবু হানিফাকে অনুসরণ করতেন। অন্য দুইজন খ্যাতমান চিন্তাবিদের মতো আল মাতুরুদীও[২] বিশেষত ইসলামধর্মের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে লেখালেখি করেন, এবং ইমাম আবু হানিফার মতবাদ সম্প্রসারিত করেন। অন্য দুজন ছিলেন ইরাকের আবুল হাসান আল-আশআরি এবং মিসরের আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আত তাহাভী। [২] দ্বি-ইশ্বরবাদ (সানাওয়িয়া) এবং অন্যান্য সনাতন পারসিক ধর্ম সম্পর্কে আল মাতুরিদির ছিল অগাধ জ্ঞান। তাই তার "কিতাব আত তাওহিদ" ইরানিয়ান মানি ধর্ম , একদল ব্রাহ্মণ এবং কিছু সংখ্যক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব যেমন ইবনে আল রাওয়ান্দি, আবু ইসা আল ওয়াররাক ও মোহাম্মদ বিন শাবিব সম্পর্কে আধুনিক গবেষকদের জন্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী প্রাথমিক উৎসে পরিণত হয়েছে। [১২][১৩]
লিখনী
[সম্পাদনা]- কিতাবুত তাওহিদ (একত্ববাদের গ্রন্থ)
- কিতাবু রাদ্দি আওয়াইল আল আদিল্লা, মুতাজিলী মতবাদ বিষয়ক একটি বইয়ের খণ্ডন
- রদ্দুত তাহযীব ফিল জাদাল, মুতাজিলী মতবাদের আরেকটি বইয়ের খণ্ডন
- কিতাবু বায়ানে আহওয়াম আল মুতাজিলা (মুতাজিলাদের ভ্রান্ত মতবাদের ব্যাখ্যা উদগাঠন)
- কিতাব তাওয়ীলাতুল কোরআন ('পবিত্র কোরআন শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ')
- কিতাবুল মাকালাত
- উসুল আল ফিকহ বিষয়ক গ্রন্থ মাআখিয আল শরয়ী
- আল জাদাল ফি উসুল আল ফিকহ
- রদ্দু উসুলিল খামসা, আবু মুহাম্মাদ আল বাহিলির মুতাযিলা পাঁচ মূলনীতির খণ্ডন
- রদ্দুল ইমামা, ইমামি শিয়াদের মতবাদের খণ্ডন;
- আর রদ্দ আলা উসুলিল কারামাতিয়া
- রাদ্দ ওয়াইদ আল ফুসসাক।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]কাশফুয যুনুন গ্রন্থকারের মতে, আল মাতুরিদি ৩৩২ হিজরীদতে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, তিনি ৩৩৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। আব্দুল্লাহ আল কুরাশি তার “ফাওয়ায়িদুল বাহিয়াহ” গ্রন্থেও আল মাতুরিদির মৃত্যু ৩৩৩ হিজরীতে বলে উল্লেখ করেছেন। তারঁ কবর সমরকন্দে অবস্থিত।[১৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Katip Çelebi. (1943).
- ↑ ক খ গ Ali, A. (1963).
- ↑ Mwakimako, H. (2004).
- ↑ Pessagno, J. M. (1984).
- ↑ ক খ Akimkhanov, Askar Bolatbekovich, et al.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Çandur, Yasemin.
- ↑ Wan Ali, Wan Zailan Kamaruddin.
- ↑ ক খ Gibril Fouad Haddad (২০১৫)। The Biographies of the Elite Lives of the Scholars, Imams and Hadith Masters। Zulfiqar Ayub। পৃষ্ঠা 141।
- ↑ Rudolph, Ulrich.
- ↑ Aisyah, Dollah.
- ↑ Williams, J. A. (1994).
- ↑ See G. Vajda, "Le Témoignage d'al-Maturidi sur la doctrine des manichéens, des daysanites et des rnarcionites", Arabica, 13 (1966), pp. 1-38; Guy Mannot, "Matoridi et le manichéisme", Melanges de l'Institut Dominicain d'Etudes Orientales de Caire, 13 (1977), pp. 39-66; Sarah Stroumsa, "The Barahima in Early Kalam", Jarusalem Studies In Arable and Islam, 6 (1985), pp. 229-241; Josef van Ess, "al-Farabi and Ibn al-Rewandi", Hamdard Islamicus, 3/4 (Winter 1980), pp. 3-15; J. Meric Pessagno, "The Reconstruction of the Thought of Muhammad Ibn Shabib", Journal of American Oriental Society, 104/3 (1984), pp. 445-453.
- ↑ The Authenticity of the Manuscript of Maturidi's Kitäb al-Tawhid, by M. Sait Özervarli, 1997.
- ↑ আরবি উইকিপিডিয়া
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- (English) Biography of Imâm Al Mâturîdî by Shaykh GF Haddâd ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে
- (French) Biography of Imâm Al Mâturîdî by at-tawhid.net