ঈসা ইবনে আবান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঈসা ইবনে আবান
মৃত্যু৮৩৫/২২০ হিজরি সন
যুগআব্বাসিয়াত খিলাফত
ধারাহানাফি
প্রধান আগ্রহ
উসুল আল-ফিকহ
ভাবশিষ্য

আবু মুসা ঈসা ইবনে আবান ছিলেন একজন প্রাথমিক দিককার সুন্নী ইসলামী আলেম,যিনি হানাফী মাযহাব অনুসরণ করতেন। যদিও বর্তমান পর্যন্ত তার কোনো কাজ টিকেনি, তিনি শুরুর দিককার হানাফি আলেম যেমন আল-যাস্সাস কর্তৃক বহুল উদ্ধৃত হয়েছেন হানাফি উসুল আল-ফিকহ বিষয়ে তার চিন্তা ভাবনার জন্য। আবু হানিফার ছাত্র, মুহাম্মদ আল-শায়বানি -এর অধীনে অধ্যয়নের কারণে ধারণা করা যায় যে ইবনে আবান এর আইনের উৎসের দর্শনসমূহ আবু হানিফা এর প্রতিনিধিত্ত করে। [১] শায়বানি নিজেও ছিলেন একজন বিখ্যাত উসুলি (বিচারক) এবং তাকে মুসলিম আন্তর্জাতিক আইনের জনক বলা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, শায়বানি আবু হানিফার নিকট ২ বছর অধ্যয়ন করার পর ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে আবু হানিফা মৃত্যুবরণ করেন এবং শায়বানি তখন আবু হানিফার শীর্ষস্থানীয় শিষ্য আবু ইউসুফ এর নিকট চর্চা শুরু করেন। তাঁর অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে সুফিয়ান আল সাওলিআল আওযাই। এছাড়াও তিনি পরবর্তীতে মদিনা গমন করেন এবং মালিক ইবনে আনাস (ফিকহের মালিকি মতের প্রতিষ্ঠাতা) এর নিকট দুই থেকে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। তার এই সকল শিক্ষার ফলস্বরূপ আল শায়বানি খুব অল্প বয়সেই বিচারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

জীবনচরিত[সম্পাদনা]

ইবনে আবান প্রথমদিকে হাদীস অধ্যয়ন করতেন এবং আহল আল-রা'ঈ,যা হানাফি দের বলা হতো, এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তার চিন্তাধারা বদলাতে শুরু করে যখন তিনি আবু হানিফা এর অন্যতম প্রাথমিক ছাত্র, মুহাম্মদ আল-শায়বানি এর কাছে অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি আব্বাসিয়াত যুবরাজ আল-মা'মুন এর দরবারের সভাষদ হন এবং দরবারের অন্য একজন পণ্ডিত এর আইনশাস্ত্র দর্শন এর সমালোচনামূলক গ্রন্থ রচনা করে যুবরাজের প্রশংসা লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি কাজী হিসেবে বাগদাদ এবং বসরা নগরীতে দায়িত্ব পালন করেন। [১]

দর্শনসমূহ[সম্পাদনা]

উসুল আল-ফিকহ বিষয়ে ইবনে আবান এর দর্শন সম্পর্কে ততটুকু জানা যায় যতটুকু আবু বকর আল-জাস্সাস তার বই আল-উসুল ফি আল-ফুসুল এ উদ্ধৃত করেন,এর উপর ভিত্তি করে। ইবনে আবান খবর ( হাদীস প্রতিবেদন) কে প্রতিবেদন এর পরিচিতি ও ব্যাপ্তি অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার তত্ত্বমতে, একমাত্র সেসব হাদীস প্রতিবেদনসমূহকে সম্পূর্ণ খাঁটি গণ্য করা যাবে,যেসব বৃহৎ সংখ্যক ব্যক্তি(মুতাওয়াতির) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে ,যা দ্বারা নির্দেশিত হয় যে এদের মনগড়া হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।ইবনে আবান এর মতে, যেসব হাদীস প্রতিবেদন ততটা বহুল প্রচলিত নয় সেগুলোর ও ভূমিকা রয়েছে আইনশাস্ত্রে তবে তা মুতাওয়াতির প্রতিবেদন এর মতো প্রশ্নাতাতীত হবে না।

এছাড়াও ইবনে আবান হাদীস প্রতিবেদনসমূহকে কুরআন এর প্রাসঙ্গিক অংশের সাথে তুলনা করে বিচার করা কে সমর্থন করেন।এখানে তিনি উল্লেখযোগ্যভাবে দ্বিমত পোষণ করেন তার সমসাময়িক আল-শাফী'ঈ থেকে যার মতে যদি হাদীসের বর্ণনা শিকল শক্তিশালী হয় তবে হাদীস প্রতিবেদন এর গ্ৰহণযোগ্যতা নিয়ে আর সন্দেহের প্রয়োজন নেই। [২]

রচনাসমূহ[সম্পাদনা]

আল-যাস্সাস এর মতে,ঈসা ইবনে আবান চারটি গ্ৰন্থ রচনা করেছেন যার একটিরও বর্তমানে অস্তিত্ব নেই:

  • আল-হুজাজ আল-সাগীর
  • আল-হুজাজ আল-কবীর
  • কিতাব আল-রাদ 'আলা বিশর আল-মারিসি (ওয়া'ল শাফী'ঈ) ফি'ল আকবার
  • কিতাব আল-মুযমাল ওয়া'ল মুফাস্সার

প্রয়াণ[সম্পাদনা]

ঈসা ইবনে আবান ৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ(২২০ হিজরি সন) এ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যু স্থান সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bedir, Murtaza (২০০২)। "An Early Response to Shāfiʿī: ʿĪsā b. Abān on the Prophetic Report (Khabar)"। Islamic Law and Society9 (3): 285–311। 
  2. El Shamsy, Ahmed (২০১৩)। The Canonization of Islamic Law। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 202আইএসবিএন 9781107546073