মুহাম্মাদ ফাতিহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় মুহাম্মাদ ফাতিহ
কাইসার-ই-রুম
বিজেতা (ফাতিহ্)
বেলিনির আঁকা সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদের পোর্ট্রেট, তেলচিত্র, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে সংরক্ষিত।
৭ম উসমানীয় সুলতান (বাদশাহ)
১ম দফাআগস্ট ১৪৪৪ - সেপ্টেম্বর ১৪৪৬
পূর্বসূরিদ্বিতীয় মুরাদ
উত্তরসূরিদ্বিতীয় মুরাদ
২য় দফা৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ - ৩ মে ১৪৮১
পূর্বসূরিদ্বিতীয় মুরাদ
উত্তরসূরিদ্বিতীয় বায়েজীদ
জন্ম৩০ মার্চ ১৪৩২
এদির্ন, রুমেলিয়া এয়ালেত, উসমানীয় সালতানাত
মৃত্যু৩ মে ১৪৮১(1481-05-03) (বয়স ৪৯)
হুনকারচায়িরি (তেকফুরচায়িরি), গেবজের নিকটে, উসমানীয় সালতানাত
সমাধি
স্ত্রীএমিনে গুলবাহার হাতুন
গুলশাহ খাতুন
সিত্তিশাহ হাতুন
চিচেক হাতুন
খাদিজা হাতুন
রাজবংশউসমানীয় রাজবংশ
পিতাদ্বিতীয় মুরাদ
মাতাহুমা হাতুন
ধর্মসুন্নি ইসলাম
তুগরামুহাম্মাদ ফাতিহ স্বাক্ষর

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ (উসমানীয় তুর্কি: محمد ثانى, Meḥmed-i s̠ānī; তুর্কি: II. Mehmed বা Fatih Sultan Mehmet Han) (৩০ মার্চ ১৪৩২ – ৩ মে ১৪৮১) ছিলেন ৭ম উসমানীয় সুলতান। তিনি মুহাম্মাদ ফাতিহ অর্থাৎ বিজয়ী মুহাম্মাদ নামে পরিচিত। ১৪৪৪ সালের আগস্ট থেকে ১৪৪৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তিনি সুলতান ছিলেন। এরপর ১৪৫১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় মসনদে অসেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি ১৪৮১ সালের মে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি ও তার শায়খ আকশামসউদ্দিন কনস্টান্টিনোপল এর কাছে প্রথম কনস্টান্টিনোপল যুদ্ধের সময় সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারির কবর খুঁজে পান ও পরবর্তীতে সেখানে আসে মসজিদ নির্মাণ করেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) ভবিষ্যৎ বাণী অনুযায়ী কনস্টান্টিনোপল বিজয় এই উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ ২১ বছর বয়সে কনস্টান্টিনোপল জয় বিজয় করেন । তার অসামান্য দক্ষতা তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বড় কামান ও স্থল ভাগের উপর দিয়ে জাহাজ নিয়ে যাওয়া ছিল কনস্টান্টিনোপল যুদ্ধের অন্যতম কৃতিত্ব।এর ফলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়। মুহাম্মদ আনাতোলিয়া, আলবেনিয়া, বসনিয়া, ক্রিমিয়া, ইতালি পর্যন্ত ইউরোপ অভিযান অব্যাহত রাখেন। আধুনিক তুরস্ক ও মুসলিম বিশ্বে সুলতান মুহাম্মদ একজন বীর হিসেবে সম্মানিত হন। তার স্মরণে ইস্তানবুলের ফাতিহ জেলা, ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ সেতু ও ফাতিহ মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে।

প্রারম্ভিক শাসনকাল[সম্পাদনা]

এদির্নে দ্বিতীয় মুহাম্মদের অভিষেক, ১৪৫১

শাহজাদা মুহাম্মদ ১৪৩২ সালের ৩০ মার্চ উসমানীয় রাজধানী এদির্নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ ও মা হুমা খাতুন

অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ১১ বছর বয়সে তাকে প্রথা অনুযায়ী আমাসিয়া শাসনের জন্য প্রেরণ করা হয়। তার পড়াশোনার জন্য সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ কয়েকজন শিক্ষক নিযুক্ত করেন।[১] ইসলামি শিক্ষা তার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। কনস্টান্টিনোপল জয় করার ক্ষেত্রে তরুণ বয়সে আকশামসউদ্দিন তার উপর প্রভাব ফেলেছিলেন।[২]

১৪৪৪ সালের আগস্টে আনাতোলিয়ার কারামানিদের সাথে শান্তি স্থাপনের পর সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ মসনদ ত্যাগ করেন এবং দ্বিতীয় মুহাম্মদ ১২ বছর বয়সে সুলতান হন। পোপের প্রতিনিধি কার্ডিনাল জুলিয়ান সিসারিনির মদদে হাঙ্গেরির রাজা মুসলিমদের সাথে চুক্তি লঙ্ঘন করেন। জুলিয়ান তাকে বোঝান যে মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করলে তা বিশ্বাসঘাতকতা হবে না। হাঙ্গেরির জানোস হুনয়াডির নেতৃত্বে পরিচালিত ক্রুসেডকে মুহাম্মদ প্রতিহত করতে সক্ষম হন।[৩] এসময় মুহাম্মদ তার পিতা মুরাদকে পুনরায় মসনদে বসার অনুরোধ করেন কিন্তু মুরাদ তাতে অস্বীকৃতি জানান। মুহাম্মদ এর ফলে ক্রুদ্ধ হন এবং পিতার কাছে পাঠানো চিঠিতে লেখেন, "যদি আপনি সুলতান হন, তবে এগিয়ে এসে সেনাদের নেতৃত্ব দিন। যদি আমি সুলতান হই তবে আমি নির্দেশ দিচ্ছি আপনি আমার সেনাদের নেতৃত্ব দিন।" এরপর মুরাদ দায়িত্বগ্রহণ করেন এবং ১৪৪৪ সালে ভার্নার যুদ্ধে জয়লাভ করেন।

মুরাদের পুনরায় ক্ষমতাগ্রহণের ক্ষেত্রে উজিরে আজম হালিল পাশার ভূমিকা ছিল। মুহাম্মদের শিক্ষক আকশামসউদ্দিনের সাথে হালিল পাশার বিরূপ সম্পর্ক থাকায় তিনি মুহাম্মদের শাসনের পক্ষে ছিলেন না।

কনস্টান্টিনোপল বিজয়[সম্পাদনা]

সুলতান মুহাম্মদের নির্দেশে ১৪৫১ থেকে ১৪৫২ সালের মধ্যে নির্মিত দুর্গ রুমেলিহিসারি[৪]

১৪৫১ সালে পুনরায় মসনদে বসার পর সুলতান মুহাম্মদ নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে শুরু করেন এবং কনস্টান্টিনোপল আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। বসফরাসের পূর্বে এশীয় অংশে তার প্রপিতামহ প্রথম বায়েজীদ আনাদোলুহিসারি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। মুহাম্মদ ইউরোপীয় অংশে রুমেলিহিসারি দুর্গ নির্মাণ করেন ফলে প্রনালীর উপর উসমানীয়দের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। এরপর প্রণালী অতিক্রমকারী জাহাজের উপর করারোপ করা হয়। ভেনিসিয়ান একটি জাহাজ নির্দেশ অমান্য করায় সেটিকে কামানোর গোলার আঘাতে ডুবিয়ে দেয়া হয় এবং নাবিকদের শিরশ্ছেদ করা হয়।[৫]

কনস্টান্টিনোপলে প্রথম অবরোধের সময় শহরের নিকটে দাফন করা সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারির কবর আকশামসউদ্দিন আধ্যাত্মিক শক্তিবলে খুজে পেয়েছিলেন।[৬] বিজয়ের পর মুহাম্মদ এখানে আইয়ুব সুলতান মসজিদ নির্মাণ করেন।[৬]

১৪৫৩ সালে মুহাম্মদ কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন। এসময় তার বাহিনীতে সেনা সংখ্যা ছিল ৮০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ এবং জাহাজ ছিল ৩২০টি। এপ্রিলের শুরুর দিকে শহর অবরোধ করা হয়। অবরোধের সময় উসমানীয়রা উরবানের নির্মিত প্রকান্ড কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে। গোল্ডেন হর্নের প্রবেশপথে বিশালাকার শেকল স্থাপনের ফলে সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে তুর্কিরা বাধার সম্মুখীন হয়। মুহাম্মদ তার জাহাজগুলিকে মাটির উপর দিয়ে টেনে গোল্ডেন হর্নে নিয়ে আসেন। ২৯ মে শহরের পতন হয়, এবং রাসূলের কনস্টান্টিনোপল ভবিষ্যদ্বাণী রূপ লাভ করে।[৫] বিজয়ের পর মুহাম্মদ এদির্ন থেকে রাজধানী সরিয়ে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে আসেন।

কনস্টান্টিনোপলে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের প্রবেশ, ফাউস্টো জোনারোর (১৮৫৪-১৯২৯) আঁকা ছবি।

৩৩০ সাল থেকে কনস্টান্টিনোপল রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং শহরের অধিকারী সাম্রাজ্যের শাসক হতেন। একারণে কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর মুহাম্মদ রোমান সম্রাটদের মত কাইসার-ই রুম বা সিজার উপাধি ধারণ করেন।[৭] সমসাময়িক পণ্ডিত জর্জ অব ট্রেবিজন্ড এক্ষেত্রে সুলতানকে সমর্থন করেছিলেন।[৮][৯] ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ এই ঘোষণা মেনে নিলেও ক্যাথলিক চার্চ এবং পশ্চিম ইউরোপ তা মেনে নেয়নি। গেন্নাডিয়াস স্কলারিয়াসকে সুলতান কনস্টান্টিনোপলের পেট্রিয়ার্ক মনোনীত করেন।

বাইজেন্টাইন সম্রাট একাদশ কনস্টান্টাইন কোনো উত্তরসূরি না রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত বড় ভাইয়ের পুত্ররা তার উত্তরাধিকারী হওয়ার কথা ছিল। সুলতান মুহাম্মদ তাদেরকে প্রাসাদের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র হাস মুরাদকে মুহাম্মদ পছন্দ করতেন। তাকে বলকান বেলেরবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কনিষ্ঠ পুত্র মেসিহ পাশা একজন নৌ সেনাপতি হন এবং গেলিপলির সানজাক বে নিযুক্ত হন। তিনি পরবর্তীতে সাম্রাজ্যের উজিরে আজম নিযুক্ত হয়েছিলেন।[১০]

কিছু ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ১০ বছর পর মুহাম্মদ ট্রয় সফর করে বলেন যে গ্রীক তথা বাইজেন্টাইনদের জয় করার মাধ্যমে তিনি ট্রোজানদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন।[১১][১২][১৩]

অন্যান্য অভিযানসমূহ[সম্পাদনা]

সার্বিয়া বিজয় (১৪৫৪-১৪৫৯)[সম্পাদনা]

মোরেয়া বিজয় (১৪৫৮-১৪৬০)[সম্পাদনা]

ত্রেবিজন্ড বিজয় (১৪৬০-৬১)[সম্পাদনা]

ওয়ালাচিয়া (আফলাক) অভিযান (১৪৫৯-১৪৬২)[সম্পাদনা]

বসনিয়া বিজয় (১৪৬৪)[সম্পাদনা]

উসমানীয়-ভেনিস যুদ্ধ (১৪৬৩-১৪৭৯)[সম্পাদনা]

আনাতোলীয় বিজয়সমূহ (১৪৬৪-১৪৭৩)[সম্পাদনা]

মলদাভিয়ার সাথে যুদ্ধ (১৪৭৫-১৪৭৬)[সম্পাদনা]

আলবেনিয়া বিজয় (১৪৬৬-১৪৭৮)[সম্পাদনা]

ক্রিমিয়া নীতি[সম্পাদনা]

কনস্টান্টিনোপল পুনর্গঠন (১৪৫৩–১৪৭৮)[সম্পাদনা]

ফাতিহ মসজিদ, উসমানীয়দের জয়ের পর কনস্টান্টিনোপলে প্রথম এই মসজিদ নির্মিত হয়।

কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর তিনি হাজিয়া সোফিয়া শাহাদাহ ঘোষণার নির্দেশ দেন।[১৪] হাজিয়া সোফিয়াকে এসময় মসজিদে রূপান্তরিত করা হয় ফলে কনস্টান্টিনোপলে ইসলামি শাসনের ভিত্তি দৃঢ় হয়।

মুহাম্মদ শহর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন।[১৫] পালিয়ে যাওয়া গ্রীক ও জেনোয়েসদের ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে তিনি তাদের বাড়িঘর ফিরিয়ে দেন এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। তিনি নির্দেশ জারি করেন যে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদেরকে শহরে বসতি স্থাপন করতে হবে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঁচ হাজার বসতবাড়ি শহরে স্থানান্তর করতে হবে।[১৫] সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে এসময় লোকেরা এসে এখানে বসতি স্থাপন করে।[১৬]

গ্রীক অর্থোডক্স পেট্রিয়ার্ককে পুনর্বহাল করার পাশাপাশি মুহাম্মদ ইহুদি রেবাই এবং আর্মেনীয় পেট্রিয়ার্ককে নিয়োগ দেন। তার উজিরদেরকে তিনি বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে উজিরে আজম রুম মুহাম্মদ পাশা নির্মিত রুম মুহাম্মদ পাশা মসজিদ। এসকল পদক্ষেপের ফলে শহরের দ্রুত উন্নয়ন হয়। ১৪৭৮ সালের জরিপ অনুযায়ী তৎকালীন সময়ে কনস্টান্টিনোপল এবং পার্শ্ববর্তী গালাতায় ১৬,৩২৪ বাড়িঘর এবং ৩,৯২৭টি দোকান ছিল এবং আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ৮০,০০০।[১৭] এর মধ্যে ৬০% ছিল মুসলিম, ২০% খ্রিষ্টান এবং ১০% ইহুদি।[১৮] মুহাম্মদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নির্মাণ প্রকল্পের ফলে শহর রাজকীয় রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠে।[৬] সমকালীন উসমানীয় ইতিহাসবিদ নেশরির মতে "সুলতান মুহাম্মদ ইস্তানবুলের সবকিছু নির্মাণ করেছেন"।[৬] পঞ্চাশ বছর পরে কনস্টান্টিনোপল ইউরোপের সবচেয়ে বৃহৎ শহরে পরিণত হয়।

পরিবার[সম্পাদনা]

সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের পাঁচজন স্ত্রী ছিলেন:

সন্তান[সম্পাদনা]

ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

সুলতান মুহাম্মদ তুর্কি, আরবি, ফার্সি, গ্রীক ও ইতালীয় ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।[২২][২৩][২৪][২৫][২৬]

বিভিন্ন সময়ে তিনি তার উপস্থিতিতে আলেমদেরকে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনার জন্য আহ্বান করতেন। তার শাসনামলে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে উসমানীয়রা প্রভূত উন্নতি লাভ করে। সুলতান নিজে আভনি ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। তার কবিতা নিয়ে একটি দিওয়ান রয়েছে।

মুহাম্মদ আল ফাতিহ বিজ্ঞান ও ইতিহাসচর্চায় বেশ মনোযোগী ছিলেন। বেশিরভাগ সময় তিনি ইতিহাসের বই পড়েই কাটাতেন। এসময় মুহাম্মদ আল ফাতিহ আরবী, ফারসি, তুর্কি, সার্বীয়, গ্রীক, ল্যাটীনসহ ৭ টি ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠেন। এসব ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় মুহাম্মদের মাজার, ফাতিহ, ইস্তানবুল
বসফরাসের উপরে ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ সেতু

১৪৮১ সালে নতুন অভিযানকালে ইস্তাবুলের মালতেপেতে পৌছানোর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু দিন পর ৩ মে ৪৯ বছর বয়সে সুলতান মুহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ইস্তানবুলের ফাতিহ মসজিদ সংলগ্ন স্থানে দাফন করা হয়। ধারণা করা হয় যে তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। একটি সূত্র অনুযায়ী ইহুদি থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত ইয়াকুব পাশা এর সাথে জড়িত। আরেকটি সূত্রমতে তার পার্সিয়ান চিকিৎসক তাকে বিষপ্রয়োগ করেছিল।[২৭]

সুলতান মুহাম্মদের মৃত্যুতে ইউরোপে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এ উপলক্ষে গির্জার ঘণ্টা বাজানো হয় এবং উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ভেনিসে ঘোষণা করা হয়: "লা গ্রান্দে একুইলা এ মরতা!" ('মহান ঈগল মৃত!')[২৮][২৯]

অবদান ও স্মৃতি[সম্পাদনা]

কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর মুহাম্মদ শহরে অনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ফাতিহ মসজিদ অন্যতম। সুলতান সুলাইমানের পূর্বে তিনি প্রথম ফৌজদারি ও শাসনতান্ত্রিক আইন লিপিবদ্ধ করণ করেন বলে স্বীকৃত। তার শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য কনস্টান্টিনোপল, এশিয়া মাইনর, সার্বিয়া, আলবেনিয়া,ইতালি,ক্রিমিয়া বিস্তৃত হয়।

বসফরাসের উপর তার নামে ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ সেতু নির্মিত হয়েছে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তুর্কি ১০০ লিরার নোটে তার নাম ও ছবি ছাপানো ছিল।[৩০][৩১]

প্রদর্শন[সম্পাদনা]

ইস্তানবুলুন ফেতহি, ফেতিহ ১৪৫৩ড্রাকুলা আনটোল্ড চলচ্চিত্রে সুলতান মুহাম্মদের চরিত্র রয়েছে। চলচ্চিত্রে সামি আয়ানুগলু সুলতান মুহাম্মদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

সাধারণ তথ্য
  1. ^ الشقائق النعمانية في علماء الدولة العثمانية، صفحة 52 نقلاً عن تاريخ الدولة العثمانية، صفحة 43
  2. الفتوح الإسلامية عبر العصور، د. عبد العزيز العمري، صفحة 358-359
  3. تاريخ الدولة العليّة العثمانية، تأليف: الأستاذ محمد فريد بك المحامي، تحقيق: الدكتور إحسان حقي، دار النفائس، الطبعة العاشرة: 1427 هـ - 2006 م، صفحة: 157 আইএসবিএন ৯৯৫৩-১৮-০৮৪-৯
  4. "Bosphorus (i.e. Bosporus), View from Kuleli, Constantinople, Turkey"World Digital Library। ১৮৯০–১৯০০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-১২ 
  5. Silburn, P. A. B. (1912).
  6. The Sultan of Vezirs: The Life and Times of the Ottoman Grand Vezir Mahmud, Théoharis Stavrides, page 23, 2001
  7. http://www.milliyet.com.tr/2004/12/19/pazar/yazortay.html
  8. http://www.washingtonpost.com/wp-srv/style/longterm/books/chap1/constantinople.htm
  9. https://books.google.com.tr/books?id=ftOp1cR7VK8C&pg=PT13&lpg=PT13&dq=%22The+seat+of+the+Roman+Empire+is+Constantinople.%22&source=bl&ots=PquK438sn9&sig=D0Ya8dmoDcswPwMdAWR6dmPXHOw&hl=tr&sa=X&ved=0CCEQ6AEwAWoVChMIvcjf2J2SyQIVBBQsCh21ygdB#v=onepage&q=%22The%20seat%20of%20the%20Roman%20Empire%20is%20Constantinople%2C%22&f=false
  10. Lowry, Heath W. (2003). The Nature of the Early Ottoman State. Albany, NY: SUNY Press. p. 115-116.
  11. Michael Wood (১৯৮৫)। In Search of the Trojan War। University of California Press। পৃষ্ঠা 38–। আইএসবিএন 978-0-520-21599-3। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৩ 
  12. Kader Konuk (২১ সেপ্টেম্বর ২০১০)। East West Mimesis: Auerbach in Turkey। Stanford University Press। পৃষ্ঠা 78–। আইএসবিএন 978-0-8047-7575-5। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৩ 
  13. John Freely (১ অক্টোবর ২০০৯)। The Grand Turk: Sultan Mehmet II - Conqueror of Constantinople and Master of an Empire। Overlook। পৃষ্ঠা 95–। আইএসবিএন 978-1-59020-449-8। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৩ 
  14. Lewis, Bernard. Istanbul and the Civilization if the Ottoman Empire. 1, University of Oklahoma Press, 1963. p. 6
  15. Inalcik, Halil. "The Policy of Mehmed II toward the Greek Population of Istanbul and the Byzantine Buildings of the City". Dumbarton Oaks Papers 23, (1969): 229–249. p. 236
  16. Müller-Wiener 1977, পৃ. 28
  17. The Ottomans and the Balkans: Fikret Adanır,Suraiya Faroqhi, page 358, 2002
  18. A History of Islamic Societies, Ira M. Lapidus, page 272, 2002
  19. Edmonds, Anna। Turkey's Religious Sites। Damko। পৃষ্ঠা 1997। আইএসবিএন 975-8227-00-9 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  20. Babinger, Franz (১৯৯২)। Mehmed the Conqueror and His TimePrinceton University Press। পৃষ্ঠা 51। আইএসবিএন 0-691-01078-1 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  21. Wedding portrait, Nauplion.net
  22. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Norwich 1995 413–416 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  23. Runciman, Steven (১৯৬৫)। The Fall of Constantinople: 1453। London: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 56আইএসবিএন 0-521-39832-0 
  24. http://www.sabah.com.tr/yazarlar/barlas/2006/05/30/fatih_19_yasinda_alti_dili_cok_iyi_biliyordu
  25. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬ 
  26. http://www.milliyet.com.tr/fatih-hakan-ve-roma-kayzeri/ilber-ortayli/pazar/yazardetay/03.06.2012/1548527/default.htm
  27. 1453: The Holy War for Constantinople and the Clash of Islam and the West, Roger Crowley, 2005
  28. The Grand Turk: John Freely, page 180, 2009
  29. Minorities and the destruction of the Ottoman Empire, Salâhi Ramadan Sonyel, Page 14, 1993
  30. تاريخ الدولة العليّة العثمانية، تأليف: الأستاذ محمد فريد بك المحامي، تحقيق: الدكتور إحسان حقي، دار النفائس، الطبعة العاشرة: 1427 هـ - 2006 م، صفحة: 177-178 আইএসবিএন ৯৯৫৩-১৮-০৮৪-৯
  31. Central Bank of the Republic of Turkey ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ আগস্ট ২০১৪ তারিখে. Banknote Museum: 7. Emission Group - One Thousand Turkish Lira - I. Series ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে & II. Series ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে. – Retrieved on 20 April 2009.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

উইকিমিডিয়া কমন্সে মুহাম্মাদ ফাতিহ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।

মুহাম্মাদ ফাতিহ
জন্ম: ৩০ মার্চ ১৪৩২ মৃত্যু: ৩ মে ১৪৮১
শাসনতান্ত্রিক খেতাব
পূর্বসূরী
দ্বিতীয় মুরাদ
উসমানীয় সুলতান
আগস্ট ১৪৪৪ ‒ সেপ্টেম্বর ১৪৪৬
উত্তরসূরী
দ্বিতীয় মুরাদ
উসমানীয় সুলতান (বাদশাহ)
৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ – ৩ মে ১৪৮১
উত্তরসূরী
দ্বিতীয় বায়েজীদ
Titles in pretence
পূর্বসূরী
একাদশ কনস্টান্টাইন
রোমান সাম্রাজ্যের সিজার উত্তরসূরী
দ্বিতীয় বায়েজীদ
নতুন পদবী
স্বঘোষিত
ইসলামের খলিফা