মুহাম্মাদ ফাতিহের যুদ্ধসমূহের তালিকা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুহাম্মাদ ফাতিহের অভিযানসমূহ
سفر همايون / Sefer-i humāyūn
মূল যুদ্ধ: ইউরোপে উসমানীয়দের যুদ্ধ
এবং এশিয়ায় উসমানীয়দের যুদ্ধ

মুহাম্মাদ ফাতিহ গোলাপের ঘ্রাণ নিচ্ছেন। সারায়ি অ্যালবাম থেকে; হাজিন ২১৫৩, ফোলিয়ো ১০এ।
তারিখপ্রথম ১৪৪৪–১৪৪৬ দ্বিতীয়বার ১৪৫১–১৪৮১
অবস্থান
ইউরোপ এবং শারকুল আদনা
ফলাফল উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিকাশ

দ্বিতীয় মুহাম্মাদ বা সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ (৩০ মার্চ ১৪৩২ - ৩ মে ১৪৮১; উসমানীয় তুর্কি: محمد ثانى, Meḥmed-i s̠ānī) দ্বারা পরিচালিত অভিযানের একটি তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হয়েছে। দ্বিতীয় মুহাম্মাদ الفاتح (বিজেতা) বা ফাতিহ নামেই অধিক পরিচিত। মুহাম্মাদ ফাতিহ দুইবার উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান ছিলেন। প্রথমবার একেবারে কম বয়সে ১৪৪৪ থেকে সেপ্টেম্বর ১৪৪৬ পর্যন্ত অল্প সময়ের জন্য। পরেরবার ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ থেকে ১৪৮১ পর্যন্ত। ২১ বছর বয়সে, তিনি কনস্টান্টিনোপল জয় করেন এবং উসমানীয় রাজ্যকে একটি সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান। মুহাম্মাদ এশিয়ায়তার বিজয়যাত্রা চালিয়ে যান। এছাড়া আনাতোলীয় ঐক্য আর ইউরোপ, বসনিয়াক্রোয়েশিয়া পর্যন্ত তার বিজয় অব্যাহত রাখেন। দ্বিতীয় মুহাম্মাদকে তুরস্কে জাতীয় বীর হিসেবে গণ্য করা হয়। ইস্তাম্বুলের ফাতিহ সুলতান মেহমেত সেতুর নামকরণ তার নামেই করা হয়েছিল।

যুদ্ধাভিযানের তালিকা[সম্পাদনা]

  ইউরোপে অভিযানসমূহ   আনাতোলিয়ায় অভিযানসমূহ

ক্রম অভিযান অভিযানের তারিখ বিবরণ
কারামান ১৪৫১ মুহাম্মাদ সুলতান হওয়ার পরপর কারামানিরা উসমানীয় অঞ্চলে আক্রমণ করে। জবাবে সুলতান মুহাম্মাদ কারামানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালান। কারামানিরা পরাজিত হয় এবং কারামানের দ্বিতীয় ইব্রাহিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তারা আবার উসমানীয়দের আক্রমণ করবে না। ফলস্বরূপ শান্তি ফিরে আসে।
কনস্টান্টিনোপল ১৪৫৩ সুলতান মুহাম্মাদ যখন কারামানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন, তখন বাইজেন্টাইন সম্রাট কনস্টানটাইন একাদশ কনস্টান্টিনোপলে একজন উসমানীয় দাবিদারের বার্ষিক ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানান। মুহাম্মাদ প্রত্যাখ্যান করেন এবং কনস্টান্টিনোপল ঘেরাও করার জন্য প্রস্তুত হন। তিনি রুমেলি হিসার দুর্গ নির্মাণের নির্দেশ দেন যার পর শহর অবরোধ শুরু হয়। ৫৩ দিন স্থায়ী অবরোধের পর শহরটি জয় করা হয়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায় এবং শহরটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হয়ে ওঠে।
সার্বিয়া ১৪৫৪-৫৫ মুহাম্মাদ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কারণ সার্বীয় শাসক দাউরাদ ব্র্যাঙ্কোভিচ কর পাঠাতে অস্বীকার করেছিলেন এবং হাঙ্গেরির রাজ্যের সাথে একটি মিত্রতা করেছিলেন। উসমানীয় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ খনির শহর নভো ব্রদো জয় করে।
সার্বিয়া ১৪৫৬ মুহাম্মাদ সার্বিয়ায় তার অভিযান অব্যাহত রাখেন, অসংখ্য দুর্গ দখল করা হয় কিন্তু বেলগ্রেডের অবরোধ (১৪৫৬) ব্যর্থ হয় এবং উসমানীয় সেনাবাহিনী পিছু হটে।
সার্বিয়া ১৪৫৮-৫৯ সার্বীয় শাসক দাউরাদ ব্রাঙ্কোভিচের মৃত্যুর পর একটি উত্তরাধিকার যুদ্ধ শুরু হয় এবং সার্বীয় রাজাদের সাথে সম্পর্কিত সুলতান এই অঞ্চলে আক্রমণ করেন, স্মেডেরেভোকে বন্দী করা হয় এবং সার্বীয় ডেসপোটেটের অবসান ঘটে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়। (সার্বীয়-তুর্কি যুদ্ধের ইতিহাস দেখুন)
মোরেয়া ১৪৫৮-৫৯ মোরেয়ার স্বৈরশাসক তার বার্ষিক কর প্রেরণ করতে অস্বীকার করে এবং বিদ্রোহ করে। জবাবে মুহাম্মাদ মোরেয়াতে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অধিবাসীরা পরাজিত হয় এবং তাদের অঞ্চলগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
আমাসরা ১৪৬০ কৃষ্ণ সাগর উপকূলে জেনোজদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ আমাসরা অবরোধ ও দখল করা হয়েছিল।
সিনোপ ১৪৬১ মুহাম্মাদ ত্রেবিজন্ডের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং পথে সমগ্র কৃষ্ণ সাগরের উপকূল উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত করেন এবং জান্ডারিদের রাজত্বের শান্তিপূর্ণভাবে অবসান ঘটে।
ত্রেবিজন্ড ১৪৬১ ত্রেবিজন্ড সাম্রাজ্যের সম্রাট কর প্রেরণ করতে অস্বীকার করে আকয়ুনলু মুহাম্মাদের সাথে জোট করেন। মুহাম্মাদ স্থল ও সমুদ্রপথে ত্রেবিজন্ডের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন। কমপক্ষে ৩২ দিনের অবরোধের পর ত্রেবিজন্ড এবং সম্রাট আত্মসমর্পণ করেন এবং সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
১০ ওয়ালাচিয়া ১৪৬২ ভ্লাদ দ্য ইম্পালার যিনি উসমানীয়দের সাহায্যে ওয়ালাচিয়ার উসমানীয় ভাসাল শাসক হয়েছিলেন, কিছু বছর পর কর প্রেরণ করতে অস্বীকার করেন এবং উত্তর বুলগেরিয়ার উসমানীয় অঞ্চলে আক্রমণ করেন। সেই সময় মুহাম্মাদ প্রধান উসমানীয় সেনাবাহিনীর সাথে এশিয়ায় ত্রেবিজন্ড অভিযানে ছিলেন। যখন মুহাম্মাদ তার ত্রেবিজন্ড অভিযান থেকে ফিরে আসেন তখন তিনি ওয়ালাচিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। হাঙ্গেরির কিছু প্রতিরোধের পর ভ্লাদ পালিয়ে যান। মুহাম্মাদ প্রথমে ওয়ালাচিয়াকে একটি উসমানীয় এয়ালেত বানিয়েছিলেন কিন্তু তারপর ভ্লাদের ভাই রাদুকে একজন সামন্ত শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
১১ লেসবস ১৪৬২ লেসবস দ্বীপের রাজধানী মাইটিলিনের অবরোধের পরে দখল করা হয়েছিল এবং সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
১২ বসনিয়া ১৪৬৩-৬৪ মুহাম্মাদ বসনিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং এটিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত করেন।
১৩ মোরেয়া ১৪৬৩ মুহাম্মাদ মোরেয়াতে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন, যা মোরিয়ার ডেসপোটেট সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়।
১৪ আলবেনিয়া ১৪৬৬-৬৭ মুহাম্মাদ আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং ক্রুজে অবরোধ করেন, কিন্তু সেকেন্দার বেগের অধীনে আলবেনিয়ান সৈন্যরা সফলভাবে প্রতিরোধ করে।
১৫ কারামান ১৪৬৮ কারামানি শাসকের মৃত্যুর পর তার পুত্রদের মধ্যে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যাতে আকয়ুনলুর শাসক উজুন হাসানও জড়িত হন। কিছু সময় পর মুহাম্মাদ এই এলাকায় সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হন এবং কারামানিদের উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত করেন।
১৬ নেগ্রোপন্টে ১৪৭০ দীর্ঘ উসমানীয়-ভেনিশীয় যুদ্ধের সময় (১৪৬৩–১৪৭৯) মুহাম্মাদ নেগ্রোপন্টের ভেনিসীয় উপনিবেশের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন এবং অবরোধের পর এই অঞ্চলটিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত করে।
১৭ পশ্চিম আনাতোলিয়া ১৪৭৩ বহু বছরের শত্রুতার পর মুহাম্মাদ আকয়ুনলুর ভূমিতে আক্রমণ করে এবং ওটলুকবেলির যুদ্ধে তাদের শাসক উজুন হাসানকে পরাজিত করে। এর পরে তারা উসমানীয়দের বিরুদ্ধে আর কোনো হুমকি সৃষ্টি করেনি।
১৮ মোলদাভিয়া ১৪৭৬ উসমানীয় সামন্ত মোলদাভিয়ার তৃতীয় স্টিফেন ওয়ালাচিয়া আক্রমণ করেন এবং বার্ষিক কর প্রেরণ করতে অস্বীকার করেন। একটি উসমানীয় সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং মুহাম্মাদ মোলদাভিয়ার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অভিযানের নেতৃত্ব দেন। ভ্যালিয়া আলবার যুদ্ধে তিনি মোলদাভিয়ানদের পরাজিত করেছিলেন, তারপরে তারা কর প্রেরণ করতে সম্মত হয়েছিল এবং শান্তি ফিরে এসেছিল।
১৯ আলবেনিয়া ১৪৭৮ দীর্ঘ উসমানীয়-ভেনিশিয়ান যুদ্ধের সময় (১৪৬৩–১৪৭৯) মুহাম্মাদ আলবেনিয়া আক্রমণ করেন এবং স্কোদ্রার ভেনিসীয় দুর্গ অবরোধ করেন। যুদ্ধটি ভেনিসীয় পরাজয়ে শেষ হয় এবং কনস্টান্টিনোপল চুক্তি (১৪৭৯) অনুসারে স্কোদ্রা উসমানীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

চিত্র[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]