দ্বিতীয় মুরাদ
দ্বিতীয় মুরাদ مراد ثانى | |
---|---|
উসমানীয় সুলতান | |
৬ষ্ঠ উসমানীয় সুলতান (প্রথম দফা) | |
রাজত্বকাল | ২৬ মে ১৪২১ – আগস্ট ১৪৪৪ |
পূর্বসূরি | প্রথম মুহাম্মদ |
উত্তরসুরি | দ্বিতীয় মুহাম্মদ |
(দ্বিতীয় দফা) | |
রাজত্বকাল | সেপ্টেম্বর ১৪৪৬ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ |
পূর্বসূরি | দ্বিতীয় মুহাম্মদ |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় মুহাম্মদ |
জন্ম | জুন ১৪০৪ আমাসিয়া, উসমানীয় সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ (৪৬ বছর) এদির্ন, উসমানীয় সাম্রাজ্য |
স্ত্রী | ইয়েনি খাতুন খাদিজা হালিমা খাতুন হুমা খাতুন মরিয়ম খাতুন |
বংশধর | ১. আলাউদ্দিন
২. মেহমেদ ৩. আহমেদ |
রাজবংশ | উসমানীয় রাজবংশ (উসমানলি হানেদানি) |
পিতা | প্রথম মুহাম্মদ |
মাতা | এমিনে খাতুন |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
তুগরা |
দ্বিতীয় মুরাদ (জুন ১৪০৪ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১) (উসমানীয় তুর্কি: مراد ثانى মুরাদ-ই-সানি, তুর্কি:II. Murat) ছিলেন উসমানীয় সুলতান। তিনি ১৪২১ থেকে ১৪৪৪ সাল এবং ১৪৪৬ থেকে ১৪৫১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন। মধ্যবর্তী দুই বছর তার ছেলে দ্বিতীয় মুহাম্মদ সিংহাসনে ছিলেন।
দ্বিতীয় মুরাদ তার শাসনকালে বলকান এবং তুর্কি বেয়লিকগুলোর সামন্ত নেতাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই করেছেন। এই লড়াই ২৫ বছর টিকে ছিল। তিনি আমাসিয়ায় বড় হয়েছেন। পিতা সুলতান প্রথম মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে বসেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]মুরাদ ১৪০৪ সালের জুন মাসে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবের প্রথম দিকের সময়গুলো তিনি আমাসিয়ায় কাটিয়েছেন। ১৪১০ সালে তিনি রাজধানী এদির্নে আসেন। তার পিতা সুলতান হওয়ার পর তিনি আমাসিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৪২১ সালে প্রথম মুহাম্মদের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আমাসিয়ায় ছিলেন।
জীবনী
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় মুরাদ ১৬ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। তার সিংহাসনারোহণ শান্তিপূর্ণ ছিল।
তবে শীঘ্রই সাম্রাজ্যে গোলযোগ দেখা দেয়। বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় মানুয়েল মুস্তাফা চেলেবিকে সিংহাসনের বৈধ উত্তরসূরি হিসেবে গ্রহণ করে তাকে সহায়তা করেন। [১] মুস্তাফা সফল হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর দ্বিতীয় মানুয়েলকে হস্তান্তর করা হবে এমন চুক্তি হয়। মুস্তাফা বাইজেন্টাইন জাহাজযোগে উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় অংশে আগমন করেন এবং দ্রুত অগ্রসর হন। অনেক তুর্কি সৈনিক তার সাথে যোগ দেয়। মুরাদ তার উজিরে আজম বায়েজীদ পাশাকে সেনাপতি হিসেবে প্রেরণ করেন কিন্তু বায়েজীদ মুস্তাফার কাছে পরাজিত ও নিহত হন। মুস্তাফা বায়েজীদের বাহিনীকে পরাজিত করে নিজেকে এড্রিনোপলের (বর্তমান এদির্ন) সুলতান ঘোষণা করেন। এরপর তিনি দারদানেলেস অতিক্রম করে এশিয়া আসেন। তবে মুরাদ তাকে পরাস্ত করেন। মুস্তাফা গ্যালিপলিতে আশ্রয় নেন। মুরাদ এখানে অবরোধ আরোপ করেন। মুস্তাফাকে বন্দী করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মুরাদ এরপর রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন এবং কনস্টান্টিনোপল জয়ের মাধ্যমে তাকে শাস্তি প্রদানের ঘোষণা দেন।
দ্বিতীয় মুরাদ ১৪২১ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দিকে অগ্রসর হয়ে রাজধানী কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করেন।[২] মুরাদের অবরোধের সময় বাইজেন্টাইনরা কিছু স্বাধীন তুর্কি আনাতোলীয় রাজ্যের সহায়তায় সুলতানের ছোট ভাই কুচুক মুস্তাফাকে দিয়ে সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত করে। বিদ্রোহের সময় বুরসা অবরোধ করা হয়। মুরাদকে তাই অবরোধ তুলে নিতে হয়। তিনি মুস্তাফাকে বন্দী করেন ও মৃত্যুদন্ড দেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী আনাতোলীয় আইদিনি, জেরমিয়ানি, মেনতেশে ও তেকে রাজ্যকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসা হয়।
দ্বিতীয় মুরাদ এরপর ভেনিস, কারামানি আমিরাত, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৪২৮ সালে কারামানিরা পরাজিত হয় এবং ১৪৩০ সালে সেলোনিকার দ্বিতীয় অবরোধ পরাজয়ের পর পিছু হটে।[৩] ১৪৩০ এর দশকে মুরাদ বলকানের বিশাল অঞ্চল জয় করেন এবং ১৪৩৯ সালে সার্বিয়াকে সাম্রাজ্যের অংশ করায় সফল হন। ১৪৪১ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য এবং পোল্যান্ড সার্বীয়-হাঙ্গেরীয় জোটে যোগ দেয়।
দ্বিতীয় মুরাদ ১৪৪৪ সালে ভার্নার যুদ্ধে জয়লাভ করেন।
১৪৪৪ সালে মুরাদ সিংহাসন ত্যাগ করে তার পুত্র দ্বিতীয় মুহাম্মদকে সিংহাসন প্রদান করেন। কিন্তু ইয়ানিসারিদের একটি বিদ্রোহের কারণে তাকে পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করতে হয়।[৪].
১৪৪৮ সালে মুরাদ কসোভোর দ্বিতীয় যুদ্ধে খ্রিষ্টান জোট বাহিনীকে পরাজিত করেন। বলকান হস্তগত হওয়ার পর তিনি পূর্ব দিকে তৈমুরের পুত্র শাহরুখ এবং কারামানি ও চোরুম-আমাসিয়া আমিরাতের মুখোমুখি হন। ১৪৫০ সালে দ্বিতীয় মুরাদ আলবেনিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি স্কান্ডেরবেগের নেতৃত্বাধীন প্রতিরোধ দমনের জন্য ক্রুজ দুর্গ অবরোধ করেন। তবে তিনি এতে সফল হননি। ১৪৫০-১৪৫১ সালের শীতকালে মুরাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এদির্নে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার পুত্র দ্বিতীয় মুহাম্মদ সিংহাসনে বসেন।
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় মুরাদের চারজন স্ত্রী ছিল:
- ইয়েনি খাতুন
- খাদিজা হালিমা খাতুন
- হুমা খাতুন
- মরিয়ম খাতুন
- মারা হাতুন
চলচ্চিত্রে প্রদর্শন
[সম্পাদনা]অভিনেতা ইলকের কুর্ত ২০১২ সালে নির্মিত ফেতিহ ১৪৫৩ চলচ্চিত্রে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এছাড়াও ১৯৫৩ সালে নির্মিত দ্য গ্রেট ওয়ারিয়র স্কান্ডেরবেগ নামক আলবেনীয় চলচ্চিত্রে সুলতান মুরাদের ভূমিকায় ভাহরাম পাপাজিয়ান অভিনয় করেছেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Finkel, C., Osman's Dream:The History of the Ottoman Empire, Osman 2005, pp.43, Basic Books
- ↑ A contemporary account of the siege was written by John Kananos.
- ↑ On this event, cf. the account by John Anagnostes.
- ↑ Kafadar, Cemal, Between Two Worlds, University of California Press, 1996, p xix. আইএসবিএন ০-৫২০-২০৬০০-২
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Babinger, Franz, Mehmed the Conqueror and his Time. Princeton NJ: Princeton University Press, 1978. আইএসবিএন ০-৬৯১-০১০৭৮-১
- Harris, Jonathan, The End of Byzantium. New Haven and London: Yale University Press, 2010. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩০০-১১৭৮৬-৮
- Imber, Colin, The Ottoman Empire. London: Palgrave/Macmillan, 2002. আইএসবিএন ০-৩৩৩-৬১৩৮৭-২
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিমিডিয়া কমন্সে দ্বিতীয় মুরাদ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
দ্বিতীয় মুরাদ জন্ম: ১৪০৪ মৃত্যু: ৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী প্রথম মুহাম্মদ |
উসমানীয় সুলতান ২৬ মে ১৪২১ – ১৪৪৪ |
উত্তরসূরী দ্বিতীয় মুহাম্মদ |
পূর্বসূরী দ্বিতীয় মুহাম্মদ |
উসমানীয় সুলতান ১৪৪৬ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৫১ |