মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গাজী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গাজী
محمد عبد اللہ غازی
১ম আচার্য, ফরিদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
অফিসে
১৯৭৭ – ১৭ অক্টোবর ১৯৯৮
পূর্বসূরীনেই (পদ তৈরি হয়েছে)
উত্তরসূরীআব্দুল আজিজ গাজী
চেয়ারম্যান, রুয়েত-এ-হিলাল কমিটি
অফিসে
১৯৯৩ – ১৭ অক্টোবর ১৯৯৮
উত্তরসূরীমুনীব-উর-রেহমান
খতিব, লাল মসজিদ
অফিসে
১৯৬৫ – ১৭ অক্টোবর ১৯৯৮
পূর্বসূরীনেই (পদ তৈরি হয়েছে)
উত্তরসূরীআব্দুল আজিজ গাজী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৯৩৫-০৬-০১)১ জুন ১৯৩৫
মৃত্যু১৭ অক্টোবর ১৯৯৮(1998-10-17) (বয়স ৬৩)
মৃত্যুর কারণগুপ্তহত্যা
সমাধিস্থলজামিয়া ফরিদিয়া, ইসলামাবাদ
ধর্মইসলাম
জাতীয়তা ব্রিটিশ ভারত
 পাকিস্তানি
সন্তানআব্দুল আজিজ গাজী
আব্দুল রশিদ গাজী
স্বাক্ষর

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গাজী (উর্দু:محمد عبد اللہ غازی) একজন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন। তিনি রুয়েত-এ-হিলাল কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ার প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তিনি ছিলেন লাল মসজিদের প্রথম ইমাম। তিনি জামিয়া হাফসাজামিয়া ফরিদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

আবদুল্লাহ বিন গাজী ১৯৩৫ সালের ১ জুন রাজনপুর জেলার বাসতি-আবদুল্লাহ গ্রামে বেলুচিস্তানের মাজারি উপজাতির অন্তর্গত গাজী মুহাম্মদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকার কারণে বহুবার সমস্যায় পড়েন এবং ব্রিটিশরা তাকে গ্রেপ্তার করে আট বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করে। কারাগারে তিনি ধার্মিক হয়ে ওঠেন এবং আবদুল্লাহকে ৭ বছর বয়সে একটি স্থানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি হতে অনুপ্রাণিত করেন। পরবর্তীতে আবদুল্লাহ আরও পড়াশোনার জন্য করাচিতে চলে যান। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি পড়াশোনায় নিজেকে নিবেদিত করেন এবং বিন্নুরি-টাউন করাচির জামিয়া-উলুমুল-ইসলামিয়া থেকে স্নাতক হন। তিনি মুহাম্মদ ইউসুফ বান্নুরির তারকা ছাত্র ছিলেন এবং তার পরামর্শে ১৯৬৬ সালে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ লাল মসজিদের প্রথম ইমাম নিযুক্ত হন।[১]

তিনি বিখ্যাত ফরিদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাকিস্তানে অনেকগুলো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পাকিস্তানে প্রথম মহিলা মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন এবং পাকিস্তানের প্রথম মহিলা মাদ্রাসা জামিয়া হাফসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি রুয়েত-এ-হিলাল কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। অন্যান্য সম্প্রদায় ও অমুসলিমদের সাথেও তার সুসম্পর্ক ছিল।[২]

লাল মসজিদ[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বাগ্মী ছিলেন এবং তার জুমার খুতবা হাজার হাজার মানুষকে আকৃষ্ট করতো। ফয়সাল মসজিদ সম্পন্ন হওয়ার আগে লাল মসজিদ ছিল ইসলামাবাদের প্রথম ও একমাত্র কেন্দ্রীয় মসজিদ। রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক মসজিদটি নিয়মিত পরিদর্শন করতেন। ফয়সাল মসজিদ সম্পন্ন হওয়ার পর, জিয়া উল হক চেয়েছিলেন মুহাম্মদ আবদুল্লাহ সদ্য নির্মিত মসজিদের প্রথম ইমাম হন কিন্তু তিনি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি।[৩]

আচার্য[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালে তিনি শহরের প্রধান সেক্টরের মারগালা পাহাড়ের নিকটে জামিয়া ফরিদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন এবং কয়েক হাজার অনাথ ও দরিদ্র শিক্ষার্থীকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করেন।[৪]

১৯৯২ সালে তিনি জামিয়া হাফসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে এশিয়ার বৃহত্তম মহিলা মাদ্রাসায় পরিণত হয়। মাওলানা আবদুল্লাহ ১৯৯৮ সালে তার হত্যাকাণ্ড অবধি উভয় মাদ্রাসার আচার্য ছিলেন।[৫]

আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধ[সম্পাদনা]

আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধের সময় (১৯৭৯-১৯৮৯), সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে আফগান মুজাহিদীনদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মুজাহিদীন নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে লাল মসজিদ প্রধান ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৮ সালে তার হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে তিনি জহুর আহমদ আলভী, সাদ-উর-রেহমান ও আরও কয়েকজন আলেমদের সাথে আফগানিস্তান সফর করেন। মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তার বিদ্রোহী পুত্রকে (আব্দুল রশিদ গাজী) বিশেষত তার সাথে নিয়ে যান। তারা মোল্লা ওমর, ওসামা বিন লাদেনডা. আয়মান আল জাওয়াহিরির সাথে দেখা করেন।[৫]

হত্যাকাণ্ড[সম্পাদনা]

ফরিদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ গাজীর কবর (ডান দিকে)

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ-এর জীবনী লেখক রিয়াজ মনসুর লিখেছেন, মুহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রতিদিন মাদ্রাসায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য হেঁটে যেতেন (লাল মসজিদ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে)। হত্যার দিন, তিনি জামিয়া ফরিদিয়া মাদ্রাসায় হেঁটে যান এবং দুপুরে গাড়িতে করে ফেরেন। গাড়ি থেকে নামার পর তার বড় ছেলে আব্দুল আজিজ গাজী তার কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলেন। মুহাম্মদ আবদুল্লাহ যখন তার বাড়ির কাছে পৌঁছান, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোক তার দিকে হাঁটতে থাকে এবং একটি বন্দুক বের করে মেগাজিন খালি না হওয়া পর্যন্ত গুলি চালিয়ে মুহাম্মদ আবদুল্লাহকে গুরুতর আহত করে। এরপর লোকটি আব্দুল আজিজকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তিনি কোনোক্রমে বেঁচে যান। ঘাতক একটি গাড়ির বাইরে অপেক্ষা করা এক সহযোগীর সহায়তায় পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ মারা যান।[৫]

ইসলামাবাদের ফরিদিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়।[৬]

এফআইআর ও মামলা[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের আইনি ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাবে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এর বড় ছেলে এফআইআর দায়ের করতে অস্বীকৃতি জানালেও তার ছোট ছেলে আব্দুল রশিদ গাজী এফআইআর দায়ের করেন এবং পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। নিরলস প্রচেষ্টার পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আইডি প্যারেড চলাকালীন একজন প্রত্যক্ষদর্শী ঘাতককে চিহ্নিত করে, তবে পরের দিন বিনা কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আব্দুল রশিদ গাজী এই মুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার না করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। গাজী পুলিশের উপর চাপ বাড়ানোয় তাকে মামলা প্রত্যাহার করতে বা তার বাবার ভাগ্যের মুখোমুখি হতে বলা হয়। তার বন্ধুর মতে এটি ছিল গাজীর জীবনের একটি সন্ধিক্ষণ এবং তখন তিনি আইনি ব্যবস্থা প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েন।[৭]

স্মৃতিচারণ[সম্পাদনা]

২০০৫ সালে রিয়াজ মুনসুর কর্তৃক লিখিত "হায়াত শহীদ এ ইসলাম" নামে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ-এর জীবনের বর্ণনায় একটি জীবনী প্রকাশিত হয়।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "شہیداسلام مولانا عبداللہ شہید شخصیت و کردار۔۔۔تحریر مولاناتنویراحمداعوان"Shaffak (উর্দু ভাষায়)। ২০১৬-১০-১৮। ২০২১-০২-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯ 
  2. "حضرت مولانا عبداللہ غازی رحمۃ اللہ"www.humsub.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০২১ 
  3. "Lal Masjid: a history"www.thenews.com.pk (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৯ 
  4. "عالم اسلام کی عظیم دینی درسگاہ جامعہ فریدیہ" (উর্দু ভাষায়)। ২০১৫-০৫-২৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০২১ 
  5. Lal Masjid : A Brief History 
  6. "Sharp rise in students of Deobandi sect seminaries"gulfnews.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০ 
  7. Paracha, Nadeem F. (২০১৩-১১-০৩)। "Red handed"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১০ 
  8. SHAEED ISLAM (Indonesian ভাষায়)।