দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস দুই সহস্রাধিক বছর ধরে ঘটমান উক্ত অঞ্চলের একাধিক রাজবংশ ও সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস। দক্ষিণ ভারত ভূখণ্ডে প্রাগৈতিহাসিক জনবসতির একাধিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের কোনো লিখিত উপাদান না পাওয়া গেলেও প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে অনুমিত হয় খ্রিষ্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগেই এই অঞ্চলে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। মৌর্য সম্রাট অশোক সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নিজ আধিপত্য বিস্তার করার সময় দাক্ষিণাত্যের একাধিক অঞ্চল জয় করেন। এই সময় থেকেই এই অঞ্চলের লিখিত ইতিহাসের সূত্রপাত। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে সাতবাহন, চালুক্য, পল্লব, রাষ্ট্রকূট, চের, চোল, পাণ্ড্য, কাকতীয়হোয়েসল রাজবংশ দক্ষিণ ভারতে নিজ আধিপত্য বিস্তার করে। এই সকল রাজ্যগুলি সর্বদাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকত। পরে উত্তর ভারত থেকে মুসলমান বাহিনী দক্ষিণ ভারত আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধেও এরা সামরিক অভিযান চালায়। মুসলমান আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ উত্থান ঘটে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের। এই সাম্রাজ্য সমগ্র দক্ষিণ ভারতে নিজ অধিকার স্থাপন করতে সক্ষম হয় এবং দাক্ষিণাত্যে মুঘল অভিযানের বিরুদ্ধে প্রধান বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। ষোড়শ শতাব্দীতে যখন ইউরোপীয় শক্তিগুলি এই অঞ্চলে পদার্পণ করতে শুরু করে তখন এই নতুন প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রামের ক্ষমতা দক্ষিণের রাজন্যবর্গের মধ্যে আর অবশিষ্ট ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে সমগ্র দক্ষিণ ভারত ব্রিটিশদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করেন। অবশিষ্ট অঞ্চলগুলি একাধীন ব্রিটিশ-নির্ভরশীল দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত থাকে। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর ভাষার ভিত্তিতে দক্ষিণ ভারত অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরলতামিলনাড়ু রাজ্যে বিভক্ত হয়।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ[সম্পাদনা]

দক্ষিণ ভারতে মেসোলিথিক যুগ স্থায়ী হয় ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই অঞ্চলের মাইক্রোলিথ উৎপাদনগুলি ৬০০০ থেকে ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তীকালীন বলে প্রত্যয়িত হয়েছে। ২৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয় নিওলিথিক যুগ। মেগালিথিক সমাধিক্ষেত্রগুলি থেকে অনুমিত হয় এরপর লৌহযুগের সূত্রপাত ঘটেছিল।[১] তিরুনেলভেলি জেলার আদিচানাল্লুর ও উত্তর ভারতে তুলনামূলক খননকার্য চালিয়ে জানা গেছে যে মেগালিথিক সংস্কৃতি উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছিল।[২]

প্রাচীনতম লেখ উপাদানগুলি খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে লিখিত হয়েছিল। তামিল-ব্রাহ্মী লিপিতে খোদিত এই লেখগুলি থেকে দাক্ষিণাত্যে বৌদ্ধধর্মের প্রসারের কথা জানা যায়।

প্রাচীন যুগ[সম্পাদনা]

কিংবদন্তি অনুসারে তৃতীয় তামিল সঙ্গম অনুষ্ঠিত হয় মাদুরাইয়ের পবিত্র স্বর্ণকমল পুষ্করিণীর ধারে।

প্রাচীন দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে নথিপত্র বা লেখের সাহায্য খুব একটা পাওয়া যায় না। মনে করা হয়, খ্রিষ্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগেই এই অঞ্চলে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। তার কিছু চিহ্ন পাওয়া গেলেও, প্রকৃত পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে যে প্রত্ন নিদর্শনগুলি পাওয়া যায় সেগুলি খ্রিষ্টের জন্মের অব্যবহিত পরের কয়েক শতাব্দীর বলে শনাক্ত হয়েছে। সম্ভবত দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক রাজ্যটি হল প্রতিপালপুরা রাজ্য। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গুন্টুর জেলার ভট্টিপ্রলুতে এই রাজ্যের উন্মেষ ঘটে। একটি লেখ থেকে জানা যায়, ২৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ রাজা কুবের ভট্টিপ্রলুতে রাজত্ব করেন। তারপর সল রাজারা এই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। ভট্টিপ্রলু শিলালেখের লিপিটি ছিল ব্রাহ্মী লিপি; পরবর্তীকালে এই লিপিটি দক্ষিণে তেলুগুতামিল লিপিতে বিভক্ত হয়ে যায়।[৩][৪][৫][৬] অশোকের রাজত্বকালে (৩০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ – ২৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) দক্ষিণ ভারতে চোল, চেরপাণ্ড্য নামে তিনটি তামিল রাজবংশের অস্তিত্ব ছিল। এই রাজ্যগুলি অশোকের সাম্রাজ্যে অঙ্গীভূত না হলেও মৌর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখত। এই তিনটি রাজ্য একত্রে "তামিল ইলম" বা "তামিল ভূমি" নামে পরিচিত।[৭]

সাতবাহন[সম্পাদনা]

সাতবাহন রাজকীয় কর্ণকুণ্ডলী, অন্ধ্রপ্রদেশ, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী।

সাতবাহন রাজবংশ মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বর্তমান মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়অন্ধ্রপ্রদেশ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তারা অন্ধ্র, অন্ধ্রভৃত্য ও সাতকর্ণী নামেও পরিচিত ছিল। পূর্বে সাতবাহনরা ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের সামন্ত। ২৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সাতবাহন বংশের গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীই ছিলেন ভারতের প্রথম দেশীয় রাজা যিনি নিজের চিত্র সংবলিত নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন করেন। এই ধারণাটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইন্দো-গ্রিক রাজাদের থেকে গ্রহণ করা হয়। বৌদ্ধ শিল্প ও স্থাপত্যে সাতবাহনদের অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কৃষ্ণা নদী উপত্যকার প্রসিদ্ধ স্তুপগুলি তারাই স্থাপন করেন। এই স্তুপগুলির মধ্যে আবার বিশেষভাবে উল্লেখনীয় হল অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতীনাগার্জুনকোন্ডার স্তুপগুলি। নাগার্জুনকোন্ডায় একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। আচার্য নাগার্জুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সাতবাহন সাম্রাজ্যের রাজভাষা ছিল প্রাকৃত। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। পরে দাক্ষিণাত্যের চুটু, ইক্ষবাকুপল্লব এবং কর্ণাটকের কদম্ব সহ একাধিক রাজবংশ এই সাম্রাজ্য গ্রাস করে নেয়।

পাণ্ড্য[সম্পাদনা]

চতুর্ভুজ বিষ্ণু, পাণ্ড্য রাজ্য, খ্রিষ্টীয় ৮ম-৯ম শতাব্দী

পাণ্ড্য রাজ্য ছিল তিনটি প্রাচীন তামিল রাজ্যের অন্যতম (অপর রাজ্যদুটি ছিল চোলচের রাজ্য)। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত তারা তামিল দেশ শাসন করে আসেন। প্রথম দিকে তাদের রাজধানী ছিল ভারতীয় উপদ্বীপের সর্বদক্ষিণে স্থিত সমুদ্রবন্দর কোরকাই। পরবর্তীকালে তাদের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় মাদুরাই শহরে। সঙ্গম সাহিত্য (১০০-২০০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং সমসাময়িক কালে রচিত গ্রিকরোমান রচনায় পাণ্ড্য রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।

কলভ্র আক্রমণের সময় সঙ্গম সাহিত্যের প্রাচীন পাণ্ড্য রাজবংশ বিস্মৃতির আড়ালে চলে যায়। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কদুঙ্গনের নেতৃত্বে এই রাজবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কলভ্রদের তামিল দেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয় এবং মাদুরাইতে পাণ্ড্য রাজধানী স্থাপিত হয়। নবম শতাব্দীতে চোলদের উত্থান ঘটলে আবার তাদের পতন শুরু হয়। এই সময় চোলদের সঙ্গে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়েন তারা। চোল সাম্রাজ্যকে যুদ্ধে পরাভূত করতে তারা সিংহলী ও কেরলদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। অবশেষে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের সুযোগ পান পাণ্ড্যরা। জাতবর্মণ সুন্দর পাণ্ড্যন (১২৫১ খ্রিষ্টাব্দ) তেলুগু দেশ পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্য প্রসারিত করেন এবং শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করে দ্বীপের উত্তরার্ধ জয় করে নেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামুদ্রিক সাম্রাজ্য শ্রীবিজয় ও তাদের উত্তরসূরীদের সহিত পাণ্ড্যদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পাণ্ড্যদের সমগ্র ইতিহাস পল্লব, চোল, হোয়েসল এবং সবশেষে দিল্লি সুলতানির মুসলমান আক্রমণকারীদের সঙ্গে তাদের সংগ্রামের সাক্ষ্য দেয়। ষোড়শ শতাব্দীতে মাদুরাই সুলতানির পত্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাণ্ড্য রাজ্য অবলুপ্ত হয়ে যায়। পাণ্ড্যরা সাহিত্য ও বাণিজ্যে অগ্রণী ছিল। দক্ষিণ ভারতীয় উপকূলভাগে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে মুক্তোচাষ তারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই শিল্প প্রাচীন বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মুক্তোশিল্পগুলির অন্যতম ছিল।

চোল[সম্পাদনা]

তাঞ্জাবুরের বৃহদীশ্বর মন্দির বিশ্বের বৃহত্তম মনোলিথিক মন্দির চত্বরগুলির অন্যতম – এটি একটি ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

প্রাচীন কাল থেকে যে তিনটি রাজবংশ দক্ষিণ ভারত শাসন করে এসেছে তাদের মধ্যে চোল রাজবংশ অন্যতম। খ্রিষ্টের জন্মের অব্যবহিত পরবর্তী কয়েক শতাব্দীকালে চোলদের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন কারিকল চোল। তিনি পাণ্ড্যচেরদের পরাভূত করে নিজ আধিপত্য কায়েম করেন। অবশ্য চতুর্থ শতাব্দী থেকে চোল রাজ্যের পতন শুরু হয়। এই সময় অন্ধ্র দেশ থেকে কলভ্ররা নেমে এসে প্রতিষ্ঠিত রাজ্যগুলিকে দখল করে নেয় এবং পরবর্তী ৩০০ বছর দক্ষিণ ভারতের প্রায় সমগ্র অঞ্চল শাসন করে।

৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে তাঞ্জাবুর দখল করে বিজয়ালয় চোল চোল রাজবংশকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তাঞ্জাবুরে নিজ রাজধানী স্থাপন করেন। তার পুত্র প্রথম আদিত্য পল্লবরাজ অপরাজিতকে পরাজিত করে চোল রাজ্যের সীমা তোন্ডাইমণ্ডলম পর্যন্ত প্রসারিত করেন। চোল রাজ্যের কেন্দ্র ছিল কাঞ্চী (কাঞ্চীপুরম) ও তাঞ্জাবুর। চোল রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজাদের অন্যতম ছিলেন রাজরাজ চোল। তিনি ৯৮৫ থেকে ১০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার বাহিনী তিরুবনন্তপুরমে চের নৌবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং অনুরাধাপুর ও শ্রীলঙ্কার উত্তর প্রদেশ দখল করে। প্রথম রাজেন্দ্র চোল সমগ্র শ্রীলঙ্কা জয় করেন এবং বাংলা আক্রমণ করেন। তিনি সফল নৌ অভিযান চালিয়ে মালয়, ব্রহ্মদেশসুমাত্রার একাধিক অঞ্চল জয় করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে চোল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং ১২৭৯ সালে এই সাম্রাজ্য অবলুপ্ত হয়ে যায়। চোলরা ছিল স্থাপত্যশিল্পে অগ্রণী। প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় মন্দির স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি চোলদের কীর্তি। তাদের স্থাপত্যের এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন তাঞ্জাবুরের বৃহদীশ্বর মন্দির বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের অন্যতম বিশ্বঐতিহ্য স্থল।

চের[সম্পাদনা]

চের রাজবংশ প্রাচীন কাল থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতে রাজত্বকারী প্রাচীন তামিল রাজবংশগুলির অন্যতম। প্রাচীন চেররা বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরল রাজ্যের মালাবার উপকূল এবং কোয়েম্বাটোর, নামাক্কল, কারুরসালেম জেলাগুলিতে রাজত্ব করত। চের রাজত্বকালে কেরলে বৈদেশিক বাণিজ্য সমৃদ্ধিলাভ করে। এই সময় মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ ইউরোপে মশলা, হাতির দাঁত, কাঠ, মুক্তো ও রত্ন রফতানি করা হত। মালাবার উপকূল, কোয়েম্বাটোর ও কারুর জেলায় প্রাচীন কালের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া যায়।

পল্লব[সম্পাদনা]

পল্লব প্রতিষ্ঠিত মহাবলীপুরমের সৈকত মন্দির – একটি ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

পল্লবরা ছিল দক্ষিণ ভারতের এক প্রসিদ্ধ রাজবংশ। তারা তৃতীয় শতাব্দী থেকে নবম শতাব্দীতে তাদের চূড়ান্ত পতন অবধি রাজত্ব করে। তামিলনাড়ুর কাঞ্চীপুরম ছিল তাদের রাজধানী। পল্লবদের উৎস সঠিক জানা যায় না। যদিও অনুমিত হয়ে থাকে যে তারা আর্য (পহ্লব / কম্বোজ) বংশোদ্ভুত এবং সম্ভবত প্রথম দিকে সাতবাহন রাজাদের সামন্ত ছিলেন। কৃষ্ণা নদী উপত্যকায় বর্তমান দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তর তামিলনাড়ুর মধ্যে প্রসারিত পালনাড়ু অঞ্চলে পল্লবরা নিজেদের রাজত্ব শুরু করে। পল্লব বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ মহাবলীপুরমের প্রস্তর-মন্দিরগুলির নির্মাণকাজ শুরু করেন। তার পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মণ ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাস্ত করে চালুক্য রাজধানী বাতাপী ভষ্মীভূত করেন। ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে পল্লব ও পাণ্ড্যরা দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।

বনবাসীর কদম্ব[সম্পাদনা]

পঞ্চকূট বাসদী, নবম শতাব্দী জৈন, কম্বদহল্লি, মাণ্ড্য জেলা, কর্ণাটক

৩৪৫ থেকে ৫২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রাজত্ব করেন কদম্বরা। তাদের রাজ্য বর্তমান কর্ণাটক অঞ্চলে প্রসারিত ছিল। বনবাসী ছিল তাদের রাজধানী। গোয়াহানাগল অবধি প্রসারিত হয়েছিল তাদের রাজ্য। ৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ময়ূর শর্মা এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। কদম্বরা বনবাসী, বেলগাম, হালসি ও গোয়ায় অনেক নয়নাভিরাম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। হালমিদি লেখ (৪৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ও বনবাসী তাম্রমুদ্রা থেকে জানা যায় কদম্বরাই প্রথম শাসনকর্তা যাঁরা প্রশাসনিক কাজে কন্নড় ভাষা ব্যবহার করতেন। বাদামীর চালুক্য রাজবংশের উত্থানের পর ৫২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী পাঁচ শতাব্দী কদম্বরা চালুক্য সামন্ত রাজা হিসেবে রাজত্ব চালিয়ে যায়।

তলকড়ের গঙ্গ রাজবংশ[সম্পাদনা]

শ্রবণবেলগোলার গোতমেশ্বর মূর্তি, খ্রিষ্টীয় ৯৮২-৮৩ অব্দ, গঙ্গ রাজ্যের মন্ত্রী ও সেনাপতি চামুন্ডারায় কর্তৃক নির্মিত।

৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে দক্ষিণ কর্ণাটকে রাজত্ব করে গঙ্গ রাজবংশ। পরে দশম শতাব্দী পর্যন্ত চালুক্যরাষ্ট্রকূট রাজবংশের সামন্ত রূপে তারা উক্ত অঞ্চলে রাজত্ব চালিয়ে যায়। সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতনের পর দক্ষিণ কর্ণাটকের গঙ্গাবাদীতে স্বাধীন গঙ্গ রাজ্য স্থাপিত হয়। এই রাজ্য ছিল উত্তর কর্ণাটকের কদম্ব রাজ্যের সমসাময়িক। উল্লেখ্য, কদম্বরাও গঙ্গদেরই মতো সাতবাহন সামন্ত ছিল এবং সাতবাহনদের পতনের পর স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করে। তাদের রাজ্যের নাম ছিল গঙ্গাবাদী। বর্তমান কর্ণাটকের মহীশূর, চামরাজনগর, টুমকুর, কোলার, মাণ্ড্যবেঙ্গালুরু জেলা নিয়ে গঠিত ছিল গঙ্গাবাদী রাজ্য। প্রথম দিকে গঙ্গ রাজ্যের রাজধানী ছিল কোলার শহরে। পরে মহীশূরের নিকটস্থ তলকড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। কন্নড় সাহিত্যে গঙ্গ রাজ্যের রাজা দুর্বিনীত, রাজা দ্বিতীয় শিবমার ও মন্ত্রী-সেনাপতি চামুণ্ডারায়ের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রবণবেলগোলার বিখ্যাত জৈন স্মারকটি গঙ্গ রাজাদেরই নির্মিত।

বাদামীর চালুক্য[সম্পাদনা]

বিরূপাক্ষ মন্দির, বাদামী, কর্ণাটকবাদামী চালুক্য স্থাপত্যের নিদর্শন।

চালুক্য রাজবংশের যথার্থ প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রথম সার্বভৌম রাজা ছিলেন প্রথম পুলকেশী। তার রাজধানী ছিল বাদামী (বর্তমান বিজাপুর, কর্ণাটক)। তার পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে চালুক্য রাজসিংহাসনে আরোহণ করেন। দ্বিতীয় পুলকেশী ৬৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। ৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সম্রাট হর্ষবর্ধনকে যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন। পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মণও তার হস্তে পরাজিত হন। ৫৪৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কাবেরীনর্মদা নদীর মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে চালুক্যরা রাজত্ব করে। তাদের রাজত্বকালে বিশেষ চালুক্য স্থাপত্যশৈলীর উন্মেষ ঘটেছিল। পট্টডকল, আইহোলবাদামীতে চালুক্যরাজারা একাধিক প্রসিদ্ধ স্মারক নির্মাণ করেন। এই সকল মন্দিরের স্থাপত্যে বেসর স্থাপত্যশৈলীর বিবর্তন লক্ষিত হয়।

বেঙ্গীর চালুক্যরা পূর্ব চালুক্য নামে পরিচিত ছিল। বাদামীর চালুক্যদের সমসাময়িক কালেই তারা দক্ষিণ ভারতের পূর্ব উপকূলভাগের বর্তমান বিজয়ওয়াড়া (অন্ধ্রপ্রদেশ) অঞ্চলে রাজত্ব করত। দ্বিতীয় পুলকেশীর ভ্রাতা কুব্জ বিষ্ণুবর্ধন পূর্ব চালুক্য রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় পাঁচশো বছর পূর্ব চালুক্যরা রাজত্ব চালায়। তারা ছিল চোলদের সহকারী।

মান্যখেতের রাষ্ট্রকূট[সম্পাদনা]

রাষ্ট্রকূট স্থাপত্যের নিদর্শন – কৈলাসনাথ মন্দির, ইলোরা গুহা, মহারাষ্ট্র

রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের রাজত্বকাল ৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। রাষ্ট্রকূটদের রাজধানী ছিল গুলবর্গের মান্যখেত। রাষ্ট্রকূটরাজ প্রথম অমোঘবর্ষের (৮১৪-৭৮ খ্রিষ্টাব্দ) রাজত্বকালে রাষ্ট্রকূটদের চূড়ান্ত সমৃদ্ধি দেখা যায়। প্রথম অমোঘবর্ষকে দক্ষিণ ভারতের অশোক অভিধায় অভিহিত করা হয়ে থাকে। বাদামীর চালুক্যদের পতনের পর রাষ্ট্রকূটদের উত্থান ঘটে এবং গুজরাটের প্রতিহারবাংলার পাল রাজাদের সঙ্গে উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। ইলোরার কৈলাস মন্দির সহ একাধিক নয়নাভিরাম প্রস্তরখোদিত মন্দির নির্মাণ করেছিলেন রাষ্ট্রকূট রাজারা। আদিকবি পম্পা, শ্রীপোন্নাশিবকোটি আচার্য প্রমুখেরা এই যুগেই কন্নড় সাহিত্যের সমৃদ্ধি সাধন করেন। কন্নড় সাহিত্যের প্রাচীনতম বিদ্যমান ধ্রুপদী গ্রন্থ কবিরাজমার্গ রচনা করেন রাজা প্রথম অমোঘবর্ষ

কল্যাণীর চালুক্য[সম্পাদনা]

মহাদেব মন্দির, ইতাগি, কোপ্পাল জেলা – ১১১২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মন্দিরটি নগর উপরিকাঠামো সহ দ্রাবিড় স্থাপত্য নির্মাণশৈলীর একটি উদাহরণ।

বাদামীর চালুক্য রাজবংশের উত্তরসূরীরা পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। তাদের সাম্রাজ্য ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৯৫ খ্রিষ্টাব্দ অবধি স্থায়ী হয়। তাদের রাজধানী ছিল কল্যাণী (বর্তমান বাসব কল্যাণ, কর্ণাটক)। রাষ্ট্রকূটদের পতনের পর পশ্চিম চালুক্যদের উদ্ভব হয়। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য। কল্যাণী চালুক্যরা গোদাগ স্থাপত্যশৈলীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই স্থাপত্যশৈলীর নানা নিদর্শন ছড়িয়ে আছে কর্ণাটকের গোদাগ, ধারওয়াড়, কোপ্পাল, হাভেরি জেলায়রন্নাদ্বিতীয় নাগবর্মা প্রমুখ কন্নড় কবির পৃষ্ঠপোষকতাও করেন তারা। কল্যাণী চালুক্যদের রাজত্বকাল ছিল কন্নড় সাহিত্যের সুবর্ণযুগ। কন্নড় কবিতার বচন সাহিত্য শৈলীটি এই যুগেই উদ্ভূত হয়।

হোয়েসল[সম্পাদনা]

কেশব মন্দির, সোমনাথপুরা, কর্ণাটক

কল্যাণীর চালুক্যদের অধীনে হোয়েসল শাসনের সূত্রপাত ঘটে। পরে ধীরে ধীরে তারা নিজস্ব এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। গঙ্গাবাদীর পশ্চিমাঞ্চলের শাসক নৃপকাম হোয়েসল হোয়েসল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তার উত্তরাধিকারী প্রথম বল্লাল বেলুর থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। বিষ্ণুবর্ধন হোয়েসল (১১০৬-৫২ খ্রিষ্টাব্দ) নোলম্ব অঞ্চল জয় করে নোলম্বাবাদীগোণ্ড উপাধি গ্রহণ করেন। দক্ষিণ ভারতের বহু উল্লেখযোগ্য মন্দিরের নির্মাতা ছিলেন কর্ণাটকের হোয়সল বংশের রাজারা। তাদের রাজত্বকালে বেসর স্থাপত্যশৈলী চরম বিকাশ লাভ করে। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৩৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিন শতাব্দীকাল তারা কর্ণাটক শাসন করেছিলেন। হোয়েসল রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজারা ছিলেন বিষ্ণুবর্ধন, দ্বিতীয় বীরবল্লালতৃতীয় বীরবল্লাল। হোয়েসল যুগে এই অঞ্চলে জৈনধর্মও বিকাশ লাভ করে। শ্রীবৈষ্ণবধর্মের প্রতিষ্ঠাতা রামানুজ হোয়েসল রাজ্যে নিজ ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন। হোয়সলরা কন্নড় ও সংস্কৃত সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বেলুর, হালেবিড়ু, সোমনাথপুরা, বেলাবাদী, অমৃতপুরা প্রভৃতি অঞ্চলে তারা বহু মন্দির নির্মাণ করে খ্যাতি লাভ করেন। রুদ্রভট্ট, জন্না, রাঘবাঙ্কহরিহর প্রমুখ কবিরা এই যুগে একাধিক ধ্রুপদী কন্নড় গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

কাকতীয়[সম্পাদনা]

একাদশ শতাব্দীতে চালুক্যদের পতনের পর কাকতীয় রাজবংশের উত্থান ঘটে। দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কাকতীয় দুর্জয় গোষ্ঠী স্বাধীনতা ঘোষণা করে রাজ্যবিস্তারে মনোযোগী হয়।[৮] এই শতাব্দীর শেষভাগে রাজ্যের সীমা বঙ্গোপসাগর স্পর্শ করে গোদাবরীকৃষ্ণা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রসারিত হয়। কাকতীয় সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা গণপতিদেবের রাজত্বকালে এই সাম্রাজ্য সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করে। বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল এবং ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়কর্ণাটক রাজ্যের কতক অঞ্চল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। গণপতিদেবের পর তার কন্যা রুদ্রমাম্বা সিংহাসনে আরোহণ করেন। কাকতীয় রাজবংশ তিন শতাব্দী ধরে রাজত্ব করেছিল। তাদের রাজধানী ছিল ওয়ারঙ্গল। চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কাকতীয় সাম্রাজ্য আলাউদ্দিন খিলজির অধীনস্থ দিল্লি সুলতানির দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কয়েক বছর দিল্লিকে রাজস্বও প্রদান করে এই রাজ্য। কিন্তু ১৩২৩ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের বাহিনী এই সাম্রাজ্য অধিকার করে নেয়।

মুসুনুরি[সম্পাদনা]

কাকতীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর মুসুনুরি নায়ক নামে পরিচিত দুই তুতো-ভাই দিল্লি সুলতানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ওয়ারঙ্গল পুনর্দখল করেন। তারা সমগ্র তেলুগুভাষী অঞ্চলকে নিজেদের শাসননিয়ন্ত্রণে ঐক্যবদ্ধ করেন। মাত্র ৫০ বছর স্থায়ী হলেও নায়ক শাসনকাল ছিল দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ যুগবিভাজিকা। এই শাসন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের উত্থানকে ত্বরান্বিত করে; যে সাম্রাজ্য পরবর্তী পাঁচশো বছর হিন্দুধর্মকে রক্ষা করে।

মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

ইসলামি রাজ্যগুলির উত্থান[সম্পাদনা]

বিজয়নগর স্থাপত্যের নিদর্শন – ভিত্তল মন্দিরের প্রস্তররথ, হাম্পি, কর্ণাটক

আদি মধ্যযুগে দক্ষিণ ভারতে মুসলমান শক্তিগুলির উদ্ভব ঘটে। ১৩২৩ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লি সুলতানির হাতে ওয়ারঙ্গলের কাকতীয় রাজবংশের পরাজয় এবং ১৩৩৩ খ্রিষ্টাব্দে হোয়েসল সাম্রাজ্যের পরাজয় দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই যুগের সবচেয়ে বড় সংঘাতটি ছিল গুলবর্গের বাহমানি সালতানাত ও বিজয়নগরের (বর্তমান হাম্পি) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সংঘাত। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাহমনি সাম্রাজ্য ভেঙে গিয়ে পাঁচটি পৃথক রাজ্য সৃষ্টি হয়। এগুলি হল আহমেদনগর, বেরার, বিদার, বিজাপুরগোলকুন্ডা। একত্রে এই পাঁচটি রাজ্যকে বলা হত দক্ষিণাত্য সালতানাত

বিজয়নগর সাম্রাজ্য[সম্পাদনা]

নরসিংহ মূর্তি, হাম্পি, কর্ণাটক

দক্ষিণ ভারতে মুসলমান আগ্রাসন রোধের উদ্দেশ্যে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বিজয়নগর সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। প্রায় ২০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল এই সাম্রাজ্য। পারসিক পণ্ডিত আবদুর রাজ্জাক এই সাম্রাজ্য ভ্রমণ করে তার ভ্রমণকাহিনি লিপিবদ্ধ করেন। তুলুব রাজা কৃষ্ণদেবরায়ের রাজত্বকালে এই সাম্রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। কৃষ্ণদেবরায় ছিলেন শিল্পকলা, সংগীত, নৃত্য ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক। তিনি নিজে ছিলেন কন্নড় ভাষার এক বিশিষ্ট কবি। পর্তুগিজদের সঙ্গে বিজয়নগর সাম্রাজ্য সক্রিয় বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। পর্তুগিজ বণিক ডোমিনগো পিজ ১৫২০-এর দশকে বিজয়নগরের রাজধানীতে অবস্থান করেন। তার রচনা থেকে এই রাজ্যের সমৃদ্ধি, জাঁকজমক ও মণিমাণিক্যে পূর্ণ বাজারের কথা জানা যায়।

১৫৬৫ সালে তালিকোটার যুদ্ধে দক্ষিণাত্য সালতানাতর সম্মিলিত বাহিনী বিজয়নগর সাম্রাজ্য অধিকার করে নেয়। রাজধানী হাম্পির ধ্বংসাবশেষ আজও দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় চোদ্দো বর্গমাইল জায়গা জুড়ে এই শহরটি অবস্থিত ছিল। তেলুগু সাহিত্য এই যুগে চূড়ান্ত সমৃদ্ধি লাভ করে। কন্নড় হরিদাস আন্দোলন এবং সাহিত্য হিন্দু ঐতিহ্যগুলির বিকাশে জোর দেয়।

বিজয়নগরের পতন ও বাহমানি সালতানাত'র বিভাজনের পর গোলকোন্ডার কুতুব শাহি রাজবংশ ও হায়দ্রাবাদ রাজ্য এই অঞ্চলের মুখ্য শক্তিরূপে উদ্ভূত হয়। কুতুব শাহি শাসন স্থায়ী হয় মধ্য সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত। এরপর মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এই অঞ্চল আক্রমণ করেন। ১৬৮৭ সালে গোলকোন্ডা বিজিত হয়।

নায়ক রাজ্যসমূহ[সম্পাদনা]

কেলাদি নায়ক শিল্পকলায় মন্তপ – অঘোরেশ্বর মন্দির, শিমোগা জেলা, কর্ণাটক

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের সামরিক ও প্রশাসনিক শাসনভার নায়ক নামে এক শ্রেণীর শাসনকর্তাদের হাতে ন্যস্ত ছিল। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের পর এই সকল স্থানীয় শাসনকর্তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করে নিজ নিজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল মাদুরাই নায়ক, তাঞ্জোর নায়ক, শিমোগার কেলাদি নায়ক, চিত্রদূর্গ নায়কমহীশূর রাজ্য। তাঞ্জাবুর নায়ক রাজবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রঘুনাথ নায়ক (১৬০০-৪৫)। তিনি বৈদেশিক বাণিজ্যে উৎসাহ দান করেন এবং ১৬২০ সালে তরঙ্গমবাদীর ডেনসবর্গে ড্যানিশ কুঠি স্থাপনে সম্মতি দেন। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইউরোপীয়রা জড়িয়ে পড়তে শুরু করেন। ডাচদের সাফল্য তাঞ্জাবুর অঞ্চলে বাণিজ্যবিস্তারে ইংরেজদেরও অনুপ্রাণিত করে। যার ফল হয় সুদূরপ্রসারী। বিজয় রাঘব (১৬৩১-৭৫) ছিলেন তাঞ্জাবুর রাজবংশের সর্বশেষ রাজা। নায়ক রাজারা দেশের কিছু অতিপ্রাচীন মন্দির পুনর্নির্মাণ করান। বিদ্যমান মন্দিরগুলিকে স্তম্ভযুক্ত কক্ষ ও বৃহদাকার সিংহদ্বার দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ধর্মীয় স্থাপত্যের এই বিস্ময়কর নিদর্শনগুলি আজও দেখতে পাওয়া যায়। মহীশূর রাজ্য, চিত্রদূর্গ নায়ক গোষ্ঠীর মাধুকরী নায়ক ও কেলাদি রাজবংশের ভেঙ্কটপ্পা নায়ক রাজ্যের কান্তিরব নরসরজ ওদেয়ার ও টিপু সুলতান ছিলেন কন্নড় দেশের উত্তর-বিজয়নগর রাজাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য।

মাদুরাইতে তিরুমালাই নায়ক ছিলেন সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ তাজা। তিনি ছিলেন শিল্প ও স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক। তার রাজত্বকালে মাদুরাই ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অনেক নতুন মন্দির ও অন্যান্য সৌধ প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলির মধ্যে মীনাক্ষী মন্দির, গোপুরম ও তিরুমালাই নায়ক প্রাসাদ উল্লেখযোগ্য। ১৬৫৯ সালে তার মৃত্যু হয়। এই রাজবংশের অপর প্রসিদ্ধ শাসক ছিলেন রানি মঙ্গম্মল। পরবর্তীকালে মাদুরাই নায়ক রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিবাদের সুযোগে বিখ্যাত মারাঠা শাসক শিবাজী ভোঁসলে এবং মহীশূরের চিক্কাদেব রায় ও অন্যান্য মুসলমান শাসকরা এই রাজ্য আক্রমণ করেন। ফলে ১৭৩৬ সালে এই রাজ্যের পতন ঘটে।

তাঞ্জাবুর নায়ক রাজবংশ সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল। পরে তাদের রাজ্য মাদুরাই শাসকরা দখল করে নেয়। মারাঠারা সুযোগ বুঝে তাদের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন এই অঞ্চলে। তাঞ্জাবুর নায়ক রাজারা ছিলেন শিল্পকলা ও তেলুগু সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষক।

মারাঠাদের উত্থান[সম্পাদনা]

দক্ষিণ ভারতের উত্তরাংশে শিবাজী ও তার উত্তরসূরীদের অধীনে মারাঠা সামরিক শক্তির উত্থান দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমে গঞ্জাম ও দক্ষিণে তাঞ্জাবুর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠা শক্তিও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে আসে। দক্ষিণ ভারতীয় শাসকরা দিল্লির শাসকদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। বিজয়নগর থেকে উৎসারিত মহীশূরের ওদেয়ার রাজ্য পরবর্তী কয়েক দশক ক্ষমতা দখল করে রাখে এবং দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণাংশে নিজ প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়। মহীশূরের উত্তর ও পশ্চিমে স্থিত অঞ্চলগুলিতে আধিপত্য বিস্তার করেন হায়দ্রাবাদের আসফ জাহিস। বর্তমান কর্ণাটক অঞ্চল মারাঠাদের অধীনে থেকে যায়। এইভাবেই মধ্যযুগের শেষ পর্বে দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল মহীশূর, হায়দ্রাবাদ ও পুণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসনাধীনে চলে আসে।

১৬৭৫ সালে বিজাপুর সেনাবাহিনীর একটি ফৌজ তাঞ্জাবুরে আসে মাদুরাই নায়কের শাসন থেকে বল্লম পুনরুদ্ধারে নায়ক রাজা বিজয়রাঘব নায়ককে সাহায্যকল্পে। কিন্তু এই ফৌজই বিজয়রাঘব নায়ককে হত্যা করে এবং একোজি তাঞ্জাবুর রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এইভাবে তাঞ্জাবুরে মারাঠা শাসনের প্রবর্তন ঘটে। একোজির পর তার তিন পুত্র তাঞ্জাবুর শাসন করেন। এঁরা হলেন শাহজী, প্রথম সারফোজী, থুক্কোজী (প্রথম থুলজ)। তাঞ্জাবুরের শ্রেষ্ঠ মারাঠা শাসক হলেন দ্বিতীয় সারফোজী (১৭৯৮-১৮৩২)। তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সংস্কৃতি চর্চায়। তারই প্রচেষ্টায় তাঞ্জাবুর প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়। তিনি নিজের প্রাসাদে সরস্বতী মহল লাইব্রেরি স্থাপন করেছিলেন।

আধুনিক যুগ[সম্পাদনা]

টিপু সুলতান - মহীশূরের শাসনকর্তা (১৭৮২-৯৯)

ঔপনিবেশিক যুগ[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দক্ষিণ ভারতের সামরিক আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ফরাসিব্রিটিশদের মধ্যে এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে এই যুগটি ছিল অরাজকতার যুগ। স্থানীয় শাসকদের হাত থেকে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় এই দুই ইউরোপীয় শক্তির হাতে। ফরাসি ও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে ভাড়াটে সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। দুর্গ ও শহরের শাসনাধিকার প্রায়শই হাতবদল হতে থাকে। এমনকি প্রাথমিকভাবে লুটের মাধ্যমে ফৌজের জওয়ানদের বেতন দেওয়া হতে থাকে। এই সময় চারটি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ ও তিনটি ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে মারাঠা, মহীশূর ও হায়দ্রাবাদ হয় ইংরেজ নয় ফরাসিদের পক্ষ নেয়। ধীরে ধীরে হায়দ্রাবাদের সহায়তায় এই অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য স্থাপিত হয় এবং মহীশূর দেশীয় রাজ্য হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত হয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বদলে কূটনীতির বিনিময়ে স্বায়ত্তশাসনে রাজি হয় হায়দ্রাবাদের নিজাম রাজ্য। মধ্য ও উত্তর ভারতে প্রসারিত মারাঠা রাজ্য ভেঙে যায় এবং তার অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

ব্রিটিশ দক্ষিণ ভারত[সম্পাদনা]

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, ১৯৪৪।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে দক্ষিণ ভারত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, হায়দ্রাবাদ রাজ্য, মহীশূর রাজ্য, তিরুবিথামকুর (বা ত্রিবান্দ্রম), কোচিন, বিজিয়ানগরম সহ একাধিক দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত ছিল। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। দেশীয় রাজ্যগুলি মোটামুটি অভ্যন্তরীণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্যের রাজধানীতে শাসকদের কাজকর্মের তদারকি ও প্রতিবেদন করার জন্য একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিযুক্ত থাকতেন। রাজধানীর নিকটস্থ ক্যান্টনমেন্টে ব্রিটিশ ফৌজ মোতায়েন করা থাকত সম্ভাব্য সব রকম বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে। এই সব রাজ্যের শাসকরা ব্রিটিশ রাজশক্তির সর্বাধিকার নীতি মেনে চলতেন। বৃহদায়তন দেশীয় রাজ্যগুলি নিজস্ব মুদ্রা ও রেলব্যবস্থা চালু করেছিল। এই রেলপথগুলি প্রতিবেশী রাজ্যগুলির অব্যবহার্য করার জন্য নন-স্ট্যান্ডার্ড গেজে তৈরি করা হত। ব্রিটিশ যুগেই দক্ষিণ ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে চাকফি চাষ শুরু হয়। এগুলি এই অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়।

স্বাধীনোত্তর যুগ[সম্পাদনা]

১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠনের পূর্বে দক্ষিণ ভারত

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট পূর্বতন ব্রিটিশ ভারত পাকিস্তানভারত অধিরাজ্যে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৪৭-৫০ মধ্যবর্তী সময়কালে একাধিক দেশীয় রাজ্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে দক্ষিণ ভারতে একাধিক নতুন রাজ্যের উদ্ভব হয়। ব্রিটিশ দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি এবং দেশীয় রাজ্য বঙ্গনপল্লি, পুদুকোট্টাই ও সন্দুর নিয়ে গঠিত হয় মাদ্রাজ রাজ্য। মাদ্রাজ রাজ্যটিই হয় দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম রাজ্য। অন্যান্য যে রাজ্যগুলি গঠিত হয়, সেগুলি হল কুর্গ রাজ্য (ব্রিটিশ ভারতের পূর্বতন কুর্গ প্রদেশ), মহীশূর রাজ্য (পূর্বতন দেশীয় রাজ্য মহীশূর) ও সংযুক্ত ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন রাজ্য (পূর্বতন দেশীয় রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর ও কোচিন)। পূর্বতন দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদ নিয়ে হায়দ্রাবাদ রাজ্য গঠিত হয় এবং বোম্বাই প্রেসিডেন্সি পরিণত হয় বোম্বাই রাজ্যে

দক্ষিণ ভারত (২০০৯)

১৯৫৩ সালে মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরাংশের তেলুগু-ভাষী জেলাগুলিকে নিয়ে ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য করার চাপ আসতে থাকে নেহেরু সরকারের উপর। ১৯৫৩ সালের ১ অক্টোবর, মাদ্রাজ রাজ্যের উত্তরাংশের জেলাগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় অন্ধ্র রাজ্য। এই রাজ্যের রাজধানী হয় কুর্নুল। এর পরই রাজ্যপুনর্গঠনের দাবিটি জোরালো হয়ে ওঠে এবং জাতীয় স্তরে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন স্থাপিত হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় সংসদ ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস করে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য স্থাপনে উদ্যোগী হয়। অন্ধ্র রাজ্যের নতুন নামকরণ হয় অন্ধ্রপ্রদেশ; এবং এই রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয় হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলুগুভাষী তেলেঙ্গানা অঞ্চলটি। কুর্গ, হায়দ্রবাদ রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম ও বোম্বাই রাজ্যের দক্ষিণাংশের কন্নড়-ভাষী জেলাগুলি মহীশূর রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়। ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের সঙ্গে মাদ্রাজ রাজ্যের মালাবারকাসারাগড় জেলাদুটি যুক্ত হয়ে গঠিত হয় নতুন মালায়লম-ভাষী রাজ্য কেরল। ১৯৫৬ সালে পর দক্ষিণ ভারতের তামিল-ভাষী অঞ্চলগুলিই মাদ্রাজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকে। ১৯৬৮ সালে এই রাজ্যের নতুন নামকরণ হয় তামিলনাড়ু। ১৯৭২ সালে মহীশূর রাজ্যের নতুন নাম হয় কর্ণাটক। ১৯৬১ সালে গোয়া সহ সমগ্র পর্তুগিজ ভারত ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮৭ সালে গোয়া ভারতের রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৫০-এর দশকেই ভারতের ফরাসি উপনিবেশগুলি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত হয়। দক্ষিণ ভারতের চারটি ফরাসি উপনিবেশকে একত্রিত করে পন্ডিচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. One such was found at Krishnagiri in Tamil Nadu—"Steps to preserve megalithic burial site"The Hindu, Oct 6, 2006। The Hindu Group। সেপ্টেম্বর ১৮, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-১৫ 
  2. K.A.N. Sastri, A History of South India, pp. 49–51
  3. The Bhattiprolu Inscriptions, G. Buhler, 1894, Epigraphica Indica, Vol.2
  4. Indian Epigrapghy and South Indian Scripts, C. S. Murthy, 1952, Bulletins of the Madras Government Museum, New Series IV, General Section, Vol III, No. 4
  5. Antiquity of Telugu language and script: http://www.hindu.com/2007/12/20/stories/2007122054820600.htm আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ৩০ মে ২০১২ তারিখে
  6. "The Hindu : Andhra Pradesh / Hyderabad News : Epigraphist extraordinaire"। ২৬ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯ 
  7. Kanakasabhai, V (১৯৯৭)। The Tamils Eighteen Hundred Years Ago। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 8120601505 
  8. The History of Andhras, Durga Prasad (http://igmlnet.uohyd.ernet.in:8000/gw_44_5/hi-res/hcu_images/G2.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Nilakanta Sastri, K.A. (২০০০)। A History of South India। New Delhi: Oxford University Press। 
  • Nilakanta Sastri, K.A. (২০০০)। Advanced History of India। New Delhi: Allied Publishers Ltd।  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  • Chandra, Bipin (১৯৯৯)। The India after Independence। New Delhi: Penguin। 
  • P. T. Srinivasa Iyengar's "History of the Tamil from the earliest times to 600 AD", Madras, 1929
  • A. L. Basham's "A Wonder that was India", London, 1954
  • Basham, A. L. (১৯৮১), The Wonder That Was India (3rd সংস্করণ), Calcutta: Rupa 
  • Chopra, P.N.; Ravindran, T.K.; Subrahmanian, N. (২০০৩), History Of South India - Ancient Medieval & Modern, New Delhi: Sultan Chand & Company, আইএসবিএন 8121901537 
  • Krishnamurti, C.R (১৯৯৮), Thamizh Literature Through the Ages: A socio-cultural perspective, Pondicherry: Radhika Publishers 
  • Nilakanta Sastri, K. A. (১৯৭৫), A History of South India: From Prehistoric Times to the Fall of Vijayanagar (4th সংস্করণ), New Delhi: Oxford University Press 
  • Marr, John Ralston (১৯৮৫), The Eight Anthologies, Madras: Institute of Asian Studies 
  • Meenakshisundaran, T.P. (১৯৬৫), History of Tamil Literature, Publications in linguistics - Annamalai University, Chidambaram: Annamalai University 
  • Nagaswamy, R. (২০০৪), "Sangam Poetic traditions under the Imperial Cholas", Chevillard, Jean-Luc; Wilden, Eva, South-Indian Horizons: Felicitation Volume for François Gros on the occasion of his 70th birthday, Publications du Département d'Indologie - 94, Pondicherry: Institut Français de Pondichéry / École Française d'Extrême-Orient, পৃষ্ঠা 487–494, আইএসএসএন 0073-8352, আইএসবিএন 2855396301 
  • Narasimhaiah, B. (১৯৮০), Neolithic and Megalithic Cultures in Tamil Nadu, Delhi: Sundeep Prakashan, আইএসবিএন 8175740485 
  • Ramaswamy, Sumathi (১৯৯৯), "Catastrophic Cartographies: Mapping the Lost Continent of Lemuria", Representations, 67 (67): 92–129, ডিওআই:10.1525/rep.1999.67.1.01p0048w 
  • Ramaswamy, Sumathi (২০০৪), The Lost Land of Lemuria: Fabulous Geographies, Catastrophic Histories, Berkeley: University of California Press, আইএসবিএন 0520244400 
  • Zvelebil, Kamil (১৯৭৩a), "The Earliest Account of the Tamil Academies", Indo-Iranian Journal, 15 (2): 109–135, ডিওআই:10.1007/BF00157289 
  • Zvelebil, Kamil (১৯৭৩b), The Smile of Murugan: On Tamil Literature of South India, Leiden: Brill, আইএসবিএন 9004035915 
  • Zvelebil, Kamil (১৯৭৪), Tamil Literature, A History of Indian Literature, Vol. X Fasc. 1, Wiesbaden: Otto Harrassowitz, আইএসবিএন 3447015829 
  • Carswell, John. 1991. "The Port of Mantai, Sri Lanka." RAI, pp. 197–203.
  • Hill, John E. 2004. The Peoples of the West from the Weilüe 魏略 by Yu Huan 魚豢: A Third Century Chinese Account Composed between 239 and 265 CE. Draft annotated English translation. [১]
  • Husaini, A.Q. (১৯৭২)। History of The Pandya Country 
  • Keay, John (২০০০) [2001]। India: A history। India: Grove Press। আইএসবিএন 0802137970 
  • Nagasamy, R (১৯৮১)। Tamil Coins — A study। Institute of Epigraphy, Tamilnadu State Dept. of Archaeology। 
  • Sastri, K. A. Nilakanta (১৯২৯)। The Pandyan Kingdom: From the Earliest Times to the Sixteenth Century 
  • Purushottam, Vi. Pi. (১৯৮৯)। Cankakala Mannar Kalanilai Varalaru 
  • Ray, Himanshu Prabha, ed. 1996. Tradition and Archaeology: Early Maritime Contacts in the Indian Ocean. Proceedings of the International Seminar Techno-Archaeological Perspectives of Seafaring in the Indian Ocean 4th cent. B.C. – 15th cent. A.D. New Delhi, February 28 – March 4, 1994. New Delhi, and Jean-François SALLES, Lyon. First published 1996. Reprinted 1998. Manohar Publishers & Distributors, New Delhi.
  • Reddy, P. Krishna Mohan. 2001. "Maritime Trade of Early South India: New Archaeological Evidences from Motupalli, Andhra Pradesh." East and West Vol. 51 – Nos. 1-2 (June 2001), pp. 143–156.
  • Shaffer, Lynda (১৯৯৬)। Maritime Southeast Asia to 1500 (Sources and Studies in World History)। Armonk, N.Y: M.E. Sharpe। আইএসবিএন 1-56324-144-7 
  • Tripathi, Rama Sankar (১৯৬৭)। History of Ancient India। India: Motilal Banarsidass Publications। আইএসবিএন 8-120-80018-4 
  • Chopra, P.N (২০০৩) [2003]। History of South India ; Ancient, Medieval and Modern। New Delhi: S. Chand & Company Ltd। আইএসবিএন 81-219-0153-7  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  • Das, Sisir Kumar (১৯৯৫) [1995]। History of Indian Literature (1911–1956) : Struggle for Freedom - Triumph and Tragedy। New Delhi: Sahitya Akademi। আইএসবিএন 81-7201-798-7 
  • Gupta, A.N। Sarojini Naidu's Select Poems, with an Introduction, Notes, and Bibliography। Prakash Book Depot।  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  • Harle, J.C (১৯৯৪)। The art and architecture of the Indian Subcontinent। New Haven, Conn: Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-06217-6 
  • Hermann, Kulke (২০০১) [2000]। A History of India। Routledge। আইএসবিএন 0-415-32920-5  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  • Keay, John। India: A History। New Delhi: Harper Collins Publishers। আইএসবিএন 0-002-55717-7 
  • Majumdar, R.C (১৯৮৭)। Ancient India। India: Motilal Banarsidass Publications। আইএসবিএন 8-120-80436-8 
  • Meyer, Milton Walter (১৯৯৭)। Asia: a concise history। Lanham, Md: Rowman & Littlefield Publishers। আইএসবিএন 0-8476-8063-0 
  • Mitter, Partha (২০০১)। Indian art। Oxford [Oxfordshire]: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-284221-8 
  • Nagasamy, R (১৯৭০)। Gangaikondacholapuram। State Department of Archaeology, Government of Tamil Nadu। 
  • Nagasamy, R (১৯৮১)। Tamil Coins - A study। Institute of Epigraphy, Tamilnadu State Dept. of Archaeology। 
  • K.A. Nilakanta Sastri, K.A (১৯৮৪) [1935]। The CōĻas। Madras: University of Madras। 
  • K.A. Nilakanta Sastri, K.A (২০০২) [1955]। A History of South India। New Delhi: OUP। 
  • Scharfe, Hartmut (২০০২)। Education in Ancient India। Boston: Brill Academic Publishers। আইএসবিএন 90-04-12556-6 
  • Smith, Vincent H (২০০৬)। The Edicts of Asoka। Kessinger Publishing। আইএসবিএন 1-4286-4431-8 
  • "South Indian Inscriptions"Archaeological Survey of India। What Is India Publishers (P) Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-৩০ 
  • Stein, Burton (১৯৯৮)। A history of India। Cambridge, MA: Blackwell Publishers। আইএসবিএন 0-631-20546-2 
  • Thapar, Romila (১৯৯৫)। Recent Perspectives of Early Indian History। Columbia, Mo: South Asia Books। আইএসবিএন 81-7154-556-4 
  • Tripathi, Rama Sankar (১৯৬৭)। History of Ancient India। India: Motilal Banarsidass Publications। আইএসবিএন 8-120-80018-4 
  • Vasudevan, Geeta (২০০৩)। Royal Temple of Rajaraja: An Instrument of Imperial Cola Power। New Delhi: Abhinav Publications। আইএসবিএন 81-7017-383-3 
  • Various (১৯৮৭)। Encylopaedia of Indian literature, vol. 1। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 8126018038 
  • Various (১৯৮৮)। Encylopaedia of Indian literature, vol. 2। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 8126011947 
  • Wolpert, Stanley A (১৯৯৯)। India। Berkeley: University of California Press। আইএসবিএন 0-520-22172-9 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]