বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রাচীন গ্রিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পার্থেনন, আথেনাকে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির। এটি অ্যাথেন্সের আক্রোপলিসে অবস্থিত। এটি প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক এবং কুতর্ক চিহ্নসমূহের একটি।

প্রাচীন গ্রিস হলো গ্রিস ইতিহাসের অন্তর্গত প্রাচীন সভ্যতা যা প্রাচীন যুগ খ্রিস্টপূর্ব ৮ম-৬ষ্ঠ শতাব্দীতে শুরু হয় এবং ধ্রুপদি সভ্যতা (আনুমানিক ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত বিরাজ করেছিল। এরপর পরই কালটি হচ্ছে প্রারম্ভিক মধ্যযুগ এবং বাইজেন্টাইন যুগ।[] প্রাচীন গ্রিসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল ধ্রুপদি গ্রিস যুগ, যা খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে ৫ম শতাব্দীতে সমৃদ্ধিলাভ করে। ধ্রুপদি গ্রিস শুরু হয় যখন একজন অ্যাথেনীয় নেতৃত্বে পারস্যদের উপদ্রব দমন করা হয়। মহামতি আলেকজান্ডারের বিজয়ের কারণে, হেলেনিস্টিক সভ্যতা মধ্য এশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরের শেষ পশ্চিম পর্যন্ত সমৃদ্ধিলাভ করে।

ধ্রুপদি গ্রিস সংস্কৃতি, বিশেষ করে দর্শন, রোমান সাম্রাজ্য উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করেছিল, যা ভূমধ্য অঞ্চল এবং ইউরোপে বিভিন্ন অংশে এর একটি সংস্করণের প্রভাব দেখা যায়। যার কারণে ধ্রুপদি গ্রিসেকে সাধারণত আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভিত্তি প্রদান যা দিগন্তকারী সংস্কৃতি বলে মনে করা হয়।[][][][]

কালপঞ্জি

[সম্পাদনা]

সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে (হোমারের প্রথমদিকের নথিভুক্তকৃত কবিতা সময়) ভূমধ্য অঞ্চলে ধ্রুপদি যুগের শুরু হয়েছে ধরা হয় এবং এটি ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে শেষ হয়।

প্রাচীন সময়কাল
জ্যোতির্বিদ্যার বছরের সংখ্যা
Antigonid dynastyAntipatrid dynastyDiadochiEponymous archonOrientalizing periodMycenaean GreeceLate Antiquityরোমান গ্রিসHellenistic periodClassical GreeceArchaic GreeceGreek Dark Ages
তারিখসমূহ আনুমানিক, বিস্তারিত জানার জন্য বিশেষ নিবন্ধের সাথে পরামর্শ করুন

ধ্রুপদি যুগের গ্রিসের ইতিহাসকে নিম্নলিখিত সময়সীমার উপবিভাজনে ভাগ করা যেতে পারে:[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

রোমান গ্রিস

[সম্পাদনা]

গ্রিক উপদ্বীপ খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬-তে করিন্থের যুদ্ধে গ্রিস বিজয়ের পর রোমান শাসনের অধীনে আসে। মেসিডোনিয়া রোমান প্রদেশ হয় যখন দক্ষিণ গ্রিস মেসিডোনিয়ার কর্তার নজরদারিতে পড়ে। যাইহোক, কিছু গ্রিক পোলাইস একটি আংশিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে এবং কর বাতিল করতে পরিচালনা করে। এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩-তে এই অঞ্চলের সাথে যুক্ত করা হয়। অ্যাথেন্স এবং অন্যান্য গ্রিক শহরসমুহ খ্রিস্টপূর্ব ৮৮-তে বিদ্রোহ শুরু করে এবং রোমান জেনারেল সুল্লা উপদ্বীপের বিদ্রোহ দমন করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৭-তে আউগুস্তুস আকিয়ার প্রদেশ হিসেবে উপদ্বীপ সংগঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রোমানদের গৃহযুদ্ধ ভূমিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

গ্রিস রোমান সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব প্রদেশের ছিল, সেখানে রোমান সংস্কৃতি বস্তুত গ্রিকও-রোমান বহুদিন ধরে ছিল। গ্রিক ভাষা পূর্বে এবং ইতালিতে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে কাজ করে, এবং অনেক গ্রিক বুদ্ধিজীবিদরা যেমন গেলন রোমে তাদের বেশিরভাগ কাজ প্রদর্শন করতেন।

ভূগোল

[সম্পাদনা]

উপনিবেশ

[সম্পাদনা]

আর্কাইক যুগে গ্রিসের জনসংখ্যা এর কৃষির যোগ্য ভূমির থেকেও বেড়ে গিয়েছিল।[] প্রায় ৭৫০ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে গ্রিক ২৫০ বছর ধরে প্রসারণ হয়, যার ফলে উপনিবেশ স্থাপিত হয় সবদিকেই। পূর্বে এশিয়া মাইনর এর এজিয়ন উপকূল প্রথমে উপনিবেশ হয়েছিল, এবং সাইপ্রাসথ্রেস উপকূলে, মারমারার সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর দক্ষিণ উপকূলে হয় এর পরপরই।

অবশেষে গ্রিক উপনিবেশ দূর উত্তরপূর্বে বর্তমানে যেটা ইউক্রেন এবং রাশিয়ার টেগানরগ পর্যন্ত পৌছে। পশ্চিমে ইলিরিয়া উপকূল, সিসিলি এবং দক্ষিণ ইতালি এবং তার ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ ফ্রান্স, কর্সিকা এবং আরো উত্তরপূর্বের স্পেনে পৌছে। গ্রিক উপনিবেশ মিশর এবং লিবিয়ায় ও পাওয়া যায়।

এখনকার স্যরাকুস, নেপলস, মার্সেই, ইস্তানবুল এবং বাইজেনশনের শুরু হয়েছিল গ্রিক উপনিবেশে। এইসব কলোনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গ্রিককে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ানোতে এবং সাহায্য করেছিল গ্রিক শহরগুলোতে দূরবর্তী বাণিজ্য করতে। এতে পুরাতন গ্রিসের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছিল।

সমাজ এবং রাজনীতি

[সম্পাদনা]

অর্থনীতি

[সম্পাদনা]

খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত গ্রিসের যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ছিল তা তখনকার সময়ের খুবই উন্নত ছিল। কিছু কিছু ইতিহাসবিদের মতে, এটি ছিল ইন্ডাসট্রিয়াল পূর্ব উন্নত অর্থনীতিগুলোর একটি। এটির ধারণা করা হয় একজন গ্রিক কর্মীর গড় মজুরি দ্বারা যেটি গমের মাপে ছিল ১২ কেজি। রোমান যুগে এটি ছিল ইজিপ্সিয়ানদের তুলনায় ৩ গুন বেশি (তারা পেত ৩.৭৫ কেজি)।[]

সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]

দর্শন

[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রিকের দর্শন গুরুত্ব দিত কারণ এবং অনুসন্ধান করার ভূমিকার উপর। অনেকভাবেই এটার বেশ গুরুত্ব আছে বর্তমান দর্শনে, এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানেও। প্রাচীন গ্রিক এবং হেলেনিষ্টিক দর্শনবিদ থেকে মধ্যযুগের মুসলিম দর্শনবিদ এবং মুসলিম বিজ্ঞানিরা থেকে ইউরোপের রেনেসা এবং এনলাইটেনমেন্ট থেকে আজকের ঐহিক বিজ্ঞান পর্যন্ত এর পরিষ্কার প্রভাব দেখা যায়।

শিল্প এবং স্থাপত্য

[সম্পাদনা]

অনেক দেশের শিল্প সংস্কৃতির উপর প্রাচীন গ্রিসের শিল্পের প্রভাব দেখা যায় সেই প্রাচীন সময় থেকে আজ পর্যন্ত, বিশেষত ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য শিল্পে। পশ্চিমের রোমান সাম্রাজ্যের শিল্পের বেশির ভাগই গ্রিসের নমুনায় বা নমুনা থেকে নেয়া। পূর্বের মধ্য এশিয়া, গ্রিক এবং ভারতীয় সংস্কৃতি তৈরী করেছিল গ্রিকো-বুদ্ধিস্ট শিল্প যা জাপান পর্যন্ত যায়। এগুলোর সূচনা হয়েছিল মহান আলেক্সান্ডারের বিজয়ের অভিযানের মধ্য দিয়ে। ইউরোপে রেঁনেসার যুগে ইউরোপিয় শিল্পীরা অনুপ্রাণিত হয়েছিল গ্রিকদের শিল্প দ্বারা। ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যে সনাতনি ঐতিহ্য যেগুলো পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি হয় সেগুলো গ্রিসদের থেকে প্রাপ্ত।

প্রাচীন গ্রীক শিল্প মানবদেহের প্রাকৃতিক কিন্তু আদর্শিক চিত্রের বিকাশের জন্য অন্যান্য সংস্কৃতির থেকে আলাদা, যেখানে মূলত নগ্ন পুরুষের চিত্রই ছিল উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দু । প্রায় ৭৫০ এবং ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শৈলীগত বিকাশের হার প্রাচীন মান অনুসারে উল্লেখযোগ্য ছিল এবং টিকে থাকা কাজগুলিতে ভাস্কর্যের মধ্যে সবচেয়ে ভাল দেখা যায়। পেইন্টিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল, যেগুলোকে মূলত পুনর্গঠন করতে হয়। আঁকা মৃৎশিল্পে স্বতন্ত্র ক্ষেত্র টি অক্ষত পাওয়া যায়।

ধর্ম এবং পুরান

[সম্পাদনা]

গ্রিক পুরাণ তাদের ঈশ্বর ও হিরোদের গল্প, পৃথিবীর প্রকৃতি এবং উৎপত্তি এবং ধর্ম পালনের গুরুত্ব ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। প্রধান গ্রিক ঈশ্বর ছিল বারটি জিউস, হেরা, পোসাইডন, এরিস, হারমিস, হেফেসটাস, আফরোদিতি, এথেনা, এ্যাপোলো, আর্টেমিস, দেমেতের এবং হেডস। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেব-দেবী হল হেব, হিলিওস, ডিওনিসাস, পারসেফন এবং হারকিউলিস (একজন ডেমি-গড যিনি একই সঙ্গে মানুষ এবং দেবতা) জিউসের পিতা ছিল ক্রোনস এবং মাতা ছিলেন রেয়া (পৌরাণিক চরিত্র)। যারা হেডস, পোসাইডন, হেরা, ডিমিটার এবং হেস্টিয়ার ও পিতা-মাতা ছিলেন।

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
নোট
  1. Carol G. Thomas (১৯৮৮)। Paths from ancient Greece। BRILL। পৃষ্ঠা 27–50। আইএসবিএন 978-90-04-08846-7। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১১ 
  2. Bruce Thornton, Greek Ways: How the Greeks Created Western Civilization, Encounter Books, 2002
  3. Richard Tarnas, The Passion of the Western Mind (New York: Ballantine Books, 1991).
  4. Colin Hynson, Ancient Greece (Milwaukee: World Almanac Library, 2006), 4.
  5. Carol G. Thomas, Paths from Ancient Greece (Leiden, Netherlands: E. J. Brill, 1988).
  6. Pomeroy, Sarah B. (১৯৯৯)। Ancient Greece: a political, social, and cultural historyOxford University Pressআইএসবিএন 978-0-19-509742-9 
  7. Hadas, Moses (১৯৫০)। A History of Greek Literature। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 327। আইএসবিএন 0-231-01767-7 
  8. "Population of the Greek city-states"। ৫ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১১ 
  9. W. Schieder, "Real slave prices and the relative cost of slave labor in the Greco-Roman world", Ancient Society, vol. 35, 2005.
গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]