টেকনেশিয়াম
উচ্চারণ | /tɛkˈniːʃ(i)əm/ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
উপস্থিতি | উজ্জল ধূসর ধাতু | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পর্যায় সারণিতে টেকনেশিয়াম | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক সংখ্যা | ৪৩ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৌলের শ্রেণী | অবস্থান্তর মৌল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গ্রুপ | গ্রুপ ৭ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পর্যায় | পর্যায় ৫ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্লক | ডি-ব্লক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইলেকট্রন বিন্যাস | [Kr] ৪d৫ ৫s২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা | ২, ৮, ১৮, ১৩, ২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
দশা | কঠিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গলনাঙ্ক | ২৪৩০ কে (২১৫৭ °সে, ৩৯১৫ °ফা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
স্ফুটনাঙ্ক | ৪৫৩৮ K (৪২৬৫ °সে, ৭৭০৯ °ফা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে) | ১১ g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ফিউশনের এনথালপি | ৩৩.২৯ kJ·mol−১ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাষ্পীভবনের এনথালপি | ৫৮৫.২ kJ·mol−১ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তাপ ধারকত্ব | ২৪.২৭ J·mol−১·K−১ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাষ্প চাপ extrapolated
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জারণ অবস্থা | ৭, ৬, ৫, ৪, ৩[১], ২, ১[২], -১, -৩ strongly acidic oxide | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তড়িৎ-চুম্বকত্ব | ১.৯ (পলিং স্কেল) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ | empirical: 136 pm | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সমযোজী ব্যাসার্ধ | 147±7 pm | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বিবিধ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
কেলাসের গঠন | hexagonal | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শব্দের দ্রুতি | পাতলা রডে: 16,200 m·s−১ (at 20 °সে) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তাপীয় পরিবাহিতা | ৫০.৬ W·m−১·K−১ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
চুম্বকত্ব | উপচুম্বকীয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা | 7440-26-8 | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেকনেশিয়ামের আইসোটোপ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেকনেশিয়াম হল একটি মৌল যার প্রতীক Tc এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৪৩। এটি হল সবচেয়ে হালকা মৌল যার আইসোটোপগুলির সবই তেজস্ক্রিয়। সমস্ত টেকনেশিয়াম একটি সিন্থেটিক উপাদান হিসাবে উৎপাদিত হয়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন টেকনেশিয়ামের সবচেয়ে সাধারণ উৎস হল ইউরেনিয়াম আকরিক ও থোরিয়াম আকরিকের স্বতঃস্ফূর্ত ফিশন বিক্রিয়া, এছাড়া মলিবডেনাম আকরিকগুলিতে নিউট্রন ক্যাপচারের ফলেও এটি উৎপন্ন হয়। এই রূপালী ধূসর, স্ফটিক অবস্থান্তর ধাতুটি পর্যায় সারণীর গ্রুপ ৭-এ ম্যাঙ্গানিজ ও রেনিয়ামের মধ্যে রয়েছে এবং এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিকভাবেই উপাদান দুটির মাঝামাঝি। সাধারণভাবে, প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত আইসোটোপ হল 99Tc।
টেকনেটিয়ামের অনেক বৈশিষ্ট্য আবিষ্কারের আগে দিমিত্রি মেন্ডেলিভ এটির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। মেন্ডেলিভ তার পর্যায় সারণীতে একটি গ্যাপ উল্লেখ করেন ও অনাবিষ্কৃত উপাদানটিকে অস্থায়ীভাবে একম্যাঙ্গানিজ (এম) নাম দেন। ১৯৩৭ সালে, টেকনেশিয়াম (মূলত টেকনেশিয়াম-৯৭ আইসোটোপ) প্রথম কৃত্রিম উপাদান হিসাবে উৎপাদিত হয়, তাই এর নাম হয় Technetium (গ্রীক শব্দ τεχνητός, টেকনেটোস (technetos) থেকে, যার অর্থ "কৃত্রিম", + -ium)।
একটি স্বল্পস্থায়ী গামা রশ্মি নির্গমনকারী পারমাণবিক আইসোমার টেকনেশিয়াম-৯৯এম হাড়ের ক্যান্সার নির্ণয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য পারমাণবিক ওষুধে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। নিউক্লাইড টেকনেশিয়াম-৯৯ এর গ্রাউন্ড স্টেট গামা-রশ্মি বিহীন বিটা কণার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত দীর্ঘস্থায়ী টেকনেশিয়াম আইসোটোপগুলি মূলত পারমাণবিক চুল্লিতে ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর বিভাজনের উপজাত হিসেবে পারমাণবিক জ্বালানী রড থেকে বের করা হয়। টেকনেশিয়ামের দীর্ঘস্থায়ী আইসোটোপেরও তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত অর্ধ-জীবন (৪.২১ মিলিয়ন বছর) থাকার কারণে ১৯৫২ সালে লোহিত দানব তারাগুলোতে টেকনেশিয়াম শনাক্ত করা হয়েছিল যা এ বিষয়টি প্রমাণ করতে সাহায্য করেছিল যে তারাগুলি ভারী উপাদান তৈরি করতে পারে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]মৌল ৪৩ জন্য অনুসন্ধান
[সম্পাদনা]১৮৬০ সাল থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত, দিমিত্রি মেন্ডেলিভ প্রস্তাবিত পর্যায় সারণীর প্রাথমিক রূপগুলিতে মলিবডেনাম (মৌল ৪২) ও রুথেনিয়ামের (মৌল ৪৪) মধ্যে একটি ব্যবধান ছিল। ১৮৭১ সালে, মেন্ডেলিভ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এই অনুপস্থিত উপাদানটি ম্যাঙ্গানিজের নীচে খালি জায়গায় অবস্থান করবে এবং এর একই রকম রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য থাকবে। মেন্ডেলিভ এটিকে অস্থায়ী নাম দিয়েছেন একম্যাঙ্গানিজ (eka থেকে, সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ এক) কারণ ভবিষ্যদ্বাণী করা মৌলটি পরিচিত মৌল ম্যাঙ্গানিজ থেকে এক ঘর নিচে ছিল।[৪]
প্রাথমিক ভুল শনাক্তকরণ
[সম্পাদনা]পর্যায় সারণী প্রকাশিত হওয়ার আগে ও পরে অনেক গবেষক অনুপস্থিত উপাদানটি আবিষ্কার ও নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম হতে চাইতেন। পর্যায় সারণীতে এর অবস্থানই বলে দিয়েছিল যে এটি অন্যান্য অনাবিষ্কৃত উপাদানগুলির চেয়ে খুঁজে পাওয়া সহজ হওয়া উচিত।
বছর | দাবিদার | প্রস্তাবিত নাম | প্রকৃত উপাদান |
---|---|---|---|
১৮২৮ | গটফ্রাইড ওসান | পলিনিয়াম | ইরিডিয়াম |
১৮৪৬ | আর. হারম্যান | ইলমেনিয়াম | নিওবিয়াম-ট্যানটালাম খাদ |
১৮৪৭ | হেনরিক রোজ | পেলোপিয়াম[৫] | নিওবিয়াম-ট্যান্টালাম খাদ |
১৮৭৭ | সার্জ কার্ন | ডেভিউম | ইরিডিয়াম-রোডিয়াম-লোহার খাদ |
১৮৯৬ | প্রসপার বারিয়ে | লুসিয়াম | ইট্রিয়াম |
১৯০৮ | মাসতাকা ওগাওয়া | নিপ্পোনিয়াম | সম্ভবত রেনিয়াম, যা ছিল অজানা ডিভিআই-ম্যাঙ্গানিজ,[৬] যদিও প্রমাণগুলি অপর্যাপ্তভাবে চূড়ান্ত[৭] |
অপূরণীয় ফলাফল
[সম্পাদনা]জার্মান রসায়নবিদ ওয়াল্টার নোড্যাক, অটো বার্গ ও ইডা ট্যাকে ১৯২৫ সালে ৭৫ ও ৪৩ নং মৌলের আবিষ্কারের কথা জানান এবং মৌল ৪৩ নামকরণ করেন মাসুরিয়াম (পূর্ব প্রুশিয়ার মাসুরিয়ার নামে, যা এখন পোল্যান্ডে অবস্থিত, এই অঞ্চল থেকেই ওয়াল্টার নোড্যাকের পরিবার এসেছিলেন)।[৮] কিন্তু নামটি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল, কারণ অনেকেই মনে করেছিলেন এটি দ্বারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মাসুরিয়া অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনীর উপর জার্মান সেনাবাহিনীর বিজয়ের উল্লেখ করা হচ্ছে; যেহেতু নাৎসিরা ক্ষমতায় থাকাকালীন নোড্যাকস উঁচু একাডেমিক অবস্থানে ছিল, তার মৌল ৪৩ আবিষ্কারের দাবির বিরুদ্ধে সন্দেহ ও শত্রুতা অব্যাহত ছিল।[৭] দলটি ইলেক্ট্রন ও অনুমানকৃত মৌল ৪৩ এর একটি মরীচি দিয়ে কলম্বাইটের উপর বোমাবর্ষণ করেছিল এবং এর এক্স-রে নির্গমন স্পেকট্রোগ্রাম পরীক্ষা করে ওই উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।[৯] উৎপাদিত এক্স-রে রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১৯১৩ সালে হেনরি মোসলের আবিষ্কৃত একটি সূত্র দ্বারা পারমাণবিক সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত। দলটি মৌল ৪৩ দ্বারা উৎপাদিত একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দুর্বল এক্স-রে সংকেত শনাক্ত করার দাবি করে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের প্রতিলিপি করতে পারেননি, যার ফলে এটিকে একটি ত্রুটি মনে করে বাদ করা হয়েছিল।[১০][১১] তারপরও, ১৯৩৩ সালে, বিভিন্ন মৌলের আবিষ্কার সম্পর্কিত বেশকিছু নিবন্ধ মৌল ৪৩ এর জন্য ম্যাসুরিয়াম নামটি উদ্ধৃত করেছিল।[১২] নোড্যাকসের দাবিগুলিকে পরীক্ষার জন্য তখন আরও কিছু প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু আকরিকে উপস্থিত টেকনেশিয়ামের পরিমাণের ওপর পল কুরোদার গবেষণার দ্বারা তাদের গবেষণা অপ্রমাণিত হয়েছে: এটি আকরিকে ৩× ১০−১১ μg/কেজি অতিক্রম করতে পারে না এবং তাই নোড্যাকসের পদ্ধতি দ্বারা সনাক্ত করা যায় না।[৭][১৩]
প্রাতিষ্ঠানিক আবিষ্কার ও পরবর্তী ইতিহাস
[সম্পাদনা]অবশেষে ১৯৩৭ সালে সিসিলির পালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্লো পেরিয়ার ও এমিলিও সেগ্রে করা একটি পরীক্ষায় মৌল ৪৩ এর আবিষ্কার নিশ্চিত হয়।[১৪] ১৯৩৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে, সেগ্রে যুক্তরাষ্ট্রে যান, প্রথমে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং তারপর ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে যান। তিনি সাইক্লোট্রন আবিষ্কারক আর্নেস্ট লরেন্সকে তেজস্ক্রিয় হয়ে যাওয়া কিছু পরিত্যক্ত সাইক্লোট্রন তাকে নিতে দিতে রাজি করান। লরেন্স তাকে একটি মলিবডেনাম ফয়েল পাঠান যা সাইক্লোট্রনেরি ডিফ্লেক্টরের অংশ ছিল।[১৫]
মলিবডেনামের কার্যকলাপ প্রকৃতপক্ষে পারমাণবিক সংখ্যা ৪৩ বিশিষ্ট একটি মৌল থেকে হয়েছিল– এ বিষয়টি তুলনামূলক রসায়নের (comparative chemistry) দ্বারা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে সেগ্রে তার সহকর্মী পেরিয়ারকে দলভুক্ত করেন এবং ১৯৩৭ সালে তারা টেকনেশিয়াম-৯৫এম ও টেকনেশিয়াম-৯৭ আইসোটোপকে আলাদা করতে সমর্থ হন।[১৬][১৭] পালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের আবিষ্কারের নাম পালেরমো এর ল্যাটিন নাম প্যানরমাস অনুসারে "প্যানরমিয়াম" রাখতে চেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে[১৬] মৌল ৪৩ এর নামকরণ করা হয় গ্রীক শব্দ τεχνητός, যার অর্থ "কৃত্রিম", কেননা এটিই প্রথম উপাদান যা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত হয়েছিল।[৫][৮] বিজ্ঞানী সেগ্রে পরে বার্কলেতে ফিরে আসেন এবং গ্লেন টি. সিবার্গের সাথে দেখা করেন। তারা মেটাস্টেবল আইসোটোপ টেকনেশিয়াম-৯৯এম আলাদা করেন, যা এখন বছরে প্রায় দশ মিলিয়ন মেডিকেল ডায়াগনস্টিকে ব্যবহৃত হয়।[১৮]
১৯৫২ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী পল ডব্লিউ মেরিল এস-টাইপ লোহিত দানবের আলোতে টেকনেশিয়ামের বর্ণালি স্বাক্ষর (বিশেষত ৪০৩.১ nm, ৪২৩.৮ nm, ৪২৬.২ nm ও ৪২৯.৭ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) সনাক্ত করেন।[১৯] তারাগুলি তাদের জীবনের একেবারে শেষের দিকে ছিল কিন্তু সেগুলো স্বল্পস্থায়ী উপাদানে সমৃদ্ধ ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে পারমাণবিক বিক্রিয়া দ্বারা তারাগুলিতে টেকনেশিয়াম উৎপাদিত হচ্ছে। এই প্রমাণগুলি এই হাইপোথিসিস বা অনুমানকে শক্তিশালী করেছে যে ভারী মৌলগুলি নক্ষত্রের নিউক্লিওসিন্থেসিসের পণ্য।[১৭] অতি সম্প্রতি, এই ধরনের পর্যবেক্ষণগুলি প্রমাণ করেছে যে মৌলগুলো s-প্রক্রিয়ায় নিউট্রন ক্যাপচার দ্বারা গঠিত হয়।[২০]
সেই আবিষ্কারের পর থেকে, টেকনেশিয়ামের প্রাকৃতিক উৎসের সন্ধানের জন্য বিভিন্ন স্থলজ পদার্থে অনেক অনুসন্ধান করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে, বেলজিয়ান কঙ্গো থেকে পিচব্লেন্ডে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে (প্রায় 0.2 ng/kg) টেকনেশিয়াম-৯৯ পৃথক ও শনাক্ত করা হয়েছিল।[২০] যেখানে এটি ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর একটি স্বতঃস্ফূর্ত ফিশন পণ্য হিসাবে উৎপন্ন হয়। ওকলো প্রাকৃতিক পারমাণবিক বিভাজন চুল্লি এই প্রমাণ বহন করে যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে টেকনেশিয়াম-৯৯ উৎপন্ন হয়েছিল এবং তারপর থেকে তা ক্ষয় হয়ে রুথেনিয়াম-৯৯-এ পরিণত হয়েছে।[২০]
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]ভৌত বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম হল একটি রূপালী-ধূসর তেজস্ক্রিয় ধাতু যা দেখতে অনেকটা প্লাটিনামের মতো। সাধারণত এটি ধূসর পাউডার হিসাবে পাওয়া যায়।[২১] বিশুদ্ধ টেকনেশিয়াম ধাতুর স্ফটিক কাঠামো ষড়ভুজাকার ক্লোজ -প্যাকড ও ন্যানোডিসপারস বিশুদ্ধ ধাতুর স্ফটিক কাঠামো ঘনকাকৃতির। ন্যানোডিসপারস টেকনেশিয়ামে বিভক্ত এনএমআর বর্ণালি নেই, যেখানে হেক্সাগোনাল বাল্ক টেকনেশিয়ামে ৯টি Tc-99-NMR স্পেকট্রাম বিভক্ত রয়েছে।[২২][২৩] পারমাণবিক টেকনেশিয়ামে ৩৬৩.৩ nm, ৪০৩.১ nm, ৪২৬.২ nm,৪২৯.৭ nm ও ৪৮৫.৩ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নির্গমন বর্ণালী রয়েছে।[২৪]
ধাতুটি সামান্য প্যারাম্যাগনেটিক, যার অর্থ এর চৌম্বকীয় ডাইপোলগুলি বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে সারিবদ্ধ হয়, তবে ক্ষেত্রটি সরানো হলে তা এলোমেলো হয়ে যায়।[২৫] বিশুদ্ধ, ধাতব, একক-ক্রিস্টাল টেকনেশিয়াম ৭.৪৬ কে. নিচের তাপমাত্রায় টাইপ-২ সুপারকন্ডাক্টারে পরিণত হয়।[২৬] [ক] এই তাপমাত্রার নীচে, টেকনেশিয়ামের একটি খুব উচ্চ চৌম্বকীয় অনুপ্রবেশ গভীরতা রয়েছে, যা নাইওবিয়াম ছাড়া অন্য যেকোনো মৌলের চেয়ে বেশি।[২৭]
রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম পর্যায় সারণীর সপ্তম গ্রুপে রেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের মধ্যে অবস্থিত। পর্যায়বৃত্তিক তত্ত্ব দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, এর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলি ওই দুটি উপাদানের মাঝামাঝি হবে। উপাদান দুটির দুটির মধ্যে টেকনেশিয়ামটি রেনিয়ামের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, বিশেষ করে এর রাসায়নিক জড়তা ও সমযোজী বন্ধন গঠনের প্রবণতার দিক দিয়ে গভীর মিল লক্ষ্য করা যায়।[২৮] ল্যানথানাইড সংকোচনের কারণে পঞ্চম পর্যায়ের মৌলগুলোর চতুর্থ পর্যায়ের চেয়ে বেশি ষষ্ঠ পর্যায়ের মৌলগুলোর অনুরূপ হওয়ার প্রবণতার সাথে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ম্যাঙ্গানিজের বিপরীতে টেকনেশিয়াম সহজেই ক্যাটায়ন গঠন করে না (নেট ধনাত্বক চার্জ সহ আয়ন)। টেকনেশিয়াম −১ থেকে +৭ পর্যন্ত নয়টি জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে, যার মধ্যে +৪, +৫ ও +৭ সবচেয়ে সাধারণ।[২৯] টেকনেশিয়াম অ্যাকোয়া রেজিয়া, নাইট্রিক অ্যাসিড ও ঘন সালফিউরিক অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়, তবে এটি কোনো ঘনত্বের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে দ্রবণীয় নয়।[২১]
ধাতব টেকনেশিয়ামে আর্দ্র বাতাসে ধীরে ধীরে মরিচা পড়ে[২৯] এবং এটি পাউডার আকারে অক্সিজেনে পুড়ে যায়।
টেকনেশিয়াম বহুযোজী মৌল হওয়ার কারণে নাইট্রিক অ্যাসিড দ্বারা হাইড্রাজিন নষ্টের বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।[৩০] এটি পারমাণবিক জ্বালানী প্রক্রিয়াকরণে ইউরেনিয়াম থেকে প্লুটোনিয়ামের পৃথকীকরণে একটি সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, যেখানে হাইড্রাজিন একটি প্রতিরক্ষামূলক বিজারক হিসাবে ব্যবহৃত হয় যাতে প্লুটোনিয়ামকে আরও স্থিতিশীল চতুর্যোজী অবস্থায় রাখার পরিবর্তে ত্রিযোজী অবস্থায় রাখা হয়। পূর্ববর্তী ধাপের টেকনেশিয়াম ও জিরকোনিয়ামের পারস্পরিক বর্ধিত দ্রাবক নিষ্কাশনের কারণে সমস্যাটি আরও বেড়ে গিয়েছিল,[৩১] এবং এ কারণে একটি প্রক্রিয়া পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল।
যৌগ
[সম্পাদনা]পারটেকনেটেট ও ডেরিভেটিভস
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়ামের সবচেয়ে প্রচলিত রূপ যা সহজেই পাওয়া যায় তা হল সোডিয়াম পারটেকনেটেট, Na[TcO4]। টেকনেশিয়ামের অধিকাংশই [99 MoO4]2− : [৩২][৩৩] এর তেজস্ক্রিয় ক্ষয় দ্বারা উৎপাদিত হয়
- [99 MoO 4] 2− → [99m TcO 4] − + e −
পারটেকনেটেট (টেট্রোক্সাইডোটেকনেটেট) TcO−
4 পারক্লোরেটের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আচরণ করে, কেননা উভয়ই টেট্রাহেড্রাল। পারম্যাঙ্গনেটের (MnO−
4),বিপরীতে এটি শুধুমাত্র একটি দুর্বল জারক।
টেকনেশিয়াম হেপ্টোক্সাইড পারটেকনেটেটের সাথে সম্পর্কিত। এই ফ্যাকাশে-হলুদ, উদ্বায়ী কঠিন যৌগটি Tc ধাতু ও সম্পর্কিত পূর্বসূরীদের জারণ দ্বারা উৎপাদিত হয়:
- 4 Tc + 7 O2 → 2 Tc 2O7
এটি একটি আণবিক ধাতব অক্সাইড, যা ম্যাঙ্গানিজ হেপ্টোক্সাইডের অনুরূপ। এটি ১৬৭pm ও ১৮৪pm বন্ধন দৈর্ঘ্যের দুটি Tc−O বন্ড সহ একটি সেন্ট্রোসিমেট্রিক কাঠামো গ্রহণ করে।[৩৪]
পারটেকনেটেট ও পারটেকনেটিক অ্যাসিডকে টেকনেটিয়াম হেপ্টোক্সাইড হাইড্রোলাইজ করে, বিষয়টি pH এর উপর নির্ভর করে:[৩৫][৩৬]
- Tc2O7 + 2 OH − → 2 TcO4− + H2O
- Tc2O7 + H2O → 2 HTcO4
HTcO4 একটি শক্তিশালী অ্যাসিড। ঘন সালফিউরিক অ্যাসিডের মধ্যে [TcO4]− অষ্টতলকীয় গঠন TcO3(OH)(H2O)2 এ রূপান্তরিত হয়, যেটি অনুমিত ট্রাইঅ্যাকো কমপ্লেক্সের [TcO3(H2O)3]+ অনুবন্ধী ক্ষার।[৩৭]
অন্যান্য চ্যালকোজেনাইড ডেরিভেটিভস
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম ডাই অক্সাইড,[৩৮] ডাইসালফাইড, ডাইসেলেনাইড ও ডাইটেলুরাইড গঠন করে। পারটেকনেটকে হাইড্রোজেন সালফাইডের সাথে বিক্রিয়া ক্রানোর ফলে একটি অ-সংজ্ঞায়িত Tc2S7 উৎপন্ন হয়। এটি তাপীয় প্রক্রিয়ায় ডাই সালফাইড এবং মৌলিক সালফারে বিভক্ত হয়ে যায়।[৩৮] একইভাবে Tc2O7 এর বিজারণ করে ডাই অক্সাইড তৈরি করা যেতে পারে।
রেনিয়ামের বিপরীতে, টেকনেশিয়ামের জন্য কোনো ট্রাইঅক্সাইড আলাদাভাবে পাওয়া যায়নি। যাইহোক, ভর স্পেকট্রোমেট্রি ব্যবহার করে গ্যাসীয় পর্যায়ে TcO3 সনাক্ত করা হয়েছে।[৩৯]
সাধারণ হাইড্রাইড ও হ্যালাইড কমপ্লেক্স
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম সরল ধরনের জটিল আয়ন TcH2−
9 গঠন করে। পটাশিয়াম লবণটি সাথে আইসোস্ট্রাকচারাল ReH2−
9।[৩৮]
নিম্নলিখিত বাইনারি (মাত্র দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত) টেকনেশিয়াম হ্যালাইডগুলি সম্পর্কে জানা গেছে: TcF6, TcF5, TcCl4, TcBr4, TcBr3, α-TcCl3, β-TcCl 3, TcI3, α- TcCl2 এবং TcCl2। এটির জারণ অবস্থা Tc(VI) থেকে Tc(II) পর্যন্ত। টেকনেশিয়াম হ্যালাইড বিভিন্ন ধরনের কাঠামো প্রদর্শন করে, যেমন আণবিক অষ্টতলকীয় কমপ্লেক্স, দীর্ঘ শিকল, স্তরযুক্ত শীট ও একটি ত্রি-মাত্রিক নেটওয়ার্কে সাজানো ধাতব ক্লাস্টার।[৪০] এই যৌগগুলি ধাতু ও হ্যালোজেনের সংমিশ্রণে কিংবা কম প্রত্যক্ষ বিক্রিয়া দ্বারা উৎপাদিত হয়।
TcCl4 যৌগটি Tc ধাতু বা Tc2O7 এর ক্লোরিনেশন দ্বারা প্রাপ্ত হয়। গরম করা হলে, TcCl4 সংশ্লিষ্ট Tc(III) ও Tc(II) ক্লোরাইড দেয়।[৪০]
- TcCl4 → α-TcCl3 + 1/2 Cl2
- TcCl3 → β-TcCl2 + 1/2 Cl2
TcCl4 এর কাঠামোটি প্রান্ত-ভাগ করা TcCl6 অক্টাহেড্রালের অসীম সংখ্যক জিগজ্যাগ চেইন দ্বারা গঠিত। এটি অবস্থান্তর ধাতু জিরকোনিয়াম, হ্যাফনিয়াম ও প্ল্যাটিনামের ধাতব টেট্রাক্লোরাইডগুলির আইসোমরফাস।[৪০]
টেকনেশিয়াম ট্রাইক্লোরাইডের দুটি পলিমর্ফ বিদ্যমান, α- ও β-TcCl3। α পলিমর্ফটিকে Tc3Cl9 হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। এটি একটি কনফেসিয়াল বায়োকট্যাহেড্রাল কাঠামো গঠন করে।[৪১] ক্লোরো-অ্যাসিটেট Tc2(O2CCH3)4Cl2 এর সাথে HCl বিক্রিয়া করিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। Re3Cl9 এর মতো α-পলিমর্ফের গঠনটি মূলত ছোট M-M দূরত্বের ত্রিভুজ নিয়ে তৈরী। β-TcCl3- অক্টাহেড্রালে Tc কেন্দ্রে রয়েছে, যেগুলি জোড়ায় জোড়ায় সংগঠিত, যেমনটি মলিবডেনাম ট্রাইক্লোরাইডের জন্যও দেখা যায়। TcBr3 ট্রাইক্লোরাইড পর্যায়ের কাঠামো গ্রহণ করে না। পরিবর্তে এটিতে মলিবডেনাম ট্রাইব্রোমাইডের গঠন রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ Tc-Tc সংযোগের সাথে কনফেসিয়াল অক্টাহেড্রার শিকল নিয়ে গঠিত। TcI3 এর TiI3- এর উচ্চ তাপমাত্রার অবস্থার মতো একই কাঠামো রয়েছে, এতে সমান Tc-Tc সংযোগ সহ কনফেসিয়াল অক্টাহেড্রার শিকল রয়েছে।[৪০]
বেশ কয়েকটি অ্যানায়নিক টেকনেশিয়াম হ্যালাইড সম্পর্কে জানা গেছে। বাইনারি টেট্রা হ্যালাইডগুলিকে হেক্সাহ্যালাইডে রূপান্তরিত করা যেতে পারে [TcX6]2− (যেখানে X = F, Cl, Br, I), যা অষ্টতলকীয় আণবিক জ্যামিতি গঠন করে।[২০] আরও বিজারিত হ্যালাইডগুলি Tc-Tc বন্ধনসহ অ্যানায়নিক ক্লাস্টার গঠন করে। এই অবস্থাটি অনুরূপ মৌল Mo, W, Re এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই ক্লাস্টারগুলির পারমাণবিকতা রয়েছে Tc4, Tc6, Tc8 ও Tc13। আরও স্থিতিশীল Tc6 ও Tc8 ক্লাস্টারগুলোর প্রিজম আকার রয়েছে যেখানে Tc পরমাণুর উল্লম্ব জোড়া ট্রিপল বন্ড দ্বারা এবং সমতলীয় পরমাণুগুলি একক বন্ধনের দ্বারা সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি টেকনেশিয়াম পরমাণু ছয়টি বন্ধন তৈরি করে ও অবশিষ্ট যোজ্যতা ইলেকট্রনগুলি একটি অক্ষীয় এবং দুটি ব্রিজিং লিগ্যান্ড হ্যালোজেন পরমাণু যেমন ক্লোরিন বা ব্রোমিন দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারে।[৪২]
সমন্বয় ও অর্গানোমেটালিক যৌগ
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম জৈব লিগ্যান্ডের সাথে বিভিন্ন সমন্বয় কমপ্লেক্স বা জটিল যৌগ গঠন করে। পারমাণবিক ওষুধের এ তাদের ব্যবহারিতার কারণে ভালভাবে অনেকগুলিতদন্ত করা হয়েছে।[৪৩]
টেকনেশিয়াম Tc–C বন্ডের সাথে বিভিন্ন ধরনের যৌগ গঠন করে, যেমন অর্গানোটেকনেশিয়াম যৌগ। এই শ্রেণীর বিশিষ্ট সদস্যরা হল CO, অ্যারেন ও সাইক্লোপেন্টাডাইনিল লিগ্যান্ড সহ কমপ্লেক্স।[৪৪] বাইনারি কার্বনিল Tc2(CO)10 হল একটি সাদা উদ্বায়ী কঠিন যৌগ।[৪৫] এই অণুতে, দুটি টেকনেশিয়াম পরমাণু একে অপরের সাথে আবদ্ধ হয়; প্রতিটি পরমাণু পাঁচটি কার্বনিল লিগ্যান্ডের অষ্টহেড্রা দ্বারা বেষ্টিত। টেকনেশিয়াম পরমাণুর মধ্যে বন্ধনের দৈর্ঘ্য, ৩০৩ pm,[৪৬][৪৭] ধাতব টেকনেশিয়ামের দুটি পরমাণুর মধ্যকার দূরত্বের (২৭২ pm) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বড়। টেকনেশিয়ামের কনজেনার, ম্যাঙ্গানিজ ও রেনিয়াম দ্বারা অনুরূপ কার্বনিল গঠিত হয়।[৩৮] পারমাণবিক ওষুধের প্রয়োগের কারণে অর্গানোটেকনেশিয়াম যৌগের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।[৪৪] টেকনেশিয়ামও অ্যাকুয়া-কার্বনিল কমপ্লেক্সও গঠন করে, একটি বিশিষ্ট কমপ্লেক্স হল [Tc(CO)3(H2O)3]+, যা অন্যান্য ধাতব কার্বনিলের তুলনায় অস্বাভাবিক।[৪৪]
আইসোটোপ
[সম্পাদনা]৪৩ পারমাণবিক সংখ্যাবিশিষ্ট টেকনেশিয়াম পর্যায় সারণীতে সর্বনিম্ন-সংখ্যাযুক্ত মৌল যার জন্য সমস্ত আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়। দ্বিতীয় সবচেয়ে হালকা তেজস্ক্রিয় মৌল প্রোমিথিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা ৬১।[২৯] বিজোড় সংখ্যক প্রোটন বিশিষ্ট পারমাণবিক নিউক্লিয়াসগুলো জোড় সংখ্যকগুলোর তুলনায় কম স্থিতিশীল, এমনকি যখন নিউক্লিয়নের মোট সংখ্যা (প্রোটন + নিউট্রন) জোড় হয়,[৪৮] এবং বিজোড় সংখ্যাযুক্ত উপাদানগুলির কম সংখ্যক স্থিতিশীল আইসোটোপ থাকে।
সবচেয়ে স্থিতিশীল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপগুলো হল টেকনেশিয়াম-৯৭ যার অর্ধ-জীবন ৪.২১ মিলিয়ন বছর, টেকনেশিয়াম-৯৮ এর ৪.২ মিলিয়ন বছর এবং টেকনেশিয়াম-৯৯ আইসোটোপের অর্ধায়ু ২১১,১০০ বছর।[৪৯][৫০] আরও ত্রিশটি রেডিওআইসোটোপকে ৮৫ থেকে ১১৮ পর্যন্ত ভর সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।[৫১] এদের বেশিরভাগেরই অর্ধায়ু এক ঘণ্টারও কম, ব্যতিক্রম টেকনেশিয়াম-৯৩ (২.৭৩ ঘন্টা), টেকনেশিয়াম-৯৪ (৪.৮৮ ঘন্টা), টেকনেশিয়াম-৯৫ (২০ ঘন্টা) ও টেকনেশিয়াম-৯৬ (৪.৩ দিন)।[৫২]
টেকনেশিয়াম-৯৮ (৯৮Tc) এর চেয়ে হালকা আইসোটোপের প্রাথমিক ক্ষয় মোড হল ইলেকট্রন ক্যাপচার, যা মলিবডেনাম (Z= 42) উৎপাদন করে।[৫১] টেকনেশিয়াম-৯৮ এবং ভারী আইসোটোপের ক্ষেত্রে প্রাথমিক মোড হল বিটা নির্গমন (একটি ইলেকট্রন বা পজিট্রনের নির্গমন), যা হতে রুথেনিয়াম (Z=44) উৎপন্ন হয়, টেকনেশিয়াম-১০০ আইসোটোপ ব্যতিক্রমধর্মী যা বিটা নির্গমন ও ইলেক্ট্রন ক্যাপচার উভয়ের মাধ্যমেই ক্ষয় হতে পারে।[৫১][৫৩]
টেকনেশিয়ামের অসংখ্য পারমাণবিক আইসোমার রয়েছে, যা এক বা একাধিক উত্তেজিত নিউক্লিয়ন সহ আইসোটোপ। টেকনেশিয়াম-৯৭এম (97mTc; "m" মানে মেটাস্টেবিলিটি) সবচেয়ে স্থিতিশীল, যার অর্ধায়ু ৯১ দিন এবং উত্তেজনা শক্তি ০.০৯৬৫ MeV।[৫২] এর পরে রয়েছে টেকনেশিয়াম-৯৯এম (৬১ দিন, ০.০৩ MeV) এবং টেকনেশিয়াম-৯৯এম (৬.০১ ঘন্টা, ০.১৪২ MeV)।[৫২] টেকনেশিয়াম-৯৯এম কেবল গামা রশ্মি বিকিরণ করে এবং টেকনেশিয়াম-৯৯-এ পরিণত হয়।[৫২]
টেকনেশিয়াম-৯৯ (99Tc) হল ইউরেনিয়াম-২৩৫ (235U) এর নিউক্লিয়ার ফিশনের একটি প্রধান উৎপাদ, যা এটিকে টেকনেশিয়ামের সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজলভ্য আইসোটোপ হিসাবে তৈরি করে। এক গ্রাম টেকনেশিয়াম-৯৯ এ প্রতি সেকেন্ডে ৬.২×১০ ৮টি বিভাজন ঘটে (অন্য কথায়, 99 Tc-এর নির্দিষ্ট কার্যকলাপ হল ০.৬২ GBq/g)।[২৫]
ঘটনা ও উৎপাদন
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর ভূত্বকের মধ্যে প্রতি ট্রিলিয়নের প্রায় ০.০০৩ অংশের (০.০০৩ PPT) মিনিট ঘনত্বে পাওয়া যায়। টেকনেশিয়াম খুবই বিরল কারণ Tc97 ও Tc98-এর অর্ধ-জীবন মাত্র ৪.২১ মিলিয়ন বছর পৃথিবী গঠনের পর থেকে এরকম এক হাজারেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে, একারণে আদিম টেকনেশিয়ামের একটি পরমাণুরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মূলত শূন্য। যাইহোক, ইউরেনিয়াম আকরিকের স্বতঃস্ফূর্ত ফিশন পণ্য হিসাবে অল্প পরিমাণে টেকনেশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। এক কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম আনুমানিক ১ ন্যানোগ্রাম (10−9 g) টেকনেশিয়াম ধারণ করে যা দশ ট্রিলিয়ন পরমাণুর সমতুল্য।[১৭][৫৪][৫৫] S-, M- ও N বর্ণালীবিশিষ্ট কিছু লোহিত দানব নক্ষত্রে একটি বর্ণালী শোষণ রেখা থাকে যা টেকনেশিয়ামের উপস্থিতি নির্দেশ করে।[২১] [৫৬] এই লোহিত দানবগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে টেকনেশিয়াম তারকা নামে পরিচিত।
ফিশন বর্জ্য পণ্য
[সম্পাদনা]বিরল প্রাকৃতিক ঘটনার বিপরীতে খরচ করা পারমাণবিক জ্বালানী রড থেকে প্রতি বছর বিশাল পরিমাণে টেকনেশিয়াম-৯৯ উৎপাদিত হয়, যাতে বিভিন্ন ফিশন পণ্য থাকে। পারমাণবিক চুল্লিতে এক গ্রাম ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর বিভাজনে ২৭ মিলিগ্রাম টেকনেশিয়াম-৯৯ উৎপন্ন হয়, টেকনেশিয়ামকে ৬.১% এর একটি ফিশন পণ্যের উৎপাদ দেয়।[২৫] অন্যান্য ফিসাইল আইসোটোপগুলোও অনুরূপ উৎপাদ তৈরি করে, যেমন ইউরেনিয়াম-২৩৩ থেকে ৪.৯% ও প্লুটোনিয়াম-২৩৯ থেকে ৬.২১% টেকনেশিয়াম পাওয়া যায়।[৩৮] ১৯৮৩ ও ১৯৯৪ সালের মধ্যে পারমাণবিক চুল্লিগুলিতে আনুমানিক ৪৯,০০০ টন বেকেরেল (৭৮ মেট্রিক টন) টেকনেশিয়াম উৎপাদিত হয়েছিল, যা এখনো টেরিস্ট্রিয়াল টেকনেশিয়ামের বড় উৎস।[৫৭][৫৮] উৎপাদনের কেবল একটি অংশই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়।[খ]
টেকনেশিয়াম-৯৯ ধাতুটি ইউরেনিয়াম-২৩৯ ও প্লুটোনিয়াম-২৩৯ ধাতুর নিউক্লিয় বিভাজন দ্বারা উৎপাদিত হয়। তাই এটি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণের পারমাণবিক বিপর্যয়ের মধ্যে উপস্থিত থাকে। এটির পারমাণবিক ক্ষয়, যা প্রতি বেকেরেলে পরিমাপ করা হয়, পারমাণবিক বর্জ্য উৎপাদনের প্রায় 104 থেকে 106 বছর পর পারমাণবিক বর্জ্যের তেজস্ক্রিয়তার প্রধান অবদানকারী হয়ে ওঠে।[৫৭] ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত আনুমানিক ১৬০ টন বেকেরেল (প্রায় ২৫০ কেজি টেকনেশিয়াম-৯৯) বায়ুমণ্ডলীয় পারমাণবিক পরীক্ষার সময় পরিবেশে উন্মুক্ত করা হয়েছিল।[৫৭][৫৯] পারমাণবিক চুল্লি থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত পরিবেশে উন্মুক্ত হওয়া টেকনেশিয়াম-৯৯ এর পরিমাণ ১০০০ TBq (প্রায় ১৬০০ কেজি), যা প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক জ্বালানী পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরী হয়েছিল; এর বেশির ভাগই সাগরে ফেলা হয়েছে। তারপর থেকে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিগুলি নির্গমন হ্রাস করেছে, কিন্তু ২০০৫ সাল পর্যন্ত পরিবেশে টেকনেশিয়াম-৯৯-এর প্রাথমিক নির্গমন হয়েছে সেলাফিল্ড প্ল্যান্ট দ্বারা, যা ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত আইরিশ সাগরে আনুমানিক ৫৫০ TBq (প্রায় ৯০০ কেজি) টেকনেশিয়াম নির্গত করেছিল।[৫৮] ২০০০ সাল থেকে এই পরিমাণ আইন করে প্রতি বছর ৯০ TBq (প্রায় ১৪০ কেজি)-তে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।[৬০] সমুদ্রে টেকনেশিয়ামের নিষ্কাশনের ফলে এই উপাদানটি অল্প পরিমাণে কিছু সামুদ্রিক খাবার দূষিত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পশ্চিম কামব্রিয়ার ইউরোপীয় গলদা চিংড়ি ও মাছ প্রায় ১ বেকেরেল/কেজি টেকনেশিয়াম ধারণ করে।[৬১][৬২][গ]
বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ফিশন পণ্য
[সম্পাদনা]মেটাস্টেবল আইসোটোপ টেকনেশিয়াম-৯৯এম পারমাণবিক চুল্লিতে ক্রমাগত ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের নিউক্লিয় বিভাজন থেকে একটি ফিশন পণ্য হিসাবে উৎপাদিত হয়:
যেহেতু ব্যবহৃত জ্বালানিকে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের আগে বেশ কয়েক বছর ধরে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তাই সমস্ত মলিবডেনাম-৯৯ ও টেকনেশিয়াম-৯৯এম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায় যখন ফিশন পণ্যগুলি প্রচলিত পারমাণবিক পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে মেজর অ্যাক্টিনাইডগুলো থেকে আলাদা হয়ে যায়। প্লুটোনিয়াম-ইউরেনিয়াম নিষ্কাশনের পরে অবশিষ্ট তরলে (PUREX) উচ্চ ঘনত্বের টেকনেশিয়াম TcO−
4 হিসাবে থাকে কিন্তু এর প্রায় সবটাই টেকনেশিয়াম-৯৯, টেকনেশিয়াম-৯৯এম নয়।[৩৮]
চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত টেকনেশিয়াম-৯৯এম এর বেশিরভাগই একটি চুল্লিতে উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লক্ষ্যবস্তুকে বিকিরণ করে, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মলিবডেনাম-৯৯ নিষ্কাশন করে,[৩৩] এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পুনরুদ্ধার করে মলিবডেনাম-৯৯ এর ক্ষয় হলে টেকনেশিয়াম-৯৯এম উৎপাদিত হয়।[৬৪] মলিবডেনাম-৯৯ মলিবডেট MoO2−
4 হিসেবে একটি টেকনেশিয়াম-৯৯এম জেনারেটরের ("টেকনেশিয়াম গাভী", যাকে মাঝে মাঝে "মলিবডেনাম গরু"ও বলা হয়) ভিতরে একটি ঢালযুক্ত কলাম ক্রোমাটোগ্রাফে অ্যাসিড অ্যালুমিনার (Al
2O
3) উপর শোষিত হয়। মলিবডেনাম-৯৯ এর অর্ধায়ু ৬৭ ঘন্টা, তাই স্বল্পস্থায়ী টেকনেশিয়াম-৯৯এম (অর্ধায়ু ৯ ঘন্টা), এর ক্ষয়ের ফলে ক্রমাগত উৎপাদিত হচ্ছে।[১৭] দ্রবণীয় পারটেকনেটেট TcO−
4 তারপর একটি স্যালাইন দ্রবণ ব্যবহার করে ইলুশনের মাধ্যমে রাসায়নিকভাবে নিষ্কাশন করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াটির একটি অপূর্ণতা হল যে এটির জন্য ইউরেনিয়াম-২৩৫ সমন্বিত লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন, যা ফিসাইল সামগ্রীর নিরাপত্তা সতর্কতার বিষয়।[৬৫][৬৬]
বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসে দুটি চুল্লি থেকে; কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত চক নদী গবেষণাগারের ন্যাশনাল রিসার্চ ইউনিভার্সাল রিঅ্যাক্টর ও নেদারল্যান্ডসের পেটেনে অবস্থিত নিউক্লিয়ার রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি গ্রুপের হাই ফ্লাক্স রিঅ্যাক্টর থেকে। টেকনেশিয়াম-৯৯এম উৎপাদনকারী সমস্ত বড় চুল্লি ১৯৬০-এর দশকে নির্মিত হয়েছিল এবং এগুলি বর্তমানে শেষ জীবনের কাছাকাছি। দুটি নতুন কানাডীয় মাল্টিপারপাস অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাটিস এক্সপেরিমেন্ট রিঅ্যাক্টর টেকনেশিয়াম-৯৯এম এর চাহিদার দ্বিগুণ উৎপাদন করার জন্য পরিকল্পিত ও নির্মিত হয়েছে যা অন্য সব উৎপাদনকারীকে তাদের নিজস্ব চুল্লি তৈরি থেকে মুক্তি দিয়েছে। ২০০৮ সালে পরীক্ষিত চুল্লি বাতিলের ফলে টেকনেশিয়াম-৯৯এম এর ভবিষ্যতের সরবরাহ সমস্যা সংকুল হয়ে পড়েছে।[৬৭]
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম-৯৯ এর দীর্ঘ অর্ধায়ু এবং অ্যানায়নিক উৎপাদ গঠনের সম্ভাবনা তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রধান উদ্বেগ তৈরি করে। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টে ফিশন পণ্য অপসারণের জন্য নকশা করা অনেক প্রক্রিয়ার লক্ষ্য থাকে সিজিয়াম (যেমন, সিজিয়াম-১৩৭) বা স্ট্রনশিয়ামের (যেমন, স্ট্রনশিয়াম-৯০) মতো ক্যাটায়নিক উৎপাদের দিকে। তাই পারটেকনেটেট সেই প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে হারিয়ে যায়। বর্তমান ব্যবস্থাপনার বিকল্পগুলি মহাদেশীয়, ভূতাত্ত্বিকভাবে স্থিতিশীল শিলায় কবর দেওয়ার পক্ষে। এই ধরনের কার্যক্রমের প্রাথমিক বিপদ হল বর্জ্যসমূহের পানির সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা, যা পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়াতে পারে। অ্যানায়নিক পারটেকনেটেট ও আয়োডাইড খনিজগুলির উপরিভাগে শোষিত হয় না এবং ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেখানে প্লুটোনিয়াম, ইউরেনিয়াম ও সিজিয়াম মাটির কণার সাথে আবদ্ধ থাকে। টেকনেশিয়াম কিছু পরিবেশ দ্বারা স্থির হতে পারে, যেমন হ্রদের তলদেশের পলিতে মাইক্রোবায়াল কার্যকলাপ,[৬৮] এবং টেকনেশিয়ামের পরিবেশগত রসায়ন সক্রিয় গবেষণার একটি ক্ষেত্র।[৬৯]
টেকনেশিয়াম-৯৯ এর জন্য একটি বিকল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ট্রান্সমিউটেশন সেরন-এ প্রদর্শিত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় টেকনেশিয়াম (একটি ধাতব টার্গেট হিসেবে টেকনেশিয়াম-৯৯) নিউট্রন দিয়ে বোমাবর্ষণ করে স্বল্পস্থায়ী টেকনেশিয়াম-১০০ (অর্ধায়ু = ১৬ সেকেন্ড) গঠন করে। যা বিটা ক্ষয় দ্বারা স্থিতিশীল রুথেনিয়াম-১০০ এ পরিণত হয়। যদি ব্যবহারযোগ্য রুথেনিয়াম পুনরুদ্ধার করা একটি লক্ষ্য হয়, তবে লক্ষ্য হিসেবে অত্যন্ত বিশুদ্ধ টেকনেশিয়াম প্রয়োজন; যদি অ্যামেরিসিয়াম ও কুরিয়ামের মতো মাইনর অ্যাক্টিনাইড ছোট অংশেও লক্ষ্যে উপস্থিত থাকে, তবে তারা নিউক্লিয়ার বিভাজনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে এবং আরও ফিশন পণ্য তৈরি করতে পারে যা বিকিরণিত লক্ষ্যের তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধি করে। রুথেনিয়াম-১০৬ এর গঠন (অর্ধায়ু ৩৭৪ দিন) 'তাজা ফিশন' থেকে চূড়ান্ত রুথেনিয়াম ধাতুর কার্যকলাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা রুথেনিয়াম ব্যবহার করার আগে বিকিরণ করার পরে দীর্ঘ শীতল সময়ের প্রয়োজন হবে।[৭০]
ব্যয়িত পারমাণবিক জ্বালানী থেকে টেকনেশিয়াম-৯৯ এর প্রকৃত পৃথকীকরণ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। জ্বালানী পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের সময়, এটি মারাত্বক তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তরলের একটি উপাদান হিসাবে বেরিয়ে আসে। বেশ কয়েক বছর পর, তেজস্ক্রিয়তা এমন একটি স্তরে হ্রাস পায় যেখানে টেকনেশিয়াম-৯৯ সহ দীর্ঘায়ুবিশিষ্ট আইসোটোপগুলি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ার একটি সিরিজ উচ্চ বিশুদ্ধতার টেকনেশিয়াম-৯৯ ধাতু উৎপন্ন করে।[৩৮]
নিউট্রন সক্রিয়করণ
[সম্পাদনা]মলিবডেনাম-৯৯, যা ক্ষয় হয়ে টেকনেশিয়াম-৯৯এম গঠন করে, মলিবডেনাম-৯৮ এর নিউট্রন সক্রিয়করণ দ্বারা গঠিত হতে পারে।[৭১] যখন প্রয়োজন হয়, অন্যান্য টেকনেশিয়াম আইসোটোপগুলি নিউক্লিয়ার ফিশন দ্বারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উৎপাদিত হয় না, তবে মূল আইসোটোপের নিউট্রন বিকিরণ দ্বারা তৈরি হয় (উদাহরণস্বরূপ, টেকনেশিয়াম-৯৭ রুথেনিয়াম-৯৬ এর নিউট্রন বিকিরণ দ্বারা তৈরি করা যেতে পারে)।[৭২]
কণা ত্বরক
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে 100Mo(p,2n)99mTc প্রতিক্রিয়ার পর মেডিকেল সাইক্লোট্রনে মলিবডেনাম-১০০ টার্গেটে 22-MeV-প্রোটন দ্বারা আঘাতের মাধ্যমে টেকনেশিয়াম-৯৯এম উৎপাদনের সম্ভাব্যতা প্রদর্শিত হয়েছিল।[৭৩] সাম্প্রতিককালে মেডিকেল টেকনেশিয়াম-৯৯এম এর ঘাটতি আইসোটোপিক্যালি সমৃদ্ধ (>৯৯.৫%) মলিবডেনাম-১০০ লক্ষ্যবস্তুতে প্রোটন আঘাতের মাধ্যমে এর উৎপাদনের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।[৭৪][৭৫] মলিবডেনাম-১০০ থেকে (n,2n) বা (γ,n) কণা ত্বরণকারী প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মলিবডেনাম-৯৯ পাওয়ার অন্যান্য কৌশলগুলি খোঁজা হচ্ছে।[৭৬][৭৭][৭৮]
প্রয়োগসমূহ
[সম্পাদনা]নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও বায়োলজি
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম-৯৯এম ("এম" দ্বারা বোঝানো হয় যে এটি একটি মেটাস্টেবল পারমাণবিক আইসোমার) তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ চিকিৎসা পরীক্ষায় বহুল ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, টেকনেশিয়াম-৯৯এম একটি তেজস্ক্রিয় ট্রেসার যা চিকিৎসা ইমেজিং সরঞ্জাম মানবদেহে ট্র্যাক করে।[১৭][৭৪] এটি এই কাজের জন্য উপযুক্ত কারণ এটি সহজেই শনাক্তযোগ্য ১৪০ keV গামা রশ্মি নির্গত করে এবং এর অর্ধায়ু হল ৬.০১ ঘন্টা (অর্থাৎ এর প্রায় ৯৪% ২৪ ঘন্টার মধ্যেই টেকনেশিয়াম-৯৯-তে ক্ষয় হয়ে যায়)।[২৫] টেকনেশিয়ামের গঠন এটিকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক যৌগের সাথে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে, যার প্রত্যেকটি নির্ধারণ করে কিভাবে এটি শরীরে বিপাক ও জমা হয়। এই একক আইসোটোপটি বহু প্রকারের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ডের পেশী, থাইরয়েড, ফুসফুস, লিভার, পিত্তাশয়, কিডনি, কঙ্কাল, রক্ত ও টিউমারের ইমেজিং বা ছবি তোলা এবং কার্যকরী পরীক্ষার জন্য ৫০টিরও বেশি সাধারণ রেডিওফার্মাসিউটিক্যালস টেকনেশিয়াম-৯৯এম এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।[৩৮]
দীর্ঘজীবী আইসোটোপ টেকনেশিয়াম-৯৫এম যার অর্ধায়ু ৬১ দিন, পরিবেশে এবং প্রাণী ও উদ্ভিদ সিস্টেমে টেকনেশিয়ামের গতিবিধি অধ্যয়ন করতে একটি তেজস্ক্রিয় ট্রেসার হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হয়।[৩৮]
শিল্প ও রাসায়নিক
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম-৯৯ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিটা ক্ষয় দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ক্রমাগত স্বল্প শক্তিসম্পন্ন বিটা কণা নির্গত করে এবং কোন গামা রশ্মি বিকিরণ করে না। তদুপরি, এর দীর্ঘ অর্ধায়ু মানে বিটা রশ্মির এই নির্গমন সময়ের সাথে খুব ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে উচ্চ রাসায়নিক ও আইসোটোপিক বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি নিষ্কাশন করা যেতে পারে। একারণে, এটি একটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইএসটি) স্ট্যান্ডার্ড বিটা নির্গমকারী এবং এটি সরঞ্জাম ক্রমাঙ্কনের জন্যও ব্যবহৃত হয়।[৩৮] অপটোইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এবং ন্যানোস্কেল পারমাণবিক ব্যাটারির জন্যও টেকনেশিয়াম-৯৯ ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রেনিয়াম ও প্যালাডিয়ামের মতো টেকনেশিয়াম একটি অনুঘটক বা প্রভাবক হিসাবে কাজ করতে পারে। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের ডিহাইড্রোজেনেশনের মতো বিক্রিয়াগুলিতে এটি রেনিয়াম বা প্যালাডিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর প্রভাবক। যাইহোক, নিরাপদ প্রভাবক ব্যবহার ক্ষেত্রে এর তেজস্ক্রিয়তা একটি প্রধান সমস্যা।[৩৮]
ইস্পাত যদি পানিতে ডুবানো হয় তখন পানিতে সামান্য ঘনত্বের (৫৫ ppm) পটাশিয়াম পারটেকনেটেট (VII) যোগ করে ইস্পাতকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করা যায়, এমনকি তাপমাত্রা ২৫০ °সে (৫২৩ K) এ উন্নীত হলেও। [৯] এই কারণে, পারটেকনেটেটকে ইস্পাতের জন্য অ্যানোডিক ক্ষয় প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও টেকনেটিয়ামের তেজস্ক্রিয়তাজনিত সমস্যা এই প্রয়োগকে স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেমে সীমাবদ্ধ করে।[৭৯] যখন (উদাহরণস্বরূপ) CrO2−
4 ক্ষয়কে বাধা দিতে পারে, এটির জন্য দশগুণ বেশি ঘনত্ব প্রয়োজন। একটি পরীক্ষায় কার্বন ইস্পাতের একটি নমুনা ২০ বছরের জন্য পারটেকনেটেটের জলীয় দ্রবণে রাখা হয়েছিল; এবং এখনও এটি অক্ষত আছে।[৯] পারটেকনেটেটের ক্ষয় রোধ করার প্রক্রিয়াটি ভালভাবে বোঝা যায়নি, তবে এটি একটি পাতলা পৃষ্ঠ স্তরের বিপরীতমুখী গঠন (প্যাসিভেশন) জড়িত বলে মনে হয়। একটি তত্ত্ব অনুসারে পারটেকনেটেট ইস্পাত পৃষ্ঠের সাথে বিক্রিয়া করে টেকনেশিয়াম ডাই অক্সাইডের একটি স্তর তৈরি করে যা আরও ক্ষয় রোধ করে; একই প্রভাব দ্বারা ব্যখা করা যায় যে কিভাবে আয়রন পাউডার ব্যবহার করে পানি থেকে পারটেকনেটেট অপসারণ করা যায়। পারটেকনেটেটের ঘনত্ব ন্যূনতম ঘনত্বের নিচে নেমে গেলে বা অন্যান্য আয়নের ঘনত্ব খুব বেশি হলে প্রভাবটি দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যায়।[৩৮]
যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, টেকনেশিয়ামের তেজস্ক্রিয় প্রকৃতি (৩ MBq/L প্রয়োজনীয় ঘনত্বে) প্রায় সমস্ত পরিস্থিতিতে এই ক্ষয় সুরক্ষা পদ্ধতিকে অব্যবহারিক করে তোলে। তা সত্ত্বেও, ফুটন্ত জলের চুল্লিতে ক্ষয় সুরক্ষার জন্য পারটেকনেটেট আয়ন ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল কিন্তু কখনও তা গৃহীত হয়নি।[৩৮]
সতর্কতা
[সম্পাদনা]টেকনেশিয়াম প্রকৃতিতে কোনো জৈবিক ভূমিকা পালন করে না এবং সাধারণত মানবদেহে এটি পাওয়া যায় না।[২১] টেকনেশিয়াম পরিমাণে পারমাণবিক বিভাজন দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং অনেক রেডিওনিউক্লাইডের চেয়ে সহজে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কম রাসায়নিক বিষাক্ততা আছে বলে মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক সপ্তাহ ধরে খাবারের প্রতি গ্রামে ১৫ µg পর্যন্ত টেকনেশিয়াম-৯৯ খাওয়া ইঁদুরের রক্তের গঠন, শরীর ও অঙ্গের ওজনে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন শনাক্ত করা যায়নি।[৮০] শরীরে টেকনেশিয়াম দ্রুত স্থিতিশীল TcO−
4 আয়নে রূপান্তরিত হয়, যা জলে অত্যন্ত দ্রবণীয় ও দ্রুত নির্গত হয়। টেকনেশিয়ামের রেডিওলজিক্যাল বিষাক্ততা (ভরের প্রতি একক) যৌগের একটি ফাংশন, প্রশ্নে থাকা আইসোটোপের বিকিরণ এবং আইসোটোপের অর্ধায়ু।[৩৮]
টেকনেশিয়ামের সমস্ত আইসোটোপ সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। সবচেয়ে সাধারণ আইসোটোপ টেকনেশিয়াম-৯৯, একটি দুর্বল বিটা রশ্মি বিকিরণকারী; এই ধরনের বিকিরণ পরীক্ষাগারের কাচপাত্রের দেয়াল দ্বারা বন্ধ করা হয়। টেকনেশিয়াম নিয়ে কাজ করার সময় প্রাথমিক বিপদ হল ধুলোমাখা নিঃশ্বাস নেওয়া; ফুসফুসে এই ধরনের তেজস্ক্রিয় দূষণ ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বেশিরভাগ কাজের জন্য একটি ফিউম হুডে সাবধানে হ্যান্ডলিং যথেষ্ট এবং গ্লাভ বাক্সের প্রয়োজন নেই।[৩৮]
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Irregular crystals and trace impurities raise this transition temperature to 11.2 K for 99.9% pure technetium powder.[২৬]
- ↑ ২০০৫-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], technetium-99 in the form of ammonium pertechnetate is available to holders of an Oak Ridge National Laboratory permit.[২২]
- ↑ The anaerobic, spore-forming bacteria in the Clostridium genus are able to reduce Tc(VII) to Tc(IV). Clostridia bacteria play a role in reducing iron, manganese, and uranium, thereby affecting these elements' solubility in soil and sediments. Their ability to reduce technetium may determine a large part of mobility of technetium in industrial wastes and other subsurface environments.[৬৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Technetium: technetium(III) iodide compound data"। OpenMOPAC.net। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১০।
- ↑ "Technetium: technetium(I) fluoride compound data"। OpenMOPAC.net। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১০।
- ↑ কনদেব, এফ.জি.; ওয়াং, এম.; হুয়াং, ডব্লিউ.জে.; নাইমি, এস.; আউডি, জি. (২০২১)। "The NUBASE2020 evaluation of nuclear properties" [পারমাণবিক বৈশিষ্ট্যের নুবেস২০২০ মূল্যায়ন] (পিডিএফ)। চাইনিজ ফিজিক্স সি (ইংরেজি ভাষায়)। ৪৫ (৩): ০৩০০০১। ডিওআই:10.1088/1674-1137/abddae।
- ↑ Jonge; Pauwels, E. K. (১৯৯৬)। "Technetium, the missing element": 336–44। ডিওআই:10.1007/BF00837634। পিএমআইডি 8599967।
- ↑ ক খ Holden, N. E.। "History of the Origin of the Chemical Elements and Their Discoverers"। Brookhaven National Laboratory। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫।
- ↑ Yoshihara, H. K. (২০০৪)। "Discovery of a new element 'nipponium': re-evaluation of pioneering works of Masataka Ogawa and his son Eijiro Ogawa": 1305–1310। ডিওআই:10.1016/j.sab.2003.12.027।
- ↑ ক খ গ Eric Scerri, A tale of seven elements, (Oxford University Press 2013) আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৩৯১৩১-২, pp. 109–114, 125–131
- ↑ ক খ van der Krogt, P.। "Technetium"। Elentymolgy and Elements Multidict। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫।
- ↑ ক খ গ Emsley 2001।
- ↑ Armstrong, J. T. (২০০৩)। "Technetium": 110। ডিওআই:10.1021/cen-v081n036.p110। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১১।
- ↑ Nies, K. A. (২০০১)। "Ida Tacke and the warfare behind the discovery of fission"। ২০০৯-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫।
- ↑ Weeks, M. E. (১৯৩৩)। "The discovery of the elements. XX. Recently discovered elements": 161–170। ডিওআই:10.1021/ed010p161।
- ↑ Habashi, Fathi (২০০৬)। "The History of Element 43—Technetium": 213। ডিওআই:10.1021/ed083p213.1। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Heiserman, D. L. (১৯৯২)। "Element 43: Technetium"। Exploring Chemical Elements and their Compounds। TAB Books। পৃষ্ঠা 164। আইএসবিএন 978-0-8306-3018-9।
- ↑ Segrè, Emilio (১৯৯৩)। A Mind Always in Motion: The Autobiography of Emilio Segrè। University of California Press। পৃষ্ঠা 115–118। আইএসবিএন 978-0520076273।
- ↑ ক খ Perrier, C.; Segrè, E. (১৯৪৭)। "Technetium: The Element of Atomic Number 43": 24। ডিওআই:10.1038/159024a0। পিএমআইডি 20279068।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Emsley 2001
- ↑ Hoffman, Darleane C.; Ghiorso, Albert (২০০০)। "Chapter 1.2: Early Days at the Berkeley Radiation Laboratory"। The Transuranium People: The Inside Story। University of California, Berkeley & Lawrence Berkeley National Laboratory। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-1-86094-087-3। ২০০৭-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-৩১।
- ↑ Merrill, P. W. (১৯৫২)। "Technetium in the stars": 479–489 [484]। ডিওআই:10.1126/science.115.2992.479। পিএমআইডি 17792758।
- ↑ ক খ গ ঘ Schwochau 2000
- ↑ ক খ গ ঘ Hammond 2004।
- ↑ ক খ Hammond 2004, পৃ. [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]।
- ↑ Tarasov, V.P.; Muravlev, Yu. B. (২০০১)। "99Tc NMR of Supported Technetium Nanoparticles" (1–3): 71–76। ডিওআই:10.1023/A:1018872000032।
- ↑ Lide, David R. (২০০৪–২০০৫)। "Line Spectra of the Elements"। The CRC Handbook। CRC press। পৃষ্ঠা 10–70 (1672)। আইএসবিএন 978-0-8493-0595-5।
- ↑ ক খ গ ঘ Rimshaw, S. J. (১৯৬৮)। Hampel, C. A., সম্পাদক। The Encyclopedia of the Chemical Elements। New York: Reinhold Book Corporation। পৃষ্ঠা 689–693।
- ↑ ক খ Schwochau 2000, পৃ. 96।
- ↑ Autler, S. H. (১৯৬৮)। "Technetium as a Material for AC Superconductivity Applications" (পিডিএফ)। Proceedings of the 1968 Summer Study on Superconducting Devices and Accelerators। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫।
- ↑ Greenwood ও Earnshaw 1997, পৃ. 1044।
- ↑ ক খ গ Husted, R. (২০০৩-১২-১৫)। "Technetium"। Periodic Table of the Elements। Los Alamos National Laboratory। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-১১।
- ↑ Garraway, John (১৯৮৪)। "The technetium-catalysed oxidation of hydrazine by nitric acid": 191–203। ডিওআই:10.1016/0022-5088(84)90023-7।
- ↑ Garraway, J. (১৯৮৫)। "Coextraction of pertechnetate and zirconium by tri-n-butyl phosphate": 183–192। ডিওআই:10.1016/0022-5088(85)90379-0।
- ↑ Schwochau 2000, পৃ. 127–136।
- ↑ ক খ Moore, P. W. (এপ্রিল ১৯৮৪)। "Technetium-99 in generator systems" (পিডিএফ): 499–502। পিএমআইডি 6100549। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-১১।
- ↑ Krebs, B. (১৯৬৯)। "Technetium(VII)-oxid: Ein Übergangsmetalloxid mit Molekülstruktur im festen Zustand (Technetium(VII) Oxide, a Transition Metal Oxide with a Molecular Structure in the Solid State)": 328–329। ডিওআই:10.1002/ange.19690810905।
- ↑ Schwochau 2000, পৃ. 127।
- ↑ Herrell, A. Y.; Busey, R. H. (১৯৭৭)। Technetium(VII) Oxide, in Inorganic Syntheses। পৃষ্ঠা 155–158। আইএসবিএন 978-0-07-044327-3।
- ↑ Poineau F; Weck PF (২০১০)। "Speciation of heptavalent technetium in sulfuric acid: structural and spectroscopic studies" (পিডিএফ): 8616–8619। ডিওআই:10.1039/C0DT00695E। পিএমআইডি 20730190। ২০১৭-০৩-০৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ Schwochau 2000।
- ↑ Gibson, John K. (১৯৯৩)। "High-Temperature Oxide and Hydroxide Vapor Species of Technetium": 121–126। ডিওআই:10.1524/ract.1993.60.23.121।
- ↑ ক খ গ ঘ Poineau, Frederic; Johnstone, Erik V. (২০১৪)। "Recent Advances in Technetium Halide Chemistry": 624–632। ডিওআই:10.1021/ar400225b। পিএমআইডি 24393028।
- ↑ Poineau, Frederic; Johnstone, Erik V. (২০১০)। "Synthesis and Structure of Technetium Trichloride": 15864–5। ডিওআই:10.1021/ja105730e। পিএমআইডি 20977207।
- ↑ German, K. E.; Kryutchkov, S. V. (২০০২)। "Polynuclear Technetium Halide Clusters": 578–583। ২০১৫-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Bartholomä, Mark D.; Louie, Anika S. (২০১০)। "Technetium and Gallium Derived Radiopharmaceuticals: Comparing and Contrasting the Chemistry of Two Important Radiometals for the Molecular Imaging Era": 2903–20। ডিওআই:10.1021/cr1000755। পিএমআইডি 20415476।
- ↑ ক খ গ Alberto, Roger (২০১০)। "Organometallic Radiopharmaceuticals"। Medicinal Organometallic Chemistry। Topics in Organometallic Chemistry। পৃষ্ঠা 219–246। আইএসবিএন 978-3-642-13184-4। ডিওআই:10.1007/978-3-642-13185-1_9।
- ↑ Hileman, J. C.; Huggins, D. K. (১৯৬১)। "Technetium carbonyl": 2953–2954। ডিওআই:10.1021/ja01474a038।
- ↑ Bailey, M. F.; Dahl, Lawrence F. (১৯৬৫)। "The Crystal Structure of Ditechnetium Decacarbonyl": 1140–1145। ডিওআই:10.1021/ic50030a011।
- ↑ Wallach, D. (১৯৬২)। "Unit cell and space group of technetium carbonyl, Tc2(CO)10": 1058। ডিওআই:10.1107/S0365110X62002789।
- ↑ Clayton, D. D. (১৯৮৩)। Principles of stellar evolution and nucleosynthesis: with a new preface। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 547। আইএসবিএন 978-0-226-10953-4।
- ↑ "Chart of Nuclides"। National Nuclear Data Center, Brookhaven National Laboratory। ২০০৯-০৮-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১১।
- ↑ Audi, G.; Kondev, F. G.; Wang, M.; Huang, W. J.; Naimi, S. (২০১৭)। "The NUBASE2016 evaluation of nuclear properties" (পিডিএফ)। Chinese Physics C। 41 (3): 030001। ডিওআই:10.1088/1674-1137/41/3/030001। বিবকোড:2017ChPhC..41c0001A।
- ↑ ক খ গ Sonzogni, A. A. (সম্পাদক)। "Chart of Nuclides"। New York: National Nuclear Data Center, Brookhaven National Laboratory। ২০০৯-০৮-২৫ তারিখে [dead মূল]
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১১। - ↑ ক খ গ ঘ Holden, N. E. (২০০৬)। Handbook of Chemistry and Physics (87th সংস্করণ)। CRC Press। পৃষ্ঠা 11টেমপ্লেট:Hyphen88 – 11টেমপ্লেট:Hyphen89। আইএসবিএন 978-0-8493-0487-3।
- ↑ "Table of the isotopes"। The CRC Handbook of Chemistry and Physics। CRC press। ২০০৪–২০০৫।
- ↑ Dixon, P.; Curtis, David B. (১৯৯৭)। "Analysis of Naturally Produced Technetium and Plutonium in Geologic Materials": 1692–1699। ডিওআই:10.1021/ac961159q। পিএমআইডি 21639292।
- ↑ Curtis, D.; Fabryka-Martin, June (১৯৯৯)। "Nature's uncommon elements: plutonium and technetium": 275। ডিওআই:10.1016/S0016-7037(98)00282-8।
- ↑ Moore, C. E. (১৯৫১)। "Technetium in the Sun": 59–61। ডিওআই:10.1126/science.114.2951.59। পিএমআইডি 17782983।
- ↑ ক খ গ Yoshihara, K. (১৯৯৬)। "Technetium in the Environment"। Technetium and Rhenium: Their Chemistry and Its Applications। Topics in Current Chemistry। Springer-Verlag। পৃষ্ঠা 17–35। আইএসবিএন 978-3-540-59469-7। ডিওআই:10.1007/3-540-59469-8_2।
- ↑ ক খ Garcia-Leon, M. (২০০৫)। "99Tc in the Environment: Sources, Distribution and Methods" (পিডিএফ): 253–259। ডিওআই:10.14494/jnrs2000.6.3_253 ।
- ↑ Desmet, G.; Myttenaere, C. (১৯৮৬)। Technetium in the environment। Springer। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 978-0-85334-421-6।
- ↑ Tagami, K. (২০০৩)। "Technetium-99 Behaviour in the Terrestrial Environment — Field Observations and Radiotracer Experiments": A1–A8। ডিওআই:10.14494/jnrs2000.4.a1 ।
- ↑ Szefer, P.; Nriagu, J. O. (২০০৬)। Mineral components in foods। CRC Press। পৃষ্ঠা 403। আইএসবিএন 978-0-8493-2234-1।
- ↑ Harrison, J. D.; Phipps, A. (২০০১)। "Gut transfer and doses from environmental technetium": 9–11। ডিওআই:10.1088/0952-4746/21/1/004। পিএমআইডি 11281541।
- ↑ Francis, A. J.; Dodge, C. J.; Meinken, G. E. (২০০২)। "Biotransformation of pertechnetate by Clostridia"। Radiochimica Acta। 90 (9–11): 791–797। এসটুসিআইডি 83759112। ডিওআই:10.1524/ract.2002.90.9-11_2002.791।
- ↑ Committee on Medical Isotope Production Without Highly Enriched Uranium (২০০৯)। Medical Isotope Production Without Highly Enriched Uranium। National Academies Press। পৃষ্ঠা vii। আইএসবিএন 978-0-309-13040-0।
- ↑ Lützenkirchen, K.-R.। "Nuclear forensics sleuths trace the origin of trafficked material"। Los Alamos National Laboratory। ২০১৩-০২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১১।
- ↑ Snelgrove, J. L.; Hofman, G. L. (১৯৯৫)। Development and Processing of LEU Targets for Mo-99 Production (পিডিএফ)। ANL.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৫।
- ↑ Thomas, Gregory S.; Maddahi, Jamshid (২০১০)। "The technetium shortage": 993–8। ডিওআই:10.1007/s12350-010-9281-8। পিএমআইডি 20717761।
- ↑ German, Konstantin E.; Firsova, E. V. (২০০৩)। "Bioaccumulation of Tc, Pu, and Np on Bottom Sediments in Two Types of Freshwater Lakes of the Moscow Oblast": 250–6। ডিওআই:10.1023/A:1026008108860।
- ↑ Shaw, G. (২০০৭)। Radioactivity in the terrestrial environment। Elsevier। পৃষ্ঠা 147। আইএসবিএন 978-0-08-043872-6।
- ↑ Altomare, P; Bernardi (১৯৭৯)। Alternative disposal concepts for high-level and transuranic radioactive waste disposal। US Environmental Protection Agency।
- ↑ "Manual for reactor produced radioisotopes" (পিডিএফ)। IAEA। জানুয়ারি ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-২৭।
- ↑ Kelly, J. J. (১৯৮০)। Effluent and environmental radiation surveillance: a symposium। ASTM International। পৃষ্ঠা 91।
- ↑ Beaver, J. E.; Hupf, H.B. (নভেম্বর ১৯৭১)। "Production of 99mTc on a Medical Cyclotron: a Feasibility Study" (পিডিএফ): 739–741। পিএমআইডি 5113635।
- ↑ ক খ Laurence Knight (৩০ মে ২০১৫)। "The element that can make bones glow"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৫।
- ↑ Guérin B; Tremblay S (২০১০)। "Cyclotron production of 99mTc: an approach to the medical isotope crisis" (পিডিএফ): 13N–6N। পিএমআইডি 20351346।
- ↑ Scholten, Bernhard; Lambrecht, Richard M. (২৫ মে ১৯৯৯)। "Excitation functions for the cyclotron production of 99mTc and 99Mo": 69–80। ডিওআই:10.1016/S0969-8043(98)00153-5।
- ↑ Takács, S.; Szűcs, Z. (১ জানুয়ারি ২০০৩)। "Evaluation of proton induced reactions on 100Mo: New cross sections for production of 99mTc and 99Mo": 195–201। ডিওআই:10.1023/A:1024790520036।
- ↑ Celler, A.; Hou, X. (২০১১)। "Theoretical modeling of yields for proton-induced reactions on natural and enriched molybdenum targets": 5469–5484। ডিওআই:10.1088/0031-9155/56/17/002। পিএমআইডি 21813960।
- ↑ "Ch. 14 Separation Techniques" (পিডিএফ)। EPA: 402-b-04-001b-14-final। US Environmental Protection Agency। জুলাই ২০০৪। ২০১৪-০৩-০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-০৪।
- ↑ Desmet, G.; Myttenaere, C. (১৯৮৬)। Technetium in the environment। Springer। পৃষ্ঠা 392–395। আইএসবিএন 978-0-85334-421-6।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Emsley, J. (২০০১)। Nature's Building Blocks: An A-Z Guide to the Elements। Oxford, England, UK: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-850340-8।
- Greenwood, N. N.; Earnshaw, A. (১৯৯৭)। Chemistry of the Elements (2nd সংস্করণ)। Oxford: Butterworth-Heinemann। আইএসবিএন 978-0-7506-3365-9।
- Hammond, C. R. (২০০৪)। "The Elements"। Handbook of Chemistry and Physics (81st সংস্করণ)। CRC press। আইএসবিএন 978-0-8493-0485-9।
- Schwochau, K. (২০০০)। Technetium: Chemistry and Radiopharmaceutical Applications। Weinheim, Germany: Wiley-VCH। আইএসবিএন 978-3-527-29496-1।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ভিডিওর পর্যায় সারণীতে টেকনেটিয়াম (নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়)