বিষয়বস্তুতে চলুন

থোরিয়াম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Thorium থেকে পুনর্নির্দেশিত)
থোরিয়াম   ৯০Th
উচ্চারণ/ˈθɔːriəm/ (THOR-ee-əm)
উপস্থিতিরূপালী
আদর্শ পারমাণবিক ভরAr°(Th)
পর্যায় সারণিতে থোরিয়াম
হাইড্রোজেন হিলিয়াম
লিথিয়াম বেরিলিয়াম বোরন কার্বন নাইট্রোজেন অক্সিজেন ফ্লোরিন নিয়ন
সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সিলিকন ফসফরাস সালফার ক্লোরিন আর্গন
পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম স্ক্যান্ডিয়াম টাইটেনিয়াম ভ্যানাডিয়াম ক্রোমিয়াম ম্যাঙ্গানিজ আয়রন Cobalt Nickel Copper Zinc Gallium Germanium Arsenic Selenium Bromine Krypton
Rubidium Strontium Yttrium Zirconium Niobium Molybdenum Technetium Ruthenium Rhodium Palladium Silver Cadmium Indium Tin Antimony Tellurium Iodine Xenon
Caesium Barium Lanthanum Cerium Praseodymium Neodymium Promethium Samarium Europium Gadolinium Terbium Dysprosium Holmium Erbium Thulium Ytterbium Lutetium Hafnium Tantalum Tungsten Rhenium Osmium Iridium Platinum Gold Mercury (element) Thallium Lead Bismuth Polonium Astatine Radon
Francium Radium Actinium Thorium Protactinium Uranium Neptunium Plutonium Americium Curium Berkelium Californium Einsteinium Fermium Mendelevium Nobelium Lawrencium Rutherfordium Dubnium Seaborgium Bohrium Hassium Meitnerium Darmstadtium Roentgenium Copernicium Nihonium Flerovium Moscovium Livermorium Tennessine Oganesson
Ce

Th

অ্যাক্টিনিয়ামথোরিয়ামপ্রোট্যাক্টিনিয়াম
পারমাণবিক সংখ্যা৯০
গ্রুপএফ-ব্লক গ্রুপ (no number)
পর্যায়পর্যায় ৭
ব্লক  f-block
ইলেকট্রন বিন্যাস[Rn] ৬d ৭s
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা২, ৮, ১৮, ৩২, ১৮, ১০, ২
ভৌত বৈশিষ্ট্য
গলনাঙ্ক২০২৩ কে ​(১৭৫০ °সে, ​৩১৮২ °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক৫০৬১ K ​(৪৭৮৮ °সে, ​৮৬৫০ °ফা)
ফিউশনের এনথালপি১৩.৮১ kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি৫১৪ kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব২৬.২৩০ J·mol−১·K−১
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
তড়িৎ-চুম্বকত্ব১.৩ (পলিং স্কেল)
পারমাণবিক ব্যাসার্ধempirical: ১৭৯.৮ pm
সমযোজী ব্যাসার্ধ২০৬±৬ pm
বিবিধ
কেলাসের গঠন ​ফেস সেন্টার্ড কিউবিক
[[File:ফেস সেন্টার্ড কিউবিক|50px|alt=ফেস সেন্টার্ড কিউবিক জন্য কেলাসের গঠনথোরিয়াম|ফেস সেন্টার্ড কিউবিক জন্য কেলাসের গঠনথোরিয়াম]]
তাপীয় পরিবাহিতা৫৪.০ W·m−১·K−১
চুম্বকত্বপ্যারাচুম্বকত্ব[]
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক৭৯ GPa
কৃন্তন গুণাঙ্ক৩১ GPa
আয়তন গুণাঙ্ক৫৪ GPa
পোয়াসোঁর অনুপাত০.২৭
(মোজ) কাঠিন্য৩.০
ভিকার্স কাঠিন্য২৯৫–৬৮৫ MPa
ব্রিনেল কাঠিন্য৩৯০–১৫০০ MPa
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা৭৪৪০-২৯-১
ইতিহাস
নামকরণথর, নর্স পুরাণের বজ্রের দেবতার নামানুসারে
আবিষ্কারজনস জ্যাকব বার্জেলিয়াস (১৮২৯)
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "৯"।
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "৯"।
এক্সপ্রেশন ত্রুটি: অপরিচিত বিরামচিহ্ন অক্ষর "৯"। | তথ্যসূত্র
থোরিয়াম
থোরিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস

থোরিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল, যার প্রতীক হলো Th এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৯০। এটি একটি দুর্বল তেজস্ক্রিয়, হালকা রূপালী বর্ণের ধাতু যা বায়ুর সংস্পর্শে এলে জলপাই ধূসর রঙে পরিণত হয় এবং থোরিয়াম ডাই অক্সাইড তৈরি করে। থোরিয়াম মাঝারি নরম, নমনীয় এবং উচ্চ গলনাঙ্কযুক্ত। এটি একটি তড়িৎ ধনাত্মক অ্যাক্টিনাইড, যার রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রধানত +৪ জারক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি বেশ প্রতিক্রিয়াশীল এবং সূক্ষ্মভাবে বিভক্ত অবস্থায় বায়ুর সাথে সংস্পর্শে এলে দাহ্য হয়ে ওঠে।

থোরিয়াম একটি স্বল্প-তেজস্ক্রিয় ধাতব মৌল যার প্রতীক Th এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৯০। মৌলিক অবস্থায় এর রং রূপালী কিন্তু বাতাসের সংস্পর্শে এলে এটি থোরিয়াম ডাই অক্সাইডে রূপান্তরিত হয় যার রং কালো; থোরিয়াম সামান্য নরম, নমনীয় এবং উচ্চ গলনাঙ্কের মৌল, ধনাত্মক তড়িত কণিকাবাহী(ইলেক্ট্রোপজিটিভ), অ্যাক্টিনাইড গ্রুপের সদস্য; এর অক্সিডেশন নং ৪, এটি দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম এবং চূর্ণ অবস্থায় সহজদাহ্য।অধিকাংশ থোরিয়াম আইসোটোপ(আইসোটোপ=একই মৌলের বিভিন্ন রূপ,যাদের পারমানবিক সংখ্যা অভিন্ন কিন্তু পারমানবিক ভর পৃথক) অস্থায়ী প্রকৃতির। সবচেয়ে স্থিতিশীল যে আইসোটোপ, পারমানবিক ভর232, তার হাফলাইফ(অর্থাৎ যে সময়ের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ভরের তেজষ্ক্রিয় পদার্থ নিয়মিত বিকিরণের মাধ্যমে তার অর্ধেক ভরে পৌঁছায়) 14.05 বিলিয়ন বছর, বা প্রায় মহাবিশ্বের বয়স; এটি আলফা ক্ষয়ের মাধ্যমে খুব ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। পৃথিবীতে, থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম হল একমাত্র তেজষ্ক্রিয় পদার্থ যা এখনও প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। 1828 সালে নরওয়ের শৌখিন খনিজবিদ মর্টেন থ্রেন এসমার্ক নরওয়ের দক্ষিণপশ্চিম সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সর্বপ্রথম থোরিয়ামের খনিজ আকরিক থোরাইটের নিদর্শন খুঁজে পান।প্রসিদ্ধ সুইডিশ রসায়নবিদ জন্স জ্যাকব বারজেলিয়াস এটিকে একটি অনাবিষ্কৃত মৌলের আকরিক হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং তৎপরে থোরাইটের থেকে থোরিয়ামকে পৃথক করতে সমর্থ হন। বজ্রের নর্স দেবতা থরের নামে তিনি নবাবিষ্কৃত মৌলটির নামকরণ করেন থোরিয়াম। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে থোরিয়ামের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে থোরিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা সাধারণভাবে স্বীকৃত হওয়ার পরে শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, থোরিয়ামের ব্যবহার অনেক কমে যায়। থোরিয়াম এখনও টিআইজি ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডগুলিতে একটি সংকর উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা এর স্থান নিয়ে নিচ্ছে। উন্নতমানের কিছু অপটিকাল এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে, ভ্যাকুয়াম টিউবে এবং গ্যাসবাতিতে সীমিত পরিমাণে থোরিয়ামের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।এছাড়াও শিল্পপ্রযুক্তিতে আরও নানাবিধ ক্ষেত্রে থোরিয়ামের বিভিন্ন ধর্ম, প্রধানত এর তাপনিরোধক ধর্মকে কাজে লাগানো হয়।সম্প্রতি পারমাণবিক চুল্লিতে পারমাণবিক জ্বালানী হিসাবে ইউরেনিয়ামের পরিবর্তে থোরিয়াম ব্যবহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি থোরিয়াম চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান প্রাচীন সমুদ্রের প্রকৃতি বোঝার জন্য থোরিয়ামের 231Pa/230Th আইসোটোপ ব্যবহার করছে।

সাধারণ ধর্ম

[সম্পাদনা]

থোরিয়াম হল অ্যাক্টিনাইড গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি কমনীয়, প্যারাম্যাগনেটিক (চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার গুণ বিশিষ্ট), উজ্জ্বল রূপালী বর্ণের তেজস্ক্রিয় ধাতু। পর্যায় সারণীতে, এটি অ্যাক্টিনিয়ামের ডানদিকে, প্রোটাকটিনিয়ামের বামে এবং সেরিয়ামের নীচে অবস্থিত। বিশুদ্ধ থোরিয়াম খুবই নমনীয় এবং ধাতুদের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থোরিয়ামের গঠনগত প্রকৃতি পরিবর্তন সম্ভব। সাধারণ তাপমাত্রায়, থোরিয়াম ধাতুর কোষগুলির বিন্যাস ‘ফেস সেন্টার্ড কিউবিক’’ স্ফটিকের মতন। যা উচ্চ তাপমাত্রায় (1360 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ) “বডি সেন্টার্ড কিউবিক” এবং উচ্চ চাপে (প্রায় 100 জিপিএ) “বডি সেন্টার্ড টেট্রাগোনাল" গঠন ধারণ করে।

থোরিয়াম ধাতুর বাল্ক মডুলাস (সংকোচন প্রতিরোধ ক্ষমতার পরিমাপ) 54 GPa, প্রায় টিনের (58.2 GPa) সমান। পক্ষান্তরে অ্যালুমিনিয়াম হল 75.2 GPa; তামা137.8 GPa এবং ইস্পাত 160-169 GPa অর্থাৎ এই ধাতুগুলির সংকোচন প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি । একারণে উত্তপ্ত অবস্থায় সহজেই থোরিয়ামকে পাতলা ধাতব পাতে বা সরু তারে পরিণত করা যায়।

থোরিয়ামের ঘনত্ব ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়ামের ঘনত্বের প্রায় অর্ধেক এবং এর কাঠিন্য উভয়ের চেয়ে বেশি। ১.৪ K তাপমাত্রার এর নিচে থোরিয়ামের বিদ্যুত পরিবাহিতা বহুলাংশে বেড়ে যায়। থোরিয়ামের গলনাঙ্ক ১৭৫০ °C। তুলনায় সারণির একই শ্রেণীতে অবস্থিত অ্যাক্টিনিয়ামের গলনাঙ্ক ১২২৭ °C এবং প্রোট্যাকটিনিয়ামের ১৫৬৮ °C । বস্তুত পর্যায় সারণির সাধারণ ধর্ম অনুযায়ী সারণির ৭ শ্রেণীর এর শুরুতে, ফ্রান্সিয়াম থেকে থোরিয়াম পর্যন্ত, উপাদানগুলির গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়, কারণ প্রতিটি পরমাণুর স্থানচ্যূত ইলেকট্রনের সংখ্যা ফ্রান্সিয়ামের একটি থেকে থোরিয়ামে চারটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ইলেকট্রন ও ধাতব আয়নের পারস্পরিক আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। থোরিয়ামের পরে, থোরিয়াম থেকে প্লুটোনিয়াম পর্যন্ত f ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি হেতু গলনাঙ্কের একটি নিম্নগামী প্রবণতা দেখা যায়। অ্যাক্টিনাইড গ্রুপের ক্যালিফোর্নিয়াম পর্যন্ত সকল সদস্যদের মধ্যে থোরিয়ামের গলনাঙ্ক এবং স্ফূটনাঙ্ক সর্বাধিক এবং এর ঘনত্ব দ্বিতীয় সর্বনিম্ন (শুধুমাত্র অ্যাক্টিনিয়াম হালকা)। থোরিয়ামের স্ফুটনাঙ্ক ৪৭৮৮ °C যা পরিচিত সমস্ত পদার্থের মধ্যে পঞ্চম-সর্বোচ্চ।
বিশুদ্ধতার মাত্রা অনুযায়ী থোরিয়ামের চরিত্র ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। বিশুদ্ধতা হ্রাসের প্রধান কারণ হল থোরিয়াম ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি যা কার্যত অনিবার্য। বিশুদ্ধতম থোরিয়ামেও ডাই অক্সাইডের এক শতাংশের দশমাংশ বর্তমান থাকে। থোরিয়ামের ঘনত্বের পরিমাপ ১১.৫ g/cm3 থেকে ১১.৬৬ g/cm3 যা প্রত্যাশিত মানের থেকে সামান্য কম(১১.৭ g/cm3), সম্ভবত মেটাল কাস্টিং এর সময় ধাতুর অণুগুলির মধ্যবর্তি অংশে অতিসূক্ষ্ম শূন্যস্থান তৈরি হওয়ার কারণে। ৮]
অন্যান্য অনেক ধাতুর সংগে থোরিয়ামের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিশেষ গুণাবলী সম্পন্ন সংকর ধাতু তৈরি সম্ভব। থোরিয়ামের স্বল্প অনুপাতের সংযোজন ম্যাগনেসিয়ামের যান্ত্রিক শক্তিকে (মেকানিকাল স্ট্রেংথ) উন্নত করে, থোরিয়াম-অ্যালুমিনিয়ামের সংকর ধাতুকে প্রস্তাবিত থোরিয়াম-পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহারের জন্য থোরিয়াম সংরক্ষণের উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। থোরিয়াম ক্রোমিয়াম এবং ইউরেনিয়ামের সাথে নিম্নতর গলনাংকের ইউটেকটিক মিশ্রণ তৈরি করে এবং এটি কনজেনার সেরিয়ামে কঠিন এবং তরল উভয় অবস্থায়ই সম্পূর্ণভাবে মিশ্রিত হয়।

আইসোটোপ

[সম্পাদনা]
থোরিয়ামের বিকিরণ শৃঙ্খল।

পর্যায় সারণী ধরে যদি বিসমাথ (পারমাণবিক সংখ্য়া ৮৩) অবধি এগিয়ে যাওয়া যায়, তবে দেখা যায় কেবল টেকনেশিয়াম (পারমাণবিক সংখ্য়া ৪৩) ও প্রমিথিয়াম( পারমাণবিক সংখ্য়া ৬১)ব্য়তীত সকলেরই আইসোটোপ আছে। পলোনিয়াম (পারমাণবিক সংখ্য়া ৮৪) এর পর থেকে সব মৌলই কমবেশি তেজষ্ক্রিয়। তবে এদের মধ্য়ে কেবল থোরিয়াম Th(232) এবং ইউরেনিয়াম U(238) এরই হাফ-লাইফ (তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা) বিলিয়ন বর্ষে মাপা হয়( ১ বিলিয়ন= ১000,00,00,000)। থোরিয়ামের হাফ-লাইফ ১৪.০৫ বিলিয়ন বর্ষ, পৃথিবীর বয়সের তিন গুণ এবং মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে সামান্য় বেশি। পৃথিবীর জন্মলগ্নে যে পরিমাণ থোরিয়াম প্রকৃতিতে ছিল, এখনো তার চার-পঞ্চমাংশ বিদ্য়মান। Th(232‌‌) ‌থোরিয়ামের একমাত্র আইসোটোপ যা স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায়। পরমাণু কেন্দ্রে ১৪২টি নিউট্রনের উপস্থিতি এই স্থিতিশীলতার অন্য়তম কারণ। থোরিয়াম সেই চারটি তেজষ্ক্রিয় মৌলের অন্য়তম ‍‍‍‍‍‍(বাকি তিনটি হল বিসমাথ, প্রোট্য়াক্টিনিয়াম ও ইউরেনিয়াম‌) যাদের প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় যার জন্য় এদের সঠিক পারমাণবিক ভর নির্ণয় করা সম্ভব। ‌

রসায়ন

[সম্পাদনা]

একটি থোরিয়াম পরমাণুতে ৯০টি ইলেকট্রন থাকে, যার মধ্যে চারটি যোজ্যতা ইলেকট্রন[] তাত্ত্বিকভাবে যোজ্যতা ইলেকট্রনগুলি দখল করার জন্য চারটি পরমাণু অরবিটাল উপলব্ধ: 5f, 6d, 7s, এবং 7p।[] তবে, অত্যন্ত অস্থিতিশীল হওয়ায় থোরিয়ামের ভূমি অবস্থায় 7p অরবিটালগুলি দখল করা হয় না।[] পর্যায় সারণীর f-ব্লক-এ থোরিয়ামের অবস্থান সত্ত্বেও, এর একটি অস্বাভাবিক [Rn]6d27s2 ইলেকট্রন বিন্যাস ভূমি অবস্থায় পরিলক্ষিত হয়, কারণ প্রাথমিক অ্যাক্টিনাইডগুলিতে 5f এবং 6d উপশক্তিস্তরগুলির শক্তি মাত্রা ল্যান্থানাইডগুলির 4f ও 5d উপশক্তিস্তরগুলির তুলনায়ও অধিক সন্নিকটবর্তী: থোরিয়ামের 6d উপশক্তিস্তরগুলি এর 5f উপশক্তিস্তরগুলির চেয়ে শক্তিতে নিম্নতর, কারণ এর 5f উপশক্তিস্তরগুলি পূর্ণ 6s ও 6p উপশক্তিস্তর দ্বারা পর্যাপ্তভাবে আবরিত নয় এবং আপেক্ষিকতাবাদী প্রভাবে বিশেষত আপেক্ষিকতাবাদী স্পিন-অরবিট মিথস্ক্রিয়ার কারণে অস্থিতিশীল।[][] থোরিয়ামের 5f, 6d, এবং 7s শক্তিস্তরগুলির শক্তি মাত্রার সন্নিকটতার ফলে থোরিয়াম প্রায় সর্বদা চারটি যোজ্যতা ইলেকট্রন হারিয়ে এর সর্বোচ্চ সম্ভাব্য জারণ অবস্থা +4-এ বিরাজ করে।[] এটি এর ল্যান্থানাইড সমগোত্রীয় সেরিয়াম থেকে ভিন্ন, যেখানে +4-ও সর্বোচ্চ সম্ভাব্য অবস্থা হলেও +3 একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং অধিকতর স্থিতিশীল।[] তবে, থোরিয়ামের ত্রিযোজ্য (+3) ও দ্বিযোজ্য (+2) জারণ অবস্থার জটিল যৌগ বিদ্যমান।[][] আয়নীকরণ শক্তি ও রেডক্স বিভবের দিক থেকে থোরিয়াম অবস্থান্তর ধাতু জিরকোনিয়াম ও হাফনিয়ামের সাথে সেরিয়ামের চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ, এবং ফলস্বরূপ এর রসায়নেও তাই: এই অবস্থান্তর ধাতু-সদৃশ আচরণ অ্যাক্টিনাইড শ্রেণির প্রথমার্ধে (অ্যাক্টিনিয়াম থেকে অ্যামেরিসিয়াম) সাধারণ বৈশিষ্ট্য।[][][]

ফ্লোরাইটের স্ফটিক গঠন
থোরিয়াম ডাইঅক্সাইডের ফ্লোরাইট স্ফটিক গঠন বিদ্যমান।
Th4+: __  /  O2−: __

গ্যাসীয় থোরিয়াম পরমাণুর অস্বাভাবিক ইলেকট্রন বিন্যাস সত্ত্বেও, ধাতব থোরিয়ামে উল্লেখযোগ্য 5f অরবিটালের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়।[১০] থোরিয়ামের একটি প্রকল্পিত ধাতব অবস্থা যার [Rn]6d27s2 বিন্যাসে 5f অরবিটালগুলি ফার্মি স্তর-এর ঊর্ধ্বে অবস্থান করবে, তা গ্রুপ 4 মৌল টাইটানিয়াম, জিরকোনিয়াম, এবং হাফনিয়ামের ন্যায় ষট্কোণীয় ঘন সন্নিবেশিত হওয়া উচিত—কিন্তু বাস্তবে এটি মুখকেন্দ্রিক ঘনাকার।[১০] প্রকৃত স্ফটিক গঠন কেবল তখনই ব্যাখ্যা করা যায় যখন 5f অরবিটালগুলিকে বিবেচনায় আনা হয়, যা প্রমাণ করে যে থোরিয়াম ধাতুবিদ্যাগতভাবে একটি প্রকৃত অ্যাক্টিনাইড।[১০]

চতুর্যোজী থোরিয়াম যৌগগুলি সাধারণত বর্ণহীন বা হলুদ বর্ণের হয়, যেমন রূপা বা সীসার যৌগসমূহ, কারণ Th4+ আয়নে কোনো 5f বা 6d ইলেকট্রন নেই।[১১]

থোরিয়াম রসায়ন তাই মূলত একটি তড়িৎধনাত্মক ধাতুর রসায়ন, যা একটি স্থিতিশীল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস সহ একটি একক প্রতিচুম্বকীয় আয়ন গঠন করে; এটি থোরিয়াম ও s-ব্লকের প্রধান গ্রুপ মৌলগুলির মধ্যে সাদৃশ্য নির্দেশ করে।[১২][] থোরিয়াম ও ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয় মৌলসমূহের মধ্যে সর্বাধিক গবেষণা করা হয়েছে, কারণ তাদের তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষাগারে বিশেষ হ্যান্ডলিং প্রয়োজন হয় না—এতদূর পর্যন্ত নিম্ন।[১৩]

ব্যবহার

[সম্পাদনা]

যৌগসমূহ

[সম্পাদনা]

রাসায়নিক বিক্রিয়া

[সম্পাদনা]
থোরিয়ামের ঘনত্ব ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়ামের ঘনত্বের প্রায় অর্ধেক এবং এর কাঠিন্য উভয়ের চেয়ে বেশি
  • ব্রিটানিকা বিশ্বকোষ (Encyclopedia Britannica)

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Standard Atomic Weights: থোরিয়াম"CIAAW। ২০১৩। 
  2. Prohaska, Thomas; Irrgeher, Johanna; Benefield, Jacqueline; Böhlke, John K.; Chesson, Lesley A.; Coplen, Tyler B.; Ding, Tiping; Dunn, Philip J. H.; Gröning, Manfred; Holden, Norman E.; Meijer, Harro A. J. (২০২২-০৫-০৪)। "Standard atomic weights of the elements 2021 (IUPAC Technical Report)"Pure and Applied Chemistry (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 1365-3075ডিওআই:10.1515/pac-2019-0603 
  3. Lide, D. R., সম্পাদক (২০০৫)। "Magnetic susceptibility of the elements and inorganic compounds"। CRC Handbook of Chemistry and Physics (পিডিএফ) (৮৬th সংস্করণ)। CRC Press। পৃষ্ঠা ৪–১৩৫। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৪৯৩-০৪৮৬-৬ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  4. Wickleder, Mathias S.; Fourest, Blandine; Dorhout, Peter K. (২০০৬)। The Chemistry of the Actinide and Transactinide Elements3। Springer। পৃষ্ঠা 59–60। আইএসবিএন 978-1-4020-3555-5 
  5. Cotton, F. Albert (২০০৬)। Advanced Inorganic Chemistry। Wiley। আইএসবিএন 978-0-471-19957-1 
  6. Martin, W. C.; Hagan, Lucy; Reader, Joseph; Sugar, Jack (১৯৭৪)। "Ground Levels and Ionization Potentials for Lanthanide and Actinide Atoms and Ions"। Journal of Physical and Chemical Reference Data3 (3): 771–780। ডিওআই:10.1063/1.3253147বিবকোড:1974JPCRD...3..771M 
  7. Parry, Julian (১৯৯৯)। "Synthesis and Characterization of the First Sandwich Complex of Trivalent Thorium: A Structural Comparison with the Uranium Analogue"। Journal of the American Chemical Society121 (29): 6867–6871। ডিওআই:10.1021/ja9903633বিবকোড:1999JAChS.121.6867P 
  8. Evans, William J. (২০১৪)। "Synthesis, structure, and reactivity of crystalline molecular complexes of the {[C5H3(SiMe3)2]3Th}1– anion containing thorium in the formal +2 oxidation state"Chemical Science6 (1): 517–521। ডিওআই:10.1039/c4sc03033hপিএমআইডি 29560172পিএমসি 5811171অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  9. Johnson, David (১৯৮৪)। The Periodic Law (পিডিএফ)। Royal Society of Chemistry। আইএসবিএন 0-85186-428-7। ৩১ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২৪ 
  10. Johansson, Börje (১৯৮৪)। "The Actinide Elements"। Handbook on the Physics and Chemistry of Rare Earths8: 1–52। ডিওআই:10.1016/S0168-1273(84)08003-0 
  11. Tretyakov, Yu. D., সম্পাদক (২০০৭)। Non-organic chemistry in three volumes। Chemistry of transition elements। 3। Academy। আইএসবিএন 978-5-7695-2533-9 
  12. King, R. Bruce (১৯৯৫)। Inorganic Chemistry of Main Group Elements। Wiley-VCH। আইএসবিএন 978-0-471-18602-1 
  13. Greenwood, Norman N.; Earnshaw, Alan (১৯৯৭)। Chemistry of the Elements (2nd সংস্করণ)। Butterworth-Heinemann। পৃষ্ঠা 1262। আইএসবিএন 978-0-08-037941-8 



উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি