সূরা আল-কিয়ামাহ
![]() | |
শ্রেণী | মাক্কী সূরা |
---|---|
নামের অর্থ | মহাপ্রলয় পুনরুত্থান |
অবতীর্ণ হওয়ার সময় | হিজরত-পূর্ব |
পরিসংখ্যান | |
সূরার ক্রম | ৭৫ |
আয়াতের সংখ্যা | ৪০ |
পারার ক্রম | ২৯ |
মঞ্জিল নং | ৭ |
রুকুর সংখ্যা | ২ |
সিজদাহ্র সংখ্যা | নেই |
অক্ষরের সংখ্যা | ৬৬১ |
← পূর্ববর্তী সূরা | সূরা আল-মুদ্দাস্সির |
পরবর্তী সূরা → | সূরা আদ-দাহর |
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ |
সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (আরবি ভাষায়: القيامة) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৭৫ তম সূরা; এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৪০ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২। সূরা আল-ক্বিয়ামাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
পরিচ্ছেদসমূহ
নামকরণ[সম্পাদনা]
এই সূরাটির প্রথম আয়াতের الۡقِيٰمَةِۙ বাক্যাংশ থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে القيامة (‘ক্বিয়ামাহ’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা।[১]
নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান[সম্পাদনা]
কুরআন |
---|
ধারাবাহিক নিবন্ধশ্রেণীর অংশ |
![]() |
অনুবাদ |
শানে নুযূল[সম্পাদনা]
ইসলাম ধর্ম প্রচারকালীন সময় নবী মুহাম্মদকে কাফেররা ক্বিয়ামাত সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করতো; এসকল প্রশ্নের উত্তরে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়।
আয়াতসমূহ[সম্পাদনা]
لَا أُقْسِمُ بِيَوْمِ الْقِيَامَةِ
আমি শপথ করি কেয়ামত দিবসের,
وَلَا أُقْسِمُ بِالنَّفْسِ اللَّوَّامَةِ
আরও শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়-
أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَلَّن نَجْمَعَ عِظَامَهُ
মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?
بَلَى قَادِرِينَ عَلَى أَن نُّسَوِّيَ بَنَانَهُ
পরন্ত আমি তার অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।
بَلْ يُرِيدُ الْإِنسَانُ لِيَفْجُرَ أَمَامَهُ
বরং মানুষ তার ভবিষ্যত জীবনেও ধৃষ্টতা করতে চায়
يَسْأَلُ أَيَّانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ
সে প্রশ্ন করে-কেয়ামত দিবস কবে?
فَإِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ
যখন দৃষ্টি চমকে যাবে,
وَخَسَفَ الْقَمَرُ
চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।
وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ
এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে-
يَقُولُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ أَيْنَ الْمَفَرُّ
সে দিন মানুষ বলবেঃ পলায়নের জায়গা কোথায় ?
كَلَّا لَا وَزَرَ
না কোথাও আশ্রয়স্থল নেই।
إِلَى رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمُسْتَقَرُّ
আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে।
يُنَبَّأُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ
সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে।
بَلِ الْإِنسَانُ عَلَى نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ
বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চক্ষুমান।
وَلَوْ أَلْقَى مَعَاذِيرَهُ
যদিও সে তার অজুহাত পেশ করতে চাইবে।
لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ
তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না।
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব।
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ
অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন।
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।
كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ
কখনও না, বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে ভালবাস
وَتَذَرُونَ الْآخِرَةَ
এবং পরকালকে উপেক্ষা কর।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ
সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে।
إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
তারা তার পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ بَاسِرَةٌ
আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন উদাস হয়ে পড়বে।
تَظُنُّ أَن يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ
তারা ধারণা করবে যে, তাদের সাথে কোমর-ভাঙ্গা আচরণ করা হবে।
كَلَّا إِذَا بَلَغَتْ التَّرَاقِيَ
কখনও না, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে।
وَقِيلَ مَنْ رَاقٍ
এবং বলা হবে, কে ঝাড়বে
وَظَنَّ أَنَّهُ الْفِرَاقُ
এবং সে মনে করবে যে, বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে।
وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ
এবং গোছা গোছার সাথে জড়িত হয়ে যাবে।
إِلَى رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمَسَاقُ
সেদিন, আপনার পালনকর্তার নিকট সবকিছু নীত হবে।
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلَّى
সে বিশ্বাস করেনি এবং নামায পড়েনি;
وَلَكِن كَذَّبَ وَتَوَلَّى
পরন্ত মিথ্যারোপ করেছে ও পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে।
ثُمَّ ذَهَبَ إِلَى أَهْلِهِ يَتَمَطَّى
অতঃপর সে দম্ভভরে পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরে গিয়েছে।
أَوْلَى لَكَ فَأَوْلَى
তোমার দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ।
ثُمَّ أَوْلَى لَكَ فَأَوْلَى
অতঃপর, তোমার দুর্ভোগের উপর দূর্ভোগ।
أَيَحْسَبُ الْإِنسَانُ أَن يُتْرَكَ سُدًى
মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে?
أَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّن مَّنِيٍّ يُمْنَى
সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?
ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّى
অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।
فَجَعَلَ مِنْهُ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنثَى
অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।
أَلَيْسَ ذَلِكَ بِقَادِرٍ عَلَى أَن يُحْيِيَ الْمَوْتَى
তবুও কি সেই আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করতে সক্ষম নন?
বিষয়বস্তুর বিবরণ[সম্পাদনা]
ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]
এই সূরায় কেয়ামতের কথা বলা হয়েছে। যারা পরকাল অবিশ্বাসী মূলত তাদের সম্পর্কেই এই সূরাটি নাজিল হয়েছে। এই সূরাটিতে কেয়ামতের অবশ্যাম্ভাবীতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। সূরাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ
প্রথম ভাগ[সম্পাদনা]
১৬ থেকে ১৯ পর্যন্ত ৪ টি আয়াত ব্যতীত অবশিষ্ট আয়াতগুলো এর অংশ। এই আয়াতগুলো মূলতঃ কাফেরদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, যাতে ক্বিয়ামাত সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।
দ্বিতীয় ভাগ[সম্পাদনা]
এই ভাগটি ১৬ থেকে ১৯ নং আয়াতগুলো নিয়ে গঠিত। এগুলো নবী মুহাম্মদকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
পুরো সূরার ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]
এই সূরাটি কেয়ামত সম্পর্কে সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে আগে কাফেরেরা ভাবত আমরা তো মরার পর পঁচে গলে যাব।তাহলে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে আবার সৃষ্টি করবেন? কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে যে,আল্লাহ তায়ালা তাদের আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত সন্নিবেশন করতে সক্ষম।তারা প্রশ্ন করে কেয়ামত কবে হবে?আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে (আমার ব্যক্তিগত ভাষায়) কেয়ামত সেদিন হবে যেদিন দৃষ্টি চমকে যাবে,সূর্য ও চাঁদ জ্যোতিহীন হয়ে যাবে,চাঁদ ও সূর্যকে একত্র করা হবে। তখন মানুষ বলবে পালানোর জায়গা কোথায়? কিন্তু তারা ঠাঁই পাবার জায়গা পাবে না একমাত্র আল্লাহর আরশে আযীম ছাড়া। সেখানে নেকব্যক্তিরা স্থান লাভ করবে? মূলত মানুষ ভবিষ্যতেও ধৃষ্টতা দেখাতে চায়। যার কারণে তারা এসব ব্যাপারে মাথা ঘামায়।সেদিন তারা জীবনে যা করেছে তা তাদেরকে দেওয়া হবে।কিন্তু তারা এসব পাওয়ার পরও অজুহাত পেশ করবে। নবীজি (সাঃ) এসব আয়াত মুখস্ত করার জন্য জিবরাঈল আঃ এর সঙ্গে ঠোঁট নাড়িয়ে পড়তেন।আল্লাহ তায়ালা এর প্রেক্ষিতে বলেন যে, হে নবী আপনার এভাবে পড়ার দরকার নেই। জিবরাঈল (আঃ) যা কিছু বর্ণনা করেন তার দিকে অনুসরণ করুন। মুখস্ত করানোর দায়িত্ব আমার। তবুও মানুষ পরকালকে উপেক্ষা করে। আর এসব অজুহাত এসবেরই কারণ। সেদিন নেককারেরা প্রভুর দিকে উজ্জ্বল মুখমন্ডল ফিরিয়ে রাখবে। আর বদকারেরা এর বিপরীতভাবে থাকবে। তারা নামাজ পড়েনি আল্লাহর ইবাদত করেনি। আর এসবের কারণে তাদের এই পরিণতি হবে। মানুষ মনে করে তাদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা স্খলিত বীর্য ছিল। অতঃপর তারা ছিল রক্তপিন্ড এবং আল্লাহ তাঁকে সুবিন্যস্ত করেছেন। আর সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষ। তাহলে কি এভাবে তিনি মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। সুতরাং কেয়ামত অবশ্যই হবে। এ ই সূরা এসব বিষয় সম্পর্কেই বলা হয়েছে।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "সূরার নামকরণ"। www.banglatafheem.com। তাফহীমুল কোরআন, ২০ অক্টোবর ২০১০। ১১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ : ৩০ জুলাই ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- ডিজিটাল 'আল কোরআন' - ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ।
- কোরআন শরীফ.অর্গ।
![]() |
ইংরেজি ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: |