দূরদর্শন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দূরদর্শন
ধরনব্রডকাস্ট, রেডিও, টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবং অনলাইন
দেশভারত
প্রাপ্যতাজাতীয়
নীতিবাক্যसत्‍यम शिवम सुंदरम
সত্যম শিবম সুন্দরম
প্রধান কার্যালয়নয়া দিল্লি, দিল্লি, ভারত,
মালিকানাপ্রসার ভারতী
আরম্ভের তারিখ
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯ (1959-09-15)
প্রাক্তন নাম
অল ইন্ডিয়া রেডিও
ছবি ফরম্যাট
(৪৮০আই) (১৬:৯) এসডিটিভি)
(৭২০পি) (এইচডিটিভি)
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
www.ddindia.gov.in
দূরদর্শনের প্রধান কার্যালয়, পার্লামেন্ট স্ট্রিট, নয়াদিল্লি

দূরদর্শন ভারতের একমাত্র সরকারি টেলিভিশন সংস্থা। এটি ভারতীয় সম্প্রচার নিগম প্রসার ভারতীর অধীনস্থ একটি সংস্থা। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম দূরদর্শন কেন্দ্র। সেখান থেকে দিল্লিস্থিত টাওয়ারের মাত্র কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে খুব স্বল্প সময়ের জন্য আরম্ভ হয় প্রথম সম্প্রচার। বর্তমানে স্টুডিও এবং ট্রান্সমিটারের পরিকাঠামোর নিরিখে দূরদর্শন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সম্প্রচার সংস্থা।

প্রারম্ভিক পর্যায়[সম্পাদনা]

১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সম্প্রচার শুরু হওয়ার পরে ১৯৬৫ সালে আকাশবাণীর একটি অংশ হিসেবে আরম্ভ হয় দূরদর্শনের নিয়মিত সম্প্রচার এবং ১৯৭২ সালে ভারতের টেলিভিশন পরিষেবা মুম্বই (তদানীন্তন "বম্বে") এবং অমৃতসর পর্যন্ত পরিবর্ধিত হয়। এরপর ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি শহর দূরদর্শন পরিষেবার আওতাভুক্ত হয়। ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট কলকাতায় প্রথমবারের জন্য স্থাপিত হয় "দূরদর্শন কেন্দ্র"। ১৯৭৬ সালে দূরদর্শনকে আকাশবাণী থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বতন্ত্র এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিষেবায় রূপান্তরিত করা হয়। নয়াদিল্লিতে আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের নিজস্ব কার্যালয়ে দু'জন পৃথক্ অধিকর্তা নিযুক্ত হন।

রাষ্ট্রীয় প্রসারণ[সম্পাদনা]

১৯৮২ সালে দূরদর্শন জাতীয়স্তরের টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং সেই বছরেই ভারতের বাজারে প্রথম রঙিন টেলিভিশন বিক্রীত হয়। ১৯৮২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণ প্রথমবার সরাসরি সম্প্রচারিত হয় দূরদর্শনের পর্দায়। এরপরে ১৯৮২ সালেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসও সরাসরি সম্প্রচার করে দূরদর্শন। সেই সময় দূরদর্শনই ছিল ভারতের একমাত্র টেলিভিশন মাধ্যম। তৎকালে অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে দূরদর্শনে প্রচারিত কিছু উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক হল; হম লোগ (১৯৮৪), বুনিয়াদ (১৯৮৬-৮৭), এবং হাস্যরসাত্মক অনুষ্ঠান য়ে জো হ্যায় জ়িন্দেগি (১৯৮৪)। সর্বপ্রথম প্রচারিত ধারাবাহিক হম লোগ এবং পৌরাণিক ও মহাকাব্যভিত্তিক ধারাবাহিক রামায়ণ এবং মহাভারত জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করেছিল ও সেই সময়ের ভারতীয় দর্শকদের অমোঘ আকর্ষণে টেলিভিশনের পর্দার সামনে বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমানে দূরদর্শনের প্রায় ৪৬টি কেন্দ্র এবং ১৪০০ টেরেস্ট্রিয়াল ট্রান্সমিটারের সাহায্যে নব্বই শতাংশ ভারতীয় দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে দেখতে পান।

চ্যানেলসমূহ[সম্পাদনা]

বর্তমানে দূরদর্শনের ১৫টি আঞ্চলিক চ্যানেলসহ মোট ২৪টি চ্যানেল রয়েছে। জাতীয়স্তরের অর্থাৎ দূরদর্শনের দিল্লি কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত চ্যানেলগুলি হল; ডিডি ন্যাশনাল, ডিডি নিউজ, ডিডি স্পোর্টস, ডিডি কিষাণ, ডিডি ভারতী, ডিডি জ্ঞানদর্শন, ডিডি উর্দু এবং আন্তর্জাতিক চ্যানেল ডিডি ইন্ডিয়া। এতদ্ব্যতীত সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা এবং রাজ্যসভার প্রতিদিনের অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচারের জন্য দূরদর্শনের দু'টি বিশেষ চ্যানেল লোকসভা টিভি এবং ডিডি রাজ্যসভাও দিল্লি কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। দূরদর্শনের ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল ডিডি নিউজ চালু হয় ২০০৩ সালের ৩ নভেম্বর পূর্ববর্তী বিনোদনমূলক চ্যানেল ডিডি মেট্রোর পরিবর্তে। দূরদর্শন একটি সরকারি সংস্থা হয়েও সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে আবহমানকাল ধরে নিরপেক্ষতা এবং উৎকর্ষ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের আদর্শ পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। দূরদর্শনের আঞ্চলিক চ্যানেলগুলিও মনোরঞ্জনের পাশাপাশি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তারা বহুভাষিক ভারত রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের দর্শকদের একটি মার্জিতরুচিসম্পন্ন সুস্থ সংস্কৃতি উপহার দিয়েছে। বিবিধ ভাষায় দূরদর্শনের মোট ১৫টি আঞ্চলিক চ্যানেল রয়েছে, এগুলির একটি তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল:

চ্যানেল সম্প্রচারের ভাষা সম্প্রচারের অঞ্চল মুখ্য কার্যালয়
ডিডি বাংলা বাংলা পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা
ডিডি সহ্যাদ্রি মারাঠি মহারাষ্ট্র মুম্বই
ডিডি পাঞ্জাবি পাঞ্জাবি পাঞ্জাব জলন্ধর
ডিডি ওড়িয়া ওড়িয়া ওড়িশা ভুবনেশ্বর
ডিডি পোধিগাই তামিল তামিলনাড়ু চেন্নাই
ডিডি সপ্তগিরি তেলুগু অন্ধ্রপ্রদেশ বিজয়ওয়াড়া
ডিডি ইয়াদগিরি তেলুগু তেলেঙ্গানা হায়দ্রাবাদ
ডিডি চন্দনা কন্নড় কর্ণাটক বেঙ্গালুরু
ডিডি গুজরাতি গুজরাতি গুজরাত আহমেদাবাদ
ডিডি বিহার হিন্দি, ভোজপুরি বিহার, ঝাড়খণ্ড পাটনা
ডিডি মালয়ালম মালয়ালম কেরল তিরুবনন্তপুরম
ডিডি উত্তরপ্রদেশ হিন্দি, উর্দু উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড লখনউ
ডিডি আসাম অসমীয়া আসাম গুয়াহাটি
ডিডি রাজস্থান হিন্দি রাজস্থান জয়পুর
ডিডি মধ্যপ্রদেশ হিন্দি মধ্যপ্রদেশ ভোপাল
ডিডি ছত্তিশগড় হিন্দি ছত্তিশগড় ভোপাল
ডিডি কাশ্মীর কাশ্মীরি, উর্দু জম্মু ও কাশ্মীর শ্রীনগর

এই সমস্ত আঞ্চলিক চ্যানেলগুলি দুই ভাবে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে। সারাদিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় উপগ্রহ চ্যানেলের মাধ্যমে। এই অনুষ্ঠানগুলি দেখার জন্য কেবল্ সংযোগ অথবা ডি.টি.এইচ. পরিষেবার সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৫:০০টা থেকে রাত্রি ৮:০০টা পর্যন্ত ডিডি ন্যাশনাল চ্যানেলে (যেটি সর্বত্র কেবল্ সংযোগ ছাড়াই দেখা যায় টেরেস্ট্রিয়াল ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে) রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পরিবর্তে প্রতিটি অঞ্চলের দর্শক তাদের নিকটবর্তী দূরদর্শন কেন্দ্রের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান দেখতে পান। দূরদর্শনের ক্রীড়া চ্যানেল ডিডি স্পোর্টস জনপ্রিয় খেলাগুলির পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আঞ্চলিক ক্রীড়ানুষ্ঠান যেমন খো-খো, কাবাডি ইত্যাদি সম্প্রচার করে যেগুলি বেসরকারি টেলিভিশন সংস্থাগুলির পক্ষে বাণিজ্যিক স্বার্থেই প্রচার করা সম্ভব নয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রচার[সম্পাদনা]

জাতীয় স্তরে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরেও দূরদর্শন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। বর্তমানে দূরদর্শন প্রায় ১৪৬টি দেশের দর্শক উপগ্রহের মাধ্যমে দেখতে পান। যদিও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বহির্ভারতে সর্বত্র দূরদর্শন নিয়মিত সম্প্রচারিত হয় না।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]