জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা
![]() | |
ধরন | কামিল মাদ্রাসা |
---|---|
স্থাপিত | ১৯৫৪ |
প্রতিষ্ঠাতা | হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি |
অধিভুক্তি | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ (২০০৬–২০১৬) ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৬–বর্তমান) |
চেয়ারম্যান | অধ্যাপক আবুল মহসিন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান |
অধ্যক্ষ | হযরত জসিম উদ্দিন আযহারী (ভারপ্রাপ্ত) |
শিক্ষার্থী | ৮০০০+ |
অবস্থান | ২২°২২′৩০″ উত্তর ৯১°৫০′১৪″ পূর্ব / ২২.৩৭৫০১২° উত্তর ৯১.৮৩৭১৮৫° পূর্ব |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
![]() | |
![]() |
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার একটি ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আলিয়া মাদ্রাসা। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের ষোলশহরে হযরত আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি শিক্ষা জরিপে 'শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান' সন্মাননা লাভ করে। বর্তমানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া'র অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন হযরত জসিম উদ্দিন আযহারী (মাদ্দা যিল্লুহুল আলি)।
অবস্থান[সম্পাদনা]
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের নাজির পাড়ায় অবস্থিত।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
১৯৫৪ সালে চট্টগ্রাম জেলার পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতা হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর উত্তরসূরী হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর দুই সন্তান হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মাদ্দা যিল্লুহুল আলি) এবং হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মাদ্দা যিল্লুহুল আলি) মাদ্রাসাটির পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন।[১][২]
ব্যবস্থাপনা[সম্পাদনা]
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আওতায় মাদ্রাসা গভর্নিং বডির ব্যবস্থাপনায় এ মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় শতাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।[১]
বর্তমানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন হযরত জসিম উদ্দিন আজহারী (ভারপ্রাপ্ত) ।[১]
অবকাঠামো[সম্পাদনা]
১৯৫৪ সালে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া’র প্রতিষ্ঠাকালে সরকারি অনুদান ও বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতায় মাদ্রাসার পুরাতন একাডেমিক ভবনটি নির্মিত হয় ও শিক্ষাক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে মুহাম্মদ তালেব আলী সওদাগর ও ওসমান আলী সওদাগরের যৌথ অর্থায়নে 'তৈয়্যবিয়া তালেবিয়া টেকনিক্যাল সেকশন'র জন্য পুরাতন ভবনের দক্ষিণাংশের ত্রিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে সালেহ আহমদ সওদাগরের অর্থায়নে পুরাতন ভবনের উত্তরাংশের ত্রিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয় এবং তারই অর্থায়নে ২০০৩ সালে পুনরায় মাদ্রাসার ময়দানের দক্ষিণাংশের ছয়তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ২০১০ সালে শেখ আহমদ সওদাগর নতুন একাডেমিক ভবনের পশ্চিমাংশে ছয়তলা বিশিষ্ট হেফজখানা ভবন ও ২০১১ সালে এসইএসডিপি'র অধীনে মডেল মাদ্রাসার আওতায় মাদ্রাসার উত্তরদিকে পুরাতন ভবন সংলগ্ন পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক অনার্স ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফী মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের অর্থায়নে মাদ্রাসা ময়দানের উত্তরদিকে ৩৬ কক্ষ বিশিষ্ট আটতলার নতুন একাডেমিক ভবনটি নির্মিত হয়।[১]
শিক্ষা কার্যক্রম[সম্পাদনা]
মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদারেসিন এর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ফাজিল স্তরে অনার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়ার পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বরাবর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর আবেদন করেন। ২০১০ সালের ২০ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন এবং দুইটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেন। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মোতাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াকে মডেল মাদ্রাসা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণী থেকে ফাজিল সম্মানসহ কামিল কোর্সে বহু শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। ২০১৪ সাল থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ায় দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়েছে। এই মাদ্রাসায় আলিয়া বিভাগের পাশাপাশি হিফজ বিভাগ চালু রয়েছে।
কম্পিউটার ল্যাব[সম্পাদনা]
২০১৪ সাল দাখিলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হবার পরে এটি মডেল মাদ্রাসার আওতাধীন হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা উন্নয়ন প্রকল্পে ২০টি কম্পিউটার প্রদান করে। পরে চট্টগ্রামের খান জাহান আলী কম্পিউটার্স লিমিটেড এর সহযোগিতায় মাদ্রাসার আইসিটি সেন্টার আরো সমৃদ্ধ হয়।
পাঠাগার[সম্পাদনা]
আনজুমান ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় ও অধ্যক্ষের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ষষ্ঠ তলায় রয়েছে বিশাল পাঠাগার। এতে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত গ্রন্থ, তাফসীর, ফিক্বহ ও ফতওয়ার দুর্লভ কিতাব, দুষ্প্রাপ্য রেফারেন্স বুক ও বিভিন্ন জার্নাল সংগৃহীত আছে।[১]
অর্জন[সম্পাদনা]
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট পরিচালিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখায় ২০০১ সালে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি শিক্ষা জরিপে 'শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান' সন্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও ২০০১ ও ২০০৪ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আল-ক্বাদেরী 'শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ' ও মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান 'শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক' হিসেবে নির্বাচিত হন।[১]
কৃতিত্ব ও ফলাফল[সম্পাদনা]
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২১ সালের আলিম পরীক্ষায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। এ মাদ্রাসায় ৬৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১২ জন এ+, ৪৪৬ জন এ গ্রেডসহ অনান্য শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার ৯৯.৭০℅। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সুপরিচালিত এ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ৩০টি মডেল মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়েছে।[৩] এছাড়া জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া থেকে ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণের জন্য সরকারি শিক্ষা বৃত্তিসহ বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিযোগিতায় মেধা ও সাধারণ বৃত্তি লাভ করে আসছে।[১]
সনদ স্বীকৃতি[সম্পাদনা]
দাখিল, আলিম ও ফাযিল সনদের স্বীকৃতি পায় ১৯৬২ সালের ১ জুন এবং কামিল বা মাস্টার্স এর সনদ স্বীকৃতি পায় ১৯৭১ সালের ১ জুলাই। দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল সব স্তরের এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি।
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী[সম্পাদনা]
- অধ্যক্ষ জালালুদ্দিন আল কাদেরী (র.) –– সাবেক গভর্নর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
- শেরে মিল্লাত মুফতি ওবায়দুল হক নঈমী (র.) –– মুফতি, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
- মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
- মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান –– সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
- এম এ মতিন –– রাজনীতিবিদ
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
- কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা
- তাহেরিয়া সাবেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা
- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাজিল
- মাদ্রাসা-এ-গাউসিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া
- মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া
- তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুলতান মোস্তফা কমপ্লেক্স দাখিল মাদ্রাসা
- মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া আলিম
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "চট্টগ্রাম জামেয়া আহ্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা"। www.dailyinqilab.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=2663&table=july2017&date=2017-07-24&page_id=6&view=1&instant_status=[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]