মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন | |
|---|---|
দ্বিতীয় সমাবর্তনে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। | |
| বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্নর | |
| কাজের মেয়াদ ২৪ নভেম্বর ১৯৯৮ – ২২ নভেম্বর ২০০১ | |
| পূর্বসূরী | লুৎফর রহমান সরকার |
| উত্তরসূরী | ফখরুদ্দীন আহমদ |
| ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য | |
| কাজের মেয়াদ ১৯৯৬ – ১৯৯৮ | |
| ব্যক্তিগত বিবরণ | |
| জন্ম | ১৮ এপ্রিল ১৯৪২ মাধবপুর, হবিগঞ্জ, (বর্তমান |
| নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
| জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
| রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
| দাম্পত্য সঙ্গী | সুরাইয়া আসমা (বি. ১৯৬৬) |
| সন্তান | ১ ছেলে ১ মেয়ে |
| বাসস্থান | গুলশান, ঢাকা, বাংলাদেশ |
| প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (জন্ম: ১৮ এপ্রিল ১৯৪২) হলেন বাংলাদেশের একজন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্নর।[১][২] তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৩]
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
[সম্পাদনা]ফরাসউদ্দিন ১৮ এপ্রিল ১৯৪২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহুকুমার মাধবপুরের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুরাইয়া ফরাসউদ্দিন আসমাকে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেন। এই দম্পতীর একমাত্র পুত্র আসফ, পুত্রবধু তানিয়া এবং একমাত্র কন্যা সোমা, জামাতা হাসান শফি।[৪]
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]ফরাসউদ্দিন শিক্ষা জীবন শুরু করেন তার পিতা প্রতিষ্ঠিত রতনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং জগদীশপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৫৩ সালে ৫ম শ্রেণির লেখাপড়া শেষ করেন। ১৯৫৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬০ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে অর্থনীতিতে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৬৪ সালে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে দু’টো এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ১৯৭৯ সালে কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসেস বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ফরাসউদ্দিন কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। জামালপুরের মহকুমা প্রশাসক, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও করাচির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন।
এ ছাড়াও সিন্ধু প্রদেশের উপসচিব, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের পরিচালক, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান, বহিঃসম্পদ বিভাগের উপসচিব, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম-প্রধান এবং অর্থবিভাগের যুগ্ম-সচিব তথা কন্ট্রোলার অব ক্যাপিটাল ইস্যুজ হিসেবে কাজ করেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম আইনমন্ত্রী কামাল হোসেনের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করার সুবাদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি কয়েকটি ব্যাংক ও কর্পোরেট সংস্থায় সরকার মনোনীত পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন।
কন্ট্রোলার অব ক্যাপিটাল ইস্যুজ হিসেবে কাজ করার সময় আশির দশকের শুরুতে ব্যাংক ও বীমা খাতকে ব্যক্তিখাতে উন্মুক্ত করে দেয়ার নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। একই সময়ে অর্থ বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বিনিয়োগ ও ব্যাংকিং) হওবার সুবাদে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৪ প্রণয়নে একজন মূল চালিকাশক্তি ছিলেন ফরাসউদ্দিন।
২৪ নভেম্বর ১৯৯৮- ২২ নভেম্বর ২০০১ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হিসেবে অনেক সংস্কারের কাজ শুরু করেন[১][২]
তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির প্রথমে উপ-আবাসিক প্রতিনিধি ও পরবর্তীতে আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে তিনটি দেশে সঙ্গে কাজ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও সিনেট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল ও ঢাকা সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা তিনি।
তিনি একাধিকবার শীর্ষ স্থানীয় উন্নয়ন পর্যালোচনা সংস্থা বিআইডিএসের নির্বাচিত সিনিয়র ফেলো এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৭৩-১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে কাজ করেন।[৩] তিনি বাংলাদেশের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দলিলের মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন।
শামসুল হক শিক্ষা কমিটির (১৯৯৭) একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য হিসেবে কুদরত-এ-খুদা কমিশনের মূল সুপারিশের অনুসরণে মাতৃভাষায় একমুখী শিক্ষা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রচলনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করান। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দলিল প্রণয়নের পূর্বে জাতীয় অগ্রগতির দিক-দর্শনমূলক বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার (২০১১-২০২১) পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখেন।
তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত হওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কন্ট্রোলার অফ ক্যাপিটাল ইস্যুজে দায়িত্ব পালন করেন করেন।[৪]
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদমর্যাদায় তিনি বেতন ও চাকরি কমিশনের সভাপতি হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সাল থেকে ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেন।[৫]
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]ফরাসউদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।[৪] একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়ে ছিলেন।[৬]
রচনাবলী
[সম্পাদনা]ফরাসউদ্দিনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]- কবি সরোজিনী নায়ডু স্বর্ণপদক
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার
- সিলেট রত্ন পদক
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 "বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরগণ"। বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- 1 2 ফখরুল ইসলাম, ঢাকা (১২ জুন ২০২২)। "বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট ১২ গভর্নর, কে আগে কী ছিলেন"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- 1 2 "বাকশাল নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে: ফরাসউদ্দিন"। জাগোনিউজ২৪.কম। ২৬ আগস্ট ২০২২। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- 1 2 3 "Documentary on Dr. Farashuddin and Dr. Salehuddin | Bonik Barta"। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-এর উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "বিচারপতির পদমর্যাদায় ফরাসউদ্দিন"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "আ'লীগ থেকে নির্বাচন করছেন ফরাসউদ্দিন"। যুগান্তর। ১১ নভেম্বর ২০১৮। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ ড., মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। গণতন্ত্রের পথেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বাংলাদেশ: মাওলা ব্রাদার্স।
- ↑ ড., মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (২০১৯)। প্রথম দর্শনে বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ: আগামী প্রকাশনী। পৃ. ৪৩০। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪০৪২৩৯০৩।
- ↑ ড., মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। পৃ. ১৭৩। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯৬৪৭৫৪৬।
- জীবিত ব্যক্তি
- ১৯৪২-এ জন্ম
- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
- হবিগঞ্জ জেলার ব্যক্তি
- সিলেট বিভাগের ব্যক্তি
- মুরারিচাঁদ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো
- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ
- বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
- বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ
- বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ