এ. এন. এম. হামিদুল্লাহ্
এ. এন. এম. হামিদুল্লাহ্ আ. ন. ম. হামিদুল্লাহ্ | |
---|---|
বাংলাদেশ ব্যাংক | |
কাজের মেয়াদ ১৮ জানুয়ারি ১৯৭২ – ১৮ নভেম্বর ১৯৭৪ | |
উত্তরসূরী | এ. কে. নাজিরউদ্দীন আহমেদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
ধর্ম | ইসলাম |
এ. এন. এম. হামিদুল্লাহ্ (১৯১৯-১৯৯৪) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর। এ এন (আবু নজম) হামিদুল্লাহ ১৯১৯ সালে মুন্সিগঞ্জের (প্রাক্তন বিক্রমপুর) শ্রীনগর উপজেলার সমসপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]এ.এন.হামিদুল্লাহ ১৯৪১ সালে মুন্সিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৬ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বি.কম. পাস করেন।
কর্ম জীবন
[সম্পাদনা]হামিদুল্লাহ্ ছিলেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'বাংলাদেশ ব্যাংক'-এর প্রথম গভর্নর; তিনি ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ১৯৭৪ সালের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এতে অধিষ্টিত থাকেন।[১]
দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে তিনি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের অফিসার্স প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রথম ব্যাচে যোগদান করেন। কোর্স শেষে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এ প্রথম শ্রেনীর অফিসারের পদ লাভ করেন। তিনি এ ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেন। পরে ১৯৬০ সালে পাকিস্তান শিল্পউন্নয়ন ব্যাংকের পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক শাখা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার স্থানীয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে দেশে শিল্প প্রকল্প স্থাপনের লক্ষ্যে এ ব্যাংক স্থাপন করেন। এ ব্যাংকের প্রদত্ত ঋণে যেসব প্রকল্প স্থাপিত হয় সেসব প্রকল্পের জন্য তিনি কারিগরি অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করেন। তিনি এ ব্যাংকে থাকাকালীন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ৩৫টি জুট মিল,৫৬টি টেক্সটাইল মিল এবং শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।
১৯৬৫ সালে তিনি ইষ্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের পদ লাভ করেন। তার গড়া এই তফসিলী বাণিজ্যিক ব্যাংকটি অল্প সময়ের মধ্যেই সাফল্য লাভ করে এবং সারা পাকিস্তানের ৬২টি শাখা স্থাপনে সক্ষম হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে স্বাধীনতা-উত্তরকালে ইস্টার্ন ব্যাংকি কর্পোরেশন এবং মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক মিলে উত্তরা ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। সদ্য স্বাধীন দেশের একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ সময় তিনি নোট ছাপানো, মুদ্রা ব্যবস্থা ও ঋণ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল বিষয়গুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। ১৯৭৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি গভর্নর পদে বহাল ছিলেন।
তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার কেনিয়া ও জাম্বিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে দেশে ফিরে প্রথমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, তারপর ১৯৮৪ সালে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ১৯৮৯ সালে আল বারাকা ব্যাংকের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এর পদ অলংকৃত করেন।
তিনি ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন এর একজন ফেলো। তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ ব্যার্কলেস ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিংয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ১৯৬৩ এবং ১৯৬৭ সালে দেশের প্রতিনিধি হিসেবে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত শিল্পে অর্থ যোগান সম্পর্কিত সেমিনারে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ১৯৭২,৭৩ এবং ৭৪ সালের IFM এর বার্ষিক যৌথ সভায় যোগদান করেন। তিনি IFM এর যৌথ কমিটির বিকল্প সদস্য ছিলেন। তিনি IDPতে থাকাকালীন বেসরকারি খাতে পাটকল স্থাপনের অনুমতিদান কমিটি এবং পাকিস্তান চতুর্থ পাঁচশালা পরিকল্পনা যাচাই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।
তিনি UNEP এবং UNCHS এর স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি পাকবাহিনীর হাতে স্ত্রী পুত্র হারান। তাঁর শহীদ পুত্র ও স্ত্রী সমষপুর গ্রামের (মুন্সীগঞ্জ) নিজ বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে হামিদ উল্লাহকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পাক সামরিক বাহিনী তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যান এবং মামলার শুনানি শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে স্ত্রী-পুত্র হারানো সহ নিজের দেশপ্রেমের জন্য তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
তিনি ১৯৯৪ সালে কানাডায় ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Bangladesh Bank"। www.bb.org.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।