বেঙ্গল টাইগার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রয়েল বেঙ্গল টাইগার
কানহা জাতীয় উদ্যান, ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Carnivora
পরিবার: Felidae
উপপরিবার: Pantherinae
গণ: Panthera
প্রজাতি: Panthera tigris
উপপ্রজাতি: Panthera tigris tigris
ত্রিপদী নাম
Panthera tigris tigris
Pocock, 1929
প্রতিশব্দ
  • P. t. fluviatilis
  • P. t. montanus
  • P. t. regalis
  • P. t. striatus

বেঙ্গল টাইগার বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris বা Panthera tigris bengalensis),[২] বাঘের একটি বিশেষ উপপ্রজাতি।[৩] বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। এটি সাধারণত দেখা যায় বাংলাদেশভারতে। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও দক্ষিণ তিব্বতের কোন কোন অঞ্চলে এই প্রজাতির বাঘ দেখতে পাওয়া যায়। বাঘের উপপ্রজাতিগুলির মধ্যে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাই সর্বাধিক। ২০০৪ সালের জরিপে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা অনধিক ৪৫০ টি ছিলো কিন্তু সর্বশেষ জরিপে এর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে হয় ১১৪ টি [৪]ভারত সরকারের জাতীয় ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুসারে ভারতে বেঙ্গল টাইগারের বর্তমান সংখ্যা ১,৪১১ টি[৫][৬][৭] ১৫৩-১৬৩ টি নেপালে ও ১০৩ টি ভুটানে রয়েছে।[৮]

বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৯]

প্রথাগতভাবে মনে করা হয়, সাইবেরীয় বাঘের পর বেঙ্গল টাইগার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপপ্রজাতি।[১০] বেঙ্গল টাইগার উপপ্রজাতি P. tigris tigris বাংলাদেশের জাতীয় পশু। অন্যদিকে প্রজাতি স্তরের Panthera tigris ভারতের জাতীয় পশু[১১]

রয়েল বেঙ্গল টাইগার[সম্পাদনা]

ভারতবাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় যে সুদর্শন বাঘ দেখা যায় তা পৃথিবীব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger) নামে পরিচিত। কয়েক দশক আগেও (পরিপ্রেক্ষিত ২০১০), বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ছিল। পঞ্চাশের দশকেও বর্তমান মধুপুর এবং ঢাকার গাজীপুর এলাকায় এই বাঘ দেখা যেতো; মধুপুরে সর্বশেষ দেখা গেছে ১৯৬২ এবং গাজীপুরে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৩০০০-এর মতো আছে, তন্মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় উপমহাদেশে। এই সংখ্যা হিসাব করা হয় বাঘের জীবিত দুটি উপপ্রজাতি বা সাবস্পিসীজের সংখ্যাসহ। ২০০৪ সালের বাঘ শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৪৫০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর সংখ্যা ২০০-২৫০টির মতো। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বিচরণ রয়েছে ভারতের সুন্দরবন সহ সেখানের বিভিন্ন অরণ্যে, নেপালভুটানে[১২]

জীববিজ্ঞান[সম্পাদনা]

দৈহিক বৈশিষ্ট্য

এর গায়ের রঙ হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়, এবং ডোরার রঙ হয় গাঢ় খয়েরি থেকে কালো; পেটটি হচ্ছে সাদা, এবং লেজ কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা। একটি বদলানো বাঘের জাতের (সাদা বাঘ) রয়েছে সাদা রঙের শরীরের উপর গাঢ় খয়েরি কিংবা উজ্জল গাঢ় রঙের ডোরা, এবং কিছু কিছু শুধুই সাদা। কালো বাঘের রয়েছে কমলা, হলুদ কিংবা সাদা রঙের ডোরা। স্মাগলারদের কাছ থেকে উদ্ধারিত হয় যে একটি কালো বাঘের ত্বকের মাপ হচ্ছে ২৫৯ সেঃমিঃ, এটি নয়া দিল্লীর National Museum of Natural History তে প্রদর্শন করা হয়। ডোরাবিহীন কালো বাঘ রিপোর্ট করা হয়েছে কিন্তু কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

বাঘ ও জাগুয়ার এর শারিরিক তুলনা

লেজসহ একটি নর বাঘের দৈর্ঘ্য ২১০-৩১০ সেঃমিঃ, যেখানে মাদিদের দৈর্ঘ্য ২৪০-২৬৫ সেঃমিঃ।[১৩] লেজের পরিমাপ হচ্ছে ৮৫-১১০ সেঃমিঃ, এবং ঘাড়ের উচ্চতা হচ্ছে ৯০-১১০ সেঃমিঃ।[১৪] পুরুষদের গড় ওজন হচ্ছে ২২১.২ কেজি এবং মহিলাদের হচ্ছে ১৩৯.৭ কেজি।

Tigers playing in Tyavarekoppa

উত্তর ভারতের পুরুষ বাঘেরা সাইজে সাইবেরিয়ান বাঘের (Siberian tigers) মতোই, যার মাথার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৩৩২-৩৭৬ মিঃমিঃ। উত্তর ভারত ও নেপালে পুরুষদের গড় ওজন ২৩৫ কেজি আর মহিলাদের ১৪০ কেজি। বর্তমানে বিভিন্ন বাঘ জাতির ওজনের উপর পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে যে গড়ে বেঙ্গল টাইগারেরা সাইবেরিয়ান বাঘের চেয়ে বড়।

একটি বেঙ্গল টাইগারের গর্জন ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত দুরে শোনা যায়।

শারীরিক ওজন[সম্পাদনা]

বেঙ্গল টাইগারের ওজন হয় ৩২৫ কেজি (৭১৭ পা), এবং মাথা থেকে শরীরের দৈর্ঘ্য হল ৩২০ সেমি (১৩০ ইঞ্চি).[১৫] অনেক বিজ্ঞানী বলেছেন যে নেপালের ও ভুটানের টিরাই, আসাম, উত্তরখন্ড এবং উত্তর ভারতের পশ্চিম বাংলার বেঙ্গল টাইগারগুলোর ওজন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২২৭ কেজি (৫০০ পা) বেশি হয়। ১৯৭০ দশকের শুরুর দিকে চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে ধৃত সাতটি পুরুষ বাঘের গড় ওজন ছিল ২৩৫ কেজি (৫১৮ পা) যা প্রায় ২০০ থেকে ২৬১ কেজি (৪৪১ থেকে ৫৭৫ পা) মধ্যে ছিল এবং স্ত্রী বাঘগুলোর ওজন ছিল গড়ে ১৪০ কেজি (৩১০ পা), সর্বনিম্ন ১১৬ থেকে ১৬৪ কেজি (২৫৬ থেকে ৩৬২ পা) পর্যন্ত ছিল ওজন।[১৬] গড় ওজনে এদের প্রতিদ্বন্দ্বী হল সাইবেরিয়ার বাঘ[১৭]

কোন বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে সুন্দরবনের বাঘগুলোর নির্ভরযোগ্য ওজন পাওয়া যায় নি। বন বিভাগ যদিও ওজনের রেকর্ড রাখে তবুও তা অনেকটাই অনুমান নির্ভর এবং নির্ভরযোগ্য নয়। দৈর্ঘ্য নিয়ে যে রিপোর্ট পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬৬ সেমি (১৪৪ ইঞ্চি) বেশি। অতি সম্প্রতি আমেরিকান মৎস্য ও বন্যপ্রানী সেবা'র পক্ষে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক এবং বাংলাদেশ বন বিভাগ একটি গবেষণা চালায় এবং তারা সুন্দরবনের তিনটি বাঘের ওজন মাপেন। দুটো ধরা হয় এবং রেডিও কলারের জন্য ঘুমের ঔষধ প্রয়োগ করা হয় এবং অন্যটি স্থানীয় লোকের হাতে নিহত হয়। কলার পরানো দুটো স্ত্রী বাঘের ওজন ১৫০ কেজি (৩৩০ পা) পরিমাপক দিয়ে নেয়া হয়, মেরে ফেলা বাঘের ওজন নেয়া হয় সাধারণ দাড়িপাল্লা ব্যবহার করে। তিনটি বাঘের গড় ওজন ছিল ৭৬.৭ কেজি (১৬৯ পা)। বড় স্ত্রী বাঘটির ওজন ৭৫ কেজি (১৬৫ পা) হয় যা গড়ের চেয়ে কম কারণ সেটি বয়স্ক আর খারাপ অবস্থায় ধরা হয়। দুটো বাঘের দাতের গণনা থেকে বোঝা যায় তারা ১২-১৪ বছর বয়স্ক ছিল। অন্য বাঘটি ছিল ৩-৪ বছরের ছোট বাঘ এবং সেটি ছিল আবাসস্থল পরিবর্তনকারী বাঘ। সুন্দর বনের বাঘগুলোর কঙ্কাল এবং শরীরের ওজন অন্য বাঘের চেয়ে আলাদা। যা নির্দেশ করে তারা ম্যানগ্রোভের পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়েছে। তাদের শরীরের আকার ও ওজন ছোট হওয়ার কারণ সম্ভবত জায়গা নিয়ে প্রতিযোগিতা এবং কম শিকারের উপস্থিতি।[১৮]

বিলুপ্তপ্রায়[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকসমূহ
পতাকা লাল-সবুজ
প্রতীক শাপলা
সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা
পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার
পাখি দোয়েল
ফুল সাদা শাপলা
বৃক্ষ আমগাছ
ফল কাঁঠাল
খেলা কাবাডি
পঞ্জিকা বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এই প্রাণী খুব সুন্দর এবং এর চামড়া খুব মূল্যবান। তাই চোরা শিকারিদের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া,খাবারের অভাব এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অতএব প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা ও প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা।

ছবিঘর[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; iucn নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. Asa, Cheryl S.; Porton, Ingrid J. (২০০৫-০৯-২৯)। Wildlife Contraception: Issues, Methods, and Applications (ইংরেজি ভাষায়)। JHU Press। আইএসবিএন 978-0-8018-8304-0 
  3. Kitchener, A. C.; Breitenmoser-Würsten, C.; Eizirik, E.; Gentry, A.; Werdelin, L.; Wilting, A.; Yamaguchi, N.; Abramov, A. V.; Christiansen, P.; Driscoll, C.; Duckworth, J. W.; Johnson, W.; Luo, S.-J.; Meijaard, E.; O'Donoghue, P.; Sanderson, J.; Seymour, K.; Bruford, M.; Groves, C.; Hoffmann, M.; Nowell, K.; Timmons, Z. & Tobe, S. (২০১৭)। "A revised taxonomy of the Felidae: The final report of the Cat Classification Task Force of the IUCN Cat Specialist Group" (পিডিএফ)Cat News (Special Issue 11): 66–68। 
  4. "রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বৈশিষ্ট্য, আকৃতি, বাসস্থান, প্রজনন ও খাদ্যভ্যাস"Familiarity with Animals-FWA। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-৩১ 
  5. http://www.indiawildliferesorts.com/royal_bengal_tiger.html
  6. Wade, Matt (February 15, 2008), "Threat to a national symbol as India's wild tigers vanish", The Age (Melbourne): 9
  7. "Most numerous tiger pushed out of its home"World Wide Fund for Nature। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-৩০ 
  8. Global Tiger Initiative (২০১১)। Global Tiger Recovery Program 2010–2022 (পিডিএফ)। Washington: Global Tiger Initiative Secretariat। ২৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  9. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯৫
  10. "WildCats | Home of Amur leopard and wild tiger conservation"WildCats Conservation Alliance (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  11. "National Animal- Panthera tigris"Govt. of India website.। ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. আবেদ খান (২৬ জুলাই ২০১০)। "সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষা"। দৈনিক কালের কণ্ঠ (প্রিন্ট)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ১৬। 
  13. Mazák, Vratislav (১৯৮১-০৫-০৮)। "Panthera tigris"Mammalian Species (ইংরেজি ভাষায়) (152): 1–8। আইএসএসএন 0076-3519জেস্টোর 3504004ডিওআই:10.2307/3504004 
  14. "Tiger ecology and conservation in the Indian subcontinent"web.archive.org। ২০১২-০৩-১০। Archived from the original on ২০১২-০৩-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  15. Sunquist, M.; Sunquist, F. (২০০২)। Wild Cats of the World (1st. সংস্করণ)। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 7–350। আইএসবিএন 978-0-22-677999-7 
  16. Smith, J. L. D.; Sunquist, M. E.; Tamang, K. M.; Rai, P. B. (১৯৮৩)। "A technique for capturing and immobilizing tigers"The Journal of Wildlife Management47 (1): 255–259। জেস্টোর 3808080ডিওআই:10.2307/3808080 
  17. Slaght, J. C., Miquelle, D. G., Nikolaev, I. G., Goodrich, J. M., Smirnov, E. N., Traylor-Holzer, K., Christie, S., Arjanova, T., Smith, J. L. D. and Karanth, K. U. (২০০৫)। "Chapter 6. Who's king of the beasts? Historical and contemporary data on the body weight of wild and captive Amur tigers in comparison with other subspecies" (পিডিএফ)। D. G. Miquelle; E. N. Smirnov; J.M. Goodrich। Tigers in Sikhote-Alin Zapovednik: Ecology and Conservation। Vladivostok, Russia: PSP। পৃষ্ঠা 25–35।  (রুশ)
  18. Barlow, A.C.D. (২০০৯)। "The Sundarbans Tiger – Adaptation, population status, and Conflict management" (Thesis paper)। University of Minnesota। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]