বিষয়বস্তুতে চলুন

যুক্তাক্ষর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ হল দুটি ব্যঞ্জনবর্ণকে একসাথে যুক্ত করা।[] তবে উচ্চারণের সময় প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে স্বরধ্বনি উচ্চারিত হয় না। অর্থাৎ‍ দুটি বর্ণের প্রথমটিতে যদি হসন্ত থাকে তবে বানানের সময় উভয়কে একত্রে লেখা হলে প্রাপ্ত বর্ণটিই যুক্তবর্ণ বা যুক্তাক্ষর।[] বাংলা শব্দে দ্বিত্ব প্রয়োগের জন্যও অনেক সময় যুক্তাক্ষর ব্যবহার করা হয়। ব্রাহ্মীলিপির মতো দেবনাগরীলিপি ব্যবহারে লিখিত ভাষাগুলোতেও একটি বর্ণ অন্য একটি বর্ণের সঙ্গে যুক্ত করে লেখা হয়।

ধারণা

দুটি ব্যঞ্জনবর্ণ একসাথে বাংলা ছাড়াও অনেক ভাষাতেই উচ্চারিত হয়। যেমন: ইংরেজি "list"(ল্+ই+স্+ট্), জার্মান "Gras"(গ্+র্+আ+স্) বা গ্রিক "εκλογές"(এ+ক্+ল্+ও+গ্+এ+স্)। কিন্তু বাংলা ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগুলোর সাথে এর মৌলিক পার্থক্য হল বাংলা ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগুলোতে তা একসাথে যেমন উচ্চারণ করা হয় তেমন লেখাও হয় একসাথে। কিন্তু উপর্যুক্ত ভাষাগুলোতে উচ্চারণ একসাথে করলেও এক বর্ণকে অন্য বর্ণের সঙ্গে "ক্ল" এর মতো মিলিয়ে লেখা হয় না। পাণিনি প্রমুখ ধ্বনিবিদ ব্যঞ্জনধ্বনির এমন স্বরবিহীন অসম্পূর্ণ উচ্চারণকে "অভিনিধান" নামে আখ্যায়িত করেছেন।[][]

বাংলা ভাষায় কোনো শব্দের কোনো বর্ণে অবস্থিত স্বরবর্ণকে অনুচ্চারিত দেখাতে ্ (হসন্ত) ব্যবহৃত হয়।আর দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির প্রথমটির সঙ্গে কোনোরূপ স্বরধ্বনি উচ্চারণ না করে দুটি ব্যঞ্জনকে একসাথে উচ্চারণের প্রয়াস থেকেই যুক্তাক্ষর বা যুক্তবর্ণ লেখা হয়। যেমন:গল্প (গ্+অ+ল্+প্+ও) এখানে "ল্প" হল যুক্তবর্ণ যেখানে "ল" এর পরে কোনোরূপ স্বরধ্বনি উচ্চারণ না করে "প" এর সঙ্গে মিলিয়ে উচ্চারণ করা হয়। "গ" এর সঙ্গে "অ" স্বর ও "প" এর সঙ্গে "ও" স্বর উচ্চারিত হলেও "ল" ও "প" এর মাঝে কোনো স্বরধ্বনি ছিল না।

প্রকারভেদ

ধারণা করা হয় ফলাও এক প্রকার যুক্তাক্ষর।সুতরাং যুক্তাক্ষর দুই প্রকারঃসাধারণ ও ফলা।

ফলা

বাংলা ভাষায় ৬টিঃ

নাম উদাহরণ
ব-ফলা শ্ব
ম-ফলা শ্ম
র-ফলা শ্র
ন-ফলা শ্ন
য-ফলা শ্য
ল-ফলা শ্ল

যুক্তাক্ষরের রূপভেদ

বাংলা যুক্তাক্ষরের স্বচ্ছ-অর্ধস্বচ্ছ-অনচ্ছ রূপ

বাংলা যুক্তাক্ষরে ব্যঞ্জনের রূপ অনেক সময় পাল্টে যায় বা স্বাভাবিক বর্ণের চেয়ে আকৃতি ভিন্ন হয়। কতটা ভেদ বা ভিন্নতা ঘটবে সেই অনুসারে স্বচ্ছ, অর্ধস্বচ্ছঅনচ্ছ এই তিনটি পরিভাষা ব্যবহৃত হয়।[]

অনচ্ছ বা অস্পষ্ট

অনচ্ছ হল যে যুক্তাক্ষর থেকে মূল ব্যঞ্জনবর্ণকে আদৌ চেনা যায় না। যেমন: রেফ, র-ফলা (‌্র), য-ফলা (‍্য)। এগুলি যে র আর য এর অপর রূপ তা সহজে বোঝা যায় না। বাংলা যুক্তব্যঞ্জনে ঙ্গ এবং ক্ষ-ও অনচ্ছ যুক্তব্যঞ্জনের দৃষ্টান্ত— যার দুটি সদস্য কোন কোন বর্ণ তা বোঝা কঠিন।

অর্ধস্বচ্ছ

অর্ধস্বচ্ছ হল সেই সব যুক্তব্যঞ্জন যার একটিতে অন্তত বোধগম্য অবয়ব থাকে, বা তার অংশ বা খণ্ড উপস্থিত থাকে। যেমন: প্র, র্ক, ক্ত, ন্ধ, গ্ধ ইত্যাদি।

স্বচ্ছ

স্বচ্ছ হল যেগুলির দুটোকেই স্পষ্ট চেনা যায়। যেমন: ক্ক, ল্ল, হ্ব, দ্ভ।

বর্তমানে বাংলা একাডেমির প্রস্তাবনা অনুযায়ী যুক্তব্যঞ্জনগুলিকে যথাসম্ভব স্বচ্ছ করার কথা বলা হয়েছে।[] তবে এক্ষেত্রে অসুবিধার কারণ হল পুরাতন সাহিত্যকর্ম বা গ্রন্থগুলো নতুনভাবে বর্ণ চেনা বাঙালিগণ পড়তে পারবেন না এবং অনেক যুক্তবর্ণই চিনতে পারবেন না।[] সব পুরাতন গ্রন্থ নতুন বর্ণে ছেপে ফেলা দুরূহ। তবে স্বচ্ছ ধরনের নতুন যুক্তবর্ণ ও প্রচলিত পুরাতন যুক্তবর্ণ কিছুদিন পাশাপাশি শেখানোর কথাও প্রস্তাব করা হয়ে থাকে। []

অর্ধস্বচ্ছ/অনচ্ছ রূপ
স্বচ্ছ রূপ

টীকা

  • ^১ বাংলা শব্দে অনেক সময় কোনো বর্ণের নিচে চিহ্ন থাকে। একেই বলা হয় হসন্ত। যেমন: "প্" (পড়া হয় 'প-হসন্ত'), অর্থাৎ‍ এর নিচে হসন্ত।

তথ্যসূত্র

  1. যুক্তাক্ষর-সংসদ বাংলা অভিধান
  2. যুক্তবর্ণ-বর্ণ,বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি,অষ্টম শ্রেণি
  3. আবদুল হাই, মুহম্মদ। ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৯২। 
  4. Phonetics in Ancient India। Oxford University Press। ১৯৫৫। পৃষ্ঠা ৭১–৭২। 
  5. বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ২০১৬। পৃষ্ঠা ১৩৩। আইএসবিএন 984-07-5705-9 
  6. বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (দ্বিতীয় খণ্ড)। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। ২০১৬। 

আরও দেখুন