বিষয়বস্তুতে চলুন

খাজা নাজিমুদ্দিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খাজা নাজিমুদ্দীন
خواجہ ناظم الدین
পাকিস্তানের ২য় গভর্নর জেনারেল
কাজের মেয়াদ
১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ – ১৭ অক্টোবর ১৯৫১
১১ নভেম্বর ১৯৪৮ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত
সার্বভৌম শাসকষষ্ঠ জর্জ
প্রধানমন্ত্রীলিয়াকত আলি খান
পূর্বসূরীমুহাম্মদ আলি জিন্নাহ
উত্তরসূরীমালিক গোলাম মুহাম্মদ
পাকিস্তানের ২য় প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৭ অক্টোবর ১৯৫১ – ১৭ এপ্রিল ১৯৫৩
সার্বভৌম শাসকষষ্ঠ জর্জ
দ্বিতীয় এলিজাবেথ
গভর্নর জেনারেলমালিক গোলাম মুহাম্মদ
পূর্বসূরীলিয়াকত আলি খান
উত্তরসূরীমুহাম্মদ আলি বগুড়া
পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮
গভর্নরস্যার ফ্রেডেরিক চালমার্স‌
পূর্বসূরীহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী‌
উত্তরসূরীনুরুল আমিন
বাংলার প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
২৯ এপ্রিল ১৯৪৩ – ৩১ মার্চ ১৯৪৫
গভর্নররিচার্ড‌ চেসি, ব্যারন চেসি
পূর্বসূরীএ কে ফজলুল হক
উত্তরসূরীহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী‌
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৮৯৪-০৭-১৯)১৯ জুলাই ১৮৯৪
ঢাকা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু২২ অক্টোবর ১৯৬৪(1964-10-22) (বয়স ৭০)
ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান
(বর্তমান বাংলাদেশ)
রাজনৈতিক দলমুসলিম লীগ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীআলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
ট্রিনিটি হল, ক্যামব্রিজ

খাজা নাজিমুদ্দিন KCIE (উর্দু: خواجہ ناظم الدین‎‎; বাংলা: খাজা নাজিমুদ্দীন; ১৯ জুলাই ১৮৯৪ – ২২ অক্টোবর ১৯৬৪) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য ছিলেন। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে নাজিমুদ্দিন দুইবার বাংলার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যু পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের মৃত্যুর পর তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হন।[] তিনি রক্ষণশীল গড়নের ছিলেন এবং তাকে অজনপ্রিয় বিবেচনা করা হয়।

তার সরকার মাত্র দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। তার সময় গৃহবিবাদ ও বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পায় যা তার পদচ্যুতির দিকে ধাবিত হয়। ১৯৫৩ লাহোর দাঙ্গার পর তিনি মেজর জেনারেল আজম খান ও কর্নেল রহিমউদ্দিন খানের অধীনে পাঞ্জাবে সামরিক আইন জারি করেন। দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচিতে ব্যর্থতার পর পশ্চিম পাকিস্তানে সমাজতন্ত্রের উত্থান ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের পর তার সরকার আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নভারতের সাথে বৈদেশিক সম্পর্ক ক্রমাবনতি হয় এবং এসব দেশে পাকিস্তান বিরোধী অনুভূতি বৃদ্ধি পায়।

১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল নাজিমুদ্দিনকে পদচ্যুত করা হয় এবং সরকারের বাইরে পাঠানো হয়। তার পরে প্রধানমন্ত্রী হন আরেকজন বাঙালি রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ আলী বগুড়া। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৬৪ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিজ শহর ঢাকায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

প্রথম জীবন

[সম্পাদনা]

খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খাজা নিজামউদ্দীন এবং মাতা নওয়াবজাদী বিলকিস বানু। খাজা ফখরউদ্দীন পিতামহ ও নওয়াব খাজা আহসানুল্লাহ মাতামহ।[] ইংল্যান্ডের ডানস্টাবল গ্রামার স্কুল, ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি হলে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি নাইট উপাধি পান।

রাজনীতি

[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ ভারতে ফেরার পর তিনি বাংলার রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯২২ সাল থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মিউনিসিপালটির চেয়ারম্যান ছিলেন।[] প্রাদেশিক রাজনীতিতে নাজিমুদ্দিন প্রথমে বাংলার শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।[] তিনি ভারতের পূর্বাঞ্চলে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রধান হয়েছিলেন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের ভবিষ্যত সংবিধান নির্ধারণের জন্য লিয়াকত আলি খানের পরামর্শে তিনি বেসিক প্রিন্সিপল কমিটি গঠন করেন।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান গঠনের পর নাজিমুদ্দিন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেন। মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুর পর তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। এসময় পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক ছিল এবং নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত ছিল। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ১৯৫১ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। এরপর খাজা নাজিমুদ্দিন তার স্থলাভিষিক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী

[সম্পাদনা]

খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে পাকিস্তানে মুসলিম লীগের মধ্যে চিড় ধরে, বিশেষত পাঞ্জাবি ও বাঙালিদের মধ্যে। পাকিস্তানের এই দুটি বৃহৎ জাতি গোষ্ঠী ভারতের মাধ্যমে পৃথক ছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের একটি মিছিল বাংলার জন্য সমান ও সরকারি মর্যাদা দাবি করলে তাতে গুলি বর্ষণ করা হয়। ইতিপূর্বে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার শাসনামলে পাকিস্তানের সংবিধানের কাঠামো তৈরী করা শুরু হয় এবং ডমিনিয়ন স্ট্যাটাস বিলুপ্ত করে পাকিস্তানকে একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত করার দিকে ধাবিত করা হয়। তবে খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীত্বকাল ১৯৫৩ সালে শেষ হয়।

১৯৫৩ সালে সংখ্যালঘু কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। খাজা নাজিমুদ্দিন এর বিরোধিতা করেন। পাঞ্জাবে সরকার ও আহমদিয়াদের সাথে আন্দোলনকারীদের দাঙ্গা শুরু হয়। তিনি ফিরোজ খান নুনকে পাঞ্জাবের গভর্নর নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রণের আনার চেষ্টা করেন। তবে এ সিদ্ধান্ত দেরিতে আসে।

পদচ্যুতি

[সম্পাদনা]

এসময় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মালিক গোলাম মুহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীকে সরে যেতে বলেন। নাজিমুদ্দিন তা প্রত্যাখ্যান করেন কিন্তু গোলাম মুহাম্মদ তার সংরক্ষিত ক্ষমতাবলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। পাকিস্তান ফেডারেল আদালতের (বর্তমান পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট) প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ মুনির এই পদচ্যুতির অবৈধতার উপর কোনো রুল দেননি কিন্তু নতুন নির্বাচনে বাধ্য করেন। মোহাম্মদ আলী বগুড়া নতুন প্রধানমন্ত্রী হন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]
তিন নেতার মাজারে খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর

খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৬৪ সালে ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকায় তিন নেতার মাজারে দাফন করা হয়।[]

সম্মান

[সম্পাদনা]

রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯২৬ সালে নাজিমুদ্দিনকে কম্পেনিয়ন অব দ্য অর্ডার অব দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সিআইই) ও ১৯৩৪ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।[] তবে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হওয়ায় তিনি ১৯৪৬ সালে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন।

করাচির নাজিমাবাদউত্তর নাজিমাবাদ শহরতলী এবং ঢাকাইসলামাবাদের নাজিমুদ্দিন রোড তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। তার সম্মানে পাকিস্তান ডাকবিভাগ স্মরণমূলক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "PakistanHerald.com : Khwaja Nazimuddin"। ২১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  2. নাজিমউদ্দীন, খাজা, বাংলাপিডিয়া
  3. "Khwaja Nazimuddin"। Story of Pakistan। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  4. "Find A Grave Memorial"। ৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১২ 
  5. http://www.london-gazette.co.uk/issues/34056/pages/3560
  6. "Stamp of Sir Nazimuddin"। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী
পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী
১৯৪৭–১৯৪৮
উত্তরসূরী
নুরুল আমিন
পূর্বসূরী
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ
পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল
১৯৪৮–১৯৫১
উত্তরসূরী
মালিক গোলাম মুহাম্মদ
পূর্বসূরী
লিয়াকত আলি খান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
১৯৫১–১৯৫৩
উত্তরসূরী
মোহাম্মদ আলী বগুড়া
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
১৯৫১–১৯৫৩