বাইপোলার ব্যাধি
বাইপোলার ব্যাধি | |
---|---|
প্রতিশব্দ | বাইপোলার আবেগ সম্বন্ধীয় ব্যাধি, বাইপোলার অসুস্থতা, বাতিকজনিত অবসাদ, বাতিকজনিত অবসাদমূলক ব্যাধি, বাতিকজনিত অবসাদমূলক অসুস্থতা,[১] বাতিকজনিত অবসাদমূলক সাইকোসিস, সার্কুলার ইনসেনিটি,[১] বাইপোলার রোগ[২] |
![]() | |
বাইপোলার ব্যাধির বৈশিষ্ট্য হল অবসাদ ও বাতিকের পর্ব। | |
বিশেষত্ব | মনোরোগবিদ্যা |
লক্ষণ | অবসাদ ও খুশি মেজাজ[৩][৪] |
জটিলতা | আত্মহত্যা, নিজের ক্ষতি[৩] |
রোগের সূত্রপাত | 25 বছর বয়স[৩] |
প্রকারভেদ | বাইপোলার I ব্যাধি, বাইপোলার II ব্যাধি, অন্যান্য[৪] |
কারণ | পরিবেশগত ও জিনগত[৩] |
ঝুঁকির কারণ | পারিবারিক ইতিহাস, শৈশবে নির্যাতন, দীর্ঘকালীন চাপ[৩] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | মনোযোগের ঘাটতিজনিত অতিসক্রিয়তার ব্যাধি, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, স্কিৎজোফ্রেনিয়া, নেশার জিনিস ব্যবহারের ব্যাধি[৩] |
চিকিৎসা | মানসিক চিকিৎসা, ওষুধ[৩] |
ঔষধ | লিথিয়াম, অ্যান্টিসাইকোটিক, অ্যান্টিকনভালস্যান্ট[৩] |
পুনরাবৃত্তির হার | 1-3%[৩][৫] |
বাইপোলার ব্যাধি (ইংরেজি: Bipolar disorder) যা পূর্বে বাতিকজনিত অবসাদ নামে পরিচিত ছিল, তা হল একটি মানসিক ব্যাধি যার ফলে অবসাদ ও অস্বাভাবিক রকম খুশির মেজাজ পর্বগুলি ঘটে।[৩][৪][৬] খুশির মেজাজটি উল্লেখযোগ্য এবং তা বাতিক বা হাইপোম্যানিয়া নামে পরিচিত, যা নির্ভর করে তার তীব্রতার ওপরে, অথবা সাইকোসিস এর লক্ষণগুলি কাছে কিনা তার ওপরে।[৩] বাতিকের সময় একজন মানুষ অস্বাভাবিক রকম প্রাণশক্তিপূর্ণ, খুশি বা খিটখিটে আচরণ করে বা অনুভব করে।[৩] মানুষ প্রায়ই পরিণতি বিবেচনা করা ছাড়াই ভাবনাচিন্তা না করে খারাপ সিদ্ধান্ত নেয়।[৪] বাতিকের পর্যায়গুলি চলাকালীন সাধারণত ঘুমের প্রয়োজন কমে যায়।[৪] অবসাদের পর্বগুলির সময় কান্নাকাটি, জীবনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এবং অন্যদের দিকে ভালভাবে চোখে চোখ রেখে না তাকানোর মত ঘটনাগুলি ঘটতে পারে।[৩] এই রোগ আছে এমন মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেশি থাকে, 20 বছর ধরে 6 শতাংশের বেশি, আর 30–40 শতাংশ মানুষ নিজের ক্ষতি করেন।[৩] মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাগুলি সাধারণভাবে বাইপোলার ব্যাধির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে, যেমন উদ্বেগজনিত ব্যাধি ও নেশার জিনিস ব্যবহারের ব্যাধি।[৩]
কারণগুলি স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, কিন্তু পরিবেশগত ও জিনগত কারণগুলি উভয়ই একটি ভূমিকা নেয়।[৩] ছোটখাটো প্রভাবপূর্ণ অনেক জিন ঝুঁকির জন্য দায়ী।[৩][৭] পরিবেশগত ঝুঁকির কারণগুলিতে অন্তর্ভুক্ত আছে শৈশবে নির্যাতন ও দীর্ঘকালীন চাপের ইতিহাস।[৩] ঝুঁকির প্রায় 85% হল বংশগতির সূত্রে, যার জন্য জেনেটিক্সকে দায়ী করা যায়।[৮] অবস্থাটিকে বাইপোলার I ব্যাধি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়, যদি কমপক্ষে একটি বাতিকজনিত পর্ব হয়ে থাকে, অবসাদমূলক পর্বগুলি সহ বা ছাড়া, এবং বাইপোলার II ব্যাধি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়, যদি কমপক্ষে একটি হাইপোম্যানিক পর্ব ঘটে থাকে (কিন্তু কোনো বাতিকজনিত পর্ব ঘটে নি) এবং একটি গুরুতর অবসাদমূলক পর্ব হয়ে থাকে।[৪] দীর্ঘকাল ধরে কম তীব্র লক্ষণ আছে এমন মানুষদের মধ্যে, সাইক্লোথাইমিক ব্যাধি নির্ণীত হতে পারে।[৪] লক্ষণগুলি যদি মাদক বা চিকিৎসাগত সমস্যার কারণে হয়, তাহলে এটাকে আলাদাভাবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়।[৪] অন্য যে রোগাবস্থাগুলি অনুরূপভাবে প্রকাশ পেতে পারে সেগুলি হল মনোযোগের ঘাটতিজনিত অতিসক্রিয়তার ব্যাধি, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও নেশার জিনিস ব্যবহারের ব্যাধি, এছাড়াও বেশ কয়েকটি চিকিৎসাগত রোগাবস্থা।[৩] চিকিৎসাগত পরীক্ষার প্রয়োজন নেই রোগনির্ণয়ের জন্য, যদিও অন্য সমস্যাগুলির সম্ভাবনা বাতিল করার জন্য রক্ত পরীক্ষা বা মেডিকাল ইমেজিং করা যেতে পারে।[৯]
সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল সাইকোথেরাপি, এছাড়াও মুড স্টেবিলাইজার ও অ্যান্টিসাইকোটিক এর মতো ওষুধগুলি।[৩] সাধারণভাবে যে মুড স্টেবিলাইজারগুলি ব্যবহার করা হয় তার উদাহরণ হল লিথিয়াম ও বিভিন্ন অ্যান্টিকনভালস্যান্ট।[৩] অনৈচ্ছিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে একটি হাসপাতাল, যদি কোনো মানুষ তার নিজের বা অন্যদের জন্য ঝুঁকি হয়ে ওঠেন কিংবা চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেন।[৩] চরম আচরণগত সমস্যাগুলি, যেমন উত্তেজনা বা লড়াকু মেজাজকে স্বল্পমেয়াদী অ্যান্টিসাইকোটিক বা বেঞ্জোডায়াজেপাইন দিয়ে সামলানো যেতে পারে।[৩] বাতিকের পর্বগুলির সময়, অবসাদবিরোধী ওষুধ বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।[৩] যদি অবসাদের পর্বগুলির জন্য অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেগুলিকে মুড স্টেবিলাইজারের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।[৩] ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT) সম্বন্ধে খুব ভালভাবে অধ্যয়ন করা না হলেও, এগুলি সেই সব মানুষদের জন্য চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে যারা অন্য চিকিৎসায় সাড়া দেন না।[৩][১০] যদি চিকিৎসা বন্ধ করা হয়, সেই ক্ষেত্রে তা ধীরে ধীরে করার পরামর্শ দেওয়া হয়।[৩] অসুস্থতাটির কারণে অনেক মানুষের আর্থিক, সামাজিক বা চাকরি সংক্রান্ত সমস্যা হয়।[৩] এই সমস্যাগুলি গড়ে এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।[৩] জীবনযাত্রার অযথ্যাযথ পছন্দ ও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির ফলস্বরূপ হৃদরোগ এর মতো স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি সাধারণ জনসমষ্টির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হয়।[৩]
বাইপোলার ব্যাধি বিশ্বজনীন জনসংখ্যার প্রায় 1%-কে প্রভাবিত করে।[১১] যুক্তরাষ্ট্রে, অনুমান করা হয় যে প্রায় 3% মানুষ তাদের জীবনের কোনো এক মুহূর্তে এতে আক্রান্ত হন; নারী ও পুরুষদের মধ্যে হার একই রকম। [৫][১২] সবচেয়ে সাধারণত যে বয়সে লক্ষণগুলি শুরু হয় তা হল 25।[৩] ব্যাধিটির আর্থিক খরচ 1991 এ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য $45 বিলিয়ন হিসাব করা হয়েছে।[১৩] এর মধ্যে একটি বিশাল অংশের সঙ্গে কাজে অনুপস্থিতির উচ্চতর সংখ্যক দিন জড়িত ছিল, যা প্রতি বছরে 50 দিন হিসাব করা হয়েছিল।[১৩] বাইপোলার ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষরা প্রায়ই সামাজিক কলঙ্কের সমস্যাগুলির সম্মুখীন হন।[৩]
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
Notes[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Edward Shorter (২০০৫)। A Historical Dictionary of Psychiatry। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 165–166। আইএসবিএন 978-0-19-517668-1।
- ↑ Coyle, Nessa; Paice, Judith A. (২০১৫)। Oxford Textbook of Palliative Nursing (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press, Incorporated। পৃষ্ঠা 623। আইএসবিএন 9780199332342। সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ Anderson IM, Haddad PM, Scott J (ডিসে ২৭, ২০১২)। "Bipolar disorder"। BMJ (Clinical research ed.)। 345: e8508। ডিওআই:10.1136/bmj.e8508। পিএমআইডি 23271744।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ American Psychiatry Association (২০১৩)। Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (5th সংস্করণ)। Arlington: American Psychiatric Publishing। পৃষ্ঠা 123–154। আইএসবিএন 0-89042-555-8।
- ↑ ক খ Schmitt A, Malchow B, Hasan A, Falkai P (ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "The impact of environmental factors in severe psychiatric disorders"। Front Neurosci। 8 (19)। ডিওআই:10.3389/fnins.2014.00019। পিএমআইডি 24574956। পিএমসি 3920481
।
- ↑ "DSM IV Criteria for Manic Episode"। জুলাই ৩১, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Goodwin, Guy M.। "Bipolar disorder"। Medicine। 40 (11): 596–598। ডিওআই:10.1016/j.mpmed.2012.08.011।
- ↑ Charney, Alexander; Sklar, Pamela (২০১৮)। "Genetics of Schizophrenia and Bipolar Disorder"। Charney, Dennis; Nestler, Eric; Sklar, Pamela; Buxbaum, Joseph। Charney & Nestler's Neurobiology of Mental Illness (5th সংস্করণ)। New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 162।
- ↑ NIMH (এপ্রিল ২০১৬)। "Bipolar Disorder"। National Institutes of Health। জুলাই ২৭, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৩, ২০১৬।
- ↑ Versiani, Marcio; Cheniaux, Elie; Landeira-Fernandez, J.। "Efficacy and Safety of Electroconvulsive Therapy in the Treatment of Bipolar Disorder"। The Journal of ECT। 27 (2): 153–164। ডিওআই:10.1097/yct.0b013e3181e6332e। পিএমআইডি 20562714।
- ↑ Grande, I; Berk, M; Birmaher, B; Vieta, E (এপ্রিল ২০১৬)। "Bipolar disorder"। Lancet (Review)। 387 (10027): 1561–72। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(15)00241-X। পিএমআইডি 26388529।
- ↑ Diflorio, A; Jones, I (২০১০)। "Is sex important? Gender differences in bipolar disorder"। International Review of Psychiatry (Abingdon, England)। 22 (5): 437–52। ডিওআই:10.3109/09540261.2010.514601। পিএমআইডি 21047158।
- ↑ ক খ Hirschfeld, RM; Vornik, LA (জুন ২০০৫)। "Bipolar disorder–costs and comorbidity."। The American journal of managed care। 11 (3 Suppl): S85–90। পিএমআইডি 16097719।
- References
- Basco, Monica Ramirez; Rush, A. John (২০০৫)। Cognitive-Behavioral Therapy for Bipolar Disorder (Second সংস্করণ)। New York: The Guilford Press। আইএসবিএন 978-1-59385-168-2। ওসিএলসি 300306925।
- Brown, Malcomb R.; Basso, Michael R. (২০০৪)। Focus on Bipolar Disorder Research। Nova Science Publishers। আইএসবিএন 978-1-59454-059-2।
- Joseph, Chris (২০০৮)। Manicdotes: There's Madness in His Method। London: Austin & Macauley। আইএসবিএন 978-1-905609-07-9. Amazon review.
- Goodwin, F. K.; Jamison, K. R. (২০০৭)। Manic–depressive illness: bipolar disorders and recurrent depression (2nd. সংস্করণ)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-513579-4। ওসিএলসি 70929267। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২, ২০১৬।
- Jamison, Kay Redfield (১৯৯৫)। An Unquiet Mind: A Memoir of Moods and Madness। New York: Knopf। আইএসবিএন 978-0-330-34651-1।
- Leahy, Robert L.; Johnson, Sheri L. (২০০৩)। Psychological Treatment of Bipolar Disorder। New York: The Guilford Press। আইএসবিএন 978-1-57230-924-1। ওসিএলসি 52714775।
- Liddell, Henry George; Scott, Robert (১৯৮০)। A Greek-English Lexicon (Abridged সংস্করণ)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-910207-5।
- Millon, Theordore (১৯৯৬)। Disorders of Personality: DSM-IV-TM and Beyond। New York: John Wiley and Sons। আইএসবিএন 978-0-471-01186-6।
- Robinson, D. J. (২০০৩)। Reel Psychiatry: Movie Portrayals of Psychiatric Conditions। Port Huron, Michigan: Rapid Psychler Press। আইএসবিএন 978-1-894328-07-4।
- Sadock, Benjamin J.; Kaplan, Harold I.; Sadock, Virginia A. (২০০৭)। Kaplan & Sadock's Synopsis of Psychiatry: Behavioral Sciences/Clinical Psychiatry (Tenth সংস্করণ)। আইএসবিএন 978-0-7817-7327-0। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২, ২০১৬।
Further reading[সম্পাদনা]
গ্রন্থাগার সংরক্ষণ সম্পর্কে বাইপোলার ব্যাধি |
- Healy, David (২০১১)। Mania: A Short History of Bipolar Disorder। Baltimore: Johns Hopkins University Press। আইএসবিএন 978-1-4214-0397-7।
- Mondimore, Francis Mark (২০১৪)। Bipolar Disorder: A Guide for Patients and Families (3rd সংস্করণ)। Baltimore: Johns Hopkins University Press। আইএসবিএন 978-1-4214-1206-1।
- Yatham, Lakshmi (২০১০)। Bipolar Disorder। New York: Wiley। আইএসবিএন 978-0-470-72198-8।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |
- কার্লি-এ Bipolar Disorder (ইংরেজি)
- Bipolar Disorder overview from the U.S. National Institute of Mental Health website
- NICE Bipolar Disorder clinical guidelines from the U.K. National Institute for Health and Clinical Excellence website
- International Society for Bipolar Disorders Task Force report on current knowledge in pediatric bipolar disorder and future directions