দুঃস্বপ্ন
| দুঃস্বপ্ন | |
|---|---|
| দা স্লীপ অফ রিজন প্রোডিউসেস মনস্টার্স (ফ্রান্সিস্কো গোয়া, ১৭৯৭) | |
| বিশেষত্ব | মনোবিজ্ঞান, মনোরোগ বিজ্ঞান |
| কারণ | মানসিক চাপ, উদ্বেগ |
দুঃস্বপ্ন বা খারাপ স্বপ্ন[১] হলো অপ্রীতিকর স্বপ্ন যা মনে ভীতি, উদ্বেগ বা চরম দুঃখের মত প্রবল সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদিও, মনোবিজ্ঞানের নামকরণ অনুযায়ী দুঃস্বপ্ন ও খারাপ স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, খারাপ স্বপ্ন দেখার সময় লোকেরা ঘুমন্ত থাকলেও দুস্বপ্ন তাদের জাগিয়ে দিতে পারে। স্বপ্নে অস্বস্তি, মানসিক বা শারীরিক ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি থাকতে পারে। দুঃস্বপ্নের পরে, একজন ব্যক্তি প্রায়শই সঙ্কটপন্ন অবস্থায় জাগ্রত হন এবং কিছু সময়ের জন্য ঘুমাতে অকার্যকর হন।[২]
দুঃস্বপ্নের শারীরিক কারণ হতে পারে অস্বস্তিকর অবস্থায় ঘুমানো বা জ্বর থাকা আর মানসিক কারণ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ। দুঃস্বপ্নের একটি সম্ভাব্য উদ্দীপক হতে পারে ঘুমোতে যাওয়ার আগে খাওয়া, যা দেহের বিপাক এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপকে বাড়িয়ে দেয়।[৩]
দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, কেননা তা ঘুমানোর ধাঁচে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
[সম্পাদনা]যারা দুঃস্বপ্ন দেখে তাদের ঘুমের কাঠামো অস্বাভাবিক হয়ে থাকে। রাতের বেলা দুঃস্বপ্ন দেখা আর নিদ্রাহীনতার প্রভাব প্রায় একই। এর কারণ হলো নিশায় ঘন ঘন জাগরণ এবং ঘুমের প্রতি ভীতি তৈরী হওয়া।[৪] বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা বা আত্মসম্মানের প্রতি হুমকিস্বরূপ স্বপ্নের বিশদ স্মৃতিসহ ঘুম থেকে বারবার জাগ্রত হওয়া হলো দুঃস্বপ্ন ব্যাধির লক্ষণ। জাগরণের ঘটনাগুলো সাধারণত ঘুমের সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ঘটে।[৫]
কারণ
[সম্পাদনা]বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী দুঃস্বপ্নের অনেকরকম কারণ থাকতে পারে। বাচ্চাদের উপর দৃষ্টিনিবন্ধ করে, একটি গবেষণায় গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছিলেন যে দুঃস্বপ্নগুলো সরাসরি বাচ্চাদের জীবনে মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত। যারা কেবল বিদ্যালয় বা দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক দিকগুলি নিয়ে মানসিক চাপের শিকার তাদের তুলনায় যেসব শিশুরা কোনো পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মৃত্যুর অভিজ্ঞতা অতিক্রম করেছে বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় আক্রান্ত কারো সাথে পরিচিত তাদের দুঃস্বপ্ন দেখার হার বেশি।[৬] দুঃস্বপ্নের কারণগুলি নিয়ে গবেষণা করা একটি গবেষণায় নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত আক্রান্ত রোগীদের উপর দৃষ্টিনিবন্ধ করা হয়েছে। দুঃস্বপ্ন কি নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাত এর কারণে হয় নাকি শ্বাস নিতে না পারার কারণে হয় তা নির্ধারণের জন্য গবেষণাটি করা হয়েছিলো। উনিশ শতকের লেখকরা বিশ্বাস করতেন যে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়া দুঃস্বপ্নের কারণ, তাই বিশ্বাস করা হতো যে নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাতে আক্রান্তরা অন্যদের চেয়ে ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন দেখে। গবেষণাটির ফলাফল প্রকৃতপক্ষে প্রমাণ করেছে যে স্বাস্থ্যবান লোকেরা নিদ্রাকালীন শ্বাসব্যাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের চেয়ে বেশি দুঃস্বপ্ন দেখে।[৭] আরেকটি গবেষণা এই অনুকল্প সমর্থন করে। এই গবেষণায় অবস্ট্রাকটিভ এয়ারওয়েজ ডিজিজ (ওএডি) রোগে আক্রান্ত ৪৮ জনের ( ২০-৮৫ বয়স্ক), যাদের মধ্যে আবার ২১ জনের শ্বাসকষ্ট আছে ও ২৭ জনের নেই, তাদের সাথে শ্বাসযন্ত্রের রোগবিহীন সমবয়স্ক ও সমলিঙ্গবিশিষ্ট ১৪৯ জনের তুলনা করা হয়। শ্বাসকষ্টসম্পন্ন ওএডি রোগীরা শ্বাসকষ্টবিহীন ও শ্বাসযন্ত্রের রোগবিহীনদের তুলনায় তিন গুণ বেশি দুঃস্বপ্ন দেখে।[৮] তাই দুঃস্বপ্নের বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য হতে পারে বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে ঘুম থেকে জাগ্রত করা।
মনোবিজ্ঞানী স্টিফেন লাবার্জ স্বপ্ন কীভাবে তৈরী হয় এবং দুঃস্বপ্ন কেন দেখা দেয়, তার একটি সম্ভাব্য কারণের কথা বলেছেন। তার মতে, ম্লান আলোকিত রাস্তায় হাঁটার মতো একটি নির্দিষ্ট চিন্তা বা দৃশ্যের মাধ্যমে স্বপ্ন শুরু হয়। যেহেতু স্বপ্ন পূর্বনির্ধারিত থাকে না, তাই মস্তিষ্ক হয় ভাল চিন্তা অথবা খারাপ চিন্তার দ্বারা পরিস্থিতিটির প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এবং স্বপ্নের কাঠামোটি তা অনুসরণ করে। যদি স্বপ্নে খারাপ চিন্তা ভাল চিন্তার চেয়ে বেশি প্রকট হয় তবে স্বপ্নটি একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।[৯]
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও কার্ল ইয়ুং উভয়েরই এমন একটি বিশ্বাস ছিলো যে, যারা প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখে তারা অতীতের কোনো উদ্বেগজনক ঘটনা অনুভবের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুনরায় যাওয়ার কারণে এমনটা হয়।[১০] স্বপ্ন সম্পর্কে উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বোঝা যায় যে থেরাপি দুঃস্বপ্নের ভয়ানক অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
হ্যালিডে (১৯৮৭) চিকিৎসার পদ্ধতিকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। এই শ্রেণীর এক বা একাধিক পদ্ধতির সামঞ্জস্য করে সরাসরি দুঃস্বপ্নে হস্তক্ষেপ, সামগ্রিক চিকিৎসার কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে পারে:[১১]
- বিশ্লেষণ ও ক্যাথার্টিক পদ্ধতি
- কাহিনিপট (স্টোরিলাইন) পরিবর্তন পদ্ধতি
- মুখোমুখি এবং বিজয়ী পদ্ধতির
- সংবেদনশীলকরণ এবং সম্পর্কিত আচরণগত কৌশল
রোগবিদ্যা
[সম্পাদনা]৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ২ থেকে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তা ৮ থেকে ৩০ শতাংশ।[১২] অর্থাৎ শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যাধির প্রাদুর্ভাব অধিক।
পৌরাণিক কাহিনি
[সম্পাদনা]সম্ভবত অ্যা ক্রিসমাস ক্যারল গল্পে বর্ণিত একটি মতামত রয়েছে যে, ঘুমের আগে পনির খাওয়া দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে তবে এই ঘটনার পক্ষে খুব কম বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়।[১৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Harper, Douglas। "nightmare"। Online Etymology Dictionary। Retrieved 11 July 2016.
- ↑ American Psychiatric Association (2000), Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 4th ed, TR, p. 631
- ↑ Stephen, Laura (২০০৬)। "Nightmares"। Psychologytoday.com। ৩১ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ Simor, Pé, et al. "Disturbed Dreaming and Sleep Quality: Altered Sleep Architecture in Subjects with Frequent Nightmares."European Archives of Psychiatry and Clinical Neuroscience 262.8 (2012): 687–96. ProQuest. Web. 24 April 2014.
- ↑ Grohol, John M.; read, Psy D. Last updated: 8 Jul 2020 ~ Less than a minute (১৭ মে ২০১৬)। "Nightmare Disorder Symptoms"। psychcentral.com (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - ↑ Schredl, Michael, et al. "Nightmares and Stress in Children." Sleep and Hypnosis 10.1 (2008): 19–25. ProQuest. Web. 29 April 2014.
- ↑ Schredl, Michael, et al. "Nightmares and Oxygen Desaturations: Is Sleep Apnea Related to Heightened Nightmare Frequency?" Sleep and Breathing 10.4 (2006): 203–9. ProQuest. Web. 24 April 2014.
- ↑ "Prevalence of nightmares among patients with asthma and chronic obstructive airways disease | Request PDF"।
- ↑ Stephen, LaBerge (১৯৯০)। Exploring the World of Lucid Dreaming। New York: BALLANTINE BOOKS। পৃ. ৬৫–৬৬।
- ↑ Coalson, Bob (১৯৯৫)। "Nightmare help: Treatment of trauma survivors with PTSD."। Psychotherapy: Theory, Research, Practice, Training। ৩২ (3): ৩৮১–৩৮৮। ডিওআই:10.1037/0033-3204.32.3.381।
- ↑ Cushway, Delia; Sewell, Robyn (২০১২)। Therapy with Dreams and Nightmares: Theory, Research & Practice (2 সংস্করণ)। SAGE Publications Ltd। পৃ. ৭৩। আইএসবিএন ৯৭৮১৪৪৬২৪৭১০৫।
- ↑ Peter, Helga; Penzel, Thomas; Jörg, Hermann Peter (২০০৭)। Enzyklopädie der Schlafmedizin। Heidelberg: Springer Medizin Verlag। আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৫৪০-২৮৮৩৯-৮।
- ↑ Hammond, Claudia (১৭ এপ্রিল ২০১২)। "Does cheese give you nightmares?"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮।
বিস্তারিত পঠন
[সম্পাদনা]- Anch, A. M.; Browman, C. P.; Mitler, M. M.; Walsh, J. K. (১৯৮৮)। Sleep: A Scientific Perspective। New Jersey: Prentice-Hall।
- Harris, J. C. (২০০৪)। "The Nightmare"। Archives of General Psychiatry। ৬১ (5): ৪৩৯–৪০। ডিওআই:10.1001/archpsyc.61.5.439। পিএমআইডি 15123487।
- Husser, J.-M.; Mouton, A., সম্পাদকগণ (২০১০)। Le Cauchemar dans les sociétés antiques. Actes des journées d'étude de l'UMR 7044 (15–16 Novembre 2007, Strasbourg) (ফরাসি ভাষায়)। Paris: De Boccard।
- Jones, Ernest (১৯৫১)। On the Nightmare। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭১৪০-৯১২-৬।
{{বই উদ্ধৃতি}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য) - Forbes, D.; এবং অন্যান্য (২০০১)। "Brief Report: Treatment of Combat-Related Nightmares Using Imagery Rehearsal: A Pilot Study"। Journal of Traumatic Stress। ১৪ (2): ৪৩৩–৪৪২। ডিওআই:10.1023/A:1011133422340। পিএমআইডি 11469167।
- Siegel, A. (২০০৩)। "A mini-course for clinicians and trauma workers on posttraumatic nightmares"।
- Burns, Sarah (২০০৪)। Painting the Dark Side : Art and the Gothic Imagination in Nineteenth-Century America। Ahmanson-Murphy Fine Are Imprint। University of California Press। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-২৩৮২১-৩।
- Davenport-Hines, Richard (১৯৯৯)। Gothic: Four Hundred Years of Excess, Horror, Evil and Ruin। North Point Press। পৃ. ১৬০–৬১।
- Hill, Anne (২০০৯)। What To Do When Dreams Go Bad: A Practical Guide to Nightmares। Serpentine Media। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৮৭৫৯০-০৪-৪।
- Simons, Ronald C.; Hughes, Charles C., সম্পাদকগণ (১৯৮৫)। Culture-Bound Syndromes। Springer।
- Sagan, Carl (১৯৯৭)। The Demon-Haunted World: Science as a Candle in the Dark।
- Coalson, Bob (১৯৯৫)। "Nightmare help: Treatment of trauma survivors with PTSD"। Psychotherapy: Theory, Research, Practice, Training। ৩২ (3): ৩৮১–৩৮৮। ডিওআই:10.1037/0033-3204.32.3.381।
- "Nightmares? Bad Dreams, or Recurring Dreams? Lucky You!"। ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৫।
- Halliday, G. (১৯৮৭)। "Direct psychological therapies for nightmares: A review"। Clinical Psychology Review। ৭ (5): ৫০১–৫২৩। ডিওআই:10.1016/0272-7358(87)90041-9।
- Doctor, Ronald M.; Shiromoto, Frank N., সম্পাদকগণ (২০১০)। "Imagery Rehearsal Therapy (IRT)"। The Encyclopedia of Trauma and Traumatic Stress Disorders। New York: Facts on File। পৃ. ১৪৮।
- Mayer, Mercer (১৯৭৬)। There's a Nightmare in My Closet। [New York]: Puffin Pied Piper।
- Moore, Bret A.; Kraków, Barry (২০১০)। "Imagery rehearsal therapy: An emerging treatment for posttraumatic nightmares in veterans"। Psychological Trauma: Theory, Research, Practice, and Policy। ২ (3): ২৩২–২৩৮। ডিওআই:10.1037/a0019895।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
উইকিমিডিয়া কমন্সে Nightmares সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
উইকিঅভিধানে দুঃস্বপ্ন-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।
উইকিউক্তিতে দুঃস্বপ্ন সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন। (ইংরেজি)
উইকিসংকলনে দুঃস্বপ্ন সম্পর্কিত কর্ম দেখুন। (ইংরেজি)
| শ্রেণীবিন্যাস |
|---|
- ↑ "Narcolepsy meaning in Bengali – English-Bangla.com"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৫।