কোদলা মঠ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কোদলা মঠ
অযোধ্যা মঠ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবাগেরহাট
অবস্থান
অবস্থানঅযোদ্ধা গ্রাম, বারুইপাড়া ইউনিয়ন, সদর উপজেলা
রাজ্যখুলনা
দেশবাংলাদেশবাংলাদেশ
স্থাপত্য
ধরন[[রাজপ্রশাদ ]] (১৬শ শতকের উড়িষ্যা স্থাপত্যের আদল)[১]

কোদলা মঠ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।[২] এ মঠের নাম কোদলা মঠ হলেও স্থানীয়ভাবে অযোধ্যা মঠ নামেও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে, বই পুস্তক ও বিভিন্ন লেখা প্রকাশনায় অযোধ্যার মঠ বা কোদলার মঠ দুটি নামই দেখা যায়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

কোদলা মঠের ভেতরের দৃশ্য।

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কোদলা (অযোধ্যা) গ্রামে মঠটি অবস্থিত।[৩] বাগেরহাট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং যাত্রাপুর বাজার থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মঠটিতে খোদাই করা একটি লেখা রয়েছে। স্থানীয় ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায় লেখাটি ছিল ‘শর্মনা উদ্দিশ্য তারকং(ব্রক্ষ্ম) [প্রশা] দোহাং বিনির্মিত:।।’

সংক্ষিপ্ত ও খন্ডলিপিটির সঠিক অর্থ নিরুপন করা না গেলেও যতদূর পাঠোদ্বার করা যায় তা থেকে অনুমান করা হয় “তারকের (জনৈক ব্রাহ্মণ কার্তিক) প্রাসাদ বা অনুগ্রত লাভের জন্য এ মঠটি সম্ভবত একজন ব্রাহ্মণ (শর্মনা) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। মঠের নির্মাণ নিয়ে যে সকল তথ্য জানা যায় এবং সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত বারো ভুঁইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের উদ্যেগে তার গুরু (সভাপন্ডিত) অবিলম্ব সরস্বতীর স্মতিস্তম্ভ হিসাবে মঠটি নির্মান করা হয়।

রাজা প্রতাপাদ্যিতের শাসনমাল থেকে জানা যায়, সে সময় সমগ্র বাগেরহাট প্রতাপাদিত্যের শাসনাধীন ছিল। বিশেষ করে প্রতাপাদিত্যের কাকা বসন্ত রায়ের মৃত্যুর (প্রতাপাদিত্য তার কাকাকে হত্যা করে) বলেশ্বর নদী পর্যন্ত শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। প্রতাপাদিত্য কাকা, জামাইকে হত্যা চেষ্টা করার স্বত্বেও বহু পন্ডিতকে বৃত্তি দিতেন। সভাপন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম প্রতাপাদিত্যর বন্ধুকবি অবিলম্ভ সরস্বতী। তিনি মুখে মুখে দ্রুত কবিতা রচনা করতে পারতেন বলে তার নাম অবিলম্ব সরস্বতী হয়েছিল।[৪]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

অযোধ্যা বা কোদলার মঠের চারপাশে অলঙ্করণ করা কারুকাজ। বর্গাকার চতুস্কোণ বিশিষ্ট ভিতের উপর নির্মিত হয়েছে অযোধ্যা বা কোদলার মঠটি। উচ্চতা আনুমানিক ১৮.২৯ মিটার। প্রাচীরগুলি চিকন ইটের তৈরি, পুরুত্ব ৩.১৭ মিটার। ভেতরের প্রত্যেক দেয়াল বর্গাকার, দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। দেয়ালের ইট লাল পালিশ করা। অযোধ্যা বা কোদলার মঠের প্রবেশ পথ ৩টি। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে এ প্রবেশ পথগুলি। ধারণা করা হয় দক্ষিণ দিকের পথটি মূল প্রবেশ পথ। দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে আদি বাংলায় মঠটির সম্পর্কে খোদাই করা রয়েছে।

উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত যে ‘রেখা’ নমুনার মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি দেখা যায় তার প্রভাব এ মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়। অযোধ্যার মঠ বা কোদলার মঠ কোন দেব মন্দির নয়, সম্ভবত: মৃত: মহাত্মার সমাধি স্তম্ভ। মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি। বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে। কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠনই একে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে। মঠের ভেতরের অংশে ১২/১৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা গুম্বুজ  ফাঁকা তলদেশর আকারে উপরে উঠে গিয়ে শেষ হয়েছে। অনেকে ধারণা করেন এর উপরেও মঠের অভ্যন্তরে শূন্য/ফাপা আছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অযোধ্যা মঠ/কোদলা মঠ - বাগেরহাট জেলার তথ্য বাতায়ন।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. কোদলা মঠ - বাংলাপিডিয়া।
  3. "ঘুরে আসুন অযোধ্যা মঠ"। ২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫ 
  4. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ-আব্দুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]