লোহাগড় মঠ
লোহাগড় মঠ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | চাঁদপুর |
অবস্থান | |
অবস্থান | লোহাগড় গ্রাম, বালিয়া ইউনিয়ন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা |
রাজ্য | চট্টগ্রাম |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থাপত্য | |
সৃষ্টিকারী | লৌহ এবং গহড় |
লোহাগড় মঠ হল বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় অবস্থিত একমাত্র মঠ।[১] প্রায় চার থেকে সাত শতাব্দী পুরাতন প্রাচীন এই মঠ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে অবস্থিত। যা লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা তৈরি করেছিলেন।
নামকরণ
[সম্পাদনা]লোহাগড় জমিদার বাড়ির দুইজন জমিদার লৌহ এবং গহড় নামানুসারে এলাকাটির নাম রাখা হয় লোহাগড়। জমিদারদের নামানুসারে গ্রামের সাথে মিল রেখেই তাদের স্থাপত্যশৈলিরও নাম রাখা হয় লোহাগড় মঠ।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]আজ থেকে প্রায় চার’শ থেকে সাত'শ বছর পূর্বে লোহাগড় জমিদার বাড়ির জমিদাররা এই এলাকাটিতে রাজত্ব করতেন। মঠের মত বিশালাকার দুটি প্রাসাদ। এই প্রাসাদেই জমিদাররা তাদের বিচারকার্য সম্পাদন করতেন। বিভিন্নত তথ্যে যানা যায় প্রতাপশালী দুই রাজা লৌহ এবং গহড় ছিলেন অত্যাচারী রাজা। তাদের ভয়ে কেউ মঠ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যেতে শব্দ করতেন না। জনৈক এক ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তি ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, "কেমন রাজা রে এরা বাবু রাস্তা গুলো ঠিক নেই!”।[৩] পরবর্তীতে একথা জমিদারের গোলামরা শোনে লৌহ ও গহড়কে অবহিত করে।
কথিত আছে, ওই কর্তাব্যক্তির জন্য নদীর তীর হতে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়। যার প্রস্ত ছিল ২ হাত, উচ্চতা ১ হাত ও দৈর্ঘ্য ২০০ হাত। পরবর্তীতে ঐ রাস্তাটিতে স্বর্ণ-মুদ্রা দ্বারা ভরিয়ে দেয়া হয় এবং যখন ঐ ব্যক্তি রাস্তাটি ধরে আসছিলো তখন এ দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন। রাজার শীর্ষরা তার প্রতি অত্যাচার করেন।[২]
জমিদারী আমলে সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলাফেরা করতে পারতো না। বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে নৌকা চলাচল করতো নিঃশব্দে। ডাকাতিয়া নদীর কুলে তাদের বাড়ির অবস্থানের নির্দেশিকাস্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শনস্বরূপ তারা মঠের শিখরে একটি স্বর্ণদ স্থাপন করেন।
জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর ওই স্বর্ণের লোভে মঠের শিখরে উঠার অপচেষ্টায় অনেকে গুরুতর আহত হয়। শুধু তা-ই নয় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে বলেও শোনা যায়।[৪]
বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]মঠটি কে এবং কবে নির্মাণ করেছিলেন এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। তবে, কিছুসূত্র থেকে জানা যায় যে ওই দুই ভাই এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। শুরুতে এখানে পাশাপাশি পাঁচটি মঠ ছিল তবে বর্তমানে এখানে মাত্র তিনটি মঠ অবশিষ্ট রয়েছে। বর্তমানে টিকে থাকা তিনটি মঠ ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতার। সবচেয়ে লম্বা মঠটি সবচেয়ে সুন্দর যেটির উপরিভাগে নিম্নভাগের চেয়ে অনেক বেশি নকশার কাজ রয়েছে। এই মঠটির উপরিভাগ দেখতে অনেকটা প্যাগোডার উপরিভাগের মত। মঠটির উপরে কয়েকটি গর্ত রয়েছে যেখানে টিয়াপাখি বাস করে।
মানুষজন মঠগুলোর নিকট খুব কম যাওয়ায় বহু বছর ধরে এগুলো জঙ্গলে ঢেকে ছিল। মানুষজন মনে করতো মঠগুলোতে খারাপ আত্মার আনাগোনা রয়েছে এবং এসব খারাপ আত্মা মানুষকে নিয়ে যায় অথবা হত্যা করে আর এ কারণেই অনেক বছর মানুষজন একা এই মঠের কাছে যাওয়ার সাহস করেনি। তবে এটি এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এই মঠটি দেখার জন্য এখানে প্রতিদিনিই দূরদূরান্তর থেকে আসা মানুষের আনাগোনা দেখা যায়।[৫]
চিত্র
[সম্পাদনা]-
Lohagor Moth
-
Lohagor Moth
-
Lohagor Moth
-
লোহাগড় মঠ দূর থেকে তোলা ছবি
-
লোহাগড় মঠ ০২ দূর থেকে তোলা ছবি
-
তিনটি মঠের সামনের সাইট (ডান দিক) থেকে
-
ছোট দুইটি মঠের সামনের দিক
-
তিনটি মঠের পিছনের দিক থেকে তোলা ছবি
-
বড় মঠের সামনের সাইটের নিচের দিক
-
বড় মঠের সামনের উপরের দিক
-
দ্বিতীয় মঠের সামনের দিক
-
তৃতীয় মঠের সামনের দিক
-
প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের ব্যানার
-
বিকেল বেলা মঠ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "লোহাগড় মঠ - বালিয়া ইউনিয়ন - বালিয়া ইউনিয়ন"। baliaup.chandpur.gov.bd। ২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ ক খ "জমিদার ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী ফরিদগঞ্জের লোহাগড় মঠ"। প্রিয়.কম। ১৫ মে ২০১৫। ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৭।
- ↑ "চাঁদপুরের লোহাগড় মঠ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে"। চাঁদপুর নিউজ। মে ৯, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ মে ৩০, ২০১৭।
- ↑ "ঐতিহ্যের সাক্ষী লোহাগড় মঠ"। আলোকিত সময়। ২৮ জানুয়ারি ২০১৭। ১৪ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৭।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;:1
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- লোহাগড় মঠ - চাঁদপুর জেলার তথ্য বাতায়ন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে