লাড্ডু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লাড্ডু
নারকেল নাড়ু
উৎপত্তিস্থলভারত
অঞ্চল বা রাজ্যদক্ষিণ এশিয়া
প্রধান উপকরণময়দা, দুধ, চিনি
ভিন্নতাGram flour, rava
অন্যান্য তথ্যServed on festive or religious occasions
বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি লাড্ডুর প্যাকেট
লাড্ডু
মতিচুর লাড্ডু

লাড্ডু হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় গোলকাকৃতি মিষ্টান্ন। লাড্ডু তৈরিতে বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে ব্যবহৃত হয় ময়দা, ময়দার খামি, চিনি এবং ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের লাড্ডুর জন্য ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ। তবে লাড্ডু তৈরীতে ছানা ব্যবহার করা হয় না। এ মিষ্টান্নটি প্রায়ই বিভিন্ন উৎসব কিংবা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে প্রস্তুত এবং পরিবেশিত হয়ে থাকে।[১][২]

উপকরণসমূহ[সম্পাদনা]

লাড্ডু তৈরিতে সাধারণভাবে যে উপকরণগুলো ব্যবহৃত হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছোলা, গম, সুজি, নারিকেল ইত্যাদি। এসকল উপাদান পরিমানমত এবং প্রয়োজনমত অন্যান্য উপকরণ এবং চিনির সাথে মেশানো হয়। এরপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘি এ ভাজা হয়। আকৃতির ক্ষেত্রে মিষ্টান্নটিকে সাধারণত বল আকারে তৈরি করা হয়। কিছু কিছু লাড্ডু তৈরিতে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন- মেথি লাড্ডু, বিভিন্ন দানার লাড্ডু, রজন লাড্ডু ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক সময় লাড্ডু তৈরির উপাদান হিসাবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন পেস্তা বাদাম বা কাজু বাদাম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

বুন্দি লাড্ডু[সম্পাদনা]

বুন্দি লাড্ডু বা বুন্দিয়ার লাড্ডু বুন্দি হতে তৈরি হয়ে থাকে। এ মিষ্টান্নটি সাধারণত বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, রক্ষা বন্ধন, দিওয়ালি ইত্যাদিতে তৈরি ও পরিবেশন করা হয়। বুন্দি দিয়ে মতিচূর লাড্ডু প্রস্তুত করা হয়, যে লাড্ডুগুলো আকারে ছোট আকৃতির এবং এগুলো ঘি এ ভাজা হয়ে থাকে। মূলত এ মিষ্টান্নটি ছিল উত্তর ভারতের মিষ্টান্ন, কিন্তু বর্তমানে এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবস্থানেই সমান জনপ্রিয়।

বেসন লাড্ডু[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে তৈরি লাড্ডু

বেসন লাড্ডু একটি জনপ্রিয় ভারতীয় মিষ্টান্ন যা ছোলার ময়দা অথবা গ্রাম ময়দা এবং চিনি ও ঘি সহকারে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। প্রথমে ময়দা ও অন্যান্য উপকরণের মিশ্রণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘি এ ভাজা হয়, যে পর্যন্ত না উপযুক্ত রং এবং সুগন্ধ লাভ করে। এরপর এতে চিনি মেশানো হয়। তারপর মিশ্রণটি হতে গোল আকারের লাড্ডু তৈরি করা হয়। কখনো কখনো এতে পেস্তা বাদামের কুচিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ লাড্ডুটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষিত করে রাখা যায়। মিষ্টান্নটি সাধারণত উৎসব, পারিবারিক অনুষ্ঠান বা আপ্যায়ন এবং পূজা-পার্বনে পরিবেশিত হয়ে থাকে।

নারিকেল লাড্ডু[সম্পাদনা]

নারিকেল লাড্ডু বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নারায়াল বা নাকড়ু লাড্ডুর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, চোলা সাম্রাজ্যের সময়ও এ মিষ্টান্ন প্রস্তুত হত এবং ভ্রমণকারীরা বা যোদ্ধারা তাদের খাবার ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে এ মিষ্টান্ন তাদের সাথে বহন করত। [৩]

মালাই লাড্ডু[সম্পাদনা]

আরেক ধরনের লাড্ডু যা ভারত ও পাকিস্তানে খুবই জনপ্রিয়। দুধ হতে উৎপন্ন ছানা হতে এ লাড্ডু প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। ভারতে এ লাড্ডুকে পেঢাহ বলা হয় এবং প্রায়ই পূজার ভোগ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

এডিবল গাম সহযোগে উৎপন্ন লাড্ডু[সম্পাদনা]

ইন্ডিয়াতে এ লাড্ডুগুলো ঐতিহ্যগতভাবে সন্তানকে দুধ প্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মহিলাদের খাওয়ানো হয়, কারণ এ লাড্ডুগুলো মহিলাদের সন্তানকে দুধ প্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।[৪] এ লাড্ডুকে মারাঠি ভাষায় ডিনকাচি এবং হিন্দি ভাষায় গন্ড কা লাড্ডু বলা হয়ে থাকে। [৫]

ব্যবহার[সম্পাদনা]

লক্ষ্মী পূজার জন্য সাজানো লাড্ডু

লাড্ডু প্রায়ই উৎসব কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠান যেমন বিবাহ, জন্মদিন অথবা অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি এবং মন্দিরে পূজার প্রসাদ ইত্যাদিতে প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। অন্ধ্র প্রদেশের তিরুমালার ভেঙ্কাটেশওয়ারা মন্দিরে এক ধরনের লাড্ডু প্রসাদ হিসাবে পরিবেশন করা হয়ে থাকে, যা তিরুপাতি লাড্ডু হিসাবে বিখ্যাত। কিছু কিছু মুসলিম সম্প্রদায় এর মধ্যে ঈদ উৎসবে লাড্ডু ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সাংস্কৃতিক পরিচয়[সম্পাদনা]

এশিয়ার অনেক টিভি সিরিয়াল এবং প্রচারিত অনুষ্ঠানে এ অঞ্চলে মিষ্টান্ন হিসাবে লাড্ডুর ব্যবহার ও জনপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের গণেশ উৎসবে ৬৩০০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি লাড্ডু প্রস্তুত করা হয়। [৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sweet shops make hay in Diwali shine"The New Indian Express। ২১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  2. Sangeetha Devi Dundoo। "As good as home"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. Madhulika Dash (১৬ অক্টোবর ২০০৪)। "Food Story: The journey of ladoo from a medicine to the much-loved Indian sweet"The New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  4. Singh, Mayank (২০১২)। "TRADITIONAL HERBAL CARE OF HUMAN HEALTH IN JAUNPUR (U.P.)" (পিডিএফ)Indian J. L. Sci.1 (2): 61–65। ৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  5. "Dinkache ladoo, Gund ladoo, Gond Ladoo, Gond Ka Laddu.....Easy Recipes on CuisineCuisine.com"www.cuisinecuisine.com। ২২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  6. "6,300 kg Tapeswaram laddu creates record"The New Indian Expres। Express Network Private Limited। ৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]