বিষ্ণু
এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি পরিবর্ধন বা বড় কোনো পুনর্গঠনের মধ্যে রয়েছে। এটির উন্নয়নের জন্য আপনার যে কোনো প্রকার সহায়তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। যদি এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদটি কয়েকদিনের জন্য সম্পাদনা করা না হয়, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলুন। ১৮ মাস আগে Yahya (আলাপ | অবদান) এই নিবন্ধটি সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন। (হালনাগাদ) |
বিষ্ণু | |
---|---|
পালনকর্তা | |
দেবনাগরী | विष्णु |
অন্তর্ভুক্তি | দেব (ত্রিমূর্তি) |
আবাস | বৈকুণ্ঠ |
মন্ত্র | ॐ नमो नारायणाय ওঁ নমঃ নারায়ণায় |
অস্ত্র | শঙ্খ, সুদর্শন চক্র, কৌমোদকী গদা ও পদ্ম। এছাড়াও নারায়ণাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র[১] |
প্রতীকসমূহ | শালিগ্রাম শিলা, পদ্ম, সুদর্শন চক্র, শঙ্খ। |
বাহন | গরুড় (ঋষি কশ্যপ এবং বিনতার পুত্র)[১] |
উৎসব | হোলি, রাম নবমী, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, নরসিংহ জয়ন্তী[২] |
সঙ্গী | লক্ষ্মী |
বিষ্ণু (সংস্কৃত: विष्णु, আক্ষরিক অর্থে সর্বব্যাপ্ত) হলেন হিন্দুধর্মের দেবতাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান দেবতা এবং ত্রিমূর্তির অন্যতম সদস্য। তিনি নারায়ণ এবং হরি নামেও ভক্তমহলে সমধিক পরিচিত। সমসাময়িক অন্য়তম হিন্দু সম্প্রদায়, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের তিনি সর্বোচ্চ সত্তা। আদি শঙ্কর প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে, বিষ্ণু ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের অন্যতম।[৩][৪]
বিষ্ণু সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা ত্রিদেবতাদের মধ্যে "পালনকর্তা" হিসেবে পরিচিত এবখ ত্রিদেবতার অন্য দুই দেবতা ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং শিব হলেন প্রলয়কর্তা।[৫] বৈষ্ণব মতে, বিষ্ণু হলেন পুরুষোত্তম সত্তা যিনি এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেন, রক্ষা করেন এবং রূপান্তরিত করেন। শাক্ত মতে, দেবী বা আদি শক্তিকে পরম পরব্রহ্ম হিসেবে বর্ণনা করা হলেও, আরো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি জগতের সৃষ্টি, পালন এবং প্রলয় কর্তা হিসেবে ত্রিদেবতা- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে সৃষ্টি করেছেন। শাক্ত মতে, ত্রিদেবী হলো ত্রিদেবতা বা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের অবিচ্ছেদ্য শক্তিস্বরূপা এবং বিষ্ণুর সহধর্মিনী হলেন দেবী লক্ষ্মী।[৬]
বৈষ্ণবমত অনুসারে, ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ বা সগুণ ব্রহ্ম হলো বিষ্ণু এবং তিনি অসীম, অতীন্দ্রিয় এবং অপরিবর্তনীয় পরম ব্রহ্ম এবং মহাবিশ্বের আদি আত্মা বা পরমাত্মা।[৭] ভগবান বিষ্ণুর শান্ত এবং ভয়ঙ্কর উভয় রূপের বহু বর্ণনা রয়েছে। তিনি শান্ত অবস্থায় সর্বজ্ঞ, অজর, অমর সত্তারূপে তাঁর সহধর্মিনী দেবী লক্ষ্মী সহ অনন্ত সমুদ্র ক্ষীর সাগরে আদিশেষ বা অনন্ত নাগশয্যায় শায়িত থাকেন। এখানে আদিশেষ বা অনন্ত নাগ হলো স্বয়ং কাল বা সময়।[৮]
যখন পৃথিবীতে অধর্ম, বিশৃঙ্খলা এবং আসুরিক শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তখন বিষ্ণু জগতে ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অধর্মের বিনাশ ও শিষ্টজনদের রক্ষার জন্য অবতাররূপে অবতীর্ণ হন। বিষ্ণুর অসংখ্য অবতারদের মধ্যে প্রধান হলো ১০ জন বা দশাবতার। এই অবতারদের মধ্যে শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবতার।[৯]
নামব্যুৎপত্তি
বিষ্ণু (সংস্কৃত: विष्णु) শব্দের অর্থ হলো "সর্বব্যাপ্ত"[১০] এবং মেধাতিথি (১০০০ অব্দ) এর মতে, বিষ্ণু অর্থ 'যিনি সবকিছু এবং সবকিছুর ভিতরে পরিব্যাপ্ত আছেন'।[১১] বেদাঙ্গ বিশারদ মহর্ষি যাস্ক (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক) তাঁর নিরুক্ত গ্রন্থে বলেছেন- "বিষ্ণুর্ বিষ্বাতার বা ব্যাষ্ণোতার বা" অর্থাৎ যিনি সর্বত্র সমভাবে বিরাজমান তিনিই বিষ্ণু। তিনি আরো বলেছেন- "অথ যদ্বিষিতো ভবতি তদ্ বিষ্ণুর্ভবতি।।" অর্থাৎ যিনি মায়া ও মোহ মুক্ত তিনিই বিষ্ণু।[১২]
পদ্মপুরাণের (৪র্থ-১৫দশ শতক) দশম অধ্যায়ে উল্লেখিত হয়েছে যে, ভীমের পুত্র এবং বিদর্ভদেশের রাজা দন্ত, অষ্টোত্তর শতনামে বিষ্ণু স্তুতি করে। এই অষ্টোত্তর শতনামে বিষ্ণুর প্রধান দশাবতার সহ বিষ্ণু বা ঈশ্বরের গুণ, মহিমা, লীলা বর্ণিত হয়েছে।[১৩]
গরুড় পুরাণের পঞ্চদশ অধ্যায়ে এবং মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বিষ্ণুর ১০০০ নামের একটি করে স্তোত্র রয়েছে। এটি বিষ্ণু সহস্রনাম নামে ব্যাপক প্রচলিত। বিষ্ণু সহস্রনামে বিষ্ণু বা ঈশ্বরের গুণ, মহিমা, মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। এখানে বিষ্ণু বলতে সর্বব্যাপক, সর্বব্যাপ্ত পরমেশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিষ্ণু সহস্রনামে বিষ্ণুর অন্যান্য যে নাম গুলো উল্লেখিত হয়েছে সেগুলো হলো:-
বেদে বিষ্ণু
বেদের বিষ্ণু মূলত সূর্য বা সবিতা। সূর্যদেবের বার রবিবার হলো বিষ্ণুবার।
বিষ্ণুদেবের প্রণাম মন্ত্র:
"ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।"
পুরাণে বিষ্ণু
বিষ্ণুর প্রণাম মন্ত্র
ওঁ ত্রৈলোক্য পূজিত শ্রীমন সদা বিজয় বর্দ্ধন। শান্তিং কুরু গদাপানে নারায়ণায় নমোঽস্তুতে।।
বিষ্ণুর দশ মুখ্য অবতারের সমষ্টিগত নামই দশাবতার। এই দশাবতারের কথা জানা যায় গরুড় পুরাণ থেকে।[১৪] এই দশ অবতার মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, প্রথম চার অবতারের আবির্ভাবকাল সত্যযুগ। পরবর্তী তিন অবতার ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। অষ্টম ও নবম অবতারের আবির্ভাবকাল যথাক্রমে দ্বাপরযুগ ও কলিযুগ। দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের অন্তিম পর্বে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।[১৫] বিষ্ণুর দশ অবতারগুলো হচ্ছে:
- ১. মৎস্য - মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
- ২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
- ৩. বরাহ - বন্য শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
- ৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
- ৫. বামন - খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
- ৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
- ৭. রাম - অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
- ৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সাথে অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- ৯. বুদ্ধ - কলিযুগে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ।
- ১০. কল্কি - এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন।
যারা বিষ্ণুর উপাসনা করেন, তাদের বৈষ্ণব বলা হয়। শ্রীচৈতন্য বঙ্গদেশে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তন করেন। সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিষ্ণু সুবিদিত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন মন্দির ও জাদুঘরে বিষ্ণুর অনেক মূর্তি আছে।[১৬]
আরও দেখুন
টীকা
- Translation by Richard W. Lariviere (১৯৮৯)। The Nāradasmr̥ti। University of Philadelphia।
- Patrick Olivelle. "The Date and Provenance of the Viṣṇnu Smṛti." Indologica Taurinensia, 33 (2007): 149-163.
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ Constance Jones; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 491–492। আইএসবিএন 978-0-8160-7564-5।
- ↑ Muriel Marion Underhill (১৯৯১)। The Hindu Religious Year। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 75–91। আইএসবিএন 978-81-206-0523-7।
- ↑ Kedar Nath Tiwari (1987). Comparative Religion. Motilal Banarsidass Publications. p. 38. ISBN 9788120802933.
- ↑ Pratapaditya Pal (1986). Indian Sculpture: Circa 500 BCE- 700 CE. University of California Press. pp. 24–25. ISBN 978-0-520-05991-7.
- ↑ Orlando O. Espín; James B. Nickoloff (2007). An Introductory Dictionary of Theology and Religious Studies. Liturgical Press. p. 539. ISBN 978-0-8146-5856-7.
- ↑ David Leeming (17 November 2005). The Oxford Companion to World Mythology. Oxford University Press. p. 236. ISBN 978-0190288884.
- ↑ Edwin Bryant; Maria Ekstrand (23 June 2004). The Hare Krishna Movement: The Postcharismatic Fate of a Religious Transplant. Columbia University Press. p. 16. ISBN 978-0231508438.
- ↑ Vanamali (20 March 2018). In the Lost City of Sri Krishna: The Story of Ancient Dwaraka. Simon and Schuster. p. 737. ISBN 978-1620556825.
- ↑ Zimmer, Heinrich Robert (1972). Myths and Symbols in Indian Art and Civilization. Princeton University Press. p. 124. ISBN 978-0-691-01778-5.
- ↑ Vishnu Sahasranāma, translated by Swami Chinmayananda. Central Chinmaya Mission Trust. pp. 16–17.
- ↑ Klaus K. Klostermaier (2000). Hinduism: A Short History. Oneworld. pp. 83–84. ISBN 978-1-85168-213-3.
- ↑ Adluri, Vishwa; Joydeep Bagchee (February 2012). "From Poetic Immortality to Salvation: Ruru and Orpheus in Indic and Greek Myth". History of Religions. 51 (3): 245–246. doi:10.1086/662191. JSTOR 10.1086/662191. S2CID 56331632.
- ↑ N.A. (1956). THE PADMA-PURANA PART.10. MOTILAL BANARSIDASS PUBLISHERS PVT. DELHI. pp. 3471–3473.
- ↑ গরুড় পুরাণ (১।৮৬।১০,১১)
- ↑ B-Gita 8.17 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে "And finally in Kal-yuga (the yuga we have now been experiencing over the past 5,000 years) there is an abundance of strife, ignorance, irreligion and vice, true virtue being practically nonexistent, and this yuga lasts 432,000 years. In Kali-yuga vice increases to such a point that at the termination of the yuga the Supreme Lord Himself appears as the Kalki avatara"
- ↑ http://bn.banglapedia.org/index.php?title=বিষ্ণু
বহিঃসংযোগ
- vishnu temple - srirangam
- Vishnu, a description (gurjari.net)
- Vishnu, the god of Preservation, by Dr. C.P.Ramaswami Aiyar[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- BBC Religion & Ethics - Who is Vishnu[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (bbc.co.uk)
- List of Vaishnava links (vaishnava.com)