শাহ নূরী বাঙালি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শাহ নূরি বাঙালি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শাহ নূরী বাঙ্গালী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
মৃত্যু১৭৮৫
সমাধিস্থলমগবাজার
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নি
শিক্ষালয়হানাফি
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যবাঘু দেওয়ান
আরবি নাম
ব্যক্তিগত (ইসম)Shāh Nūrī
شاه نوري
পৈত্রিক (নাসাব)ibn ʿAbd Allāh ibn Ghulām Muḥammad
بن عبد الله بن غلام محمد
স্থানীয় (নিসবা)al-Bangālī
البنغالي

শাহ নূরী বাঙ্গালী (জাপানি: শাহ নূরী বাঙ্গালী, ফার্সি: شاه نوری بنگالی; মৃত্যু ১৭৮৫) ছিলেন ১৮ শতকের একজন বাঙালি ইসলামী পন্ডিত এবং ঢাকার লেখক।[১] তার বিখ্যাত রচনা, কিবরিত-ই-আহমারের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যা ফার্সি ভাষায় রচিত হয়েছিল।[২]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

শাহ নূরী মুঘল বাংলার রাজধানী ঢাকার বাবুপুরা গ্রামের এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ সৈয়দ মুহাম্মদ তাইফুর পরিবারটিকে "ঢাকার অনেক পুরানো এবং বিদ্বান নাগরিক" বলে বর্ণনা করেছেন।[৩] তাদের পূর্বপুরুষ শাহ বাহাউদ্দিন বাগদাদ থেকে এসেছিলেন।[৪] শাহ নূরীর পিতা শায়খ আবদুল্লাহ মুজাদ্দিদী এবং দাদা মাওলানা শায়খ গোলাম মুহাম্মাদ মুজাদ্দিদী উভয়েই বাবুপুরার খানকাহের সালিক ছিলেন এবং বাবুপুরা মাদ্রাসায় ইসলামিক বিজ্ঞান পড়াতেন। যেহেতু তার পিতামহ পাঞ্জাবী পন্ডিত আহমদ সিরহিন্দির একজন মুরিদ ছিলেন, তাই তারা নকশবন্দী সুফি অনুশাসনের মুজাদ্দিদিয়াহ অধীনস্থ ছিলেন। তার পিতা ছাড়া, তার দাদার প্রখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন শায়খ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরনগরী এবং শায়খ লুৎফুল্লাহ মেহেরপুরী যারা লালবাগ মৃধা মাদ্রাসায় শিক্ষক ছিলেন।[৫] তার বোন মরিয়ম সালেহা ১৭০৬ সালে বাবুপাড়ার ঐতিহাসিক মরিয়ম সালেহা মসজিদ নির্মাণ করেন।[৬]

তিনি মগবাজার থেকে চার মাইল দূরে পাথরতলী কাটরায় বাংলার গভর্নর শায়েস্তা খান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শহরের মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন।[৭] এরপর, তিনি মুর্শিদাবাদের মতিঝিলের ফুরকানিয়া দার আল-উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন, যেটি নওয়াজিশ মুহাম্মদ খান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।[৮] শাহ নূরী তখন রাজশাহীর বিন্নি বাজারের বাঘু দেওয়ানের মুরিদ হন। শিক্ষার সময় তিনি মাশারিক আল-আনওয়ার আলা সহীহ আল-আতহার, কাদি আইয়াদের হাদীসের বই এবং কুতুব আদ-দীন আল-রাজির যুক্তিবিদ্যার বই শরহে মাতালি'র মতো বই অধ্যয়ন করেন।[৯]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৭৭৫ সালে, তিনি ফার্সি ভাষায় কিবরিত-ই-আহমার (লাল সালফার) নামে একটি বই লেখেন।[১০] যাইহোক, সাগির হাসান আল-মাসুমি যুক্তি দেন যে এটি ১৭৬৩ সালে লেখা হয়েছিল।[১১] বইটি তাসাউউফের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল, কিন্তু এতে সমসাময়িক সুফিদের জীবনীও ছিল, যেমন বাবুপুরা খানকাহের মুরিদের তালিকা।[১২]

নূরী ১৭৭৯ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন, যেখানে তিনি মগবাজারে একটি নতুন খানকাহ স্থাপন করেন। খানকায় তাঁর অনুসারীদের কাছে ইসলামী মূল্যবোধ প্রচারের জন্য তিনি তার জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।[১৩] ঢাকার নায়েব নাজিম এবং ঢাকার পরবর্তী নবাবদের অনেকেই শাহ নূরী ও তার বংশধরদের শিষ্য ছিলেন।[১৪][১৫] বিশেষ করে শাহ নূরী ছিলেন নায়েব নাজিম জাসরত খানের পীরমুর্শিদ[১৬]

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

নূরী ১৭৮৫ সালে মারা যান এবং তাকে ঢাকার মগবাজারে সমাহিত করা হয়।[৯] ঐতিহাসিক তাইফুরের মতে তিনি ১৭৭৪ সালে মারা যান, যদিও এটি নূরীর বইয়ের সমাপ্তির তারিখের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।[১৭] তার চারটি পুত্র ছিল, চতুর্থটি ছাড়া বাকি সবাই শৈশবেই মারা যায়; আবুল ওয়াফা শাহ মুহাম্মাদী (মৃত্যু ১৮৩৫), যিনি মগবাজার খানকাহের গাদ্দী নশীন হিসাবে তার স্থলাভিষিক্ত হন। তার ছেলেদেরকে তার পাশেই একটি মাজারে দাফন করা হয়। নবাব পরিবারের খাজা আবদুল্লাহ নূরীর পাশে দাফন করার অনুরোধ করেছিলেন, এবং এখন তার ডানদিকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।[১৮][১৯]

নূরীর বইয়ের একটি পাণ্ডুলিপি মাহুতটুলির সদরউদ্দিন আহমদের হাতে লেখা।[২০] এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের হাকিম হাবিবুর রহমান সংগ্রহে সংরক্ষিত আছে।[২১] তার নামে ঢাকার শাহশাব বাড়ি রোডে শাহনুরী মডেল গার্লস হাই স্কুল নামে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mawlana Nur Muhammad Azmi। "2.2 বঙ্গে এলমে হাদীছ" [2.2 Knowledge of Hadith in Bengal]। হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস। Emdadia Library। পৃষ্ঠা 24। 
  2. al-Kumillai, Muhammad Hifzur Rahman (২০১৮)। "الشيخ الفاضل شاه نوري البنغالي" [The honourable Shaykh Shāh Nūrī al-Bangālī]। كتاب البدور المضية في تراجم الحنفية (আরবি ভাষায়)। Dar al-Salih। 
  3. Taifoor, Syed Muhammed (১৯৬৫)। Glimpses of Old Dhaka (2 সংস্করণ)। S.M. Perwez। পৃষ্ঠা 104, 296। 
  4. Hossain, Nazir (১৯৮১)। কিংবদন্তির ঢাকা: Historical anecdotes about Dacca City, Bangladesh, ancient to the present, with a list of luminaries of the city। Azad Muslim Club (distributor National Book Centre)। পৃষ্ঠা 52–54। 
  5. মুসলিম সুধী। পৃষ্ঠা 274-278। 
  6. Bhuiyan, Mosharraf Hossain (১৯৯৭)। "The Mosque of Mariam Saleha"। University of Dhaka: 188। 
  7. Nadvi, Abul Hasanat (১৯৩৬)। ہندوستان کی قدیم اسلامی درسگاہیں (উর্দু ভাষায়)। Ma'arif Press। পৃষ্ঠা 56। 
  8. Hakim Habibur Rahman (১৯৪৬)। آسودگان ڈھاکہ (উর্দু ভাষায়)। 
  9. Begum, Shabnam (১৯৯৪)। "Arabic and Persian literature in Bengal during eighteenth century: Shah Nuri"। Bengal's contribution to Islamic studies during the 18th century (গবেষণাপত্র)। Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 101–102। 
  10. Ahmed, Wakil (১৯৮৫)। বাংলার মুসলিম বুদ্ধিজীবিBangla Academy। পৃষ্ঠা 89। 
  11. al-Ma‛sumi, Muhammad Saghir Hasan (মার্চ ১৯৬৭)। "Bengal's contribution to Islamic learning"। Islamic Research Institute of Pakistan: 162। 
  12. As‛adi, Mahmud (১৯৯৪)। در درى: موقعيت ادبيات فارسى در جهان معاصر (ফার্সি ভাষায়)। سازمان انتشارات كيهان। পৃষ্ঠা 69। 
  13. Bangladesh District Gazetteers: DaccaBangladesh Government Press। ১৯৬৯। পৃষ্ঠা 459। 
  14. "اردو مخطوطات" (উর্দু ভাষায়)। Khuda Bakhsh Oriental Library। ১৯৯৯: 210। 
  15. Abdullah, Muhammad (১৯৮৬)। নওয়াব সলীমুল্লাহ, জীবন ও কর্মIslamic Foundation Bangladesh। পৃষ্ঠা 23। 
  16. Taifoor, Syed Muhammed (১৯৬৫)। Glimpses of Old Dhaka (2 সংস্করণ)। S.M. Perwez। পৃষ্ঠা 104, 296। 
  17. Taifoor, Syed Muhammed (১৯৬৫)। Glimpses of Old Dhaka (2 সংস্করণ)। S.M. Perwez। পৃষ্ঠা 104, 296। 
  18. মুসলিম সুধী। পৃষ্ঠা 274-278। 
  19. Maniruzzaman, Mohammad (১৯৮৫)। মুহম্মদ এনামুল হক স্মারকগ্রন্থAsiatic Society of Bangladesh। পৃষ্ঠা 263। 
  20. ঢাকা গ্রন্থমালাDhaka City Museum। ১৯৯০। পৃষ্ঠা 11। 
  21. Haq, Muhammad Muzammil (১৯৮৫)। Some Aspects of the Principal Sufi Orders in IndiaIslamic Foundation Bangladesh। পৃষ্ঠা 189।