ব্যবহারকারী:Owais Al Qarni/খেলাঘর ১১

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুহাম্মাদ মামুনুল হক (জন্ম: নভেম্বর ১৯৭৩) একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ।

পয়েন্ট[সম্পাদনা]

মামুনুল হক আলোচিত হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

মামুনুল হক ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার ভাইবোনের সংখ্যা ১৩।[২] পিতা আজিজুল হকের নিকট তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। ১৯৮৫ সালে লালবাগের চানতারা মসজিদ মাদ্রাসা থেকে তিনি কুরআনের হিফজ সমাপ্ত করেন, তখন তার বয়স হয়েছিল ১২। ১৯৮৬ সালে তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকায় ভর্তি হন। ১৯৯৬ সালে তিনি এই মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। এছাড়াও তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সমাপ্ত করেন।[২] কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সিরাজগঞ্জ জামিয়া নিজামিয়া বেথুয়া মাদ্রাসা ও মিরপুর জামিউল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ২০০০ সালে তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকার শায়খুল হাদিস নিযুক্ত হন। ২০১৫ সালে তিনি মাহাদুত তারবিয়্যাতুল ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২০ সালের ১০ অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব এবং ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব নির্বাচিত হন।[২]

এছাড়া তিনি বাবরি মসজিদ বাংলাদেশ, মাহাদুত তারবিয়্যাতুল ইসলামিয়া ও তারবিয়্যাতুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, মাসিক রহমানী পয়গামের সম্পাদক, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি ও বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব। মামুনুল হক একজন ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, ইসলামি বক্তা, লেখক ও অধ্যাপক হিসেবেও পরিচিত। মামুনুল হক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।[৩]

গ্রেফতার[সম্পাদনা]

গত তেসরা এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। সেই সময় থেকেই পুলিশ তার ওপর নজর রাখছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ ও তেজগাঁও বিভাগের শতাধিক পুলিশ ওই মাদ্রাসাটা ঘিরে ফেলে। মাদ্রাসার দোতলার একটি কক্ষ থেকে মামুনুল হককে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। এরপর প্রথমে তাকে তেজগাঁও ডিভিশনের ডিসির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে মিন্টো রোডে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।[১]

দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

"আমাদের সকলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ঘোষণা হল আমরা দেশে রাষ্টীয় পর্যায়ে ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হলে, ইসলামি হুকুমত বাস্তবায়িত হলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার কোন অবকাশ থাকবে না"।[১]

প্রভাব[সম্পাদনা]

শাহনাজ মুন্নী বলেন, সেদিন সন্ধ্যায় দেশের প্রায় সবকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইনে এবং পরদিন দৈনিক সংবাদপত্র সমূহ বেশিরভাগই তাদের শিরোনামে লিখেছেন ‘নারীসহ’ মামুনুল হক আটক৷ ‘অস্ত্রসহ আটক’ ‘মাদকসহ আটক’ এইধরনের শব্দ-বন্ধ’র পাশে ‘নারীসহ আটক’ শব্দবন্ধটি রেখে দেখুন৷ কি মনে হয়? নারীই এখানে প্রধান সমস্যা, নারীই স্বয়ং অপরাধ৷ মাদক আর অবৈধ অস্ত্রের মতো নারীও একটি বস্তু৷[৪]

[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশের কথিত ইসলামী বক্তাদের সংগঠন ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজিন বাংলাদেশে’র উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে তিনি ঢাকা কেরানীগঞ্জে বাবরি মসজিদ বাংলাদেশের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হেফাজতের আন্দোলনের নেতৃত্বের জন্য ১২ই মে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কারাগারে থাকাবস্থায় মামুনুল হক একটি বই রচনা করেন, যার নাম “কারাগার থেকে বলছি”, যা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ২দিন আগে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর হেফাজতের এক সভায় তাকে ঢাকা মহানগরীর সেμেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়।



গণকমিশনের অনুসন্ধানে জানা যায়, মামুনুল হক আলোচনায় আসেন মূলত হেফাজতে ইসলামকে কেন্দ্র করেই। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর তিনি গ্রেপ্তার হন। বেশ কয়েক মাস কারাভোগের পর বেরিয়ে এসে তিনি সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন মাহফিলে তার চাহিদা বেড়ে যায়। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে নবেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে তার মাঠ গরম করা কিছু বক্তৃতায় তিনি সরকারবিরোধী মৌলবাদী বলয়ে জনপ্রিয়তা পান। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মারা যাওয়ার আগে মামুনুল হক তৎকালীন আমির প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী বলয়ের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন ২০২০ সালের ১৫ নবেম্বর হেফাজতের নতুন কমিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিবের পদ পান। এছাড়া তাকে ঢাকা মহানগরীর কমিটির সেμেটারি করা হয়। নতুন কমিটিতে মামুনুল হক প্রভাব খাটিয়ে নিজের পদ ছাড়াও তার ঘনিষ্ঠ অনেককে জায়গা করে দেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। হেফাজত নেতা মামুনুল হক রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার একটি ভবনের মালিক। বিগত ১০ বছর ধরে পঁাচ ভাই মিলে সেখানে থাকছেন। এর আগে রাজধানীর আজিমপুরে পৈতৃক বাড়িতে থাকতেন। সেই বাড়িটি এখন বোনদের দখলে রয়েছে। মোহাম্মদপুরের বসিলায় মামুনুল হকের ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট আছে বলে জানা গেছে। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিয়ে নিজেকে আলোচনায় রাখতেন। ২০২১ সালে নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ছাড়া অন্য একজন নারীর সঙ্গে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়েন। পরবর্তীকালে দেখা যায় তিনি তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে এবং নিজের পরিচয় একজন প্রফেসর দিয়ে বুকিং করে ওই নারীর সঙ্গে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে এ নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন। ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের এ নেতা বন্ধুর স্ত্রী সহ বিলাসবহুল রিসোর্টে আটক হন। তাৎক্ষণিকভাবে তার সমর্থকেরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং সোনারগঁাও এ ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। দেশব্যাপী তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠে। জনকণ্ঠে প্রকাশিত মামুনুলনামা ও গণকমিশনের নিজস্ব অনুসন্ধানে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের দীর্ঘদিনের ওয়াজের নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধর্মের নামে চরম হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কথায় কথায় মনগড়া ফতোয়া প্রদান, মানুষ খুন, রক্তারক্তি,সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছিল তার মূল টার্গেট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালিত্বের বোধ, উদারনৈতিক সংস্কৃতিকে আμমণের লক্ষ্যবস্তু করেন প্রতিটি ওয়াজে। অন্যের অনুভূতি, অন্যের ধর্ম, দেশ ও জাতিকে ছোট করা তার নিত্যদিনের কাজ ছিল। মামুনুল হকের ওয়াজে শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী কিংবা সৌহাদর্য সম্প্রীতির কথা কখনই বলেননি। জঙ্গি-উগ্র মতবাদ তুলে ধরতেই বেশি আগ্রহী তিনি। ধর্মের ৮৩ অপব্যাখ্যা করে আইন হাতে তুলে নেওয়া এমনকি মানুষ খুন করতে অনুসারীদের সরাসরি উস্কানি দিয়ে মাঠ গরম করে রাখতেন সবসময়। যাকে তাকে ‘ইসলামের দুশমন’, ‘নাস্তিক’, ‘মুরতাদ’ ও ‘কাফের’ বলে তাদের হত্যায় প্ররোচনা দেন তিনি। এমন অসংখ্য ওয়াজের মধ্যে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ ঔধফরফ গবফরধ নামের ইউটিউবে প্রচারিত এক ওয়াজে তিনি বলেন, ‘কটূক্তি করে কোনো দুশমন কল্লা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে না।’ তার এ ঘোষণা এমন উত্তেজনা ছড়ায় যে, তরুণরা উন্মাদের মতো আচরণ করতে থাকে। শ্লোগানে শ্লোগানে কটূক্তিকারী খুঁজে বের করা ও নিজ হাতে শাস্তি প্রদানের যেন প্রতিজ্ঞা করে তারা। ওই বক্তব্যে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘অপারগ’ হয়ে কেউ খুন করে ফেললে সেটা দোষের হবে না। যাকে তাকে অপবাদ দিয়ে ‘জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে’ ফেলারও ঘোষণা দেন তিনি। মামুনুল হকের বক্তব্যে চরম সাম্প্রদায়িক উস্কানি লক্ষ্য করা যায়। ওয়াজে অপরের ধর্মকে ‘অন্তঃসারশূন্য’, ‘ভেলকিবাজির ভাওতাবাজির ধর্ম’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার খ্রীস্টান ভাওতাবাজির মিথ্যা ধর্ম ছেড়ে দিয়ে ইসলামের কালেমা পড়ে মুসলমান হচ্ছে।’ এমন মিথ্যা তথ্যে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অনুসারীরা। একইভাবে মামুনুল হক অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনুসারী ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করতেন। তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করাই তার নিত্য কাজ। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে জন্মলগ্ন থেকে নারী বিদ্বেষের অভিযোগ আছে। একই ইস্যুতে ওয়াজে চরম নোংরা ভাষায় নারীদের আμমণ করেন মামুনুল হক। সহশিক্ষার বিরোধিতা করতে গিয়ে ছাত্রীদের চরিত্র হনন করেন তিনি। মামুনুল হকের অসংখ্য ওয়াজের ভিডিও রয়েছে যেসব ভিডিও দেখা কিংবা শোনার অযোগ্য। এসব ওয়াজের ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালির নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী মামুনুল। ধর্ম ও সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দঁাড় করানোর অপচেষ্টা করেন তিনি। কথায় কথায় ইসলাম ধর্মই একমাত্র ধর্ম বলে অন্য ধর্মকে ছোট করে বক্তব্য রাখেন। যারা গান করেন, নাচেন কবিতা আবৃত্তি করেন তাদের ‘বাতিল’ বলে ফতোয়া দেন তিনি। মামুনুল বলেন, ‘বাতিলরা যদি একদিন গানের আয়োজন করে আপনারা ওয়াজ মাহফিল করবেন তিনটা।’ ওয়াজে পহেলা বৈশাখ উদযাপনেরও তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায় মামুনুলকে। বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবকে ‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে অশ্লীলতা বেহায়াপনা আমদানি’ বলে মন্তব্য করেন। একইভাবে সঙ্গীত, নৃত্যসহ সবধরনের শিল্পচর্চাকে ধর্মের বিরুদ্ধে দঁাড় করিয়ে দেন। ২০২০ সালের নবেম্বর মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেবার হুমকি দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলেন। তার ভাস্কর্যবিরোধী উস্কানিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। মামুনুলের হকের সহপাঠী রবরব প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী মাওলানা আব্দুল আজিজ গণকমিশনের প্রতিনিধি দলকে বলেন, ‘মামুনুল হকের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও কামুক স্পৃহা চরিতার্থ করার প্রচেষ্টা নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে মোহাম্মদপুর জামিয়া রহমানিয়া ৮৪মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালীন সময়ে এক শিশুর সাথে বলাৎকারের অভিযোগে তাকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে শিশু বলাৎকারের বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় উক্ত মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম (ভাইস প্রিন্সিপাল) মুফতি মনসুরুল হক মামুনুলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি শিক্ষকতার পেশায় মনোনিবেশ করেন কিন্তু তখনও তিনি নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। মামুনুল হক সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার জামিয়া নিজামিয়া বেতুয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় নূরুল আলম নামে এক শিশুকে সমকামিতায় বাধ্য করেন। শিশুটি অন্যান্যদেরকে বিষয়টি অবহিত করলে মাদ্রাসা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত মাদ্রাসার মুহতামীম (অধ্যক্ষ) মাওলানা মাহমুদুল আলমের স্বাক্ষরে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’ ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম-মহাসচিব, হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন সাবেক যুগ্ম- মহাসচিব এবং হেফাজতের ১৩ দফার লেখক মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী গণকমিশনের অনুসন্ধানী দলের প্রতিনিধিকে ২০২১ সালের ২৬ নবেম্বর একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করছে। ঝর্ণা ছাড়াও মামুনুল হকের আরও কয়েক স্ত্রীর সন্ধান আমাদের কাছে রয়েছে। তারমধ্যে তার বাবা শাইখুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হকের ছোট স্ত্রী অর্থাৎ তার সৎ মাকে জোরপূর্বক বিয়ে করে বর্তমানে লণ্ডনে রেখেছেন। এটা সামাজিক এবং ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জঘন্য ও ধিক্কারজনক।’ ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘হেফাজতে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। মোদির বিরোধিতায় প্রথমে ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভে সহিংসতা হয়, তার জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণঘাতী সংঘাত হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত, ওই হরতালকে ঘিরে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সারাদেশে। এরপর ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগঁা উপজেলার রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে ‘ঘেরাও’ করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মামুনুল এক নারীসহ আটক হয়েছেন। যদিও ওই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন মামুনুল হক। ওইদিন সন্ধ্যায় রিসোর্ট থেকে তাকে ছাড়িয়ে স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যান হেফাজত নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্ট, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এছাড়া তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। ওইদিন পুলিশের ওপর হামলা ও রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগে মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়। এছাড়া মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়। ৮৫ ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের প্রধান লক্ষ্য ছিল বর্তমান সরকার পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মামুনুলের। বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। বর্তমান সরকারের পতনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেছিলেন মামুনুল হক। এজন্য তিনি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তার মতে, অন্য নেতাদের দিয়ে এই বিপ্লব সম্ভব নয়, তাই তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। মামুনুল মনে করতেন, বর্তমান সরকারের পতন হলে, কাউকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে হেফাজতের সমর্থন লাগবে। আর এই সরকার পতনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিলের চেষ্টা নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানও বানচালের পরিকল্পনা করেছিলেন মামুনুল হক। হেফাজতের সদ্যবিলুপ্ত এই যুগ্ম- মহাসচিব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কথিত আন্দোলনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। ‘মামুনুল ভারতবিরোধী মতাদর্শীর লোকজন এবং সরকারবিরোধী দলের লোকজনকে একসঙ্গে করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল করার উদ্দেশ্যে ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনে মোদি জড়িত বলে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই ইস্যুতে সারা দেশে তিনি বিএনপি জামায়াতের সহযোগিতায় ‘বড় মুভমেন্ট’ করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্য দল ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে ধারণা ছিল তাদের। ওই সময় হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে মামুনুল হক নিজেকে ছাড়া কোনো কিছু হবে না বলে বিশ্বাস ছিল তার। এ কারণে কৌশলে তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে বিরোধিতা শুরু করেন। পরে মোদিবিরোধী শ্লোগান তোলেন।’১০ ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা ছিল। ২০০৫ সালে তিনি পাকিস্তানে যান। সেখান থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটান। এছাড়া সরকার উৎখাতে মামুনুল হক সব ধরনের পরিকল্পনাও করেন। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ডিএমপির তেজগঁাও বিভাগের উপ- কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন অর রশীদ রিমান্ডে থাকা মামুনুল হকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তানে ৪০ দিন অবস্থান করেন মামুনুল হক। সেখান থেকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। মামুনুল হক হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিলেন বলে ৮৬ানান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফয়দা নেয়ার পায়তারা করছিলেন মামুনুল।’

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইসলাম, সায়েদুল (১৮ এপ্রিল ২০২১)। "মামুনুল হক: হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার"বিবিসি বাংলা 
  2. শ্বেতপত্র: বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন। মহাখালী, ঢাকা-১২১২: মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। ফেব্রুয়ারি ২০২২। পৃষ্ঠা ৮২। 
  3. "কে এই বিতর্কিত মামুনুল"দৈনিক ভোরের কাগজ। ১৮ এপ্রিল ২০২১। 
  4. মুন্নী, শাহনাজ (৯ এপ্রিল ২০২১)। "মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় বিবাহ ও সামাজিক মনস্তত্ব"ডয়েচে ভেলে বাংলা 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]