নূর (ইসলাম)
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
সুন্নি ইসলাম ধারাবাহিকের একটি অংশ |
---|
নূর (আরবি: النور) ইসলামী প্রেক্ষাপটে এমন একটি শব্দ, যা "রাতের শীতল আলো" বা "তাপহীন আলো", অর্থাৎ চাঁদের আলোর প্রতি ইঙ্গিত করে। এই আলোকে "আল্লাহর পথনির্দেশনা" এবং "জ্ঞান" এর প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রহমতের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এর বিপরীতে নার শব্দটি দিনের সূর্যের "উষ্ণ আলো" অর্থাৎ আগুনের প্রতি ইঙ্গিত করে।[১] কুরআনে, আল্লাহকে 'আসমান ও জমিনের আলো (নূর)' বলা হয়েছে (আয়াতুন নুর)। অনেক প্রাচীন তাফসীরবিদরা এর ব্যাখ্যা করেছেন, এটিকে আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে, আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে পৃথিবীকে আলোকিত করার সাথে তুলনা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] নূর মুহাম্মদী (মুহাম্মদের সারসত্তা) ধারণাটিকে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেন সৈয়দ আব্দুল কাদির জিলানী। তিনি তার গ্রন্থ 'সিররুল আসরার' এ এই ধারণাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।[২] এই ধারণাটি পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যদের দ্বারা প্রচারিত হয়। সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানির একজন শিষ্য ছিলেন আন্দালুসীয় পণ্ডিত আবু বকর ইবনে আল-আরাবি, তিনি নূরের বোধগম্যতাটিকে সবচেয়ে গভীর থেকে সবচেয়ে সাধারণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে শ্রেণীবদ্ধ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শিয়া ইসলামের বিশ্বাস অনুযায়ী, নূর, যা একটি গভীর আধ্যাত্মিক বোধ, ইমামদের মাধ্যমে বংশ পরম্পরা হিসেবে অর্জিত হয় এবং তারা এই বোধকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কুরআনে
[সম্পাদনা]নূর শব্দটি হিব্রু শব্দ ‘ওহর’ থেকে উদ্ভূত। জেনেসিস বই অনুযায়ী, 'ওহর' হল প্রথম আলো, যা সৃষ্টির শুরুতেই তৈরি হয়।[৩] আরামাইক ভাষায় নূর শব্দটির অর্থ আগুন।[৪] আরামাইক ভাষায় এটি মোমবাতি জ্বালানোর সাথে সম্পর্কিত হয়ে আগুনের অর্থে রূপান্তরিত হয়, তবে আরবি ভাষায় নূর শব্দটি আলো অর্থে ব্যবহৃত হয়।[৫] কুরআনে নূর শব্দটি বা এর বিভিন্ন রূপ মোট ঊনপঞ্চাশবার উল্লেখিত হয়েছে। এটি আল্লাহ, মুহাম্মদ , কুরআন, কিতাব, তাওরাত, চাঁদ এবং বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আল-নূর প্রায়শই যুলুমাত (অন্ধকার)-এর বিপরীতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে অন্ধকার থেকে আলোয় এবং অজ্ঞতা থেকে ঈমানের পথে অগ্রসর হওয়ার কথা বলা হয়।[৬]নূর শব্দটি আটটি মৌলিক প্রাসঙ্গিক অর্থেও ব্যবহৃত হয়:[৭]
- ১. ইসলাম ধর্ম
- ২. বিশ্বাস
- ৩. তওরাত ও ইঞ্জিলে আল্লাহর বিধান ও নৈতিক আইন
- ৪. দিনের আলো
- ৫. পুনরুত্থানের দিনে আল্লাহ বিশ্বাসীদের যেই পথপ্রদর্শক আলো দান করবেন
- ৬. কুরআনের আদেশ ও নির্দেশনা
- ৭. ন্যায়বিচার
- ৮. চাঁদের আলো
কুরআনের ২৪ নম্বর সূরা, আয়াতুন নুর-এ আলোচ্য আয়াত (২৪:৩৫), যাকে 'আয়াত আন-নূর' বা 'আলোর আয়াত' বলা হয়, তাতে বলা হয়েছে: আল্লাহ আসমান ও যমীনের আলো, তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হল যেন একটি তাক- যার ভিতরে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি হচ্ছে কাঁচের ভিতরে, কাঁচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা প্রজ্জ্বলিত করা হয় বরকতময় যায়তুন গাছের তেল দ্বারা যা পূর্বদেশীয়ও নয়, আর পশ্চিমদেশীয়ও নয়। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও তার তেল যেন উজ্জ্বলের বেশ নিকটবর্তী, আলোর উপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন স্বীয় আলোর দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করেন, আল্লাহ সর্ববিষয়ে অধিক জ্ঞাত।[৮] নূরুন আলা নূর (আলোর ওপর আলো) এই বাক্যটি মুসলিমদের মধ্যে প্রায়ই ব্যবহৃত হয় আল্লাহর অসীম সৌন্দর্য, নির্দেশনা এবং আলোর বর্ণনা দিতে।[৬]
ধ্রুপদী ভাষ্য
[সম্পাদনা]আল-তাবারি (৮৩৯-৯২৩) তার জামি আল-বায়ানে বলেন যে সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল "আলো" এর পরিবর্তে "পথপ্রদর্শক" ব্যবহার করা, যেমন "আল্লাহই আকাশ ও পৃথিবীর পথপ্রদর্শক"। অন্যান্য ব্যাখ্যায় আল্লাহকে আলোর উৎস হিসাবে বোঝায়, যেমন "আল্লাহই আকাশ ও পৃথিবীকে আলোকিত করেন"।[৯] পারস্যের পণ্ডিত আল যামাখশারী (প্রায় ১০৭৪ –১১৪৪) বলেন যে "আল্লাহই আলো" এই বাক্যটি বলার মতো, যেমন বলা হয় "জায়েদ উদার ও পরোপকারী"। এর অর্থ এই নয় যে জায়েদ উদারতা ও পরোপকারের উৎস, বরং তার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল যামাখশারী আল্লাহ থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য, যেমন শক্তি বা জ্ঞান বা আলো, বিশ্বাস করেননি, যা আল্লাহর একত্ববাদের বিপরীত হবে।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ McAuliffe, Jane Dammen. 2003. Encyclopaedia of the Qurʾān 3. DC: Georgetown University. p. 45.
- ↑ Sayyid Abdul Qadir Gilani in Sirr ul Asrar, discourse 1
- ↑ Douglas-Klotz 2005, পৃ. 255।
- ↑ "Strong's Hebrew: 5135. נוּר (nur) -- a fire"। biblehub.com।
- ↑ Gzella, Holger (৩০ নভেম্বর ২০১৮)। Theological Dictionary of the Old Testament, Volume XVI। Wm. B. Eerdmans Publishing Company। আইএসবিএন 9781467451307।
- ↑ ক খ Fatani 2006, পৃ. 467।
- ↑ Fatani 2006, পৃ. 468।
- ↑ Irwin 2011, পৃ. 27-28।
- ↑ ক খ Sands 2006, পৃ. 110।