আগুন
আগুন দ্রুত প্রজ্জ্বলনশীল পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়াবিশেষ। এর মাধ্যমে উত্তাপ, আলোসহ বহুবিধ রাসায়নিক উৎপাদিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।[১] ধীরগতিতে অম্লজাত প্রক্রিয়ায় সংগঠিত মরিচা পড়া বা পরিপাকতন্ত্রের বিক্রিয়ায় সৃষ্ট আগুন এ সংজ্ঞায় ধর্তব্য নয়।
বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]
আগুন খুবই গরম প্রকৃতির। এটি কখনো স্পর্শ করা যায় না। এর সংস্পর্শে যা আসে তার সবই পুড়ে যায়। মানুষের চামড়া এর স্পর্শে ফোসকা পড়ে কিংবা পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়লে মুখমণ্ডল ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। নতুবা এর ধোঁয়ায় মুর্চ্ছা যাবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
প্রাত্যহিক জীবনে আগুন অত্যন্ত উপযোগী ও এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আগুন ব্যবহারে অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিতে হয়। ঠাণ্ডা কিংবা শীতকালে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ঘর গরম রাখা হয়, অন্ধকারে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। সর্বোপরি তাপ শক্তির সাহায্যে রান্নাকার্য পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের জীবনধারণ কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
সাবধানতার সাথে আগুন না জ্বালালে এটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব সৃষ্টি করে। একবার আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এটি ১৭,৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের সমান। বনাঞ্চলের পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে যদি তা নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়। প্রতিবছর ইউরোপের বনাঞ্চলের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায় অগ্নিজনিত কারণে। এ ধরনের ঘটনাগুলো মূলতঃ গ্রীষ্মকালেই সংঘটিত হয়ে থাকে। অগ্নিনির্বাপককর্মী বা প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী আকস্মিকভাবে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড বন্ধের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায় কিংবা আগুনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হয়।
আগুন জ্বালানোর জন্য তিনটি উপাদানের প্রয়োজন পড়ে - অক্সিজেন, জ্বালানী এবং তাপ। জ্বালানী হিসেবে কাঠ, কয়লা, তৈল এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ পরিবেশের সর্বত্র রয়েছে। একবার আগুন জ্বলতে শুরু করলে পরবর্তীতে এটি নিজেই তাপ উৎপাদনে সক্ষম। কখনো কখনো এটি নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বলতে শুরু করে।
আগুন নিয়ন্ত্রণ[সম্পাদনা]
আগুনকে তিনটি পৃথক উপায়ে নির্বাপণ করা সম্ভব। নিচের তিনটির যে-কোন একটি সহায়ক উপাদানকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে তা সম্ভবপর -
- যদি আগুনকে তার সাহায্যকারী জ্বালানী এবং অপরাপর জ্বালানীকে দূরে রাখা যায়, তাহলে আগুন জ্বলবে না। এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্টারভেশন।
- অক্সিজেন প্রত্যাহারের মাধ্যমে আগুন নিভানো সম্ভব যা শ্বাসরোধকারী আগুন বা স্মুদারিং নামে পরিচিত। আগুন খালি জায়গায় জ্বলতে পারে না অথবা এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বারা আবৃত থাকাবস্থায় জ্বলে না।
- তাপ শক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখার মাধ্যমে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবচেয়ে প্রধান ও সাধারণ উপায় হচ্ছে জল ব্যবহার করা যা আগুনকে বিস্তৃত ঘটাতে সাহায্য করে না।এই পদ্ধতিকে বলা হয় কুলিং।
কিন্তু ম্যাগণেসিয়ামজনিত শিখার সাহায্যে সৃষ্ট কিছু আগুনের সর্বাগ্রাসী বিচ্ছুরণকে আটকানো যায় না। এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য অগ্নিনিবারক সহায়ক যৌগকেও পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম।
উত্তাপ[সম্পাদনা]
আগুন আমাদেরকে তাপ দেয় কিংবা শক্তি স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় শরীরে তাপ যোগায়।
- অক্সিহাইড্রোজেন শিখা: ২০০০° সেলসিয়াস অথবা তদূর্ধ্ব (৩৬০০° ফারেনহাইট)[২]
- বুনসেন বার্নার বা স্টোভের শিখা: ১৩০০° সে. থেকে ১৬০০° সে.[৩]
- ব্লোটর্চ শিখা: ১৩০০° সে. (২৪০০° ফারেনহাইট)[৪]
- মোমের শিখা: ১০০০° সে. (১৮০০° ফারেনহাইট)
- জ্বলন্ত সিগারেট:
গ্যালারি[সম্পাদনা]
উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় অগ্নিদগ্ধ কুয়েতের তেলকূপ।
ল্যাপিনরান্টায় অগ্ন্যুৎসব, ফিনল্যান্ড
ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার পর নিউ অরলিন্সের স্থাপনায় আগুন
দিয়াশলাইয়ের জ্বলে উঠা
আগুন মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাম: পৃথিবীতে শিখা; ডান: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে শিখা (ক্ষীণ মাধ্যাকর্ষণ)
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "Glossary of Wildland Fire Terminology" (PDF)। National Wildfire Coordinating Group। নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৮।
- ↑ "Flame Temperature Measurement"।
- ↑ "Flame Temperatures"।
- ↑ "Pyropen Cordless Soldering Irons" (PDF)। ২১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১২।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে আগুন সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
![]() |
উইকিউক্তিতে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত উক্তি আছে: আগুন |
- How Fire Works at HowStuffWorks
- What exactly is fire? from The Straight Dope
- On Fire, an Adobe Flash-based science tutorial from the NOVA (TV series)
- Early human fire mastery revealed BBC article on archaeological discoveries
- Spiral flames in microgravity
- moebuildingcontrol.co.uk - UK Guidance on fire safety codes and fire engineering