বিষয়বস্তুতে চলুন

দিনাজপুর পৌরসভা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দিনাজপুর পৌরসভা
পৌরসভা
দিনাজপুর পৌরসভা
দিনাজপুর পৌরসভার সামনের চিত্র
দিনাজপুর পৌরসভার সামনের চিত্র
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর
জেলাদিনাজপুর
উপজেলাদিনাজপুর সদর
প্রতিষ্ঠাকাল১ এপ্রিল ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ
স্থানীয় সরকার।দিনাজপুর - ০৩
সরকার
 • মেয়র- (-)
আয়তন
 • মোট২৪.৫০ বর্গকিমি (৯.৪৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (পরিসংখ্যান অফিস [ডিসেম্বর/১৯])
 • মোট২,৭২,৪৬২
 • ক্রমপুরুষ: ১,৩৬,৭২০; নারী: ১,৩৫,৭৪২
 • জনঘনত্ব১১,০০০/বর্গকিমি (২৯,০০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৭৬% [শতকরা ছেয়াত্তর]
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫২০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

দিনাজপুর পৌরসভা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এটি ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা। পৌরসভার মোট আয়তন ২৪.৫০ বর্গ কিলোমিটার এবং এটি ১২টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।

পৌরসভা পরিচিতি

[সম্পাদনা]

নামকরণ:

স্থানীয়ভাবে প্রচলিত হিন্দুআনী কিংবদন্তীতে ও মুসলিম ঐতিহ্যে যথাক্রমে ‘দিনা’ নামে এক ব্রাক্ষন রাখাল কিংবা ‘দিনা’ নামে এক মুসলিম ফকিরের নামের ঘটনা থেকে এই স্থানের নাম দিনাজপুর হয়েছে বলে লোকেরা বিশ্বাস করে থাকে। কোম্পানি আমলেরই নথিপত্রে প্রথম দিনাজপুর নামটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। তবে ভৌগলিকভাবে দিনাজপুর মৌজাটি অতি প্রাচীন। (বলাবাহুল্য বুকানন কথিত‘দিনওয়াজ’ নামে অজ্ঞাত রাজার কোন সুত্রে দিনাজপুর নামকরণের ঐতিহাসিক সন্ধান পাওয়া যায় না।)

ইংরেজ অধিকার পূর্ব যুগে প্রায় সমগ্র উত্তরবঙ্গ এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল নবাব শাসিত ঘোড়াঘাট সরকার এবং সরকারের শাসনাধিকার ছিল ঘোড়াঘাট নগর। পলাশী যুদ্ধের ০৮ (আট) বছর পর ১৭৬৫ খ্রিঃ ইংরেজ সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্র এলাকা বিজিত হয়, ফলে নবাবী শাসনের অবসানের সঙ্গে পতন হয় সাবেক রাজধানী ঘোড়াঘাট নগরের। ঘোড়াঘাটের পতন হওয়ার ফলে বিজয়ী কোম্পানী সরকার কর্তৃক উত্তরবঙ্গ শাসনের জন্য যে বৃহৎ স্থায়ী জেলা গঠিত হয় তার শাসনাধিকারণ বা জেলা শহর স্থাপিত হয় দিনাজপুর নামক মৌজায়।

অবস্থান:

উত্তরে হিমালয়ের সানুদেশের সন্নিকটে এবং দক্ষিনের সমুদ্র সীমা থেকে অনেকটা দুরত্বে একটা ভৌগলিক ভারসাম্যময় ভুমির উপর বিদ্যমান মোটামুটি নৈসর্গিক বিপদ-আপদ মুক্ত শহরটির অবস্থান।

পৌরসভা গঠন:

১ এপ্রিল, ১৮৬৯ খ্রিঃ প্রায় ৪ (চার) বর্গমাইল এলাকা নিয়ে দিনাজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পদাধিকার বলে এর প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন তৎকালীন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ প্যাটারসন। তখন জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১০/১২ হাজার। ১৮৭২ খ্রিঃ প্রথম সরকারী ভাবে আদমশুমারীতে জনসংখ্যা ১৩,৭৮২ জন গননা কবা হয়। ১৮৯৮ খ্রিঃ সরকারী নিয়ন্ত্রন মুক্ত হয়ে পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। করদাতাদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজা গিরিজা নাথ রায় পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা স্কুলের একটি কক্ষে পৌরসভার দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ১৯০৩ খ্রিঃ বর্তমান পৌরভবনটি নির্মিত হয়। দৈর্ঘ্য প্রস্থ যথাক্রমে ৫র্০ ও ৪৫র্ আয়তাকার গথিক ডিজাইনে ০৬ কক্ষ বিশিষ্ট দক্ষিনমুখী কক্ষে উচু প্লিন্থথের উপর ভবনটি নির্মিত। বর্তমানে দিনাজপুর পৌরসভা ১২ (বার) টি ওয়ার্ড সমম্বয়ে একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা যার আয়তন ২৪.৫০ বর্গ কিলোমিটার, লোক সংখ্যা-১,৮৬,৭২৭ জন। প্রায় ০.৭৫ একর জমির উপর অতি পুরাতন তিনটি ভবনে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দিনাজপুর পৌjরসভায় শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক আছে। এখানে এটি বাস টার্মিনাল, একটি ট্রাক টার্মিনাল, একটি খেয়া ঘাট ও চারটি হাট বাজার রয়েছে।

ইহা ছাড়াও দিনাজপুর ইন্সটিটিউট, রায় সাহেবের বাড়ী,রাজবাড়ী, শুক সাগর, মাতা সাগর, জুলুম সাগর, গোর-এ শহীদ ময়দান, ষ্টেশন ক্লাব ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক নিদর্শন স্বরূপ স্থাপনা সমুহ পর্যটকদের আকর্ষন করে থাকে। উল্লেখ্য যে, অতি সম্প্রতি গোর-এ শহীদ ময়দানে নির্মিত কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান এশিয়া উপমহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবতা:

২০১৩ সালের জুলাই মাসে দিনাজপুরকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত জানায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সে বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে দিনাজপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর আগেই দিনাজপুর পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের একটি প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক আহমদ শামীম আল রাজী জানান, নতুন করে প্রস্তাবিত সীমানায় দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের সিকদারগঞ্জ হাট, উত্তরে সদর উপজেলার ১০ মাইল মোড়, পশ্চিমে পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চনঘাট এবং পূর্বে শশরা ইউনিয়নের কাওগাঁ মোড় পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই সীমানা নির্ধারণের সুপারিশ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুল মালেক ২০১৩ সালের ৩০ মে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। পরিকল্পনা ছিল, ৩০ জুনের মধ্যে প্রস্তাবিত সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড বিভাজন সম্পন্ন হবে, যেখানে বিদ্যমান ১২টি ওয়ার্ডের স্থানে কমপক্ষে ২১টি ওয়ার্ড গঠন করা হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৫০ বছরের পুরনো দিনাজপুর পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনের সব যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৬ হাজার মানুষ বসবাস করে এবং পৌরসভার বাৎসরিক আয় ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। এখানে ৩৫৮টি রাইস মিল রয়েছে এবং জনমতও উন্নীতকরণের পক্ষে ছিল।

তবে, সিটি কর্পোরেশন গঠনের জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, তার মধ্যে রয়েছে:

● প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ন্যূনতম ৩ হাজার জনসংখ্যা,

● বার্ষিক আয় ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা,

● অন্তত ২৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন,

● শিল্প ও বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন এলাকা,

● ভৌত অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা,

● জনমতের সমর্থন।

যদিও বেশিরভাগ শর্ত পূরণ হয়েছিল, তথাপি কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক শর্তে ঘাটতি রয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত থেমে যায়। ফলে দিনাজপুরবাসীর বহু প্রত্যাশিত সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন আর হয়নি।

সমাপ্তি:

বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার মত দিনাজপুরও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা, কিন্ত ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত হিন্দুরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশ বিভাগের পর থেকে দিনাজপুর শহর মুসলিম অধ্যুষিত হতে থাকে। বিংশ শতাব্দির প্রথম দিক থেকে ক্রমবর্ধমান গতিতে শহরের আয়তন সহ ব্যবসা বানিজ্য, দোকান পাট, শিক্ষা সংস্কৃতি প্রভৃতির কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বর্তমান অবস্থায় এসে পৌছায়। বর্তমানে প্রকৌশল, প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পরিচ্ছন্ন বিভাগ এর আওতায় ১২টি শাখার সমন্বয়ে জনসাধারণকে পৌরসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ভৌগোলিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

দিনাজপুর পৌরসভা দিনাজপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। এর সীমানা:

জনসংখ্যা (২০১৯)

[সম্পাদনা]
  • মোট জনসংখ্যা: ২,৭২,৪৬২
  • পুরুষ: ১,৩৬,৭২০
  • মহিলা: ১,৩৫,৭৪২
  • ভোটার সংখ্যা: ১,৫১,৮৬৬ (পুরুষ: ৭৭,৯৯৫ জন; মহিলা: ৭৩,৮৭১ জন)

প্রশাসনিক তথ্য

[সম্পাদনা]
  • ওয়ার্ড সংখ্যা: ১২
  • হাট-বাজার: ৪ টি
  • পৌর কবরস্থান: ৮টি
  • শ্মশান: ২টি

অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

- পর্যাপ্ত তথ্য নেই

শিক্ষা

[সম্পাদনা]
  • প্রাথমিক বিদ্যালয়: ২৯টি
  • কলেজ: ১৬টি
  • মাদ্রাসা: ২৯টি
  • কিন্ডারগার্টেন: ২৮টি
  • কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ১টি
  • পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: ১টি
  • মেডিক্যাল কলেজ: ১টি
  • বিশ্ববিদ্যালয়: ১টি
  • পিটিআই: ১টি
  • এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়: ১টি

স্বাস্থ্য

[সম্পাদনা]
  • হাসপাতাল: ২৬টি
  • ক্লিনিক: ৪০টি
  • ডায়াগনস্টিক সেন্টার: ৬০টি

অন্যান্য সেবা

[সম্পাদনা]
  • অটোরিকশার সংখ্যা: প্রায় ২২,০০০
  • পৌর ভবন: ১টি

যোগাযোগ

[সম্পাদনা]
  • ওয়েবসাইট: dinajpurmunicipality.org
  • ফোন: ০১৭১৬-৮৮৩১৭৪, ০১৭৩৩-৩৬৭৭৩৩, ০১৭৩৩-৩৬৭০৩৯
  • ল্যান্ডলাইন: ০৫৩১-৬৩১০৯, ০৫৩১-৬৪৩৩৯
  • ফ্যাক্স: ০৫৩১-৬৪৩৯১

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]