গাজীউল হক
গাজীউল হক | |
---|---|
জন্ম | ১৩ ফেব্রুয়ারি , ১৯২৯ নিচিন্তা গ্রাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী |
মৃত্যু | ১৭ জুন , ২০০৯ স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | কবি, লেখক, গীতিকার,আইনজীবী |
পরিচিতির কারণ | ভাষাসৈনিক |
পুরস্কার | একুশে পদক |
আবু নছর মোহাম্মদ গাজীউল হক (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ - ১৭ জুন ২০০৯) হলেন একজন বাংলাদেশী সাহিত্যিক, গীতিকার এবং ভাষাসৈনিক যিনি ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি গাজীউল হক নামেই সমধিক পরিচিত। ভাষা আন্দোলনসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেনসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসে গাজীউল হক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গকারীদের অন্যতম ছিলেন গাজীউল হক। গাজীউল হকের 'ভুলব না ভুলব না ভুলব না এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না' গানটি গেয়ে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত প্রভাতফেরি করা হতো। তিনি রাষ্ট্রভাষা পদক ও সম্মাননা স্মারক, শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।[১] আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। এছাড়া গাজীউল হক প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রাথমিক ও ছাত্র জীবন
[সম্পাদনা]গাজীউল হক ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নিচিন্তা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ গাজীউল হকের বাবা মওলানা সিরাজুল হক ছিলেন কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী এবং মা নূরজাহান বেগম । একটি মক্তবে তিনি প্রথমে পড়াশুনা শুরু করেন এবং পরে তিনি কাশিপুর স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে তিনি উচ্চ প্রাইমারি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি বগুড়া জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি শিক্ষক সুরেন বাবুর সান্নিধ্যে এসে দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠেন। ১৯৪৬ সালে এই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে গাজীউল হক বগুড়া কলেজ থেকে আইএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে অর্নাস ভর্তি হন। এরপর ১৯৫১ সালে বিএ অর্নাস পাশ করে আজিজুল হক কলেজে এমএ ভর্তি হন। এসময় তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, বির্তক প্রভৃতি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি এমএ পাশ করেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তার এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। পরবতীতে ছাত্রনেতা ইশতিয়াক, মোহাম্মদ সুলতান, জিল্লুর রহমান প্রমুখের প্রচণ্ড আন্দোলনের চাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার এমএ ডিগ্রি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি একসঙ্গে ১১ পেপার আইন পরীক্ষা দেন। [২]
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হয়েই তিনি অধ্যক্ষ ভাষা বিজ্ঞানী মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্রলীগ বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন।[২] ১৯৪৬ সালে তিনি ধুবড়িতে অনুষ্ঠিত আসাম মুসলিম লীগ কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়ে মাওলানা ভাসানীর ব্যক্তিত্ব, বাগ্মীতা এবং নেতৃত্বে আকৃষ্ট হন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুব লীগের ঈশ্বরদী কনফারেন্সে উত্তরবঙ্গ শাখার যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই বছর ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুবলীগের দুদিনব্যাপী কর্মী সম্মেলনের গাজীউল হক বগুড়ার পাঠচক্র ‘শিল্পায়নে’র সদস্যদের সঙ্গে অংশ নেন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বগুড়া শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এ সময় থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির সংগ্রাম শুরু হয়। ১১ মার্চ গাজীউল হক বগুড়া কলেজ থেকে ছাত্রদের মিছিল নিয়ে বগুড়া শহর প্রদক্ষিণ করেন। বগুড়া জিলা স্কুল ময়দানে সেদিনের সভার সভাপতি ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সভাপতি হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্র্রভাষা করার দাবির স্বপক্ষে দীর্ঘ সময়ব্যাপী যুক্তি ও তথ্য নির্ভর ভাষণ দেন।[২] এসময় তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন-বেতন কর্মচারীগণ ধর্মঘট আহবান করলে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তিনিও এর সমর্থন করেন। ১৯৪৯ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় তিনি কাজ করেন। এ সময় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি ভুখা মিছিল বের হয়। এই মিছিলে গাজীউল হকও শরিক হন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫৭ সালে আইনজ্ঞ সৈয়দ নওয়াব আলীর অধীনে বগুড়া বারে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে পূব-পাকিস্তান ঢাকা হাই কোর্টে আইন ব্যবসায়ের সনদ লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে যোগদান দেন। সর্বোচ্চ আদালতে একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।[২]
ভাষা আন্দোলন
[সম্পাদনা]১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম গঠিত হলে আব্দুল মতিন এই কমিটির আহ্বায়ক হন। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে পল্টনের জনসভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র হলে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। ঘোষণানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় এক ছাত্রসভা অনুষ্ঠানে গাজীউল হকও অংশ নেন এবং সভা শেষে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য মন্ত্রী নূরুল আমীনের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা ছিল উত্তাল। এ আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিস আদালতে রাজপথে সবখানে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিমনেসিয়াম মাঠের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত) গেটের পাশে ছাত্র-ছাত্রীদের জমায়েত শুরু হতে থাকে। সকাল ১১ টায় কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক প্রমুখের উপস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ শুরু হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতিকে তছনছ করে দেয়ার জন্য ঢাকাতে সমাবেশ, মিছিল-মিটিংযের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় ধরে উপস্থিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন এবং গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভংগের পক্ষে মত দিলেও সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় বাংলার দামাল ছেলেরা দমনমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। উপস্থিত সাধারণ ছাত্ররা স্বত:স্ফূর্তভাবে ১৪৪ ধারা ভংগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং মিছিল নিয়ে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের অন্তর্গত) দিকে যাবার উদ্যোগ নেয়। অধিকার আদায়ের দাবিতে শত শত বিদ্রোহী কন্ঠে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই দাবীতে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ হয়। শ্লোগানে শ্লোগানে কেঁপে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বুলেট আর লড়াই শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং গুলি বর্ষণ শুরু করে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই আবুল বরকত (ঢাবি এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর মাষ্টার্সের ছাত্র), রফিকউদ্দিন আহমদ, এবং আব্দুল জব্বার নামের তিন তরুণ মারা যায়। রফিক, জাব্বার, বরকত, শফিক সহ নাম না জানা আরও অনেকের সাথে সালামও সেদিন গুলিবিদ্ধ হন।[৩] ২৩ ফেব্রুয়ারি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে গাজীউল হক পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। বগুড়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানকার আলতাফুন্নেছা মাঠে তার গায়েবানা জানাজাও পড়ানো হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটনার আগেই এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হয়ে উঠেছিলেন তিনি।[৪]
অন্যান্য আন্দোলনে
[সম্পাদনা]গাজীউল হকের সাহসিকতার পরিচয় কেবল ভাষা আন্দোলনের সময়ই দেখা যায় নি, পরবর্তী সকল অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় সংগ্রামে গাজীউল হক অংশ নিয়েছেন। ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৪-র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রথমে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠক হিসাবে ও পরে জাতীয় পর্যায়ের লেখক এবং সংগঠকের ভূমিকায় তাকে পাওয়া গেছে। তাকে পাওয়া গেছে ১৯৮০-র দশক জুড়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে।[৪] ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অংশ নিয়ে বগুড়ার মুসলিম লীগকে শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত করেন এবং কাগমারী সম্মেলনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনে আওয়ামী লীগের সর্বাঙ্গীণ প্রতিকূলতা প্রতিরোধে মাওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহকমী হিসেবে কাজ করেন। ঐ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি পালন বন্ধের জন্য সরকার ধরপাকড় শুরু করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি গাজীউল হকসহ কয়েকজন নেতাকমীকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। এবার প্রায় ২৯মাস কারাগারে তাকে থাকতে হয়। বগুড়ায় ১৯৬৯ সালের ১১ দফা আন্দোলনের মূল চাবিকাঠি ছিল বিড়ি শ্রমিক ও মজদুরগণ। গাজীউল হকও ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই গাজীউল হক মাত্র ২৭জন যুবকসহ পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গাজীউল হক, ডা. জাহিদুর রহমান অন্যান্য যুবকদের নিয়ে বগুড়া থানার আঙ্গিনায় জড়ো হন৷ থানার পুলিশ এবং ৩৯জন ইপিআর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন৷ এসময় আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ভাসানী ও কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দদের নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি হাই কমান্ড গঠন করা হয়। এই হাই কমান্ডের সদস্য ছিলেন গাজীউল হক। ২৭ মার্চ থেকে ১এপ্রিল ৬০ জন পুলিশের একটি দল পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। ১ এপ্রিল গাজীউল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আড়িয়া ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালিয়ে ৬৯ জন পাক সেনাকে বন্দি করেন। মুক্তিযোদ্ধারা এই ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৫৮ ট্রাক গোলাবারুদ উদ্ধার করেন। ১৬ এপ্রিল গাজীউল হক অস্ত্র সংগ্রহ এবং অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে উত্তরাঞ্চল যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে ভারত যান। হিলিতে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে একটি খণ্ড যুদ্ধে অংশগ্রহণের পর কলকাতায় ফিরে গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মুখপাত্র ‘জয়বাংলা’ পত্রিকার বিক্রয় বিভাগের দায়িত্বসহ আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রণাঙ্গনের সংবাদ প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন। [২]
রচনা
[সম্পাদনা]- জেলের কবিতা (১৯৫৯)
- এখানে ও সেখানে
- একটি কাহিনী
- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম (১৯৭১)
- এগিয়ে চলো (১৯৭১)
- Bangladesh Unchained (১৯৭১)
- Media Laws & Regulation in Bangladesh (১৯৯২)
- মোহাম্মদ সুলতান (১৯৯৪)
- বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন (১৯৯৬)
সম্মাননা
[সম্পাদনা]ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম সমাবর্তনে গাজীউল হক-সহ আরেক ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে পান পাবনা থিয়েটার পুরস্কার। ১৯৭৯ সালে বগুড়া জিলা স্কুলের ১৫০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'বন্ধন'-এর পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক গাজীউল হককে ক্রেষ্ট উপহার দেওয়া হয়৷ ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি 'সড়ক'-এর পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়৷ ১৯৮৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি 'কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ- নিউইর্য়ক' তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়৷ ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনে অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য 'বাংলাদেশ জাতীয় ব্যক্তিত্ব গবেষণা কেন্দ্র' তাকে রাষ্ট্রভাষা পুরস্কার পদক ও সম্মান স্মারক প্রদান করে৷ ১৯৯৭ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় কলকাতার পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন৷ ১৯৯৭ সালে বছর 'বগুড়া প্রেস ক্লাব' তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে৷ ১৯৯৭ সালে 'চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়ার' (বইমেলা) থেকে ৭ মার্চ তিনি ভাষাসৈনিক পদক পান৷ ১৯৯৭ সালে বগুড়ার ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু পরিষদ সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাকে অর্পণ নামে একটি ক্রেষ্ট উপহার দেয়৷ ১৯৯৯ সালের ২৬ নভেম্বর বাংলা একাডেমী থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ অর্জন করেন৷ তিনি সিপাপ জাতীয় স্বর্ণপদক পান৷ ১৯৯৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি 'আমরা সূর্যমুখী'র পক্ষ থেকে তার ৭১তম জন্মদিনে নাগরিক সম্মাননা দেওয়া হয়৷ 'কারক নাট্য সম্প্রদায়'-এর ১২ বছর পূর্তিতেও তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ ২০০০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকার জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তাকে সকৃতজ্ঞ অভিনন্দন জানায়৷ এছাড়া, ২০০০ সালে ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে সিলেট ভাষাসৈনিক সংবর্ধনা পরিষদ তাকে ভাষাসৈনিক সংবর্ধনা দেয়৷ এবছরই তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা হিসেবে বিশেষ সম্মাননা স্মারক পান৷ ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদও তাকে সম্মাননা প্রদান করে৷ ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিস-এর পক্ষ থেকে মাতৃভাষা পদক পান৷ 'দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ' তাকে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ ক্রেষ্ট উপহার দেয়৷ ২০০০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ অবদানের জন্য 'আমরা সূর্যমুখী'র পক্ষ থেকে তাকে ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে নাগরিক সম্মাননা দেয়৷ 'মাতৃভাষা সৈনিক পরিষদ' এর পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়৷ ২০০০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার' তাকে 'একুশে পদক' পুরস্কারে ভূষিত করেন৷ ২০০০ সালের ১০ জুলাই পান 'বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন' পুরস্কার ৷ ২০০১ সালে ফেনী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে 'ফেনীর কৃতি সন্তান' হিসেবে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ ২০০১ সালেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে 'জাহানারা ইমাম পদক' পান৷ ২০০২ সালে 'সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট' 'ভাষা আন্দোলনের-সুবর্ণ জয়ন্তী' উপলক্ষে তাকে একটি ক্রেষ্ট উপহার দেয়৷ ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে৷ ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে 'বঙ্গবন্ধু পদক' পান৷ ২০০৪ সালে 'বাংলাদেশ জাতীয় ব্যক্তিত্ব গবেষণা কেন্দ্র'-এর ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে 'বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন-২০০৪'। ২০০৪ সালে পান 'শের-ই-বাংলা জাতীয় পুরস্কার'৷ ২০০৫ সালে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য 'মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার' পান৷ ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন-এর ৭ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তাকে ক্রেষ্ট উপহার দেয়৷ তার ভাগ্নে কাইউম পারভেজ গাজীউল হক সম্পর্কে বলেন: “মক্কেলের কাছে অ্যাডভোকেট সাহেব। মক্কেল পয়সা দিতে পারুক না পারুক ভ্রূক্ষেপ নেই। লড়তেই হবে। জিততেই হবে। কোর্ট হোক বায়ান্ন, হোক ঊনসত্তর, হোক একাত্তর। জিততে তাঁকে হবেই। জিতেছেনও। চাওয়া পাওয়ার হিসাব ছাড়াই জিতেছেন। জিতেছেন বাঙালির মন। যত দিন বাঙালির মুখে বাংলা ভাষা থাকবে গাজীউল হক তত দিন থাকবেন।”[৫]
মৃত্যুবরণ
[সম্পাদনা]২০০৯ সালের ১৭ জুন বিকালে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ঐদিন সকালে ঘুমের মধ্যে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। গুরুতর অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে লাইফ সমর্থনের মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরলোকগত হন তিনি।[৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ http://biplobiderkotha.com/index.php?option=com_content&view=article&id=81:2010-02-06-07-33-11&catid=41:lorai&Itemid=2[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১০।
- ↑ http://dailykalerkantho.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=17-06-2010&type=gold&data=Natok&pub_no=197&cat_id=2&menu_id=23&news_type_id=1&index=3[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৯ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১০।