রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা | |
---|---|
জন্ম | রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৭ রংপুর, বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ছায়ানট বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | শিক্ষক, সংগীতশিল্পী |
পরিচিতির কারণ | রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী |
দাম্পত্য সঙ্গী | জি এইচ চৌধুরী |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬) বঙ্গভূষণ (২০১৭) পদ্মশ্রী (২০২৪) |
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা (জন্ম: ১৩ই জানুয়ারী ১৯৫৭)[১][২] একজন বাংলাদেশী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬) এবং ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী (২০২৪) সহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন । তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে কর্মরত। তিনি ‘সুরের ধারা’ নামের একটি সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন।[১]
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]রেজওয়ানা চৌধুরী ১৯৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা মাজহার উদ্দিন খান এবং মাতা ইসমাত আরা খান।[৩] বন্যা দুসন্তানের জননী। তার স্বামী জি এইচ চৌধুরী। বন্যার মেয়ে প্রিয়দর্শিনী, ছেলে অর্ক দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি করছেন। বর্তমানে বন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।[৪]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের ছায়ানট ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, এবং অশেষ চন্দ্র বন্দ্যোপাধায়ের মতো শিক্ষকদের। তিনি বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি তার অধ্যয়ন সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তিনি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেছেন। তার গানের অ্যালবাম পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সুরের ধারা নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ সংগীত পুরস্কার লাভ করেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা হারমোনিয়াম ও এস্রাজ বাজাতে পারেন। সম্প্রতি ২০২১ সালে তিনি সংগীত-এর উপর তার পিএইচডি গবেষণা সফলতার সহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কর্মজীবনে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[৫] তারই সাথে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেষন কলা অনুষদের সম্মানিক ডিন এবং সংগীত বিভাগের প্রধান।[৬] ১৯৯২ সালে সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “সুরের ধারা” চালু করেন তিনি।[৫]
লেখালেখির সাথেও বন্যার যোগসূত্র আছে। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তার কয়েকটি বই আছে। যেমন:
- রবীন্দ্রনাথ: গানের নানা দিক (প্রকাশক: মূর্ধন্য; প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০১১)
- গানের ভেলায় বেলা অবেলায় : নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত স্বরলিপি (সম্পাদিত সংকলন; প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা)
- ছোটদের নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি (সম্পাদিত সংকলন; প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা)
সংগীতজীবন
[সম্পাদনা]শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হবার পর থেকেই তিনি তার সংগীতের প্রদর্শন, নির্ভুল উচ্চারণ এবং সবচেয়ে কঠিন ও অপ্রচলিত গানগুলোও গাইবার আগ্রহের কারণে বিশ্বভারতী ধারার একজন গুরু হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছেন । তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে, তার বহুসংখ্যক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত অ্যালবাম
[সম্পাদনা]- স্বপ্নের আবেশে (২০১৪)
- সকাল সাঝে
- ভোরের আকাশে (২০১২)
- লাগুক হাওয়া (২০১২)
- আপন পানে চাহি
- প্রাণ খোলা গান (২০১১)
- এলাম নতুন দেশে
- সুদূরের মিতা
- মাটির ডাক
- কালের সাথী
- গেঁথেছিনু অঞ্জলি
- মনের মাঝে যে গান বাজে
- মোর দরদিয়া
- সুরের আসনখানি
- সুরের খেয়া
- পাতার ভলা ভাষাই
- শ্রাবণ তুমি
- ছিন্নপত্র (২০০৪)
- কবি প্রণাম (২০০৪)
- বাজে রম্যবীণা
স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। কুড়িয়ে যাচ্ছেন শ্রোতা-দর্শকের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। দেশে-বিদেশে অসংখ্য খ্যাত বিদগ্ধজনের প্রশংসা পেয়েছে তার সংগীত পরিবেশনা। বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।[৭]
স্বাধীনতা পুরস্কার:
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে প্রদত্ত বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার "স্বাধীনতা পুরস্কার" অর্জন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালের “স্বাধীনতা পুরস্কার” সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।[৮]
‘বঙ্গভূষণ’ পদক:
[সম্পাদনা]ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্গভূষণ’ পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে। ২০ মে ২০১৭ সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে এই রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পীর হাতে ২০১৭ সালের ‘বঙ্গভূষণ’ পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।[৯]
‘পদ্মশ্রী’ পদক:
[সম্পাদনা]পদ্মশ্রী ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা। শিল্পকলা, শিক্ষা, বাণিজ্য, সাহিত্য, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, সমাজসেবা ও সরকারি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকার এই সম্মান প্রদান করেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।[১০]
ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক:
[সম্পাদনা]বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ট্রাস্ট ফান্ড’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার ২০১৭’ পেয়েছেন এই প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বরেণ্য শিল্পী।[১১][১২]
অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননা:
[সম্পাদনা]- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রক প্রদত্ত ‘সংগীত সম্মান পুরস্কার’ পেয়েছেন বন্যা ২০১৩ সালে।[১৩]
- ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসাবে আনন্দ সংগীত পুরস্কারে ভূষিত হন, যা পরের বছরও লাভ করেন।
- ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে সিটি ব্যাংক এনএ প্রদত্ত গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা।[১৪]
- সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "শুভ জন্মদিন কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা"। যুগান্তর। ১৩ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ ক খ "আজ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার জন্মদিন"। dbcnews.tv (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৩।
- ↑ "সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মায়ের মৃত্যু"। ৩১ মার্চ ২০১৬। ৩০ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "Banya Famaly Info"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ "ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক পাচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা"। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ https://www.tuca.edu.bd/
- ↑ ফরিদুর রেজা সাগর (১৭ জুন ২০১৭)। "বন্যার জন্য অপেক্ষা"। দৈনিক কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন ১৫ ব্যক্তি ও নৌ-বাহিনী"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৪ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "'বঙ্গভূষণ' পুরস্কারে ভূষিত রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা"। দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। ২১ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ কাদের, মনজুর (২০২৪-০৪-২৩)। "পদ্মশ্রী গ্রহণ করলেন বন্যা"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৩।
- ↑ "রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পেলেন ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক"। দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। ২৮ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ হাবিবা নাজনীন মিথিলা (২৭ জুলাই ২০১৭)। "'ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৭' পেলেন বন্যা"। চ্যানেলআই অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "বন্যাকে 'সংগীত সম্মান পুরস্কার'"। প্রথম আলো অনলাইন। ২ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Rezwana Choudhury Bannya awarded" (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা নিউজ। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ১৯৫৭-এ জন্ম
- জীবিত ব্যক্তি
- রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী
- বাংলাদেশী গায়িকা
- রংপুর জেলার ব্যক্তি
- বাংলা ভাষার সঙ্গীতশিল্পী
- বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী
- শান্তিনিকেতনের সাথে যুক্ত ব্যক্তি
- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
- ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী
- ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী
- স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী
- শিল্পকলায় পদ্মশ্রী প্রাপক