বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

স্থানাঙ্ক: ২৪°১০′১৮″ উত্তর ৯০°২৩′৩৪″ পূর্ব / ২৪.১৭১৬৬৬৩° উত্তর ৯০.৩৯২৬৬১১° পূর্ব / 24.1716663; 90.3926611
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মূল প্রবেশপথ
মানচিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশে অবস্থান
অবস্থানগাজীপুর জেলা, ঢাকা বিভাগ, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৪°১০′১৮″ উত্তর ৯০°২৩′৩৪″ পূর্ব / ২৪.১৭১৬৬৬৩° উত্তর ৯০.৩৯২৬৬১১° পূর্ব / 24.1716663; 90.3926611
আয়তন১৪৯৩.৯৩ হেক্টর
স্থাপিত২০১৩
কর্তৃপক্ষবাংলাদেশ বন বিভাগ
www.safariparkgazipur.info.bd
মানচিত্র

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন মাওনা ইউনিয়নের বড় রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পীরুজালী ইউনিয়নের পীরুজালী মৌজার খন্ড খন্ড শাল বনের ৪৯০৯.০ একর বন ভূমি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত। এর মধ্যে ৩৮১০.০ একর এলাকাকে সাফারী পার্কের মাস্টার প্ল্যানের আওতাভূক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং পার্ক প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর এর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের শুরুতে কোন মাষ্টার প্লান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের সাফারী পার্কে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি মাষ্টার প্লান তৈরী করা হয়। মাষ্টার প্লানে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে ’’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি একনেক কর্তৃক বর্ধিত আকারে ২১৯.৮৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে অনুমোদিত হয়। সাফারী পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারী পার্কের কতিপয় ধারণা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। সাফারী পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী ঘেরাা এবং উহার মধ্যে দেশী/বিদেশী বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ লাভ করবেন। সাফারী পার্কের ধারণা চিড়িয়াখানা হতে ভিন্নতর। চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুসমূহ আবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং দর্শনার্থীগণ মুক্ত অবস্থায় থেকে জীবজন্তু পরিদর্শন করেন। কিন্তু সাফারী পার্কে বন্যপ্রাণীসমূহ উন্মুক্ত অবস্থায় বনজঙ্গলে বিচরণ করবে এবং মানুষ সতর্কতার সহিত চলমান যানবাহনে করে ভ্রমণ করতে পারবে।

অবস্থান[সম্পাদনা]

ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা - ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটির অবস্থান। এর আয়তন ৩৬৯০ একর।[১]

ঐতিহাসিক পটভূমি[সম্পাদনা]

গাজীপুরের শাল বন ঐতিহাসিকভাবে ভাওয়াল রাজার জমিদারী অংশ হিসেবে খ্যাত ছিল। ১৯৫০ সলের জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজসত্ব আইন জারীর পর শালবনের ব্যবস্থাপনা বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে অধিকাংশ চালা জমির শালবন সমৃদ্ধ বনভূমি বিধায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাইদ জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। শালবন ঢাকার অতি নিকটে হওয়ায় দ্রুত শিল্পায়ন, জবর দখল, গো-চারণ ও ভূমিদস্যুতার কারণে শালবনের জীববৈচিত্র্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। শিল্পকারখানা হতে নিঃসরিত বর্জের কারণে জীববৈচিত্র্য মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।[২]

সাফারী পার্কের মূল উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

(১) শাল বনের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ।

(২) বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণীকে নিজ আবাসস্থলে (রহ-ংরঃঁ) এবং আবাসস্থলে বাহিরে (বী-ংরঃঁ) অবস্থায় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন ।

(৩) ঢাকা মহানগরীর অতি নিকটে ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ।

(৪) চিত্তবিনোদন, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা ।

(৫) বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী ফলজ, ফডার, ও মিশ্র প্রজাতির বাগান সৃজন ।

(৬) শালবনের বন্যপ্রাণী যেমন বানর, মায়া হরিণ, বেজি, বনরুই, ছোট খাটাশ, বন বিড়াল, খরগোশ, শিয়াল, খেঁকশিয়ালঅজগরসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করা ।

(৭) বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন বাঘ, চিতাবাঘ, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ এবং অন্যান্য তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা ।

(৮) গণ্ডার, এশীয় হাতি, পাখি পরিযান, জলচর পাখি, বনছাগল, সিংহ, শ্লথ ভালুক, এশীয় কালো ভাল্লুক, স্বাদুপানির কুমির, লোনা পানির কুমির, নীলগাই, জলহস্তী ইত্যাদি বিপন্ন ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণকরন ।

(৯) আহত ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার নিমিত্তে বন্যপ্রাণীর সেবাশ্রম ও হাসপাতাল স্থাপন ।

(১০) সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি

প্রাণ বৈচিত্র্য[সম্পাদনা]

সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, ক্যাংগারু, জেব্রা, বানর, হনুমান, ভাল্লুক, গয়াল, কুমির ও বিচিত্র পাখি

২০২১ এর সেপ্টেম্বরে নীল গাইয়ের দুইটি শাবক জন্মায়।[৩] নীল গাইটিকে এর আগে জবাইয়ের হাত থেকে বিজিবি উদ্ধার করে এই পার্কে দেয়।

কোর সাফারী পার্ক[সম্পাদনা]

কোর সাফারী পার্ক কোর সাফারী পার্কে সাফারী গাড়ী ব্যতীত কোন পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না তবে তিনি বন্যপ্রাণী বেষ্টনীতে মুক্ত অবস্থায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত বন্যপ্রাণী সমূহ গাড়ীতে চড়ে অবলোকন করতে পারবেন। কোর সাফারী পার্ক ১৩৩৫ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে-যার মধ্যে ২০.০ একরে বাঘ, ২১.০ একরে সিংহ, ৮.৫০ একরে কালো ভালুক, ৮.০ একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১.৫০ একর চিত্রা হরিণ, ৮০.০ একরে সাম্বাব ও গয়াল, ১০৫.০ একরে হাতী, ৩৫.০ একরে জলহস্তী, ২২.০ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ, ২৫.০ একরে নীলগাই এবং বারো সিংগা, ১১৪.০ একরে ঙৎুী এধুবষষব, ঝধনষব এবং ইষধপশ ইঁপশ সহ পাখীদ্বীপ, ৪০৭.০ একরে বন্য মহিষ, ডধঃবৎ ইঁভভধষড়, ডধঃবৎ ইঁপশ এবং ওহফরধহ ইরংড়হ থাকবে এবং আফ্রিকান সাফারী পার্কের জন্য বরাদ্দ ২৯০.০ একর এলাকাকে সুবিন্যাস্থ করা হবে।

সাফারী কিংডম[সম্পাদনা]

সাফারী কিংডমে পর্যটকগণ পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারবে এবং প্রাণিকূলকে ছোট-খাট বেস্টনীর মধ্যে আবদ্ধ রাখা হবে। সাফারী কিংডমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে: বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর নৈপূণ্য ও খেলাধুলা প্রদশর্ণের মাধ্যমে পর্যটকদের চিত্তবিনোদন, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা। সাফারী কিংডম ৫৭৫.০ একর এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট, পেলিকেন আয়ল্যান্ড, বোটিং ও লেকজোন; বৃহৎ আকারের গাছপালা ঘেরা ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারী, ধনেশ এভিয়ারী, প্যারট এভিয়ারীসহ দেশি-বিদেশী পাখির পাখীশালা (আরধৎু), কুমির পার্ক, অর্কিড হাউজ, প্রজাপতি কর্ণার, শকুন ও পেঁচা কর্ণার, এগ ওয়ার্ল্ড, কচ্ছপ-কাছিম ব্রিডিং সেন্টার, লামচিতা হাউজ, ক্যাঙ্গারু বাগান, হাতী-শো গ্যালারী, ময়ুর/মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, সর্প পার্ক, ফেন্সি কার্প গার্ডেন, ফেন্সি ডার্ক গার্ডেন, লিজার্ড পার্ক, ফুডকোটর্ , পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও জলাধার ইত্যাদি।

প্রবেশ মূল্য ও অন্যান্য খরচ[সম্পাদনা]

সাফারি পার্ক প্রবেশ[সম্পাদনা]

সকল বাংলাদেশিদের জন্য পার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা তবে ১৮ বছরের নিচে ছেলেমেয়েরা ২০ টাকায় পার্কে প্রবেশ করতে পারে। আর সাধারণ অথবা শিক্ষা সফরে আসা ছাত্রছাত্রীদের পার্কে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিতে হয়। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫ ডলার। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আগতদের জন্যে স্পেশাল প্রবেশ ফি রয়েছে। যদি শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ৪০-১০০ জন হয় তাহলে সবার প্রবেশ করতে ৪০০ টাকা লাগবে। যদি শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০ এর বেশি হয় তাহলে প্রবেশ করতে ৮০০ টাকা লাগবে।

কোর সাফারি পার্ক প্রবেশ ফি[সম্পাদনা]

কোর সাফারি পার্ক যেখানে খোলা পরিবেশে জীব জন্তু ঘুরে বেড়ায় তার মাঝ দিয়ে জীপ ও মিনিবাসে ঘুরে দেখতে জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রদান করতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। মিনিবাসে করে ২০ মিনিট ঘুরিয়ে দেখাবে।

পার্কের অন্যান্য জায়গাতে প্রবেশ করতেও টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হবে। সব গুলো স্পট দেখতে মোটামুটি ২০০-৩০০ টাকা লাগবে। একসাথে কয়েকটি স্পট দেখার প্যাকেজ ও পাওয়া যায়।  এছাড়া প্যাডেল বোটে ৩০ মিনিট ভ্রমণ করতে জনপ্রতি ২০০ টাকা খরচ হবে।

পার্কিং ভাড়া[সম্পাদনা]

প্রতিটি বাস, কোচ বা ট্রাক এর পার্কিং ভাড়া ২০০ টাকা। মাইক্রোবাস বা মিনি বাসের পার্কিং ভাড়া ১০০ টাকা। জিপ, প্রাইভেট কার, অটোরিক্সা বা সিএনজির পার্কিং ভাড়া ৬০ টাকা। (সময় ভেদে সকল ভাড়া পরিবর্তিত হতে পারে)

পরিদর্শনের সময়[সম্পাদনা]

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক বন্ধ থাকে। পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে সারাদিন চলে যাবে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি সকাল সকাল চলে যান। তাহলে আরামে সারাদিন ঘুরে ঘুরে সব অংশ দেখতে পারবেন।[৪]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৪ 
  2. "সাফারি পার্কের ঐতিহাসিক পটভূমি"www.safariparkgazipur.info.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৪ 
  3. "গাজীপুরের সাফারি পার্কে জন্ম নিয়েছে নীলগাইয়ের দুটি শাবক || [Gazipur Nilgai]" 
  4. "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর"। ভ্রমণ গাইড (ইংরেজি ভাষায়)।