চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার
A golden medallion with an embossed image of a bearded man facing left in profile. To the left of the man is the text "ALFR•" then "NOBEL", and on the right, the text (smaller) "NAT•" then "MDCCCXXXIII" above, followed by (smaller) "OB•" then "MDCCCXCVI" below.
বিবরণশরীরবিদ্যার উন্নয়ন অথবা ঔষধ আবিষ্কার, যা মানবজাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে
অবস্থানস্টকহোম শহুরে এলাকায় সোলনা
দেশসুইডেন উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
পুরস্কারদাতাকারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে নোবেল পরিষদ
প্রথম পুরস্কৃত১৯০১
ওয়েবসাইটনোবেলপ্রাইজ.অর্গ
এমিল ফন বেরিং, চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী প্রথম বিজ্ঞানী। ডিপথেরিয়া রোগের চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণার জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (সুইডীয়: Nobelpriset i fysiologi eller medicin) নোবেল ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত, কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে নোবেল পরিষদ দ্বারা প্রদত্ত, চিকিৎসা বিজ্ঞানঔষধক্ষেত্র অসামান্য আবিষ্কারের জন্য বছরে একবার ভূষিত করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে এটি সর্বজনস্বীকৃত। ১৮৯৫ সালে ডায়নামাইটের আবিষ্কারক সুইডীয় রসায়নবিদ আলফ্রেদ নোবেল যে পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদানের ব্যাপারে দলিলে উল্লেখ করে গিয়েছিলেন তন্মধ্যে এটি একটি। নোবেল ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন এবং পরীক্ষাগারেও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও অগ্রগতির জন্য একটি পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। নোবেল পুরস্কার ১০ ডিসেম্বর নোবেলের মৃত্যু বার্ষিকীতে বার্ষিক অনুষ্ঠানে একটি ডিপ্লোমা এবং একটি আর্থিক পুরস্কারের সার্টিফিকেটসহ প্রাপক/প্রাপকগণকে প্রদান করা হয়। প্রদত্ত মেডেলের সম্মুখ দিকে থাকে আলফ্রেদ নোবেলের খোদিত ছবি যা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বা সাহিত্যের জন্য প্রদত্ত মেডেলের মতই; তবে অন্য পাশটা আলাদা। সেই পাশে মেধাবী এক চিকিৎসকের প্রতিকৃতি দেখা যায়, যে নিজের কোলে রাখা একটি উন্মুক্ত বই ধরে আছে এবং একই সাথে পাথরের বুক চিড়ে প্রবহমান পানি দিয়ে একটি মেয়ের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছে।

২০১৯ সাল পর্যন্ত, ১১০টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে ২০৭ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীর মাঝে। ১৯০১ সালে জার্মান শারীরবিজ্ঞানী এমিল ফন বেরিংকে "সিরাম চিকিৎসা" বিষয়ে গবেষণা ও ডিপথেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের জন্য প্রথমবারের মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম নারী হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরীয়-মার্কিন বিজ্ঞানী গের্টি কোরি; তিনি মধুমেহ বা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ঔষধসহ অনেক দিক, গুরুত্বপূর্ণ গ্লুকোজ বিপাকে ব্যাখ্যার জন্য ১৯৪৭ সালে এ পুরস্কার পান।

কিছু পুরস্কার বিতর্কিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪৯-এ আন্তোনিও এগাস মনিজের পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত, চিকিৎসা সংস্থা থেকে প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি প্রিফন্টাল লিউকোটমির জন্য পুরস্কৃত হন। অন্যান্য বিতর্কের মধ্যে পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত নিয়ে মতবিরোধ একটি। ১৯৫২ সালের বিজয়ী সেলমান ওয়াক্সমানের নামে আদালতে মামলা করা হয় এবং অর্ধেক পেটেন্টের অধিকার তার সহ-আবিষ্কারক আলবার্ট শাৎসকে প্রদান করা হয়, যিনি নোবেল পুরস্কার দ্বারা স্বীকৃত ছিলেন না। ১৯৬২ সালের পুরস্কার বিজয়ী হলেন জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিকমরিস উইলকিন্স, ডিএনএ গঠন এবং বৈশিষ্ট্যাবলীতে তাদের কাজের জন্য, যারা অন্যদের কাজের অবদান স্বীকার করেননি, বিশেষ করে অসওয়াল্ড আভারিরোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন যারা মনোনয়ন সময় মৃত ছিলেন। নোবেল পুরস্কার নিয়মানুসারে মৃতদের মনোনয়ন নিষেধ, সেদিক থেকে আয়ুস্কাল একটি সম্পদ, যেহেতু আবিষ্কারের ৫০ বছর পরও পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও এক পুরস্কার সর্বোচ্চ তিন প্রাপকদের মধ্যে প্রদান করা যায়, এবং গত অর্ধ শতাব্দীর থেকে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দল হিসেবে কাজ করার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আছে, ফলে এই নিয়মের দ্বারা বিতর্কিত বাদ দিতে হচ্ছে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

নোবেল পরীক্ষামূলক শারীরবিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন এবং তার নিজের পরীক্ষাগার স্থাপন করেন।

আলফ্রেড নোবেল সুইডেনের স্টকহোমের একটি ইঞ্জিনিয়ার পরিবারের ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি একজন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং উদ্ভাবক ছিলেন এবং তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর সম্পদশালী হন, বেশিরভাগই তার ৩৫৫টি উদ্ভাবন থেকে, যার মধ্যে ডিনামাইট সবচেয়ে বিখ্যাত।[২] তিনি পরীক্ষামূলক শারীরবিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন এবং রক্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য ফ্রান্স এবং ইতালিতে নিজের গবেষণাগার স্থাপন করেন। বৈজ্ঞানিক ফলাফল রাখার পাশাপাশি, তিনি রাশিয়া ইভান পাভলভের গবেষণাগারে অনুদান উদার ছিলেন ও গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন।[৩]

১৮৮৮ সালে তিনি মৃতদের তালিকা দেখে বিস্মত হন, যা একটি ফরাসি পত্রিকায় এ মার্চেন্ট অব ডেথ ইজ ডেড শিরোনামে প্রকাশিত হয়। যেহেতু নোবেলের ভাই লুডভিগ মারা যায়, এই নিবন্ধটি তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে ইতিহাসে তিনি কীভাবে স্মরণীয় হতে চান। যা তাকে তার উইলটি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে।[৪] নোবেল তার সর্বশেষ উইলে উল্লেখ করেন যে তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, শান্তিসাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন।[৫] যদিও নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেক গুলো উইল লিখে গিয়েছিলেন, সর্বশেষটা লেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে।[৬] ২৬ এপ্রিল ১৮৯৭-এর আগ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবনতার জন্য নরওয়েজীয় সংসদ থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয় নি।[৭]

নোবেলের মৃত্যুর পর, নোবেল ফাউন্ডেশন স্থাপন করা হয় অর্পিত সম্পদের পরিচালনা করতে।[৮] ১৯০০ সালে, নোবেল ফাউন্ডেশনের নব নির্মিত বিধি সুয়েডীয় রাজা দ্বিতীয় অস্কার কর্তৃক জারী করা হয়।[৯][১০] নোবেলের উইল অনুযায়ী, সুইডেনের একটি মেডিকেল স্কুল এবং গবেষণা কেন্দ্র, কারোলিন্সকা ইনষ্টিটিউটকে শরীরবিদ্যা এবং চিকিৎসাবিদ্যায় পুরস্কার দেয়ার দ্বায়িত্ব অর্পণ করা হয়।[১১] আজ যা সাধারণত চিকিৎসাবিজ্ঞান নোবেল পুরস্কার হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[১২]

মনোনয়ন এবং নির্বাচন[সম্পাদনা]

এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে নোবেল পুরস্কার একটি "আবিষ্কার" জন্য পুরস্কৃত করা হবে, যা "মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপকার"।[১৩] উইলের বিধান অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্বাচন ব্যক্তিগণ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার যোগ্য। এর মধ্যে বিশ্বের অ্যাকাডেমিক সদস্যগণ অন্তর্ভুক্ত, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ডের চিকিৎসাবিজ্ঞানের অধ্যাপক, এর সাথে সাথে অন্যান্য অঞ্চলের নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপকগণ। এছাড়াও বিগত নোবেল বিজয়ীরা মনোনীত হতে পারে।[১৪] ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত, কারোলিন্সকা ইনষ্টিটিউটের সব অধ্যাপকদের একসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই বছর, সুইডীয় আইন পরিবর্তনের ফলে ইনস্টিটিউট নোবেল পুরস্কার সংক্রান্ত যেকোনো নথি উন্মুক্ত করতে বাধ্য হয় এবং এটি পুরস্কারের কাজ করার জন্য একটি আইনত স্বাধীন সংস্থা স্থাপন করার জন্য প্রয়োজন ছিলো বলে মনে করা হয়। অতএব, কারোলিন্সকা ইনষ্টিটিউটের ৫০ জন অধ্যাপক নিয়ে নোবেল পরিষদ গঠন করা হয়। এটা ৫ সদস্যের নোবেল কমিটি নির্বাচিত করে, যারা মনোনীত মূল্যায়ন করবে, প্রতিষ্ঠানের সচিব এবং প্রতি বছর ১০ জন সদস্য প্রার্থীর মূল্যায়নে সহায়তা করবে। ১৯৬৮ সালে, একটি বিধান যুক্ত হয়, যেখানে বলা হয় তিন ব্যক্তির বেশীকে একটি নোবেল পুরস্কার প্রাদান করা যাবে না।[১৫]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

একজন মেডিসিন বা শারীরবিদ্যা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একটি স্বর্ণপদক, একটি উদ্ধৃতি বহনকারী ডিপ্লোমা, এবং অর্থের সমষ্টি অর্জন করে।[১৬] এগুলি স্টকহোম কনসার্ট হলে পুরস্কার অনুষ্ঠানের সময় প্রদান করা হয়।

পদক[সম্পাদনা]

ডিপ্লোমা[সম্পাদনা]

পুরস্কারের অর্থ[সম্পাদনা]

অনুষ্ঠান এবং ভোজ[সম্পাদনা]

পুরস্কার প্রাপক[সম্পাদনা]

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের তালিকা

সময় উপাদান ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

বিতর্কিত সংযোজন এবং বহিষ্কার[সম্পাদনা]

পদকপ্রাপ্তদের সংখ্যার সীমা[সম্পাদনা]

পুরস্কারহীন বছর[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Levinovitz, p. 5
  2. Levinovitz, p. 11
  3. Feldman, pp. 237–238
  4. Golden, Frederic (১৬ অক্টোবর ২০০০)। "The Worst And The Brightest"Time Magazine। Time Warner। ১১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১০ 
  5. "History – Historic Figures: Alfred Nobel (1833–1896)"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১০ 
  6. Sohlman, Ragnar (১৯৮৩)। The Legacy of Alfred Nobel – The Story Behind the Nobel Prizes (First সংস্করণ)। The Nobel Foundation। পৃষ্ঠা 13আইএসবিএন 0-370-30990-1 
  7. Levinovitz, p. 13
  8. "The Nobel Foundation"। nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১০  |আর্কাইভের-ইউআরএল= ত্রুটিপূর্ণভাবে গঠিত: timestamp (সাহায্য)
  9. AFP, "Alfred Nobel's last will and testament", The Local(5 October 2009): accessed 20 January 2010.
  10. Levinovitz, p. 26
  11. "Nobel Prize History —"। Infoplease.com। ১৩ অক্টোবর ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১০ 
  12. Levinovitz, p. 112
  13. Lindsten, Jan; Nils Ringertz। "The Nobel Prize in Physiology or Medicine, 1901–2000"। Nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১০ 
  14. Foundation Books National Council of Science (২০০৫)। Nobel Prize Winners in Pictures। Foundation Books। পৃষ্ঠা viii। আইএসবিএন 81-7596-245-3 
  15. Levinovitz, p. 17
  16. Tom Rivers (১০ ডিসেম্বর ২০০৯)। "2009 Nobel Laureates Receive Their Honors"voanews.com। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১০ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরোও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]