গণিতের ভিত্তি
��কোনো রাশিতে একই উৎপাদক যতবার গুণ থাকে তা সূচক।আর ঐ উৎপাদকই হলো ভিত্তি।
গণিতের ভিত্তি (ইংরেজি: Foundations of mathematics) বলতে গণিতের সেই শাখাকে বোঝায় যেখানে প্রাথমিক গাণিতিক ধারণাসমূহকে (যেমন - সংখ্যা, পরিমাণ, আকৃতি, সেট, ইত্যাদি) কিছু মৌলিক ধারণার স্তরক্রমে (hierarchy of fundamental concepts) বিন্যস্ত করা হয়, কী ভাবে স্বতঃসিদ্ধ নির্মাণ ও গাণিতিক প্রমাণ সম্পাদন করতে হয়, তার নিয়মগুলো খুঁজে বের করা হয়, এবং এগুলো যে বিধিগত ব্যবস্থার (formal system) অন্তর্গত, তার বৈশিষ্ট্য ও সীমা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বর্তমান গণিতের কিছু শাখা, যেমন - গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান, স্বতঃসিদ্ধমূলক সেট তত্ত্ব, প্রমাণ তত্ত্ব, মডেল তত্ত্ব, পুনরাবৃত্তি তত্ত্ব (recursion theory) ইত্যাদিকে একত্রে "গণিতের ভিত্তি" নামে ডাকা হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এসে গণিতে সেটের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সেট গণিতের অন্যতম মৌলিক ও কার্যকরী ধারণা হিসেবে প্রমাণিত। তবে একই সাথে সেটের ধারণা কিছু সুপরিচিত কূটাভাসের (paradox) জন্ম দিয়েছে।
সেটের ধারণার উপর ভিত্তি করে রিচার্ড ডেডেকিন্ড স্বাভাবিক সংখ্যা ও বাস্তব সংখ্যার তত্ত্ব প্রদান করেন। বাস্তব সংখ্যাকে তিনি মূলদ সংখ্যার সেটের খন্ডাংশ বা "cuts" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। এভাবে সেট তত্ত্ব গণিতের একটি ঐক্যবদ্ধকরণের নীতি (unifying principle) হিসেবে কাজ করত।
কিন্তু দেখা গেল সেট তত্ত্বে অতি ব্যবহৃত কিছু যুক্তি (argument) কূটাভাসের জন্ম দেয়। অথচ এই যুক্তিগুলোই গণিতের সবচেয়ে কার্যকর যুক্তিগুলোর অন্যতম এবং বিধিগত যুক্তিবিজ্ঞানের (formal logic) একেবারে প্রাথমিক কাঠামো এদের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। এই পর্যবেক্ষণের ফলস্বরূপ অনেক সমালোচক গণিতবিদ গাণিতিক যুক্তিপ্রদানের প্রকৃতি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। আর সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই বিংশ শতাব্দীর শুরুতে গণিতের এক নতুন শাখার সৃষ্টি হয়, যার নাম দেয়া হয় গণিতের ভিত্তি (foundations of mathematics)।
সৃষ্টির শুরুতেই শাখাটি বিভিন্ন মতবাদে (doctrines) বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে বারট্রান্ড রাসেলের যুক্তিবাদ (logicism), ব্রাউয়ারের স্বজ্ঞাবাদ (intuitionism) এবং হিলবার্টের বিধিবাদ (formalism) অন্যতম। যে সেট তত্ত্বের কারণে এই গোলযোগের শুরু, তাতে সংশোধন এনে বলা হল গেয়র্গ কান্টরের প্রদত্ত সেটের সংজ্ঞা অতিরিক্ত সরল (naive), এবং স্বতঃসিদ্ধের (axioms) ভিত্তিতে তত্ত্বটি নতুন করে বর্ণনা করার প্রয়াস নেয়া হল। যারমেলো-ফ্রাঙ্কেলের সেট তত্ত্ব এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
ব্রাউয়ারের স্বজ্ঞাবাদ সম্প্রতি কমপিউটার প্রোগ্রামিং-এর প্রেক্ষাপটে ব্যবহারিক গুরুত্ব লাভ করেছে।
যুক্তিবাদ
[সম্পাদনা]রাসেল বললেন যে গণিত যুক্তিবিজ্ঞানের একটি শাখা এবং ধারণাসমূহের প্রকার বা "type" অগ্রাহ্য করার ফলে কূটাভাসের সৃষ্টি হয়। তিনি গাণিতিক ধারণাগুলোকে এমনভাবে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করার চেষ্টা করেন যাতে কোন ধারণার সংজ্ঞায় ঐ ধারণাটিকেই আবার ব্যবহার করার প্রয়োজন না পড়ে এবং যুক্তির দুষ্টচক্র সৃষ্টি না হতে পারে। তার মতে গণিতে বিধিবদ্ধভাবে গঠনসমূহ আলোচনা করা হয় এবং এই আলোচনা গঠনগুলোর বাস্তব অর্থ (concrete meaning) থেকে স্বাধীন। আদিকাল থেকেই এই ধরনের বিজ্ঞানের নাম দেয়া হয়েছে যুক্তিবিজ্ঞান। রাসেলের মতে যুক্তিবিজ্ঞান হল গণিতের যৌবন, আর গণিত হল যুক্তিবিজ্ঞানের পূর্ণবয়স্ক রূপ। রাসেল আরও বললেন যে, এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গণিত নির্মাণ করতে হলে মানুষের মুখের স্বাভাবিক ভাষা দিয়ে কাজ হবে না, কেন না তা দীর্ঘ ও ত্রুটিপূর্ণ। গণিতের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের প্রতীক ব্যবস্থা। রাসেল তাই প্রতীকী যুক্তিবিজ্ঞান (symbolic logic) ব্যবহার করে গণিত পুনর্গঠন করতে চেষ্টা করলেন। তবে এ ক্ষেত্রে রাসেল প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না।
রাসেলের আগে গটফ্রিড লাইবনিৎস তার Dissertatio de arte combinatoria (১৬৬৬) গ্রন্থে, অগাস্টাস ডি মর্গান, জর্জ বুল, চার্লস স্যান্ডার্স পেয়ার্স, শ্র্যোডার, গট্লব ফ্রেগে, পেয়ানো, ও আরও অনেকে যুক্তিবৈজ্ঞানিক চিহ্ন ব্যবহার করে গণিত পুনর্বিন্যাস করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ফ্রেগে ও পেয়ানোর ব্যবহৃত প্রতীকগুলোই বর্তমান কালের গণিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রাসেল তার আগের এই সমস্ত কাজ অধ্যয়ন করেন এবং এ সম্পর্কে তার নিজের তত্ত্ব হোয়াইটহেডের সাথে একসাথে তিন খণ্ডের এক বিশাল গ্রন্থে প্রকাশ করেন, যে গ্রন্থের নাম প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেম্যাটিকা (প্রথম সংস্করণ ১৯১০-১৯১৩)। এ গ্রন্থে যুক্তিবিজ্ঞানের মৌলিক বিধিসমূহ ব্যবহার করে স্বাভাবিক সংখ্যা, বাস্তব সংখ্যা এবং বিশ্লেষণী জ্যামিতির তত্ত্বগুলো পুনঃনির্মাণ করা হয়।
যদি রাসেল ও হোয়াইটহেডের এই কাজ সম্পূর্ণ সফল হত, তাহলে এটি গণিতে কূটাভাসের আবির্ভাব সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে সক্ষম হত। কিন্তু লেখকদ্বয় গণিত নির্মাণ করতে গিয়ে এমন একটি স্বতঃসিদ্ধের আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন যেটি সন্তোষজনক ছিল না (unsatifactory)। তারা প্রকার বা টাইপের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বললেন কোন সেট তার উপাদানগুলো যে টাইপের অন্তর্গত, তার চেয়ে উচ্চতর টাইপের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে কিছু কূটাভাস দূর হলেও অন্য ধরনের সমস্যা দেখা দিল। যেমন মূলদ সংখ্যার তত্ত্ব থেকে বাস্তব সংখ্যার তত্ত্ব তৈরি করতে গিয়ে দেখা গেল বাস্তব সংখ্যার তত্ত্ব অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে। এই জটিলতা নিরসন করতে গিয়ে রাসেল axiom of reducibility প্রস্তাব করলেন, কিন্তু তিনি নিজেই এই স্বতঃসিদ্ধটি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। এছাড়া রাসেলের প্রস্তাবিত axiom of infinity এবং axiom of choice-ও সমস্যাসঙ্কুল প্রতিভাত হয়। যাই হোক, এই বইয়ে উল্লিখিত যুক্তিবিজ্ঞান ও এই বইয়ের ওপর ভিত্তি করে করে র্যামসের উদ্ভাবিত টাইপ তত্ত্ব এখনও গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বজ্ঞাবাদ
[সম্পাদনা]স্বজ্ঞাবাদীদের মতে গাণিতিক বস্তু বা সত্যসমূহ গাণিতিক চিন্তাভাবনাকারী ব্যক্তি বা গাণিতিক স্বজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তির থেকে স্বাধীন নয়। এই বস্তু বা সত্যগুলো কেবল গাণিতিক মনের সাহায্যেই উপলব্ধি করতে হয়। ১৯ শতকে ক্রনেকার ও পোয়াঁকারে, ২০ শতকের শুরুতে বোরেল, লেবেসগে, ও লুজিনের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বজ্ঞাবাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে শেষোক্ত তিন জনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়-স্বজ্ঞাবাদ (semi-intuitionism) বা ফরাসি অভিজ্ঞতাবাদ (French empiricism) নামেই বেশি পরিচিত। ওলন্দাজ গণিতবিদ ব্রাউয়ার স্বজ্ঞাবাদের আরও সঙ্কীর্ণ একটি অবস্থান গ্রহণ করেন, যা হিলবার্টের বিধিবাদের ঘোর বিরোধী ছিল। বর্তমানে স্বজ্ঞাবাদ বলতে ব্রাউয়ারের ব্যাখ্যাকৃত স্বজ্ঞাবাদকেই বোঝায়।
গণিত বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |