কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান (ইংরেজি: Quantum mechanics) বা কোয়ান্টাম(খুদ্রাংশিক) পদার্থবিজ্ঞান (ইংরেজি: Quantum physics) আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যা পরমাণু এবং অতিপারমাণবিক কণার/তরঙ্গের মাপনীতে[টীকা ১] পদার্থের আচরণ বর্ণনা করে। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে ব্যবহার করে বিশাল কোন বস্তু যেমন তারাছায়াপথ এবং বিশ্বতত্ত্বমূলক ঘটনা যেমন ব্যাখ্যা করা যায় তেমনি স্ট্যান্ডার্ড মডেলভিত্তিক মহা বিস্ফোরণ (বিগ ব্যাং) বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করা যায়।

উল্লেখ্য, পদার্থবিজ্ঞানের যেসব ক্ষেত্র চিরায়ত (ক্লাসিক্যাল) নিউটনীয় বলবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, সেসব ক্ষেত্রে পদার্থগুলির জড়তাত্ত্বিক ভৌত আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য পদার্থবিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকেন। পারমাণবিক অথবা তার চেয়েও ছোট মাপের কোন ভৌত ব্যবস্থায়, খুব নিম্ন অথবা খুব উচ্চ শক্তিতে, অথবা অতিশীতল তাপমাত্রায় চিরায়ত এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের বিশ্লেষণের মধ্যে প্রায়শই পার্থক্য দেখা যায়। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান রসায়ন, আণবিক জীববিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্‌স, কণা পদার্থবিজ্ঞান, ন্যানোপ্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিবিদ্যার আধুনিকায়নের ভিত্তি এবং বিজ্ঞানের কোয়ান্টামভিত্তিক এই শাখাগুলো বিগত পঞ্চাশ বছরব্যাপী পৃথিবীকে রাতারাতি এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছে।

বিভিন্ন শক্তি স্তরে একটি হাইড্রোজেন পরমাণুতে ইলেক্ট্রনের তরঙ্গ ফাংশন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা মহাকাশে কোনও কণার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না, এটি বিভিন্ন স্থানে কণাটির প্রাপ্যতার সম্ভাবনা মাত্র। উজ্জ্বল অঞ্চলগুলিতে ইলেকট্রন প্রাপ্তির সম্ভাবনা অধিক

ইতিহাস[সম্পাদনা]

চিরায়ত বলবিজ্ঞান আমাদের চারপাশের জগতের অনেক ঘটনা নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। আইজাক নিউটন ১৬৮৬ সালে তার বিখ্যাত বই Philosophiae Naturalis Principia Mathematica, সংক্ষেপে প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেম্যাটিকা-তে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের মূলসূত্রগুলি লিপিবদ্ধ করেন। এরপর প্রায় দুইশ বছর ধরে এই সূত্রগুলিই পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সমস্ত ঘটনাবলির ব্যখ্যার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু ১৯শ শতকের শেষের দিকে এসে পরমাণুর ইলেক্ট্রনীয় গঠন ও আলোর ধর্মের উপর কিছু আবিষ্কার চিরায়ত বলবিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না। ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন বুঝতে পারেন যে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ধারণাগুলি অত্যন্ত দ্রুত গতিবেগের, অর্থাৎ আলোর গতিবেগের কাছাকাছি বেগের বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা যায় না। তিনি এটা ব্যাখ্যা করার জন্য নির্মাণ করেন আপেক্ষিকতাভিত্তিক বলবিজ্ঞান নামের শাস্ত্র। চিরায়ত বলবিজ্ঞান নীতিগতভাবে ভ্রান্ত হলেও ধীর গতিবেগের বস্তুসমূহের জন্য এটিকে আপেক্ষিকতাভিত্তিক বলবিজ্ঞানের একটি ভাল আসন্নীকরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। প্রায় একই সময়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কার করেন যে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ধারণাগুলি অত্যন্ত ক্ষুদ্র বস্তুর ওপরেও প্রয়োগ করা যায় না। ১৯০০ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে বেশ কিছু পদার্থবিজ্ঞানী (মাক্স প্লাংক, নিল্‌স বোর, আলবার্ট আইনস্টাইন, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, লুই দ্য ব্রয়ি, এর্ভিন শ্র্যোডিঙার, প্রমুখ) কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান উদ্ভাবন করেন। আপেক্ষিকতাবাদের সাথে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একত্রীকরণের ব্যাপারে তাত্ত্বিক গবেষণা চলছে। এ বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ সাফল্য লাভ করা যায় নি।

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের স্বরূপ[সম্পাদনা]

চিরায়ত ও আপেক্ষিকতাভিত্তিক বলবিজ্ঞান নিয়তিবাদী: অর্থাৎ এগুলিতে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান থাকলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব, দৈবের কোন স্থান এখানে নেই। অন্যদিকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সম্ভাবনাভিত্তিক: বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নির্ভুল জ্ঞান থাকলেও ভবিষ্যৎ কী ঘটবে তার পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য সত্ত্বেও কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পারমাণবিক ও অতিপারমাণবিক স্তরের অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম, এবং চিরায়ত বলবিজ্ঞানের সাহায্যে এই মাত্রার নির্ভুলতায় পৌঁছানো সম্ভব নয়|

কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

-

রিচার্ড ফাইনম্যান, ভৌত বিধির প্রকৃতি (The Character of Physical Law), ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ১২৯। [টীকা ২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ব্যবস্থায় মিথস্ক্রিয় চিত্র ঃ

কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় তিন ধরনের তিন ধরনের চিত্র দেখা যায়।

১.শ্রোডিঙ্গার চিত্র, ২.হাইজেনবার্গ চিত্র , ৩.ডিরাকের মিথস্ক্রিয়া চিত্র।

৩.ডিরাকের মিথস্ক্রিয়া চিত্র ঃ- যে পদ্ধতিতে অবস্থা অপেক্ষক এবং অপারেটর উভয়ই সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় তাকে মিথস্ক্রিয়া চিত্র বা ডিরাক চিত্র বলে।


টীকা[সম্পাদনা]

  1. কণা ও তরঙ্গ একই বস্তু — যাকে আমরা কণা বলি তার আসলে "কণাধর্ম" ও "তরঙ্গধর্ম" দুই-ই বিদ্যমান, এবং এটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। এই ধারণাকে তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা বলা হয়।
  2. মূল ইংরেজিতে উক্তিটি নিম্নরূপ

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Mara Beller, Quantum Dialogue: The Making of a Revolution. University of Chicago Press, Chicago, 2001.
  • Bohr, Niels (১৯৫৮)। Atomic Physics and Human Knowledge। John Wiley and Sons। ওসিএলসি ৫৩০৬১১ এএসআইএন B00005VGVF 
  • De Broglie, Louis. The Revolution in Physics, Noonday Press, 1953.
  • Einstein, Albert. Essays in Science, Philosophical Library, 1934.
  • Feigl, Herbert and May Brodbeck, Readings in the Philosophy of Science, Appleton-Century-Crofts, 1953.
  • Feynman, Richard P., QED: The Strange Theory of Light and Matter, Princeton University Press, 1985. আইএসবিএন ০-৬৯১-০৮৩৮৮-৬
  • Prof. Michael Fowler, The Bohr Atom, A series of lectures, 1999, University of Virginia.
  • Heisenberg, Werner. Physics and Philosophy, Harper and Brothers, 1958.
  • S Lakshmibala, "Heisenberg, Matrix Mechanics and the Uncertainty Principle", Resonance, Journal of Science Education, Volume 9, Number 8, August 2004.
  • Richard L. Liboff, Introductory Quantum Mechanics, 2nd ed. 1992.
  • Lindsay, Robert Bruce and Henry Margenau, Foundations of Physics, Dover, 1936.
  • McEnvoy, J.P., and Zarate, Oscar. Introducing Quantum Theory, আইএসবিএন ১-৮৭৪১৬৬-৩৭-৪
  • Carl Rod Nave, Hyperphysics-Quantum Physics, Department of Physics and Astronomy, Georgia State University, CD 2005.
  • F. David Peat, "From Certainty to Uncertainty: The Story of Science and Ideas in the Twenty-First Century", Joseph Henry Press, 2002.
  • Reichenbach, Hans, Philosophic Foundations of Quantum Mechanics, University of California Press, 1944.
  • Schilpp, Paul Arthur, Albert Einstein: Philosopher-Scientist, Tudor Publishing Commpany, 1949.
  • Scientific American Reader, 1953.
  • Sears, Francis Weston, Optics, Addison-Wesley, 1949.
  • Shimony, A. (১৯৮৩)। "(title not given in citation)"। Foundations of Quantum Mechanics in the Light of New Technology (S. Kamefuchi et al., eds.)। Tokyo: Japan Physical Society। পৃষ্ঠা 225। ; cited in: টেমপ্লেট:ওয়েব উদ্ধৃতিsite
  • Dr. Kenjiro Takada, Emeritus professor of Kyushu University, Microscopic World-Introduction to Quantum Mechanics, Internet seminar, https://web.archive.org/web/20090701062820/http://www.kutl.kyushu-u.ac.jp/seminar/MicroWorld1_E/MicroWorld_1_E.html.
  • "Uncertainty Prirnciple" Werner Heisenberg actual voice recording, https://web.archive.org/web/20070515175748/http://www.thebigview.com/spacetime/index.html.
  • J.H. Van Vleck, The Correspondence Principle in the Statistical Interpretation of Quantum Mechanics, Proc. Nat. Acad. Sci., Vol. 14, p. 179, 1928.
  • Martinus J.G. Veltman, Facts and Mysteries in Elementary Particle Physics. World Scientific Publishing Company, February 2003.
  • Carl Wieman and Katherine Perkins, "Transforming Physics Education", Physics Today, November 2005.
  • Michael D. Westmoreland, Benjamin Schumacher, Quantum Entanglement and the Nonexistence of Superluminal Signals, March 1998, http://arxiv.org/pdf/quant-ph/9801014

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

সাধারণ[সম্পাদনা]

কোর্স[সম্পাদনা]

প্রশ্নোত্তর[সম্পাদনা]

মিডিয়া[সম্পাদনা]

দর্শন[সম্পাদনা]

ইতিহাস[সম্পাদনা]