২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ নকআউট পর্ব
২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের পর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত পর্ব। গ্রুপ পর্বে সাতটি দল রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে খেলেছে। তন্মধ্যে প্রত্যেক গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় চার দল (দুই গ্রুপের সর্বমোট ৮) একক-বিদায় পদ্ধতির প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে উত্তরণ ঘটায়। প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কোন কারণে নকআউট পর্বের কোয়ার্টার-ফাইনাল কিংবা সেমি-ফাইনালের খেলা টাই হয় অথবা ফলাফল না এলে গ্রুপ পর্বের সেরা দল খেলবে।[১] তবে, চূড়ান্ত খেলা টাই হলে উভয় দলের মধ্যে এক-ওভারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলার নিষ্পত্তি ঘটানো হবে।[১]
প্রত্যেক গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় চার দল এ পর্বে খেলছে। এ গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দল বি গ্রুপের ৪র্থ স্থান অধিকারী দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ পর্বে এ১ ব বি৪, এ২ ব বি৩, এ৩ ব বি২ ওব এ৪ ব বি১ দল মুখোমুখি হয়।[২] কিছু দল কোয়ার্টার ফাইনাল অথবা সেমি-ফাইনালে খেলার ব্যাপারে নিজ মাঠ ব্যবহারের সুযোগ পায়।[৩] এ প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার সুযোগ লাভ করায় তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।[৪][৫]
নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দল এ গ্রুপ থেকে এবং ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বি গ্রুপ থেকে এ পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে।
নকআউট ছক
কোয়ার্টার-ফাইনাল | সেমি-ফাইনাল | ফাইনাল | ||||||||||||
এ৩ | শ্রীলঙ্কা | ১৩৩ | ||||||||||||
বি২ | দক্ষিণ আফ্রিকা | ১৩৪/১ | ||||||||||||
বি২ | দক্ষিণ আফ্রিকা | ২৮১/৫ | ||||||||||||
এ১ | নিউজিল্যান্ড | ২৯৯/৬ | ||||||||||||
এ১ | নিউজিল্যান্ড | ৩৯৩/৬ | ||||||||||||
বি৪ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ২৫০ | ||||||||||||
এ১ | নিউজিল্যান্ড | ১৮৩ | ||||||||||||
এ২ | অস্ট্রেলিয়া | ১৮৬/৩ | ||||||||||||
বি৩ | পাকিস্তান | ২১৩ | ||||||||||||
এ২ | অস্ট্রেলিয়া | ২১৬/৪ | ||||||||||||
এ২ | অস্ট্রেলিয়া | ৩২৮/৭ | ||||||||||||
বি১ | ভারত | ২৩৩ | ||||||||||||
বি১ | ভারত | ৩০২/৬ | ||||||||||||
এ৪ | বাংলাদেশ | ১৯৩ |
খেলা
কোয়ার্টার ফাইনাল
দক্ষিণ আফ্রিকা ব শ্রীলঙ্কা
ব
|
||
- শ্রীলঙ্কা টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
- খেলার ফলাফলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে জয়ের সন্ধান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল।[৬]
১৯৭৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বের সেমি-ফাইনালের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খেলায় ডব্লিউ লার্কিন্সের একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেকের পর থারিন্ডু কৌশল দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটে। প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে বিশ্বকাপে জেপি ডুমিনি ধারাবাহিকভাবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, নুয়ান কুলাসেকারা ও থারিন্ডু কৌশলকে আউটের মাধ্যমে দুই ওভারের সমন্বয়ে গড়া হ্যাট্রিক সম্পন্ন করেন।[৭] প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বের কোন খেলা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ হয়।[৮] কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে তাদের সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তারা একত্রে ১৫০তম খেলায় অংশ নেন।[৯][১০]
ভারত ব বাংলাদেশ
ব
|
||
- ভারত টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়৷
- ভারতের ইনিংস চলাকালে ক্ষণিকের জন্য বৃষ্টি হানা দেয়।
- এটি ছিল বাংলাদেশের ৩০০তম ওডিআই ম্যাচ৷
খেলা পরিচালনাকারী আম্পায়ারদ্বয় কর্তৃক কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই বৈশ্বিকভাবে সমালোচিত হন।[১১][১২] এ প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন যে, আইসিসি’র পরিচালনা পরিষদের পরবর্তী সভায় আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অভিযোগ উত্থাপন করবে।[১৩] ভারতের অধিনায়ক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনি তার শততম ওডিআই জয় করেন।[১৪] ভারত দল ধারাবাহিকভাবে ৭মবারের মতো প্রতিপক্ষ দলকে অল-আউট করে যা বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড।[১৫] খেলাটিকে ঘিরে ১৯ মার্চ গুগলের ডুডলও তৈরি করা হয়। ধীরগতিতে বোলিং করায় বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে একটি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এছাড়াও তাকে ম্যাচ ফি’র ৪০% ও বাদ-বাকী খেলোয়াড়দের উপর ২০% জরিমানা ধার্য্য করা হয়।[১১]
অস্ট্রেলিয়া ব পাকিস্তান
ব
|
||
- পাকিস্তান টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
শহীদ আফ্রিদি ও মিসবাহ-উল-হক তাদের সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেন।[১৬]
নিউজিল্যান্ড ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ব
|
||
- নিউজিল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মার্টিন গাপটিল ধারাবাহিকভাবে দুইটি শতরান করেন।[১৭] এছাড়াও গাপটিল বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বের খেলায় প্রথমবারের মতো দ্বি-শতক হাঁকান। পাশাপাশি প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বি-শতক করেছেন ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের নজির স্থাপন করেছেন।[১৮] গাপটিলের অপরাজিত ২৩৭* রান বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।[১৮] বিশ্বকাপের কোন খেলায় সর্বাধিকসংখ্যক (৩১) ছক্কা হাঁকানো হয়। ছক্কা হাঁকানোর দিক দিয়ে এ সংখ্যাটি একদিনের আন্তর্জাতিকে ২য় অবস্থানে রয়েছে।[১৮]
সেমি-ফাইনাল
নিউজিল্যান্ড ব দক্ষিণ আফ্রিকা
ব
|
||
- দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
- উভয় দলের ইনিংস ৪৩ ওভারের হয়। বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৯৮ ধার্ধ করা হয়।
বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে নিউজিল্যান্ড দল তাদের সর্বোচ্চ ২৯৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে স্পর্শ করে।[১৯] এরফলে দলটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করে।[১৯] দক্ষিণ আফ্রিকা দল বিশ্বকাপের সবগুলো সেমি-ফাইনালে চতুর্থবারের মতো পরাজয়বরণ করে।[২০]
ভারত ব অস্ট্রেলিয়া
ব
|
||
- অস্ট্রেলিয়া টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
- সপ্তমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া দল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। এখন তারা ৭ সেমি-ফাইনালে অংশগ্রহণ করে সবগুলোতেই বিজয়ী হয়।[২১]
ফাইনাল
নিউজিল্যান্ড ব অস্ট্রেলিয়া
ব
|
||
- নিউজিল্যান্ড টসে জয়ী হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
অস্ট্রেলিয়া ৫মবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে।[২২] মাইকেল ক্লার্ক তার সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেন।[২৩] ৯৩,০১৩ দর্শকের সমাগম ঘটে যা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ববহৎ জনসমাবেশ।[২৪]
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ "ICC CRICKET WORLD CUP 2015 - PLAYING CONDITIONS" (পিডিএফ)। ICC। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "2015 Cricket World Cup Points Table and qualifying criterion"। ক্রিকবাজ। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "World Cup fixtures and home advantages"। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "FIXTURES"। ICC। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "BANGLADESH AND SRI LANKA QUALIFY FOR ICC CRICKET WORLD CUP 2015 QUARTER-FINALS"। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। ৯ মার্চ ২০১৫। ১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "South Africa beat Sri Lanka for their first-ever World Cup knockout win"। এনডিটিভি। ১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "JP Duminy Becomes First South African to Claim World Cup Hat-Trick"। এনডিটিভি। ১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "SA v SL (Scorecard and ball-by-ball details)"। ইএসপিএন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "World Cup 2015: Jayawardene, Sangakkara bid adieu to ODI cricket"। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১৮ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Cricket World Cup 2015: South Africa ease into semi-finals"। বিবিসি স্পোর্ট। ১৮ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ ক খ "Responsible Rohit sees off Bangladesh threat"। ইএসপিএন ক্রিকইনফো। ১৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "World Cup 2015: Protests in Bangladesh over 'biased' umpiring"। AFP। ১৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ Sports Correspondent (১৯ মার্চ ২০১৫)। "Bangladesh to challenge umpires' decision"। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "India beat Bangladesh to reach Cricket World Cup semi-finals"। বিবিসি স্পোর্ট। ১৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "India 11, Dhoni 100"। ইএসপিএন ক্রিকইনফো। ১৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Smith, Hazlewood book semi-final berth"। ইএসপিএন ক্রিকইনফো। ২০ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Martin Guptill hits highest World Cup score in New Zealand victory"। বিবিসি স্পোর্ট। ২১ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Jeswant, Bishen (২১ মার্চ ২০১৫)। "Guptill scales many mountains"। ইএসপিএনক্রিকইনফো। ইএসপিএন স্পোর্টস মিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৫।
- ↑ ক খ "New Zealand beat South Africa by four wickets to reach first ever World Cup final"। stuff.co.nz। ২৪ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "South Africa's ongoing semi-final woes"। eNCA। ২৪ মার্চ ২০১৫। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Cricket World Cup: Australia beat India to reach final"। বিবিসি স্পোর্ট। ২৬ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Cricket World Cup 2015: Australia crush New Zealand in final"। BBC Sport। ২৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Smith, Hazlewood book semi-final berth"। ইএসপিএনক্রিকইনফো। ইএসপিএন স্পোর্টস মিডিয়া। ২৮ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৫।
- ↑ "Record crowd for World Cup final"। Cricket.com.au। ২৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৫।
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
- ২০১৫ বিশ্বকাপ ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে