সোনহাই সাম্রাজ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সোনহাই/ সোংহাই সাম্রাজ্য

আনু. ১৪৩০ এর দশক–১৫৯১
সোংহাই সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলি
সোংহাই সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলি
সোনহাই সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি।
সোনহাই সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি।
অবস্থাসাম্রাজ্য
রাজধানীগাও[১]
প্রচলিত ভাষা
ধর্ম
জাতীয়তাসূচক বিশেষণসোনহাই
সরকারসাম্রাজ্য
(সম্রাট) 
• ১৪৬৪–১৪৯২
সুন্নি আলি
• ১৪৯২–১৪৯৩
সুন্নি বারু
• ১৪৯৩–১৫২৮
আসকিয়া মুহাম্মদ
• ১৫২৯–১৫৩১
আসকিয়া মুসা
• ১৫৩১–১৫৩৭
আসকিয়া মুহাম্মদ বেনকান
• ১৫৩৭–১৫৩৯
আসকিয়া ইসমাঈল
• ১৫৩৯–১৫৪৯
প্রথম আসকিয়া ইসহাক
• ১৫৪৯–১৫৮২/১৫৮৩
আসকিয়া দাউদ
• ১৫৮৮–১৫৯২
দ্বিতীয় আসকিয়া ইসহাক
ইতিহাস 
• গাও রাজ্য সোনহাই রাজ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠাপিত
আনু. ১০০০
• মালি সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা
আনু. ১৪৩০ এর দশক
• সুন্নি রাজবংশ এর উদ্ভব
১৪৬৮
• আসকিয়া রাজবংশ এর উত্থান
১৪৯৩
১৫৯১
• অবশিষ্ট রাজসদস্য দক্ষিণে বর্তমান নাইজারে চলে যায় এবং বিভিন্ন ছোট রাজ্য গঠন করে
১৫৯১
• ড্যান্ডি রাজ্যের সর্বশেষ আসকিয়াকে ফ্রান্স কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুতকরণ
১৯০১
আয়তন
১৫৫০ [২]৮,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩,১০,০০০ বর্গমাইল)
মুদ্রা
  • শেল
  • স্বর্ণমুদ্রা
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মালি সাম্রাজ্য
গাও সাম্রাজ্য
সাদি রাজবংশ
টিমবুকাটু পাশ্বালিক
ড্যান্ডি রাজ্য
বর্তমানে যার অংশ

সোনহাই বা সোংহাই সাম্রাজ্য ছিল ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে সাহিল অঞ্চলের পশ্চিম অংশ জুড়ে বিস্তৃত একটি মুসলিম সাম্রাজ্য। নিজের শীর্ষে এটি ইতিহাসের বৃহত্তম আফ্রিকান সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল। রাজ্যটির নাম তার ঐতিহাসিক বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী ও শাসকশ্রেণী অভিজাত সোনহাই বা সোংহাই জাতির নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সাম্রাজ্যটির প্রথম সম্রাট ও সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজা সুন্নি আলি গাওকে নিজের সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন; যদিও ১১ শতক থেকে গাও এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একটি সোনহাই রাজ্য বিদ্যমান ছিল। তবে তা কখনো একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের রূপ লাভ করতে সক্ষম হয়নি। সুন্নি আলীই প্রথম একে একটি সাম্রাজ্যিক রূপ দান করেন এবং এটি একটি আঞ্চলিক রাজ্য থেকে একটি বৃহৎ প্রভাবশালী সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে। তারপর প্রথম আসকিয়া মুহাম্মদ একে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

রাজ্যটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি ছিল টিমবুকটু ও জেনি, যেখানে নগর-কেন্দ্রিক বাণিজ্য বিকাশ লাভ করেছিল এবং এই রাজ্য দুইটি যথাক্রমে ১৪৮৬৮ এবং ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্নি আলির হাতে বিজিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সোনহাই সাম্রাজ্য সুন্নি রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল ( আনু. ১৪৬৪ থেকে), কিন্তু পরে এটি আসকিয়া রাজবংশ (১৪৯৩-১৯০১) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। কারণ, সুন্নি আলির মৃত্যুর পরে তার ছেলে সুন্নি বারু পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে সুন্নি বারুকে কখনোই একজন বিশ্বস্ত মুসলিম হিসাবে দেখা যায়নি এবং এই জন্য যিনি আসকিয়া কর্তৃক হুমকির সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে আসকিয়া মোহাম্মদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তখন থেকেই সাম্রাজ্যটি আসকিয়া রাজবংশ কর্তৃক শাসিত হওয়া শুরু করে।

১৩ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গাও এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং তা দ্রুত সম্প্রসারিত মালি সাম্রাজ্যের আগ্রহকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এর ফলে ১৩শ শতকের শেষের দিকে মালি সাম্রাজ্য গাও জয় করে নেয়। ১৪ শতকের শেষ পর্যন্ত গাও মালি সাম্রাজ্যের কমান্ডের অধীনে ছিল এবং এরপর থেকে মালি সাম্রাজ্য বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং সেই সুযোগ সোনহাইরা গাও-এর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। সোনহাই শাসকরা পরবর্তীতে নিজেদের সোনহাই শাসন সম্প্রসারণের জন্য দুর্বল ও ক্রমশ পতিত হতে থাকা মালি সাম্রাজ্যের দূর্বলতা ও বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়েছিল।

সুন্নি আলির শাসনের অধীনে সোনহাই সাম্রাজ্য মালি সাম্রাজ্যের বিশাল অঞ্চলকে শুষে নিয়ে তার আয়তন, সম্পদ এবং ক্ষমতায় মালি সাম্রাজ্যকে ছাড়িয়ে যায়। সুন্নি আলির তার পুত্র এবং উত্তরাধিকারী সোনি বারু নিজের পিতার অন্যতম সেনাপতি মুহাম্মদ তুরে কর্তৃক উৎখাত হন। তুর সাধারণভাবে আস্কিয়া দ্য গ্রেট নামে পরিচিত, যিনি সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কার প্রতিষ্ঠা করে সোনহাই সাম্রাজ্যকে আফ্রিকার বৃহত্তম সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।

তবে আসকিয়ার উত্তরসূরিদের ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থান সাম্রাজ্যকে পতন ও অস্থিতিশীলতায় পতিত হতে বাধ্য করে। তবে আসকিয়ার আত্মীয়রা রাজ্যটি পরিচালনা করার বহু চেষ্টা করেছিল; কিন্তু সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং লাগাতার সংঘটিত বেশ কয়েকটি গৃহ যুদ্ধ সাম্রাজ্যের অব্যাহত পতন নিশ্চিত করে দিয়েছিল; বিশেষ করে প্রথম আসকিয়া ইসহাক শাসনামলে। এর পর আসকিয়া দাউদের শাসনামলে সাম্রাজ্যটি একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কিছু সামরিক সাফল্যের স্বাদ অনুভব করেছিল; তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

সোনহাই সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় আসকিয়া ইসহাক দাউদের মৃত্যুর পর দীর্ঘ রাজবংশীয় সংগ্রামের মাধ্যমে আল মনসুর ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে আহমদ আল-মনসুর সাম্রাজ্যের সাম্প্রতিক সংঘটিত গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে জুদার পাশার নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠান, যাতে সোনহাই রাজ্য জয় করা যায় এবং ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ লাভ করা যায়। ১৫৯১ সালে টন্ডিবির যুদ্ধে পরাজয়ের পর সোনহাই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

সোনহাই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আদি বাসিন্দা[সম্পাদনা]

খ্রিস্টপূর্ব ৯ম এবং তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে প্রাচীন কালে কোথাও কোথাও অনুমান করা হয়েছিল যে, কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে নিজেদেরকে সোনহাই পরিচয়ে পরিচিত করেছিল, যা প্রাচীন কুকিয়ার একটি উন্নয়নশীল কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে। গাও অঞ্চলে বসতি স্থাপনকারী প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সোরকো জাতি, যারা নাইজারের তীরে ছোট ছোট বসতি স্থাপন করেছিল। সোরকোরা ক্যালসেড্রেট গাছের কাঠ থেকে নৌকা এবং ক্যানো তৈরি করতেন। তারা নিজেদের জাহাজ থেকে মাছ ধরত এবং বিভিন্ন প্রাণী শিকার করত। এছাড়াও সোরকোরা পণ্য এবং মানুষের জন্য বিভিন্ন জলবাহিত পরিবহন সরবরাহ করত। অপর একটি দল, যারা নাইজার নদীর সম্পদ আরোহণ করে বেঁচে থাকার জন্য এই এলাকায় চলে এসেছিল, তারা ছিল গাও জাতি। গাওরা শিকারী ছিল এবং কুমিরজলহস্তীসহ প্রভৃতি নদীর প্রাণী শিকারে বিশেষ পারদর্শী ছিল।

এই অঞ্চলে বসবাসকারী অপর একটি দলটি ছিল যো জাতি, যাদের প্রায় সবাই কৃষক ছিল এবং নদীর তীরে অবস্থিত উর্বর জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ১০ শতকের আগ পর্যন্ত এসব প্রাথমিক বসতি স্থাপনকারীরা তাদের তুলনায় অধিক শক্তিশালী এবং সংগঠিত ঘোড়সওয়ার সোংহাই বাহিনীর হাতে পরাধীন ছিল, যারা এই অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। এই সব গোষ্ঠীগুলি ধীরে ধীরে একই ভাষায় কথা বলতে শুরু করে এবং তারা এবং তাদের দেশ শেষ পর্যন্ত সোনহাই নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।[৩]:৪৯

গাও এবং মালি[সম্পাদনা]

রাজাদের এ প্রাচীনতম রাজবংশটি প্রায় অস্পষ্ট এবং তাদের সম্পর্কে অধিক বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাদের সম্পর্কে বেশিরভাগ তথ্য গাও-এর কাছাকাছি অবস্থিত সানে নামে একটি গ্রামের কাছাকাছি একটি প্রাচীন ও ধ্বংসপ্রাপ্ত কবরস্থান থেকে আসে। এই কবরস্থানটির কয়েকটি সমাধির শিলালিপি এই তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত করে যে, এই রাজবংশ ১১ শতকের শেষের দিকে এবং ১২ শতকের প্রথম দিকে এই অঞ্চলটি শাসন করেছিল এবং তাদের শাসকদের মালিক ( "রাজা" এর আরবি) উপাধি দেওয়া হয়েছিল এবং অন্যান্য সমাধির পাথরে একটি দ্বিতীয় রাজবংশের কথা উল্লেখ রয়েছে, যাদের শাসকরা জুওয়া উপাধি ধারণ করেছিলেন। শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনী এবং লোককাহিনী জুয়ার উৎপত্তি বর্ণনা করে। তারিখ আল-সুদান ( সুদানের ইতিহাস ) নামে ১৬৫৫ সালের দিকে আরবি ভাষায় লেখা একটি মৌখিক ঐতিহ্য সোনহাইয়ের একটি প্রাথমিক ইতিহাস প্রদান করেছে। গ্রন্থটি বর্ণনা করে যে, জা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাকে বলা হতো জা আলায়মান ( এছাড়াও ডায়ালিয়ামান বানান প্রচলিত ), যিনি মূলত ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন এবং কুকিয়া শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন।[৩]:৬০[৪] এরপর জুয়াদের সাথে কি ঘটে তার কোনো বর্ণনা আজ সংরক্ষিত নেই বিধায় তাদের সম্পর্কে ইতিহাসে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।[৫]

সানহাজা নামে পরিচিত একটি উপজাতি নাইজারের বেল্ড অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে ছিল। এ উপজাতি পূর্বপুরুষেরা সাহারা মরুভূমি থেকে বেরিয়ে এসে নাইজারের কাছে ব্যবসায়িক অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে উত্তর আফ্রিকার ব্যবসায়ীরা সাহারা অতিক্রম করে তাদের বসতিতে তুয়ারেগদের সাথে যোগ দেয়। উভয় দলই নদীর ধারে বসবাসকারী লোকজনকে নিয়ে ব্যবসা করতো। এই অঞ্চলে বাণিজ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সোনহাই প্রধানরা লাভজনক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়, যা পরবর্তীতে গাওতে এসে কেন্দ্রীভূত হয়। এর বাণিজ্য পণ্যের মধ্যে সোনা, লবণ, ক্রীতদাস, কোলা বাদাম, চামড়া, খেজুর এবং হাতির দাঁত অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১০ম শতাব্দীর মধ্যে, সোনহাই প্রধানরা গাওকে একটি ছোট রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং বাণিজ্য পথের পাশে বাসকারী লোকদের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছিল। ১৩০০ সালের দিকে, গাও মালি সাম্রাজ্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। মালি শহরটি জয় করেছিল এবং গাও-এর বাণিজ্য থেকে লাভবান হয়েছিল এবং প্রায় ১৪৩০ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটির আঞ্চলিক রাজাদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করেছিল। এরপর মালি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংঘাত গাওর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা অসম্ভব করে তুলেছিল।[৩]:৫০–৫১ ইবনে বতুতা ১৩৫৩ সালে গাও-তে ভ্রমণ করেন, যখন শহরটি মালি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিদর্শন থেকে ফিরতি যাত্রায় টিম্বক্টু থেকে নৌকায় এসেছিলেন; তিনি লিখেছেন:

তারপর আমি কাওকাও শহরে যাত্রা করলাম, যা নীলের [ অর্থাৎ নাইজার] একটি মহান শহর এবং সুদানের সেরা, বৃহত্তম ও সবচেয়ে উর্বর শহরগুলির মধ্যে একটি। সেখানে অনেক ভাত, দুধ, মুরগি, মাছ আর শসা পাওয়া যায়, যার কোনোটি অপছন্দ করার মত নয়। এর লোকেরা মালির লোকদের মত গরু দিয়ে নিজেদের ক্রয়-বিক্রয় পরিচালনা করে থাকে। [৬]

১৩৬০ সালে মানসা সুলায়মানের মৃত্যুর পরে, কে তার উত্তরাধিকারী হবেন, তা নিয়ে বিরোধ মালি সাম্রাজ্যকে অনেক দুর্বল করে দেয়। এরপর দ্বিতীয় মারি জাতার শাসনামল সাম্রাজ্যকে দুর্বল আর্থিক অবস্থায় পুষে রাখে; তবে রাজ্যটি নিজেই অক্ষত ছিল। মারি জাতা মুসার কান্কোরো-সিগুইয়ের তাকদ্দায় একটি তুয়ারেগ বিদ্রোহ দমন করেন এবং গাওতে সোনহাই বিদ্রোহ দমন করার চেষ্টা করেন; যখন তিনি তাকেদ্দায় সফল হন এবং তিনি গাওকে পুনরায় বশীভূত করেননি।[৭] ১৪৩০ এর দশকে সোংহাই রাজ্য, যা পূর্বে মালির ওপর নির্ভর ছিল–সোনি রাজবংশের অধীনে স্বাধীনতা লাভ করে। এর প্রায় ত্রিশ বছর পর সোনি সুলায়মান দামা তিম্বুকটুর পশ্চিমে অবস্থিত মালি প্রদেশের মেমা আক্রমণ করেছিলেন।[৩]

সুন্নি আলী[সম্পাদনা]

সুলায়মান দামার মৃত্যুর পর সোনি আলী ১৪৬৪ থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত সোংহাইয়ে রাজত্ব করেন। পূর্ববর্তী সোনহাই রাজাদের মতো আলিও একজন মুসলিম ছিলেন। ১৪৬০ এর দশকের শেষের দিকে, তিনি মালি সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশসহ সোনহাই সাম্রাজ্যের অনেক প্রতিবেশী রাজ্য জয় করে পূর্বেকার একটি আঞ্চলিক রাজ্যকে আফ্রিকার একটি অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।

সম্প্রসারণের জন্যে তার প্রচারাভিযানের সময় আলী বেশ কয়েকটি অঞ্চল জয় করেছিলেন এবং মসিদের থেকে দক্ষিণের আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন এবং উত্তরের ডোগন জাতিকে জয় করে নিজের বশীভূত করেন। ১৪৬৮ সালে শহরের ইসলামী নেতারা মালির পতনের পর শহর দখলকারী তুয়ারেগদের উৎখাত করতে তাকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করার পর তিনি ১৪৬৮ সালে টিম্বুকটু দখল করেন।[৮] এর আগে তিনি যখন ব্যবসায়িক শহর ডিজেনে জয় করার চেষ্টা করেন, তখন শহরের লোকেরা তার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করেছিল। সাত বছরের অবরোধের পরে তিনি ১৪৭৩ সালে শহরটিকে নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং অবরোধের কারণে ক্ষুধাত হয়ে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন।

সুন্নি আলি এবং তার সেনাবাহিনীর আক্রমণ টিম্বুক্টুকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছিল। অনেক মুসলিম বিবরণ তাকে অত্যাচারী হিসেবে বর্ণনা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তারিখ আল ফাত্তাশ, যা মাহমুদ কাটি লিখেন। দ্য কেমব্রিজ হিস্ট্রি অফ আফ্রিকা অনুসারে, ইসলামি ঐতিহাসিক আল সা'দি টিমবুকটুতে তার আক্রমণের বর্ণনা দিতে গিয়ে এই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন:

সুন্নি আলি টিম্বক্টুতে প্রবেশ করে চরম অন্যায় কাজ করেন; শহরটি পুড়িয়ে দেন এবং ধ্বংস করেন এবং সেখানে অনেক লোককে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। আকিলু যখন সুন্নি আলির আগমনের কথা শুনলেন, তিনি সানকোর ফকিহদের বহন করার জন্য এক হাজার উট নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের সাথে ওয়ালাতা পর্যন্ত যান..... বে-রহম অত্যাচারী শাসক, যারা টিম্বাক্টুতে থেকে গিয়েছিল, তাদের হত্যা করেছিলেন এবং তাদের অপমান করেছিলেন।[৯]

টিম্বক্টু পান্ডুলিপি ; গণিতজ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আরবিতে লিখিত।

সুন্নি আলি টিম্বক্টুর সব পণ্ডিতের বিরুদ্ধে একটি দমন নীতি তৈরি করেন; বিশেষ করে সানকোর অঞ্চলের যারা তুয়ারেগের সাথে যুক্ত ছিলেন। সমালোচনামূলক বাণিজ্যিক রুট এবং টিম্বুকটুর মত শহরের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, সোনি আলি সোনহাই সাম্রাজ্যের সম্পদ বৃদ্ধি করেছিলেন, যা নিজের শীর্ষ সময়ে মালি সাম্রাজ্যের সম্পদকে ছাড়িয়ে যায়।[১০]

মহান আসকিয়া বা আসকিয়া মুহাম্মদ[সম্পাদনা]

গাওতে আসকিয়ার সমাধি

সুন্নি আলীর পর তার পত্র সুন্নি বারু স্থলাভিষিক্ত হলে আস্কিয়া মুহাম্মদ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সিংহাসন দখল করেন। সোনহাই ইতিহাসে তিনি "আসকিয়া দ্য গ্রেট" বা মহান আসকিয়া হিসেবে পরিচিত। তিনি তার পূর্বসূরিদের বিজিত অঞ্চলগুলি সম্পূর্ণরূপে সংগঠিত করেছিলেন এবং দক্ষিণ ও পূর্বে তার ক্ষমতা প্রসারিত করে সোংহাই সাম্রাজ্যকে আফ্রিকার ইতিহাসে একটি বৃহত্তম ও প্রভাবশালী আফ্রিকান সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তার শাসনের অধীনে সোনহাই সামরিক যোদ্ধারা একটি পূর্ণ-সময়ের কোর হিসেবে গড়ে ওঠে, যা ইতোপূর্বে সাম্রাজ্যে প্রচলিত ছিল না। আসকিয়ার সাম্রাজ্যের প্রতি এমন কটূক্তিপূর্ণ মনোভাব ছিল যে, তার সাম্রাজ্যে পেশাদার যোদ্ধা শক্তির প্রচণ্ড অভাব সর্বদা ছিল।[১১] আল সা'দি, যিনি তারিখ আল-সুদান লিখেছিলেন, তিনি আসকিয়ার সেনাবাহিনীকে তার পূর্বসূরির সাথে তুলনা করে বলেছেন:

"তিনি বেসামরিক ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সুন্নি আলির ( ১৪৬৪–৯২ ) বিপরীতে পার্থক্য করেন, যখন সাধারণত সবাই সৈনিক ছিলেন।"

তিনি ধর্মীয় বিদ্যালয় বা একাধিক মাদ্রাসা খুলেছিলেন এবং স্থানে স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পণ্ডিত ও কবিদের জন্যে তাঁর দরবার খুলে দেন। তার সন্তানরা সবাই একটি ইসলামি স্কুলে পড়তে গিয়েছিলো এবং তিনি ইসলামি অনুশীলনগুলি তার সাম্রাজ্যে আইন হিসাবে প্রয়োগ করেছিলেন; কিন্তু তিনি নিজের প্রজাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেননি; অন্যথায় তার সাম্রাজ্যে অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। আসকিয়া মুহাম্মদ মক্কায় হজ করে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি সুসম্পন্ন করেন এবং যাওয়ার পথে তিনি প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ নিজের রাজ্যে থেকে নিয়ে যান। এর কিছু অংশ তিনি দাতব্য কাজে দান করেন এবং বাকিটা মক্কার জনগণের জন্য তার সাম্রাজ্যের সম্পদ প্রদর্শনের জন্য উপহার হিসেবে ব্যয় করেন। কায়রোর ঐতিহাসিকরা বলেছিলেন যে, "তার তীর্থযাত্রায় প্রায় ৫০০ অশ্বারোহী এবং ১০০০ পদাতিক সৈন্যের একটি ইউনিট ছিল এবং নিজের সাথে তিনি প্রায় ৩০০,০০০০ সোনার টুকরা বহন করেছিলেন"।[১২]

ইসলাম তার কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, নিজের প্রত্যাবর্তনের পর পর তিনি তার সাম্রাজ্য জুড়ে আরো অনেক ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন এবং মিশরমরক্কো থেকে আগত মুসলিম পণ্ডিতদের টিমবুকটুর সানকোর মসজিদে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে নিয়োগ করেছিলেন।

তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন; যার ফলে সোনহাই সাম্রাজ্যের রাজধানীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মানমন্দিরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।[১৩]

আসকিয়া প্রতিবেশী মসির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণাসহ একাধিক সামরিক অভিযান শুরু করেন। তবে তাদের বশ করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেন নি; বরং ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে তাদের স্বাধীনতা প্রদান করেন। তার সেনাবাহিনীতে সর্বদা যুদ্ধের ক্যানো, একটি অশ্বারোহী বাহিনী, প্রতিরক্ষামূলক বর্ম, লোহার টিপযুক্ত অস্ত্র ও একটি সংগঠিত মিলিশিয়া বাহিনী ছিল।

তিনি নিজের সাম্রাজ্যের প্রশাসনকে কেন্দ্রীভূত করেন এবং কর সংগ্রহ ও বিচার প্রশাসনের জন্য দায়ী একটি আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি কৃষি কাজ বৃদ্ধি করার জন্য খাল নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন; তবে শেষ পর্যন্ত তিনি বাণিজ্যে মনোযোগী হয়ে বাণিজ্যের পরিধি বহুল বিস্তৃত করেন। তিনি ওজন ও পরিমাপের একটি ব্যবস্থা চালু করেন এবং সোনহাইয়ের প্রতিটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রের জন্য একজন করে পরিদর্শক নিয়োগ করেন।

তার শাসনে ইসলাম পূর্বের তুলনায় পশ্চিম আফ্রিকায় আরো প্রসারিত হয়; ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে এবং তাগাজার লবণের খনিগুলিকে সাম্রাজ্যের সীমানার মধ্যে আনা হয়।

পতন এবং সাদীয় আক্রমণ[সম্পাদনা]

১৫২৮ সালে আস্কিয়া মুহাম্মদের সন্তানরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং তারা তার ছেলে আসকিয়া মুসাকে রাজা ঘোষণা করে। ১৫৩১ সালে মুসার উৎখাতের পর কার্যত সোনহাই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ১৫৮৩ সালে সম্রাট আসকিয়া দাউদের মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকারের একটি যুদ্ধ সোনহাই সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেয় এবং এটিকে দুটি বিরোধপূর্ণ দলে বিভক্ত করে ফেলে।[১৪]

এই সময় কালে মরোক্কোর সেনাবাহিনী আল কাসার কুইবিরের যুদ্ধে পর্তুগিজ আক্রমণকে প্রতিহত করে; কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবক্ষয় এবং দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ফেলে দেওয়া হয়। কারণ তাদের আরোপিত অবরোধ প্রতিহত করার জন্যে ব্যবহৃত প্রতিরক্ষার জন্য তাদের অর্থ প্রদানের প্রয়োজন ছিল। এটি ১৫৯১ সালে সাদী রাজবংশের সুলতান আহমেদ প্রথম আল-মনসুরকে নপুংসক জুদার পাশার অধীনে দক্ষিণাঞ্চলে একটি আক্রমণকারী বাহিনী প্রেরণ করতে পরিচালিত করেছিলো।[১৫] সোনহাই সাম্রাজ্যে মরক্কোর আক্রমণ ছিল মূলত তাদের উন্নয়নশীল চিনি শিল্পের জন্য লবণসোনা সংগ্রহ করা এবং ট্রান্স-সাহারান অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ক্রীতদাস বাণিজ্য দখল ও পুনরুজ্জীবিত করা।[১৬]:৩০০ ১ম আস্কিয়া মুহাম্মদের রাজত্বকালে সোনহাই সামরিক বাহিনীতে পূর্ণ-সময়ের সৈন্য ছিল; কিন্তু রাজা কখনও তার সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি; যার ফলে সোনহাই বাহিনী তখন একটি প্রাচীন সেনাবাহিনী হিসেবে টিকে ছিল। অন্যদিকে সোংহাই সাম্রাজ্যে আক্রমনকারী মরক্কোর সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার আর্কেবুসে এবং আটটি ইংরেজ কামান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জুদার পাশা জন্মসূত্রে একজন স্পেনীয় ছিলেন; কিন্তু তাকে যুদ্ধে একজন শিশু হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল এবং সাদীয় দরবারে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে করে তোলা হয়েছিলো। সাহারা মরুভূমি জুড়ে একটি দীর্ঘ পদযাত্রার পর জুদারের বাহিনী তাগাযায় লবণের খনিগুলোকে দখল করে; সেখানে লুণ্ঠন চালায় এবং জনপদ ধ্বংস করে দিয়ে গাওতে চলে যায়। সম্রাট ২য় আসকিয়া ইসহাক (শাসনকাল: ১৫৮৮–১৫৯১) যখন ১৫৯১ সালে সংঘটিত টোন্ডিবির যুদ্ধে জুদারের সামনা সামনি হয়েছিলেন, তখন সোনহাই সেনাবাহিনী বিপুল পরিমাণে উচ্চতর সংখ্যা সত্ত্বেও সাদীয়দের বারুদ অস্ত্র দ্বারা সৃষ্ট একটি অভিযানে গবাদি পশুর পদদলিত হয়ে পরাজিত হয়েছিল।[১৫] জুদার গাও, টিম্বুক্টু ও জেনিকে পরাস্ত করার জন্য এগিয়ে যায় এবং একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে সোনহাইকে পুরোপুরি ধ্বংস করে। এত বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করা সাদীয় রাজবংশের জন্য অনেক বেশিই প্রমাণিত হয়েছিল। ফলে তারা শীঘ্রই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করে এবং এটিকে কয়েক ডজন ছোট রাজ্যে বিভক্ত হতে দেয়।[১৬]:৩০৮

মরক্কোর আক্রমণের পর পশ্চিম আফ্রিকা

সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পরে রাজবংশের অভিজাতরা দক্ষিণে বর্তমান নাইজারের সোনহাই নামে পরিচিত একটি এলাকায় চলে যায়, যেখানে সুন্নি রাজবংশের সদস্যরা ইতিমধ্যেই বসতি স্থাপন করেছিল। তারা ছোট ছোট রাজ্য ; যেমন: ওয়ানজারবে, আয়েরউ, গোথেই, দারগোল, তেরা, সিকি, কোকোরো, গোরোউল, কার্মা , নামারো এবং এদের আরো দক্ষিণে ডেন্ডির মতো ছোট রাজ্য গঠন করে, যা কিছুদিন পর বিশিষ্টতা লাভ করা শুরু করে।

সাম্রাজ্যের গঠন[সম্পাদনা]

মূল সোনহাই সাম্রাজ্য কেবলমাত্র তিম্বুক্টু অঞ্চল থেকে গাওরের পূর্ব পর্যন্ত এলাকা অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সোনি আলীআসকিয়া মুহাম্মদের অধীনে একটি সামরিক সম্প্রসারণের পরে সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলি তৈরি করা হয়েছিল, যার অঞ্চল তিনটি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত ছিল:

  • কুর্মা : যেখানে বালামা ( সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং মালিসহ পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলির সামরিক নজরদারির দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর জেনারেল-ইন-চিফ উপস্থিত থাকতেন। পশ্চিমের ইউনিটগুলি সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল এবং বালামা তার নৌ বহরের একটি অংশ নিয়ে কাবারা বন্দরে বসবাস করতেন। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন কুর্মা ফারি, যিনি গভর্নর হিসেবে কাজ করতেন এবং প্রাদেশিক রাজধানী টিম্বকটুতে বসবাস করতেন।
  • গাও: এটি রাজধানী শহর ছিল এবং সেখানে সম্রাট কেন্দ্রীয় ইউনিট এবং হিকয় দ্বারা পরিচালিত একটি বিশাল নৌবহরের অংশের সাথে বসবাস করতেন। সাম্রাজ্যের অ্যাডমিরাল গাও বন্দরে তার উচ্চতায় এক হাজারেরও বেশি জাহাজ নিয়ে সর্বদা অবস্থান করতেন। এটি সেখানে ছিল, যেখানে সবচেয়ে বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু হতো। সম্রাটকে তার সামরিক প্রদেশে দক্ষিণে টোন্ডি ফার্মা, হোম্বোরি প্রদেশের গভর্নর এবং উত্তরে সুরগুকয়, তাদ্মেকাতে আমেনোকাল ও বার্বারদের প্রধান সাহারা প্রদেশের দায়িত্বে থাকতে হয়েছিল এবং তা সর্বদা একটি উট অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতো।
  • ডেন্ডিফারি: যা পূর্বাঞ্চলীয় ডেন্ডি প্রদেশের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই প্রাদেশিক গভর্নর হাউসা রাজ্যসহ পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলির নজরদারির দায়িত্বে একটি ইউনিট স্থাপন করেছিলেন এবং তার আওতাধীন নৌবহরটি আয়রো বন্দরে অবস্থান করেছিল।

সোনহাই সাম্রাজ্য তার শীর্ষস্থানে মালি, নাইজার, গিনি উপকূলীয় কিছু দেশসহ নাইজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল এবং আলজেরিয়ার বর্তমান অঞ্চলগুলিতে বিস্তৃত ছিল। এর প্রভাব ক্যামেরুন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যার ফলে মান্দি জাতি, গুর, ডোগন, বারবারস, আরব, ফুলা, ওলোফ, হাউসা, সোনিঙ্কে জাতি, আকান জাতি এবং ইয়োরুবা জাতি সংলগ্ন একটি বিশাল নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক স্থানের উপর সাম্রাজ্যের প্রভাব বিদ্যমান ছিল।

সোনহাই ঘোড়সওয়ারদের একটি অভিজাত দল এই জনসংখ্যাকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, যা ছিল যাযাবর নিলো -সাহারান অশ্বারোহীদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃত পূর্ব আফ্রিকা থেকে আসা জনগোষ্ঠী, যারা নব্য প্রস্তরযুগে সোর্কো মাছ শিকারী জনগোষ্ঠী এবং নাইজার নদীর স্থানীয় নাইজারকঙ্গোন কৃষকদের সাথে মিশে গিয়েছিল।[১৭]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

সাম্রাজ্যের শীর্ষ সময়ে টিম্বাক্টু একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। আরব, ইতালীয় এবং ইহুদি বণিকরা সবাই বাণিজ্যের জন্য জড়ো হয়েছিল। টিমবুকটু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি বৃত্তির পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল।[১৮]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

পশ্চিম সাহারার বাণিজ্যিক পথ; ১০০০-১৫০০ খ্রি.। স্বর্ণ খনিগুলি হালকা বাদামী ছায়া দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে: বাম্বুক, বুরে, লোবি এবং আকান স্বর্ণ খনি।

সাহেলে স্থল বাণিজ্য ও নাইজার কেন্দ্রিক নদী বাণিজ্য সোনহাই সম্পদের প্রাথমিক উৎস ছিল এবং পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল বরাবর ব্যবসা বাণিজ্য কেবলমাত্র ১৪০০ এর দশকের শেষের দিকে সম্ভব ছিল।[১২] সুন্নি আলীর শাসনামলে বেশ কয়েকটি প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল, যা সাম্রাজ্যের সেচ ও কৃষি ফলনের ব্যাপক বৃদ্ধি অবদান রেখেছিল।[১৯][২০]

সাম্রাজ্যের স্থল বাণিজ্য চারটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়: উট, বার্বার উপজাতির সদস্য, ইসলাম এবং সাম্রাজ্যের কাঠামো। পশ্চিম আফ্রিকায় স্বর্ণ সহজলভ্য ছিল; কিন্তু সেখানে লবণ ছিল না। তাই সোনা ও লবণের বাণিজ্য সাহেলের স্থল বাণিজ্য রুটের মেরুদণ্ড ছিল। হাতির দাঁত, উটপাখির পালক ও ক্রীতদাসদের উত্তর আফ্রিকায় লবণ, ঘোড়া, উট, কাপড় এবং শিল্পের বিনিময়ে পাঠানো হয়েছিল। তখন অনেক বাণিজ্যিক রুট ব্যবহৃত হলেও সোনহাই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ফেজান হয়ে বিলমা, আগাদেস এবং গাও হয়ে যাওয়ার রুটটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো।[১২]

নাইজার নদী সাম্রাজ্যের বাণিজ্যের জন্যে অপরিহার্য ছিল।[১২] টিম্বুক্টুতে উট থেকে গাধা অথবা নৌকায় করে মালামাল নামানো হতো এবং[১২] সেখান থেকে, তাদের একটি প্রায় ৫০০-মাইল বিস্তৃত করিডোর ধরে উজানে ডিজেনে বা ডাউনস্ট্রিম থেকে গাওতে নিয়ে যাওয়া হতো।[১২]

জুল্লা (বণিকরা) অংশীদারিত্ব গঠন করতেন এবং রাষ্ট্র সর্বদা বণিক এবং নাইজারের বন্দর শহরগুলি রক্ষা করতে সর্বদা বদ্ধপরিকর ছিল। এছাড়া ১ম আসকিয়া মুহাম্মদ সাম্রাজ্য জুড়ে প্রথমবারের মতো ওজন এবং পরিমাপের একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা প্রয়োগ করেন।[২১][২২][২৩]

সোনহাই অর্থনীতি একটি গোষ্ঠী ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে ছিল। একজন ব্যক্তি যে বংশের অন্তর্গত ছিল, শেষ পর্যন্ত তার পেশা বংশ হিসেবেই নির্ধারণ করা হত এবং সবচেয়ে সাধারণ পেশা ছিল ধাতু শ্রমিক, জেলে এবং কাঠমিস্ত্রি। নিম্ন বর্ণগুলি প্রধানত অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত ছিল, যাদের মাঝে মাঝে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো এবং তারাও সমাজের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পেতো। ব্যবসা ও সাম্রাজ্যের যাবতীয় বিষয়ে শীর্ষে ছিলেন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা এবং মূল সোংহাই জনগণের বংশধররা; তারপরে স্বাধীন এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। নীচে ছিল যুদ্ধবন্দী ও ক্রীতদাস প্রজারা, যারা প্রধানত কৃষিতে কাজ করত। সোনহাই তাদের পূর্বসূরি ঘানা এবং মালি সাম্রাজ্যের তুলনায় ক্রীতদাসদের অধিক ব্যবহার করত। জেমস ওলসন সোংহাই শ্রম ব্যবস্থাকে শ্রমিক সংঘের মত বলে বর্ণনা করেছেন এবং সেই সাথে রাজ্যে বিভিন্ন যান্ত্রিক এবং কারিগরদের সমন্বয়ে গঠিত সংঘ বা সমিতিও ছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে।[২৪]

ফৌজদারি বিচার[সম্পাদনা]

সোনহাইতে ফৌজদারি বিচার প্রধানত সম্পূর্ণরূপে না হলেও ইসলামী নীতির উপর ভিত্তি করে প্রচলিত ছিল; বিশেষ করে আসকিয়া মুহাম্মদের শাসনামলে। স্থানীয় কাজিরা কুরআন ও হাদিস অনুসারে ইসলামি শরিয়ার আধিপত্যের অধীনে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করার দ্বারা শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব ছিলেন। অভিবাসী বণিকদের মধ্যে ছোটোখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্যে একজন অতিরিক্ত কাজির প্রয়োজন উল্লেখিত করা হয়েছিল, যিনি শুধুমাত্র বিদেশি বণিকদের মামলা মোকাদ্দমা পরিচালনা করতেন। রাজাগণ সাধারণত কোন আসামীর বিচার করতেন না; যাহোক, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে হলে তা ভিন্ন কথা; যেমন: রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত অপরাধের বিচার করতে রাজাগণ বাধ্যতা বোধ করতেন এবং এইভাবে তাদের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতেন। প্রতিটি বিচারের ফলাফলই সাধারণত "শহরে একজন ঘোষণাকারী" দ্বারা ঘোষণা করা হতো এবং বেশিরভাগ তুচ্ছ অপরাধের শাস্তি সাধারণত পণ্য বাজেয়াপ্ত করা বা কারাবাস অন্তর্ভুক্ত ছিল; কারণ পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে অসংখ্য কারাগার তৈরি করা হয়েছিল। [২৫]

কাদিরা স্থানীয়ভাবে টিম্বুকটু ও জেনের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক শহরে কাজ করতেন। রাজা কাজি নিযুক্ত করতেন এবং শরিয়া আইন অনুযায়ী প্রচলিত সাধারণ অপকর্মগুলি মোকাবিলা করেন। কাজির কাছে ক্ষমা বা আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতাও ছিল। আসারা পদবীধারী একজন পুলিশ কমিশনারের মতো কাজ করতেন, যার একমাত্র দায়িত্ব ছিল শাস্তি কার্যকর করা। আইনজ্ঞরা প্রধানত একাডেমিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ছিল এবং অধ্যাপকরা প্রায়শই সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক পদ গ্রহণ করার জন্য নির্বাচিত হতেন এবং অনেকেই কাজি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও করতেন। [২৬]

সরকার[সম্পাদনা]

তৎকালীন সমাজের উচ্চশ্রেণীর লোকরা (বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও শাসকশ্রেণী) ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল এবং এর বিপরীতে নিম্নবর্গের লোকেরা প্রায়শ সনাতন ধর্ম অথবা ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকীয় ধর্মগুলি অনুসরণ করতে থাকে। ধর্মোপদেশগুলিতে রাজার আনুগত্যের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। টিম্বক্টু ছিল শিক্ষার মূল রাজধানীসোনি আলি রাজকীয় আদালতের অধীনে একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে আস্কিয়া মুহাম্মদ দ্বারা সম্প্রসারিত হয়, যা নাইজার উপত্যকার আশেপাশের স্থানীয় উপ-নদী প্রভাবিত রাজ্যসমূহের সভাপতিত্বের জন্য একজন করে গভর্নর এবং মেয়র নিয়োগ করেছিল। এই স্থানীয় প্রধানদের তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল; তবে শর্ত ছিলো যে, তারা সোনহাই নীতিকে কখনোই দুর্বল হতে দিবে না। [২৭] কেন্দ্রীয় সরকারে বিভাগীয় পদ বিদ্যমান ছিল। হাইকয় ছিলেন ফ্লিট কমান্ডার, যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে তুলনামূলক সামরিক ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ফারি মন্ডযো ছিলেন কৃষি মন্ত্রী, যিনি রাজ্যগুলির কৃষি সম্ভার পরিচালনা করতেন। কালিসার খামারকে কি-যের্বার মতো ইতিহাসবিদরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি সাম্রাজ্যিক কোষাগারের তত্ত্বাবধান করতেন। এছাড়া কোরে ফার্মা নামে একজন "শ্বেতাঙ্গ বিদেশীদের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী" ছিলেন।[২৮]

দখলীকৃত অঞ্চলগুলিতে সোনহাই আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য সীমান্তবর্তী পাহারাদারি এবং প্রদেশগুলির উপর কর আরোপ করা হয়েছিল; যার বিনিময়ে সেই প্রদেশগুলিকে প্রায় সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। সোনহাই শাসকরা শুধুমাত্র সেই প্রতিবেশী রাজ্যগুলির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিলেন, যার সামগ্রিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল এবং তা সাধারণত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। প্রতিটি শহরের প্রতিনিধিত্ব করত একজন সরকারি কর্মকর্তারা, যারা আজকের কেন্দ্রীয় আমলাদের মতো পদ ও দায়িত্ব পালন করতেন।

আসকিয়া মুহাম্মদের অধীন, সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীকরণ বৃদ্ধি পায়। তিনি টিমবুকটুতে শিক্ষার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করেন এবং অধ্যাপকদের একটি প্রণোদনা হিসেবে বড় পেনশন দিয়ে পুরস্কৃত করতেন। এছাড়াও তিনি অগ্রাধিকার ও মুসাবিদার একটি আইন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই আইনের মাধ্যমে একজন অভিজাত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত যিনি দারিদ্র্যের সম্মুখীন হওয়া লোকদের উদারভাবে ফিরিয়ে দিতেন– তাদের বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন করেন। এই নীতির অধীনে মুহাম্মদ সোনহাইতে অনেক স্থিতিশীলতা এনেছিলেন এবং এই নিবন্ধিত সংস্থার দুর্দান্ত প্রমাণগুলি এখনও অন্যান্যদের মধ্যে লিও আফ্রিকানাসের মতো মাগরেব লেখকদের রচনায় সংরক্ষিত রয়েছে।।

ধর্ম[সম্পাদনা]

সুন্নি রাজবংশ তাদের উত্তরসূরি আস্কিয়া রাজবংশের বিপরীতে মূল সোনহাই ঐতিহ্যের অনেক দিক বজায় রেখে ইসলাম অনুশীলন করেছিল বলে বর্ণিত আছে।[১২] তবে আসকিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আসকিয়া মুহাম্মদ একটি সম্পূর্ণ ইসলাম ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনে নেতৃত্ব দেন এবং তিনি মক্কায় তীর্থযাত্রা করেন।[১২] তিনি পূর্ববর্তী সুন্নি রাজবংশীয় শাসকদের বিপরীতে ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকীয় ধর্ম প্রভাবিত ইসলাম পালন নিষিদ্ধ করেন এবং সাম্রাজ্যে সুন্নি ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখেন।[১২]

সামরিক শক্তি[সম্পাদনা]

সোনহাই রাজকীয় সশস্ত্র বাহিনীতে তৎকালীন "হিকয়" (অ্যাডমিরাল) এর নেতৃত্বে একটি নৌবাহিনী, অশ্বারূঢ় তীরন্দাজদের নিয়ে গঠিত একটি অশ্বারোহী বাহিনী, একটি পদাতিক বাহিনী এবং একটি উটারোহী বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা যুদ্ধে শত্রুকে আঘাত করার জন্য রাজকীয় আস্তাবলে একটি লম্বা শিংওয়ালা ষাঁড়ের পালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতো। বিরোধী শিবিরকে হয়রানি করার জন্যও একদল শকুনও ব্যবহার করা হতো।

সম্রাট স্বয়ং সামরিক বাহিনীর প্রধান কৌশলবিদ এবং কমান্ডার-ইন-চিফ ছিলেন এবং এর সাথে বালামা পদে নিযুক্ত একজন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনা জেনারেল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। জ্যাঙ্কি ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্পস জেনারেল এবং ওয়াঙ্কি ছিলেন একটি সামরিক ইউনিটের দায়িত্বে থাকা একজন লেফ্টেন্যান্ট। সজ্জিত তীরন্দাজদের প্রধানকে বলা হত জিভ ফার্মা এবং এটি সাম্রাজ্যের চেইন অব কমান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল এবং এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছিল। তাকে কাবারা এবং আয়ুরো বন্দরে দুইজন ভাইস-অ্যাডমিরাল দ্বারা সহায়তা করা হত এবং নাইজার নদীর তীরে সৈন্যদের সর্বদা দ্রুত চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় এক হাজারেরও বেশি ক্যাপ্টেনকে কমান্ড করতেন। সুন্নি আলি ওওলাতাতে একটি স্থল বন্দর স্থাপন করে একে কাবারার বন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। ফলে তখন কেবল মালীয় অংশ অবশিষ্ট ছিল; তাছাড়া বাকি অংশ–যা ওওলাতা পর্যন্ত চলে গিয়েছে–তা সাম্রাজ্যের পতনের পর সাহারার সাথে যুক্ত করা হয়েছিল।

পদাতিক বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন একজন জেনারেল যাকে, বলা হতো ন্যয় হুরি ( যুদ্ধের হাতি ) এবং উটের অশ্বারোহী একজন–যাকে বলা হয় গু– তিনি নেতৃত্বে ছিলেন গাই বা অশ্বারোহী বাহিনীর। অশ্বারোহী বাহিনী প্রধানত উত্তর প্রদেশ থেকে নিয়োগকৃত বারবারদের নিয়ে গঠিত ছিল।

সোংহাইতে মোট তিনটি সামরিক প্রদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং প্রতিটিতে একদল সেনা মোতায়েন ছিল। এটিকে কয়েকটি গ্যারিসনে বিভক্ত করা হয়েছিল; কুরমিনা : যার নেতৃত্বে ছিল বালামা আর কেন্দ্রীয় প্রদেশটি সম্রাট নিজেই এবং তার ডেন্ডি ফারি দ্বারা পরিচালিত হতো। নিকটতম সামরিক প্রদেশের সেনাবাহিনীগুলি সম্রাটের সাথে একত্র হত। ঘটনাস্থলে যারা অবশিষ্ট ছিল, তারা তিন প্রদেশে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করত; সম্রাটকে বিজয়ের যুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সামনে থাকতে বাধ্য করা হত। জিনাকয় গৌণ প্রদেশ ও প্রদেশের অঞ্চলগুলিতে তাদের লেফটেন্যান্টদের শাসন করতেন। পোথলমের মতে, মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় সেনাবাহিনীর মতো " চেইন মেল এবং হেলমেটে সজ্জিত অশ্বারোহী নাইটসদের" ভারী অশ্বারোহী বাহিনী দ্বারা সোনহাই সেনাবাহিনীর আধিপত্য ছিল।[২৯] পদাতিক বাহিনীতে প্রধানত মুক্ত এবং বন্দীদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তলোয়ার, তীর এবং তামা বা চামড়ার ঢালগুলি সোনহাই পদাতিক বাহিনীর অস্ত্রাগারে সর্বদা ব্যবহৃত হতো। টোন্ডিবির যুদ্ধে সোনহাই সেনাবাহিনী ৩০,০০০ পদাতিক এবং ১০,০০০ অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে গঠিত ছিল। [২০]

শাসকদের তালিকা[সম্পাদনা]

জন স্টুয়ার্ট লিখিত আফ্রিকান স্টেটস অ্যান্ড রুলারস (২০০৫) থেকে নেওয়া নাম এবং তারিখ।[৩০]

সোনহাই ডায়াস (রাজা)[সম্পাদনা]

নাম রাজত্ব শুরু রাজত্ব শেষ
আলায়মান ৮৩৭ খ্রি. ৮৪৯ খ্রি.
জা কোই ৮৪৯ ৮৬১
তাকোই ৮৬১ ৮৭৩
আকোই ৮৭৩ ৮৮৫
কু ৮৮৫ ৮৯৭
আলী ফাই ৮৯৭ ৯০৯
বিয়াই কমাই ৯০৯ ৯২১
বিয়াই বেই ৯২১ ৯৩৩
কড়াই ৯৩৩ ৯৪৫
যম করওনিয়া ৯৪৫ ৯৫৭
ইয়ামা ডোম্বো ৯৫৭ ৯৬৯
ইয়ামা ডাংকা কিবাও ৯৬৯ ৯৮১
কুকোরাই ৯৮১ ৯৯৩
কেনকেন ৯৯৩ ১০০৫
জা কোসোই ১০০৫ ১০২৫
কোসাই দরিয়া ১০২৫ ১০৪৪
হেন কন ওয়াংকো বাধে ১০৪৪ ১০৬৩
বিয়াই কোই কিমি ১০৬৩ ১০৮০
নিন্টাসনী ১০৮০ ১১০১
বিয়াই কাইনা কিম্বা ১১০১ ১১২০
কাইনা শিনুনবো ১১২০ ১১৩৯
টিব ১১৩৯ ১১৫৮
ইয়ামা দাও ১১৫৮ ১১৭৭
ফাদাজু ১১৭৭ ১১৯৬
আলী কোরো ১১৯৬ ১২১৫
বীর ফোলোকো ১২১৫ ১২৩৫
ইয়োসিবোই ১২৩৫ ১২৫৫
ডুরো ১২৫৫ ১২৭৫
জেনকো বারো ১২৭৫ ১২৯৫
বিসি বারো ১২৯৫ ১৩২৫
বড়া ১৩২৫ ১৩৩২

সংহাই সুন্নি (শেখ)[সম্পাদনা]

নাম রাজত্ব শুরু রাজত্ব শেষ
আলী কোনন ১৩৩২ ১৩৪০
সালমান নারী ১৩৪০ ১৩৪৭
ইব্রাহিম কাবায় ১৩৪৭ ১৩৫৪
উসমান কানাফা রহ ১৩৫৪ ১৩৬২
বার কাইনা আনকাবি ১৩৬২ ১৩৭০
মুসা ১৩৭০ ১৪৭৮
বুকার জোনকো ১৩৭৮ ১৩৮৬
বুকার ডাল্লা বয়নবো ১৩৮৬ ১৩৯৪
মার কিরাই ১৩৯৪ ১৪০২
মুহাম্মদ দা.ও ১৪০২ ১৪১০
মুহাম্মদ কনকিয়া ১৪১০ ১৪১৮
মুহাম্মদ ফারি ১৪১৮ ১৪২৬
কার্বিফো ১৪২৬ ১৪৩৪
মার ফাই কোল্লি-জিম্বো ১৪৩৪ ১৪৪২
মার আরকেনা ১৪৪২ ১৪৪৯
মার আরন্দন ১৪৪৯ ১৪৬৪
সুলেমান দামান ১৪৫৬ ১৪৬৪

সোনহাই সম্রাট[সম্পাদনা]

নাম রাজত্ব শুরু রাজত্ব শেষ
সুন্নি আলী ১৪৬৪ ৬ নভেম্বর, ১৪৯২
সনি বারু ৬ নভেম্বর, ১৪৯২ ১৪৯৩
প্রথম আসকিয়া মুহাম্মদ ( আসকিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা) ৩ মার্চ, ১৪৯৩ ২৬ আগস্ট, ১৫২৮
আসকিয়া মুসা ২৬ আগস্ট, ১৫২৮ ১২ এপ্রিল, ১৫৩১
আসকিয়া মোহাম্মদ বেংকন ১২ এপ্রিল, ১৫৩১ ২২ এপ্রিল, ১৫৩৭
আসকিয়া ইসমাইল ২২ এপ্রিল, ১৫৩৭ ২ মার্চ, ১৫৩৯
প্রথম আসকিয়া ইসহাক ১৫৩৯ ২৫ মার্চ, ১৫৪৯
আসকিয়া দাউদ ২৫ মার্চ, ১৫৪৯ আগস্ট, ১৫৮২
আসকিয়া মুহাম্মদ দ্বিতীয় (আল-হাজ) আগস্ট, ১৫৮২ ১৫ ডিসেম্বর, ১৫৮৬
মুহাম্মদ বানী ১৫ ডিসেম্বর, ১৫৮৬ ৯ এপ্রিল, ১৫৮৮
আসকিয়া ইসহাক দ্বিতীয় ৯ এপ্রিল, ১৫৮৮ ১৪ এপ্রিল, ১৫৯১

সোনহাই সম্রাট (ডেন্ডি থেকে নির্বাসনে শাসিত)[সম্পাদনা]

নাম রাজত্ব শুরু রাজত্ব শেষ
মুহাম্মদ গাও ১৪ এপ্রিল, ১৫৯১ ১৫৯১
নুহ ১৫৯১ ১৫৯৯
হারুন ১৫৯৯ ১৬১২
আল-আমিন ১৬১২ ১৬১৮
দাউদ দ্বিতীয় ১৬১৮ ১৬৩৫
ইসমাইল ১৬৩৫ ১৬৪০
আসকিয়া হাংগা ১৭০০ ১৭৬১
সামসু-বেরি ১৭৬১ ১৭৭৯
হরগনি ১৭৭৯ ১৭৯৩
সামসু কেয়ানা ১৭৯৩ ১৭৯৮
ফোদি মারিয়াউমফা ১৭৯৮ ১৮০৫
টোমো ১৮০৫ ১৮২৩
বাসারউ মিসি ইজে ১৮২৩ ১৮৪২
বউমি (আসকিয়া কোডামা কোমি) ১৮৪২ ১৮৪৫
আসকিয়া কোজে বাবা ১৮৪৫ ১৮৬৪
কোজে বাবা বাকি ১৮৬৪ ১৮৬৫
আসকিয়া ওয়ানকাই ১৮৬৫ ১৮৬৮
আসকিয়া বিগো ফর্মা ১৮৬৮ ১৮৮২
আসকিয়া দাউদা ১৮৮২ ১৮৮৭
আসকিয়া মাল্লা ১৮৮৭ ১৯০১

ডান্ডিতে নির্বাসিত অবস্থায় সোংহাইরা ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সোংহাই রাজবংশের উত্তরসূরি হিসেবে একটি অতি ক্ষুদ্র অঞ্চলের (যা পূর্বে সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল) ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ১৯০১ সালের দিকে ঔপনিবেশিক ফ্রান্স ড্যান্ডি থেকেও সোংহাই রাজবংশকে উৎখাত করে।

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Isichei, Elizabeth. A History of African Societies to 1870. Cambridge: Cambridge University Press, 1997. Print.
  • Shillington, Kevin. History of Africa . 2nd . NY: Macmillan, 2005. Print.
  • Cissoko, S. M., Timbouctou et l'empire songhay, Paris 1975.
  • Lange, D., Ancient Kingdoms of West Africa, Dettelbach 2004 (the book has a chapter titled "The Mande factor in Gao history", pp. 409–544).
  • Gomez, Michael A., African Dominion: A New History of Empire in Early and Medieval West Africa. Princeton University Press, 2018.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

  • Isichei, Elizabeth. A History of African Societies to 1870. Cambridge: Cambridge University Press, 1997. Print.
  • Shillington, Kevin. History of Africa. 2nd. NY: Macmillan, 2005. Print.
  • Cissoko, S. M., Timbouctou et l'empire songhay, Paris 1975.
  • Lange, D., Ancient Kingdoms of West Africa, Dettelbach 2004

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bethwell A. Ogot, Africa from the Sixteenth to the Eighteenth Century, (UNESCO Publishing, 2000), 303.
  2. Taagepera 1979, পৃ. 497।
  3. David C. Conrad (২০০৯)। Empires of Medieval West Africa 
  4. Timbuktu and the Songhay Empire: Al-Sadi's Tarikh al-Sudan down to 1613 and other contemporary documents | John Hunwick | Page 35 (xxxv)
  5. Timbuktu and the Songhay Empire: Al-Sadi's Tarikh al-Sudan down to 1613 and other contemporary documents | John Hunwick | Page 36 (xxxvi)
  6. Levtzion ও Hopkins 2000, পৃ. 300।
  7. Stride, G.T & C. Ifeka: "Peoples and Empires of West Africa: West Africa in History 1000–1800". Nelson, 1971
  8. Sonni ʿAlī.(2007). Encyclopædia Britannica. Ultimate Reference Suite. Chicago: Encyclopædia Britannica.
  9. The Cambridge History of Africa, Vol 5: University Press, 1977, pp 421
  10. Daniel, McCall; Norman, Bennett (১৯৭১)। Aspects of West African Islam। Boston University, African Studies Center। পৃষ্ঠা 42–45। 
  11. Thornton, John K.. Warfare in Atlantic Africa, 1500-1800 (Warfare and History) (Kindle Locations 871-872). Taylor and Francis. Kindle Edition.
  12. Willard, Alice (১৯৯৩-০৪-০১)। "Gold, Islam and Camels: The Transformative Effects of Trade and Ideology": 88–89। আইএসএসএন 0733-4540 
  13. Meri, Josef W. (২০০৬)। Medieval Islamic Civilization: L-Z, index। Taylor & Francis। আইএসবিএন 9780415966924 
  14. Loimeier, Roman (২০১৩)। Muslim Societies in Africa: A Historical Anthropology। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 9780253007971। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২২ 
  15. "Kingdoms of Africa - Niger"www.historyfiles.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৩ 
  16. Abitbol, M. (১৯৯২)। "The end of the Songhay empire"General History of Africa vol. V: Africa from the Sixteenth to the Eighteenth Century। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  17. Stoller, Paul (১৫ জুন ১৯৯২), The Cinematic Griot: The Ethnography of Jean Rouch, University of Chicago Press, পৃষ্ঠা 56, আইএসবিএন 9780226775463, সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৩ 
  18. Owen Jarus (২১ জানুয়ারি ২০১৩)। "Timbuktu: History of Fabled Center of Learning"Live Science 
  19. "Songhai Empire"World History Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৫ 
  20. Unesco. International Scientific Committee for the Drafting of a General History of Africa (1998)
  21. Shillington, Kevin (২০১৩)। Encyclopedia of African History 3-Volume SetRoutledge। পৃষ্ঠা 1589। আইএসবিএন 9781135456702 
  22. Hunwick, John (১৯৭৬)। "Songhay, Borno, and Hausaland in the sixteenth century," in The History of West AfricaColumbia University Press। পৃষ্ঠা 264–301। 
  23. Festus, Ugboaja Ohaegbulam (১৯৯০)। Towards an Understanding of the African Experience from Historical and Contemporary PerspectiveUniversity Press of America। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 9780819179418 
  24. Olson, James Stuart. The Ethnic Dimension in American History. New York: St. Martin's Press, Inc., 1979
  25. Lady Lugard 1997, পৃ. 199–200।
  26. Dalgleish 2005
  27. Iliffe 2007, পৃ. 72।
  28. Unesco. International Scientific Committee for the Drafting of a General History of Africa (1998), পৃ. 81-82
  29. Potholm, Christian P. (২০১০)। Winning at War: Seven Keys to Military Victory Throughout HistoryRowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 9781442201309 
  30. Stewart, John (২০০৫)। African States and Rulers। McFarland। পৃষ্ঠা 206। আইএসবিএন 0-7864-2562-8