সুন্নি আলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সোনি আলি
সোনহাই সাম্রাজ্যের সম্রাট; সুন্নি রাজবংশের ১৫শ শাসক
সোনহাই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি; আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ।
সোনহাই সাম্রাজ্যের শাসক
রাজত্ব১৪৬৪–৬ নভেম্বর, ১৪৯২
রাজ্যাভিষেক১৪৬৪
পূর্ববর্তী রাজাসুলেমান ড্যান্ডি
পর্ববর্তী রাজাসুন্নি বারু
জন্মআলি কোলন
মৃত্যু১৪৯২
রাজবংশসুন্নি রাজবংশ
ধর্মইসলাম

সুন্নি আলি বা সি আলি ছিলেন[১][২][৩] প্রায় ১৪৬৪ থেকে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সোংহাই সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট এবং সুন্নি রাজবংশের ১৫শ শাসক। তিনি সুন্নি আলি বের (বের অর্থ "মহান")[৪]আলি কোলন নামেও পরিচিত ছিলেন। সুন্নি আলীর নির্দেশে অনেক শহর দখল করে সু-সুরক্ষিত করা হয়; উদাহরণস্বরূপ, ১৪৬৪ সালে দখলীকৃত টিমবুকটু এবং ১৪৭৫ সালে দখলীকৃত জেনি। সুন্নি আলী টিমবুকটুর পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে একটি দমনমূলক নীতি পরিচালনা করেছিল। বিশেষ করে সান্কোর অঞ্চলের যারা তুয়ারেগের সাথে যুক্ত ছিল এবং শহরের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য যাদের আলী বহিষ্কার করেছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

তাঁর জন্মগত নাম ছিল আলী কোলন। কোলন ১৪৬৪ সালে সুলেমান ড্যান্ডির স্থলাভিষিক্ত হন। তার আঠাশ বছরের রাজত্বে তিনি দক্ষিণ-পূর্বে কেবির সীমা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ডিজেনে পর্যন্ত নাইজার নদীর তীরের বিস্তৃত অঞ্চল জয় করেছেন এবং এই বিজয়ের জন্য তিনি একটি পুনর্গঠিত পদাতিক ও অশ্বারোহী বাহিনী ব্যবহার করেছিলেন।

সোনি আলী নাইজার নদীতে একটি নৌবহর সংগঠিত করেছিলেন। তার শাসনামলেই সোনহাই রাজ্য মালি সাম্রাজ্যের সীমা অতিক্রম করে এবং মালি সাম্রাজ্যের (এরও আগে ঘানা সাম্রাজ্য ) অধীনস্ত অঞ্চলসমূহকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।

সুন্নি আলি শহুরে মুসলিম ও গ্রামীণ অমুসলিম উভয় ধারার উপর নিজের শাসন করেছিলেন এমন সময়ে, যখন বিভিন্ন বিশ্বাসের ঐতিহ্যগত সহাবস্থান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছিল। তবে ইসলামের প্রচার করার সময় আফ্রিকীয় সর্বপ্রাণবাদের প্রতি তার আনুগত্য কিছু লেখককে তাকে বাহ্যিক বা নামমাত্র মুসলিম হিসাবে বর্ণনা করতে উদ্বুদ্ধ করে।[৫]

আলী একজন উজ্জ্বল কৌশলবিদ ছিলেন, যিনি ২৬ বছরে ৩২টি যুদ্ধ করেছেন এবং সবগুলিই জিতেছেন। তিনি তার সশস্ত্র বাহিনীকে সংস্কার করন; অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীতে বিভক্ত একটি পেশাদার বাহিনী গড়ে তুলেন এবং অশ্বারোহী বাহিনীর একটি বড় অংশ অভিজাতদের দ্বারা গঠিত হয়েছিল; কিন্তু তা ক্রীতদাস এবং বন্দীদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তিনি নৌবাহিনীর জন্য হাই-কোই ( কমান্ডার-ইন-চীফ ) পদ তৈরি করেন বলে কথিত আছে এবং তার নৌ বাহিনীতে সোরকো জেলেদের ক্রুদের দ্বারা চালিত প্রায় ৪ শতাধিক নৌকা ছিল। এটি ছিল নাইজার নদীর তীরে তার সাফল্যের মূল হাতিয়ার, যা হাজার হাজার কিলোমিটার জলপথে দ্রুত সৈন্য পরিবহন করতে সক্ষম হয়েছিল।

বর্ণিত আছে যে তার মা ফারা শহরে থাকতেন, যেখানে মানুষ ইসলাম শত্রুতা হিসেবে দেখেছিল এবং সেখানে ধর্মীয় নেতারা ছিলেন সোনহাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণীকারী অথবা যাদুকর। কিন্তু একজন সুদানী রাজপুত্র হওয়ার কারণে, আলী বারুকে মুসলমান হতে হয়েছিল এবং গাওর মসজিদগুলিতে নিজের অবদান প্রমাণ করতে হয়েছিল। তিনি ১৪৬৪ সালে তার রাজত্ব শুরু করেছিলেন। তবে তাঁর জন্ম তারিখ সম্পর্কে ঠিক বর্ণনা পাওয়া যায় না। এটি অবশ্যই অনেক আগে হবে এবং "তেরার সংঘয়ের ঐতিহ্য" কার্থালা সংস্করণে তা ২৭ বছর, ৪ মাস আগে বর্ণনা করা হয়েছে; অর্থাৎ তিনি ২৭ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। তিনি ডোগন এবং ফুলানি উপজাতিদের পরাজিত করেছেন, যারা সবাই সোনহাই রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তার পরে তিনি মসি আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। ১৪৬৮ সালের ২০ জানুয়ারী আলী টিম্বুকতু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন, যা পূর্বে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি গাও রাজ্যকে একটি সাম্রাজ্য বানিয়েছিলেন। তুয়ারেগদের বহিষ্কার করা হয়েছিল বা ভাসালেজে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

এর পর সুন্নি আলি দ্রুত ওলাতা এবং জেনি আক্রমণ করেন, যা সবেমাত্র মালি সাম্রাজ্যের কাছ থেকে তার স্বাধীনতা লাভ করেছিল। টিম্বক্টু থেকে প্রায় ৪০০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ডিজেনে কয়েক শত নৌকা নিয়ে আসা একটি সোংহাই সেনাবাহিনী আক্রমণ করে এবং তা দখলের চেষ্টা করে; কিন্তু তার অবরোধে বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল। ডিজেনে দখলে নেওয়া হলে সুন্নি আলি বার শহরের রানীকে বিয়ে করেন এবং এটিকে তার সাম্রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করেন। এইভাবে পশ্চিম আফ্রিকার তিনটি প্রধান বাণিজ্যিক শহরকে একক কর্তৃত্বের অধীনে একত্রিত করে। পরাজিতদের তিনি দাস করতে দ্বিধা বোধ করেননি; এমনকি তারা মুসলমান হলেও।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

১৪৯২ সালের ৬ই নভেম্বর আলী মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়েছে। তারিখ আল-সুদানের মতে, আলী নাইজার নদী পার হওয়ার সময় সে নদীতে ডুবে যান। [৬] মৌখিক ঐতিহ্য বিশ্বাস করে যে, তাকে তার বোনের ছেলে আসকিয়া মুহাম্মাদ তুরে হত্যা করে। [৬][৭] তার স্থলাভিষিক্ত হয় তার পুত্র সুন্নি বারু এবং তিনি আসকিয়া কর্তৃক হুমকির সম্মুখীন হন। কারণ বারুকে কখনো একজন বিশ্বস্ত মুসলিম হিসাবে দেখা যায়নি।[৮] তারপর আসকিয়া সিংহাসনে বসেন। তারিখ আল সুদানের মতে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এ কর্মের ফলে সুন্নি আলীর সকল কন্যা "আ সি কিয়া!" বলে চিৎকার করেছিলেন, যা আফসোস প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয় এবং তখন থেকে মুহাম্মদ তুরের নামের শুরুতে এই শব্দটি যুক্ত করা হয়। [৯]

অপর একটি বর্ণনা মতে, আলীর সাম্রাজ্য যখন শীর্ষে পৌঁছোয়, তখন একটি বিজয়ী অভিযান থেকে ফেরার পথে মারা যান, যা ১৪৯২ সালের নভেম্বর মাসে ডগন্স (বান্দিয়াগারা ক্লিফ) ও গৌরমা রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি অভিযান ছিল। তার ছেলে সুন্নি বারু মাত্র কয়েক মাস রাজত্ব করেছিলেন; কারণ আলীর পঞ্চাশ বছর বয়সী একজন লেফটেন্যান্ট এবং তার ভাগ্নে মুহাম্মদ তোরে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। উভয়ের অনুগত সৈন্যরা গাও-এর কাছে আঙ্কুতে মিলিত হয়। ১৪৯২ সালের এপ্রিল মোহাম্মদ তোরের অনুগত বিদ্রোহীরা বিজয়ী হয়েছিল এবং সুনি বারোকে সোংহাইয়ের দক্ষিণ-পূর্বে আইরো অঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়, যেখানে তিনি তার সিংহাসন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম না হয়েই মারা যান। [১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Walker, Robin (১৯৯৯)। The West African empire of Songhai in 10 easy lessons : introduction to black history। Siaf Millar। Concept Learning Ltd। আইএসবিএন 1-903181-00-3ওসিএলসি 47678165 
  2. Adeleke, Tunde (১৯৯৬)। Songhay (1st সংস্করণ)। Rosen Pub. Group। আইএসবিএন 0-8239-1986-2ওসিএলসি 31936544 
  3. "Chapter 2: The Origin of the Sonni" (পিডিএফ)siiasi.org। Sankore Institute of Islamic African Studies International। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Walker, Robin (১৯৯৯)। The West African empire of Songhai in 10 easy lessons : introduction to black history। Siaf Millar। Concept Learning Ltd। আইএসবিএন 1-903181-00-3ওসিএলসি 47678165 
  5. Saʻdī, ʻAbd al-Raḥmān ibn ʻAbd Allāh,? (১৯৯৯)। Timbuktu and the Songhay Empire : Al-Saʻdi's Taʼrīkh al-Sūdān down to 1613, and other contemporary documents। John O. Hunwick। Brill। আইএসবিএন 90-04-11207-3ওসিএলসি 40602667 
  6. Saʻdī, ʻAbd al-Raḥmān ibn ʻAbd Allāh,? (১৯৯৯)। Timbuktu and the Songhay Empire : Al-Saʻdi's Taʼrīkh al-Sūdān down to 1613, and other contemporary documents। John O. Hunwick। Brill। আইএসবিএন 90-04-11207-3ওসিএলসি 40602667 
  7. Lipschutz, Mark R. (১৯৮৬)। Dictionary of African historical biography। R. Kent Rasmussen (2nd ed., expanded and updated সংস্করণ)। University of California Press। আইএসবিএন 0-520-05179-3ওসিএলসি 14069361 
  8. Ohaegbulam, Festus Ugboaja (১৯৯০)। Towards an Understanding of the African Experience from Historical and Contemporary Perspectives (ইংরেজি ভাষায়)। University Press of America। আইএসবিএন 978-0-8191-7941-8 
  9. "African Legends"। Africanlegends.info। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১৪ 
  10. J. Desmond Clark, J. D. Fage, Roland Oliver, Richard Gray, John E. Flint, G. N. Sanderson, A. D. Roberts et Michael Crowde, The Cambridge history of Africa, vol. 3, Cambridge, Cambridge University Press, 1970, 818 p.আইএসবিএন 978-0-521-20981-6