যশপাল শর্মা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যশপাল শর্মা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামযশপাল শর্মা
জন্ম(১৯৫৪-০৮-১১)১১ আগস্ট ১৯৫৪
লুধিয়ানা, পাঞ্জাব, ভারত
মৃত্যু১৩ জুলাই ২০২১(2021-07-13) (বয়স ৬৬)
নতুন দিল্লি, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, মাঝেমধ্যে উইকেট-রক্ষক, আম্পায়ার, রেফারি
সম্পর্কচেতন শর্মা (ভ্রাতুষ্পুত্র)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৪৫)
২ আগস্ট ১৯৭৯ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৩ নভেম্বর ১৯৮৩ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ২৬)
১৩ অক্টোবর ১৯৭৮ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই২৭ জানুয়ারি ১৯৮৫ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭৩/৭৪—১৯৮৬/৮৭পাঞ্জাব
১৯৮৭/৮৮—১৯৮৯/৯০হরিয়ানা
১৯৯১/৯২—১৯৯২/৯৩রেলওয়েজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৩৭ ৪২ ১৬০ ৭৪
রানের সংখ্যা ১৬০৬ ৮৮৩ ৮৯৩৩ ১৮৫৯
ব্যাটিং গড় ৩৩.৪৫ ২৮.৪৮ ৪৪.৮৮ ৩৪.৪২
১০০/৫০ ২/৯ ০/৪ ২১/৪৬ ০/১২
সর্বোচ্চ রান ১৪০ ৮৯ ২০১* ৯১
বল করেছে ৩০ ২০১ ৩৬৫০ ৫৬৮
উইকেট ৪৭ ১৩
বোলিং গড় ১৭.০০ ১৯৯.০০ ৩৩.৭০ ৩৬.৭৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ১/৬ ১/২৭ ৫/১০৬ ৪/৪১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৬/– ১০/– ৯০/২ ২৮/১
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

যশপাল শর্মা (উচ্চারণ; পাঞ্জাবি: ਯਸ਼ਪਾਲ ਸ਼ਰਮਾ; জন্ম: ১১ আগস্ট, ১৯৫৪—মৃত্যু: ১৩ জুলাই, ২০২১) পাঞ্জাবের লুধিয়ানা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রেলওয়েজ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে পাঞ্জাবের বিদ্যালয় দলের সদস্যরূপে জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যালয় দলের বিপক্ষে ২৬০ রানের ইনিংস খেলে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। দুই বছরের মধ্যেই রাজ্য দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। উত্তর অঞ্চলের পক্ষে খেলে ভিজ্জি ট্রফির শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুম পর্যন্ত যশপাল শর্মা’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ক্রিকেটে কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা গিয়েছিল যশপাল শর্মার। কিন্তু, সাহস গুণে, মনোযোগ, আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব ও ধৈর্যশীলতার কারণে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধতার সীমারেখা অতিক্রম করে ভারত দলে খেলেছেন। দলের বিপর্যয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন সঙ্কোচহীন চিত্তে। খাঁটিমানের আত্মরক্ষার্থমূলক ভাব বজায় রেখে যে-কোন ধরনের বোলিং আক্রমণে সমুচিত জবাব দিতেন তিনি। তবে, তার খেলার ধরন তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। তাসত্ত্বেও, দলে তার অমূল্য ভূমিকা নিয়ে কেউই দ্বিমত পোষণ করতেন না। ১৯৮০-এর দশকে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যাপকভাবে সচেষ্ট ছিলেন।

প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ইনিংস খেলেন ১৭৩ রান সংগ্রহের মাধ্যমে। দিলীপ ট্রফিতে উত্তর অঞ্চলের সদস্যরূপে দক্ষিণ অঞ্চলের বিপক্ষে এ ইনিংস খেলাকালীন ভাগবত চন্দ্রশেখর, ইরাপল্লী প্রসন্নশ্রীনিবাসরাঘবন ভেঙ্কটরাঘবনের বোলিং মোকাবেলান্তে অগ্রসর হয়েছিলেন তিনি। তবে এর পরপরই অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে ভারতে দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি তিনি।

পরের বছর ইরানি ট্রফিতে ৯৯ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে, কয়েকবছর পর পাকিস্তান গমনের উদ্দেশ্যে ভারত দলে তাকে ঠাঁই দেয়া হয়। এ সফরে তিনি কেবলমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার সুযোগ পান। দুইটি ওডিআইয়ে অংশ নেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। বিশ্বকাপে অংশ নেন। এর পরপরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজের আয়োজন করা হলেও তিনি খেলার সুযোগ পাননি। এ সফরের প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নিয়ে ৫৮ গড়ে ৮৮৪ রান তুলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাঁইত্রিশটি টেস্ট ও বিয়াল্লিশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন যশপাল শর্মা। ২ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৯ অক্টোবর, ১৯৮৩ তারিখে দিল্লিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

ইংল্যান্ডে তার সুন্দর খেলায় প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পরবর্তীতে কয়েকটি টেস্ট খেলার সুযোগ পান। এ পর্যায়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের মুখোমুখি হন। কানপুরের গ্রীন পার্ক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টে জোড়া শূন্য রানের সন্ধান পান। তবে, পরের খেলাতেই প্রথমবারের মতো শতরানের ইনিংস খেলেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে পরের টেস্টেই আরেকটি শতরানের ইনিংস খেলার দোরগোড়ায় উপনীত হয়েছিলেন। তবে, আলোকস্বল্পতার কারণে ৩.৪ ওভারে পূর্বেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেছিলেন তিনি।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমের পুরোটা সময় জুড়ে তার খেলার মান স্থির পর্যায়ের ছিল। কিন্তু প্রায়শই ব্যতিক্রমী পন্থায় প্রধান ব্যাটসম্যানদেরকে সহায়তাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। মূলতঃ রক্ষণাত্মক ধাঁচের ব্যাটিং করতেন। কিন্তু দলের প্রয়োজনে মারমুখী ভঙ্গীমায় অগ্রসর হতে দ্বিধাবোধ করতেন না।

অস্ট্রেলিয়া গমন[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমনে খেলায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি। দলের নিয়মিত সদস্যরূপে ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ড, ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করেন। সর্বদাই নিজেকে স্থানচ্যুত হয়ে না পড়া ব্যাটসম্যানেরূপে পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট থাকতেন।

১৯৮০-৮১ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তুলেছিলেন যশপাল শর্মা। ৪৬৫ মিনিটে ২০১ রান তুলে অপরাজিত থাকেন। ঐ সিরিজের অ্যাডিলেড টেস্টে ৪৭ রান তুলেন। সন্দ্বীপ পাতিলের সাথে ১৪৭ রানের জুটি গড়েন। এ সফরে এটিই তার উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। এরপর তাকে দলের বাইরে রাখা হয়। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে দলে প্রত্যাবর্তন করেন। মাদ্রাজের এম. এ. চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন। খেলার দ্বিতীয় দিনের পুরোটা সময়ে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথকে সাথে নিয়ে পাড় করে দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা ৩১৬ রান তুলেন।

পরের বছর পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে ম্যালকম মার্শালের বলে মাথায় জোড়ালো আঘাত পান। এরফলে তিনি অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

স্বল্প কিছু সাধারণমানের খেলায় উপহার দেয়ার পর ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে যশপাল শর্মাকে ভারত দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাসত্ত্বেও ভারতের শিরোপা বিজয়ে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

উদ্বোধনী খেলায় ৮৯ রান তুলে দলের পক্ষে সর্বাধিক রান তুলেন। এরফলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে তাদের প্রথম পরাজয়ের রস আস্বাদন করান। সেমি-ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রান তুলে চূড়ান্ত খেলার দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করেন। বব উইলিসের প্রায় ইয়র্কার আকৃতির বলকে আলতো ছোঁয়ায় স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারার বিষয়ে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও সুখকর দিক ছিল।

দেশে প্রত্যাবর্তন করে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। অমৃতসরে উত্তর অঞ্চলের সদস্যরূপে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে তিনদিনের খেলায় অংশ নেন। ভিভ রিচার্ডসের বলে পরপর চারটি ছক্কা হাঁকান। তবে, আরও দুইটি আন্তর্জাতিক খেলায় তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে না পারায় দৃশ্যত তার খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। পরের বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি খেলায় তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেলেও একটি খেলাতেই কেবল দশের অধিক রান তুলতে পেরেছিলেন।

অবসর[সম্পাদনা]

পাঞ্জাব দল ত্যাগ করে ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে হরিয়াণা দলের সাথে যুক্ত হন। রেলওয়েজের পক্ষে আরও দুই বছর খেলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে ৩৭ বছর বয়সেও উপর্যুপরি দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর এক পর্যায়ে আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

ডিসেম্বর, ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই বছর জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০০৮ সালে পুনরায় তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে উত্তর অঞ্চলের দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার ভ্রাতুষ্পুত্র চেতন শর্মা ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

ওডিআইয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ
ক্রমিক প্রতিপক্ষ মাঠ তারিখ খেলায় অবদান ফলাফল
নিউজিল্যান্ড অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ১৯৮১ ৭২ (১০৫ বল: ৩x৪, ৪x৬)  ভারত ৬ রানে বিজয়ী।[১]
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার ৯ জুন, ১৯৮৩ ৮৯ (১২০ বল: ৯x৪)  ভারত ৩৪ রানে বিজয়ী[২]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  • Cricketarchive and the current version of Cricinfo supply no middle name for Sharma. But a middle name 'Baburam' appears in an older version of Cricinfo (which can be found via google), Indian Cricket and Sujit Mukherjee.[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Sujit Mukherjee, Matched Winners, Orient Longman publishers (1996), p 152-164