ঘাটু গান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বাংলা-এর সঙ্গীত
বাউল, বাংলার আধ্যাত্মিক গান
ধরন
নির্দিষ্ট ধরন
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত
মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা
সঙ্গীত মিডিয়াবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট

ঘাটু গান পশ্চিমবঙ্গের নদী অঞ্চল ও বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলের একটি বিলুপ্তপ্রায় পল্লী সঙ্গীত বিশেষ। ঘাটে নৌকা ভিরিয়ে এই গান গাওয়া হয় বলে একে ঘাটু গান বলে।[১] এখনো ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন ঈশ্বরগঞ্জ, কেন্দুয়া এবং সিলেটের কিছু এলাকায় ঘাটুগানের নাম শোনা যায় মুখে মুখে। এটি মূলত একপ্রকার প্রণয়-গীতি। যৌনসংস্রবের জন্য এটি তার জনপ্রিয়তা হারায়। [২]

অঞ্চলভেদে ‘ঘাটু’ শব্দটির উচ্চারণগত ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়; এই শব্দটি "ঘাঁটু", "ঘেটু", "ঘেঁটু", "গেন্টু", "ঘাডু", "গাড়ু", "গাঁটু", "গাডু" প্রভৃতি বলা হয়। যেমন: নেত্রকোণা অঞ্চলে ‍এটি ‘গাডু’ নামেই পরিচিত, তবে শিক্ষিতজনরা ‘ঘাটু’ বলেন; আবার, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ‍একে ‘ঘাডু’ বলে।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ষোড়শ শতকের শেষের দিকে ঘাটু গানের প্রচলন হয় বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ গবেষকের ধারণা, শ্রীকৃষ্ণের প্রেম-মগ্ন কোন এক ভক্ত রাধা সেজে কৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলো, তখন তার কিছু ভক্ত গড়ে ওঠে; তখন এই ভক্তদের মধ্য হতে ছেলেশিশুদের রাধার সখী সাজিয়ে নেচে নেচে বিরহ সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং এভাবেই প্রচলন ঘটে ঘাটু গানের।[৪]

নামকরণ[সম্পাদনা]

ঘাট শব্দটি থেকে 'ঘাটু' শব্দটি এসেছে বলে মনে করা হয়; কারণ গান পরিবেশন ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে পরিবেশন করা হতো। একে অনেকে 'ঘাটের গান'-ও বলে।[৪]

প্রচলিত অঞ্চল[সম্পাদনা]

এটি বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের গান বলে পরিচিত।[৩] এই গান বৃহত্তর ময়মনসিংহের পূর্বাঞ্চল, বৃহত্তর কুমিল্লার উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের হাওর এলাকায় প্রচলিত।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

  • বালকদের পরিবেশনা: নারীবেশে সুদর্শী কিশোর বালক নৃত্য করে ঘাটু গান পরিবেশন করে।
  • বংশ পরম্পরার পরিবেশক; এই গানের শিল্পীরা বংশ-পরম্পরায় ঘাটু গান গেয়ে থাকে।
  • বর্ষাকালীন পরিবেশনা; এই গান বর্ষাকালে পরিবেশন করা হয়।
  • নৌকা সংশ্লিষ্ট পরিবেশনা; এই গানের আসর নৌকায় বসতো।

ঘেটুপুত্র কমলা[সম্পাদনা]

উপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ কর্তৃক রচিত উপন্যাস ঘেটুপুত্র কমলা। এ উপন্যাসটিকে কেন্দ্র করে উপন্যাসিক নিজেই একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন যার কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন ঘাটুছেলে। যার নাম কমলা। অবশেষে জমিদারের যৌনসঙ্গী হওয়ায় তারই স্ত্রীর ঈর্ষায় প্রাণ হারায় কিশোর কমলা।

একটি জনপ্রিয় ঘাটু গান[সম্পাদনা]

আমার মনের বেদনা
সে বিনে কেউ জানে না
কালা যখন বাঁজায় বাঁশি
তখন আমি রান্তে বসি
বাঁশির সুরে মন উদাসী
ঘরে থাকতে পারি না
আমার মনের বেদনা
সে বিনে কেউ জানে না।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আহমদ, ওয়াকিল (১৯৭৪)। বাংলার লোক সংস্কৃতি। ঢাকা।
  2. সাহিত্য পাঠ: ১১শ-দ্বাদাশ শ্রেণি; পৃষ্ঠা- ২৮৬
  3. শর্মা, নন্দলাল (১৯৯৯)। ফোকলোর চর্চায় সিলেট। ঢাকা।
  4. দেশ জানো বিশ্ব জানো: 'ঘাটু গান'। দৈনিক কালের কন্ঠ। প্রকাশের তারিখ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]