কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস
ইন্ডিয়ান কফি হাউস | |
---|---|
রেস্তোরাঁর তথ্য | |
প্রতিষ্ঠা | এপ্রিল ১৮৭৬ |
শহর | কলকাতা |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২২°৩৪′৩৪.১৪″ উত্তর ৮৮°২১′৪২.৪৭″ পূর্ব / ২২.৫৭৬১৫০০° উত্তর ৮৮.৩৬১৭৯৭২° পূর্ব |
ওয়েবসাইট | indiancoffeehouse |
কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস বা ইন্ডিয়ান কফি হাউস হলো উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিপরীতে অবস্থিত একটি কফি হাউস বা রেঁস্তোরা। যা কলকাতার ভারতীয় কফি হাউসের সবচেয়ে বিখ্যাত শাখা। ঐতিহ্যবাহী ও বাঙালির আড্ডাস্থল এ কফি হাউসটি কলকাতার কফিহাউসসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম। এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ স্ট্রিটের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্রদের (এবং প্রাক্তন ছাত্রদের) জন্য একটি নিয়মিত আড্ডা এবং একটি বিখ্যাত মিটিং প্লেস ছিল। এটি কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]রাধাপ্রসাদ গুপ্তের দেওয়া স্মৃতিনির্ভর তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের উদ্যোগে ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ বাঙালি কফিসেবীদের জন্য সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউর কফি-হাউস খোলা হয়। আর তার কিছুদিন পরেই খোলা হয় কলেজ স্ট্রিটের কফি-হাউসটি। ১৯৫৭ সাল নাগাদ অ্যালবার্ট হল কফি-হাউস ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের আওতা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমিক সমব্যয়ের আওতায় আসে।
এই দুই কফি-হাউসই ছিল এককালের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান আড্ডাস্থল। নিকটতম বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলির ছাত্রছাত্রীদের ভিড় করা ছাড়াও নামিদামী বুদ্ধিজীবী - লেখক, সাহিত্যিক, গায়ক, রাজনীতিবিদ, পেশাদার, ব্যবসায়ী ও বিদেশি পর্যটকদের আড্ডা দেওয়ার অবারিত জায়গা হিসাবে এটি খ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরানো বইয়ের বাজার ও নতুন বইয়ের বাজার সামনে আছে বলে হাউসটিতে সব সময়েই ভিড় থাকে। চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়, বাঙালি অভিনেতা রূদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মত প্রমুখ ব্যক্তিরাও এই কফি হাউসটিতে আড্ডা দিতো।
এই কফি হাউসটি কলেজ স্ট্রিটের মর্মস্থলে অবস্থিত যেখানে প্রখ্যাত সব বুদ্ধিজীবিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক কাপ কফি নিয়ে আড্ডা জমান। পূর্বে অ্যালবার্ট হল নামে পরিচিত এই হলঘর বহু ঐতিহাসিক সভা বা জমায়েতের সাক্ষী।
বিখ্যাত পৃষ্ঠপোষক
[সম্পাদনা]সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন, মৃণাল সেন এবং অপর্ণা সেনের মতো নিয়মিত দর্শকদের সাথে কফি হাউসের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। কফি হাউসের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য বহুমুখী মানুষের মিলনস্থল হওয়ার জন্য ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। ঋত্বিক ঘটক, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ক্রেগ জেমিসন, সুখময় চক্রবর্তীর মতো পণ্ডিত, সম্পাদক, শিল্পী এবং লেখকরা। তপন রায়চৌধুরী, বরুন দে এবং সুমিত সরকার, শাইক আহমেদ, আসিফ শামীম, কাব্য শ্রীবাস্তব, অয়ন তৌকির। রেস্টুরেন্ট এর পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে মাত্র কয়েক হয়েছে. বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কফি হাউস বিখ্যাত হাংরি প্রজন্মের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠে; মূর্তিমান কবি মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী ভাই যুগল যারা আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন তাদের গ্রেফতার ও বিচার করা হয়। এই কফি হাউসের আড্ডা সেশন থেকে অনুপ্রেরণার জন্য বেশ কিছু সাহিত্য পত্রিকার উৎস। যদিও কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস নামে পরিচিত, এই শাখাটি আসলে বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। কফি হাউস তার জন্য বিখ্যাতঅ্যাডা সেশন, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং আন্দোলনের প্রজনন স্থান হিসাবে। অনেক লোক এখানে আসে শুধু আড্ডার খাতিরে এবং শুধু দীর্ঘ কথাবার্তার অংশ হওয়ার জন্য। বিভিন্ন ধারার বেশ কয়েকজন মেধাবী ও খ্যাতিমান ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এই বিখ্যাত আড্ডায় ভিড় করছেন।[২]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]- ১৯৮৩ সালে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও সুপর্ণকান্ত ঘোষের সুরে মান্না দে কর্তৃক গাওয়া স্মৃতিচারণী "কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" শিরোনামে গানটিতে এই কফি হাউসের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩]
- আধুনিক গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তীর জনপ্রিয় গান 'কফি হাউস' 'আজ ভোরের দোষ পর দূর্ঘোষ কোরে ভোর'ও তৈরি করা হয়েছে কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সোনালি অতীত মুহূর্তগুলোর স্মৃতি নিয়ে।
- ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সীর ছবির শুটিং এখানে হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ প্রতিবেদন, নিজস্ব। "Coffee House: 'ভারতসভা'র আঁতুড়ঘর, ছিল ব্রিটিশ সেনাদের আস্তানা, এক সময় প্রায় বন্ধও হতে বসেছিল কফি হাউস"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৩।
- ↑ Service, Statesman News (২০২০-০৭-০৩)। "Curtains on the adda"। The Statesman (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৩।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০১৯-০২-০২)। "কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজও আছে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৩।