সূরা নাহল
| শ্রেণী | মাক্কী |
|---|---|
| নামের অর্থ | মৌমাছি |
| পরিসংখ্যান | |
| সূরার ক্রম | ১৬ |
| আয়াতের সংখ্যা | ১২৮ |
| ← পূর্ববর্তী সূরা | সূরা হিজর |
| পরবর্তী সূরা → | সূরা বনি ইসরাইল |
| আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ | |
| কুরআন |
|---|
| ধারাবাহিক নিবন্ধশ্রেণীর অংশ |
![]() |
সূরা আন নাহল , (আরবি: سورة النحل), (মৌমাছি) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ষোলতম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৮টি।
নামকরণ
[সম্পাদনা]এই সূরার ৬৮ আয়াতের وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ বাক্যাংশ থেকে এ নামকরণ করা হয়েছে। এও নিছক আলামত ভিত্তিক, নয়তো নাহল বা মৌমাছি এ সূরার আলোচ্য বিষয় নয়।[১]
আয়াতসমূহের মূলবিষয়বস্তু
[সম্পাদনা]১–২. আল্লাহর শাস্তি অবিশ্বাসীদের ওপর অবশ্যই নেমে আসবে, এবং কুরআনের প্রত্যাদেশ আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে প্রেরিত।
৩–৮. আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, তাঁর সৃষ্টি নিজেই এই সত্যের সাক্ষ্য দেয়।
৯. তিনিই মানুষের প্রকৃত শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক।
১০–১৪. আকাশ, পৃথিবী ও সাগরে তাঁর অসংখ্য সৃষ্টি ও নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে।
১৫. পাহাড়গুলো পৃথিবীকে স্থির রাখার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
১৬. নক্ষত্রসমূহ মানুষের পথনির্দেশের জন্য নির্ধারিত।
১৭. আল্লাহর সঙ্গে কোনো প্রতিমার তুলনা চলে না।
১৮–১৯. আল্লাহ পরম দয়ালু ও সর্বজ্ঞ।
২০–২২. মূর্তিগুলোর কোনো ক্ষমতা নেই; তারা নিজেরাও সৃষ্টি করতে অক্ষম।
২৩. অবিশ্বাসীরা একমাত্র সত্যিকারের আল্লাহকে অস্বীকার করে।
২৪–২৫. সর্বজ্ঞ আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।
২৬. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি নিজে কুরআন রচনা করেছেন।
২৭–২৮. অবিশ্বাসীরা পরিণামে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
২৯–৩১. কিয়ামতের দিনে মূর্তিপূজকেরা কঠিন হতাশায় পতিত হবে।
৩২–৩৪. সৎকর্মপরায়ণদের জন্য পরকালে উত্তম পুরস্কার নির্ধারিত আছে।
৩৫–৩৬. অবিশ্বাসীরা শুধু আল্লাহর বিচার ও শাস্তির অপেক্ষায় আছে।
৩৭. তারা নিজেদের অপরাধের দায় আল্লাহর ওপর চাপায়।
৩৮. প্রত্যেক জাতির জন্য একজন করে নবী প্রেরিত হয়েছেন।
৩৮–৩৯. অবিশ্বাস ও মূর্তিপূজার পরিণতি হবে ভয়াবহ ধ্বংস।
৪০. তারা পুনরুত্থান অস্বীকার করে।
৪১. কিন্তু পরকালে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে।
৪২. আল্লাহর আদেশমাত্রে সৃষ্টির অস্তিত্ব ঘটে — তিনি বলেন “হও”, আর তা হয়ে যায়।
৪৩. হিজরতকারীদের (মুহাজিরীন) জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
৪৪. ধৈর্যশীল বিশ্বাসীরা পুরস্কৃত হবে।
৪৫. পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থধারীদের (যেমন তাওরাত, ইনজিলের অনুসারীদের) কাছে সত্যের সাক্ষ্য নিতে বলা হয়েছে।
৪৬. কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে নবী তা মানুষের কাছে প্রচার করেন।
৪৭–৪৯. নবীর শত্রুরা শাস্তি ভোগ করবে।
৫০–৫২. সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহকেই ইবাদত করে ও তাঁরই অধীন।
৫৩–৫৫. একমাত্র আল্লাহকেই উপাসনা ও মান্য করা উচিত।
৫৬–৫৮. মূর্তিপূজকেরা অকৃতজ্ঞ।
৫৯–৬১. কুরাইশরা কন্যাসন্তানকে ঘৃণা করত, অথচ আল্লাহর জন্য কন্যা দাবি করত — এটি ছিল গুরুতর মিথ্যা।
৬২–৬৩. মানবজাতি আল্লাহর রহমতের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
৬৪. মূর্তিপূজা অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।
৬৫. শয়তান অবিশ্বাসীদের সহচর ও পথভ্রষ্টকারী।
৬৬. কুরআন নাজিল করা হয়েছে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য।
৬৭–৬৯. প্রকৃতিতে আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শন রয়েছে; মৌমাছির উদাহরণ তার অন্যতম।
৭০–৭১. মৌমাছিকেও আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে কাজ করতে হয়।
৭২–৭৪. মানুষ যা কিছু পেয়েছে, সবই আল্লাহর দান।
৭৫. তবুও মানুষ মূর্তিকে উপাস্য বানায়।
৭৬. আল্লাহর তুলনা কোনো কিছুর সঙ্গে চলে না।
৭৭. এক দাস ও এক প্রভুর উদাহরণ দিয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বোঝানো হয়েছে।
৭৮. অন্ধ ও দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের উপমা দিয়ে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য দেখানো হয়েছে।
৭৯. কিয়ামতের ঘটনাবলি মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হবে।
৮০–৮৩. আল্লাহকে মান্য করা উচিত, কারণ তিনিই সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা।
৮৪. নবী মুহাম্মদ (সা.) কেবল বার্তা প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
৮৫. মূর্তিপূজকেরা আল্লাহর দয়া স্বীকার করেও তাঁকে অস্বীকার করে।
৮৬–৮৭. কিয়ামতের দিনে তারা তাদের মূর্তির দ্বারা পরিত্যক্ত হবে।
৮৮–৮৯. প্রত্যেক জাতির জন্য সাক্ষী থাকবে, যারা তাদের কাজের সাক্ষ্য দেবে।
৯০. অবিশ্বাসীদের নেতা কঠোর শাস্তি পাবে।
৯১. নবী মুহাম্মদ (সা.) আরবদের জন্য সাক্ষী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
৯২–৯৯. আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
১০০. নবীকে কুরআন পাঠের সময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
১০১–১০২. শয়তানের বিশ্বাসীদের ওপর কোনো ক্ষমতা নেই।
১০৩. আয়াতের বদল (আব্রোগেশন) সম্পর্কিত শিক্ষা উল্লেখ আছে।
১০৪. “পবিত্র আত্মা” (জিবরাইল আঃ) কুরআন অবতীর্ণ করেছেন।
১০৫. অবিশ্বাসীরা নবীর ওপর অভিযোগ তুলেছিল যে, বিদেশিদের সাহায্যে কুরআন লেখা হয়েছে।
১০৬–১০৭. অবিশ্বাসীদের জন্য কঠোর শাস্তি নির্ধারিত।
১০৮. জোরপূর্বক ধর্মত্যাগ আল্লাহর কাছে অপরাধ নয়।
১০৮–১১০. কিন্তু ইচ্ছাকৃত ধর্মত্যাগীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
১১১. হিজরতকারীরা (মুহাজিরীন) বরকতপ্রাপ্ত।
১১২. বিচার দিবসে পুরস্কার ও শাস্তি সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গতভাবে হবে।
১১৩–১১৪. অবিশ্বাসের জন্য মক্কাবাসীদের ওপর দুর্ভিক্ষের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
১১৫–১১৯. কোন খাবার হালাল আর কোনটি হারাম তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
১২০. অজ্ঞতার কারণে করা পাপ ক্ষমা পেতে পারে।
১২১–১২৪. নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ইবরাহিম (আঃ)-এর ধর্ম অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১২৫. শুক্রবারকে উপাসনার বিশেষ দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও “সাবাথের পরিবর্তে” কথাটি সরাসরি কুরআনে নেই (এটি ব্যাখ্যামূলক ব্যাখ্যা)।
১২৬. অবিশ্বাসীদের সঙ্গে অতিরিক্ত কঠোর আচরণ না করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
১২৭. ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতা প্রতিশোধের চেয়ে শ্রেয়।
১২৮. আল্লাহ সবসময় ন্যায়পরায়ণ ও সৎ মানুষদের সঙ্গে আছেন।
আয়াতসমূহের অনুবাদ
[সম্পাদনা]بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহর নাম দিয়ে শুরু করছি যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১-১০
[সম্পাদনা]- أَتَى أَمْرُ اللّهِ فَلاَ تَسْتَعْجِلُوهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
১) আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরিক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে।
- يُنَزِّلُ الْمَلآئِكَةَ بِالْرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُواْ أَنَّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاتَّقُونِ
২)তিনি এ রূহকে তার নির্দেশানুসারে ফেরেশতাদের মাধ্যমে তার বান্দাদের মধ্য থেকে যার ওপর চান নাযিল করেন। (এ হেদায়াত সহকারে যে, লোকদের) “জানিয়ে দাও, আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই। কাজেই তোমরা আমাকেই ভয় করো।
- خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
৩) যিনি যথাবিধি আকাশরাজি ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে।
- خَلَقَ الإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ
৪) তিনি মানুষকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখ! সেই একই (মানুষ) প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী।
- وَالأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
৫) তিনি পশু সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য পোশাক, খাদ্য এবং অন্যান্য নানাবিধ উপকারিতাও।
- وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ
৬) এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও।
- وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُواْ بَالِغِيهِ إِلاَّ بِشِقِّ الأَنفُسِ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
৭) এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রÛম ব্যতীত পৌছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়াদ্র, পরম দয়ালু।
- وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
৮) তোমাদের আরোহণ করার এবং তোমাদের জীবনের শোভা-সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। তিনি (তোমাদের উপকারার্থে) আরও অনেক জিনিস সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো তোমরা জানোই না।
- وَعَلَى اللّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ وَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ
৯) সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।
- هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ
১০) তিনিই আকাশ থেকে তোমাদের জন্য পানি বর্ষণ করেন, যা পান করে তোমরা নিজেরাও পরিতৃপ্ত হও এবং যার সাহায্যে তোমাদের পশুদের জন্যও খাদ্য উৎপন্ন হয়।
১১-২০
[সম্পাদনা]২১-৩০
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "সূরা আল নাহাল এর নামকরণ"। http://www.banglatafheem.com। ১৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:-এ বহিঃসংযোগ (সাহায্য)|ওয়েবসাইট=
