মালে

স্থানাঙ্ক: ০৪°১০′৩১″ উত্তর ০৭৩°৩০′৩২″ পূর্ব / ৪.১৭৫২৮° উত্তর ৭৩.৫০৮৮৯° পূর্ব / 4.17528; 73.50889
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মালে
މާލެ
রাজধানী শহর
মালে শহর
শীর্ষ: মালে এর বায়বীয় দৃশ্য; মধ্য: মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, সুলতান পার্ক; নীচে: মালে ওয়াটারফ্রন্ট, মালে শুক্রবার মসজিদ
মালে মালদ্বীপ-এ অবস্থিত
মালে
মালে
মালে এশিয়া-এ অবস্থিত
মালে
মালে
মালদ্বীপে মালের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ০৪°১০′৩১″ উত্তর ০৭৩°৩০′৩২″ পূর্ব / ৪.১৭৫২৮° উত্তর ৭৩.৫০৮৮৯° পূর্ব / 4.17528; 73.50889
দেশ মালদ্বীপ
ভৌগোলিক অ্যাটলউত্তর মালে অ্যাটল
সরকার
 • কাউন্সিলমালে সিটি কাউন্সিল (এমডিপি)
 • মেয়রশিফা মোহাম্মাদ
আয়তন
 • পৌর এলাকা১.৯৫ বর্গকিমি (০.৭৫ বর্গমাইল)
 • মহানগর৯.২৭ বর্গকিমি (৩.৫৮ বর্গমাইল)
 Metro area also includes Hulhulé and Hulhumalé.
উচ্চতা২.৪ মিটার (৭.৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১৪)[১]
 • রাজধানী শহর১,৩৩,৪১২[১]
 • জনঘনত্ব২৩,০০২/বর্গকিমি (৫৯,৫৭০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলMVT (ইউটিসি+০৫:০০)
অ্যাসাইনড লেটারT
অঞ্চল কোড৩৩১, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪
আইএসও ৩১৬৬ কোডMV-MLE
ওয়েবসাইটmalecity.gov.mv

মালে (ধিবেহী: މާލެ; /ˈmɑːl/, locally [ˈmaːle]) হল মালদ্বীপের রাজধানী ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। এ শহরের জনসংখ্যা ১৩৩৪১২[২] এবং আয়তন ৯.২৭ বর্গ কিলোমিটার (৩.৫৮ বর্গ মাইল)। এটি পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর[৩] মধ্যে অন্যতম। ভৌগোলিকভাবে শহরটি উত্তর মালা অ্যাটল(কাফু অ্যাটল)[৪] এর দক্ষিণে অবস্থিত। প্রশাসনিকভাবে শহরটিতে একটি কেন্দ্রীয় দ্বীপ, একটি বিমানবন্দর এবং মালে সিটি কাউন্সিল পরিচালিত আরোও দুটি দ্বীপ রয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে এটি ছিল রাজা শাসিত দ্বীপ। যেখানে প্রাচীন রাজবংশ[৫] শাসন করত আর সেখানেই প্রাসাদটি অবস্থিত। শহরটিকে তখন মহল[৬] বলা হত। পূর্বে এটি দুর্গ ও দরজা দ্বারা সুরক্ষিত একটি শহর ছিল.১৯৪৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হবার পরই রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম নাসির এর শাসনকালে শহরটিকে পুনঃনির্মাণ করা হয় এবং রাজপ্রাসাদ(গনদুয়ারা),সুরম্য দুর্গসমূহ(কোশি) এবং ঘাঁটিসমূহ(বুড়ুজ) ধ্বংস করা হয়। তবে মালে ফ্রাইডে মসজিদ রয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জমি ভরাটকরণ অভিযানের মাধ্যমে দ্বীপটিকে যথেষ্ট পরিমাণ বর্ধিত করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে মালে রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও মাইলফলক ঘটনাবলির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ[সম্পাদনা]

মালের বায়বীয় দৃশ্য।

ভৌগোলিকভাবে মালে ক্যাফু অ্যাটেলে অবস্থিত হলেও প্রশাসনিকভাবে এটি এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। নগরীর কেন্দ্রীয় অংশটি মালে এর কিছু দ্বীপ দ্বারা গঠিত। আরও তিনটি দ্বীপ শহরের একাংশ গঠন করে। কেন্দ্রীয় দ্বীপে একটি বাণিজ্যিক বন্দর রয়েছে যেটি দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করে।[৭] কেন্দ্রীয় দ্বীপটিতে ব্যাপকভাবে নগরায়ন করা হয়েছে। অন্তনির্মিত অঞ্চলটি মূলত পুরো ভূখণ্ডই দখল করেছে। দেশের জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশেরও কম সংখ্যক জনগণ রাজধানী শহরে বসবাস করে এবং ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা ২০,০০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১০০,০০০ জনে। প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্র হওয়ায় মালদ্বীপ এর বেশিরভাগ অধিবাসী ও অন্যান্য অঞ্চল এ বসবাসকারী দেশ ও বিদেশ এর অনেক কর্মীরা মাঝেমধ্যে দ্বীপটির স্বল্পমেয়াদী বাসস্থানগুলোতে থাকেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পুরো দ্বীপপুঞ্জটি মালদ্বীপের রাজধানীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। "মালদ্বীপ" শব্দের অর্থ হল "মালে এর দ্বীপপুঞ্জ"।[৮]

দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী ছিল মালদ্বীপে সর্ববপ্রথম বসতি স্থাপনকারী জনগোষ্ঠী যারা বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশ ও সিংহলীয় উপকূলের পার্শ্ববর্তী তীরে এসে পৌঁছেছিল।[৯] মালদ্বীপের ভাষাগত,কথিত এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তুলনামূলক অধ্যয়ন করে জানা যায় যে লোককাহিনী ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই মালে কেন্দ্রীভূত মালদ্বীপ সমাজে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী এর প্রভাব ছিল। গিরাভারু অঞ্চলের গিরাভারু জনগোষ্ঠীরা নিজেদের প্রথম তামিল বসতি স্থাপনকারীদের বংশধর হিসেবে দাবি করে।[১০]

কথিত আছে প্রথমদিকের তামিল বসতি স্থাপনকারীরা দীপপুঞ্জকে বলত "মালাইটিভু" , যার অর্থ গারল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বা চেইন দ্বীপপুঞ্জ। আঞ্চলিক কাহিনী অনুযায়ী গিরাভারু জেলেরা টুনা মাছ ধরার পর তা কুটার জন্য তাদের দ্বীপের দক্ষিণে অবস্থিত বিশাল বালুকা সৈকতে (ফিনলহু) নিয়মিত গমন করত। প্রচুর পরিমাণে মাছের রক্ত ও বর্জ্য পানিতে ফেলার কারণে সৈকতের পানি দেখে মনে হত এক বিশাল রক্তের পুকুর (মা লে গান্দেহঃ যেখানে "মা" শব্দটি সঙ্গিস্কৃত "মহা" জার অর্থ বিশাল এবং "লে" অর্থ রক্তও)।

ঐতিহ্যগতভাবে মালদ্বীপে প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে যারা গিরাভারু সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল তাদের কোন রাজা ছিলনা। তারা একপ্রকার সহজ সরল সমাজে বাস করত যা স্থানীয় হেডম্যান দ্বারা শাসিত ছিল। যাইহোক ,একদিন উপমহাদেশের এক রাজপুত্র যার নাম ছিল কোইমালা, তিনি এক বিশাল জাহাজে করে উত্তর থেকে যাত্রা শুরু করে মালে দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছিলেন। গিরাভারুর অধিবাসীরা দূর থেকে তার জাহাজ দেখতে পেয়ে তাকে স্বাগত জানায়। তারা প্রিন্স কোইমালাকে মাছের রক্তে দূষিত সেই বিশাল বালুর তীরে বসতে দিয়েছিল। সৈকতের ধারে গাছ লাগান হয়েছিলো। বলা হয়ে থাকে যে সর্বপ্রথম যে গাছটি জন্ম নেয় তা ছিল একটি পেঁপে গাছ। (যাইহোক এটি যেকোনো ভোজ্য ফলজ গাছ কে নির্দেশ করত যেমন প্রাচীন ধিভেহি শব্দ এবং বর্তমান মহল শব্দে "ফল(ফালহোয়া)" আর পেঁপের জন্য ব্যবহৃত শব্দটি একই ছিল।[১১] সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় দ্বীপবাসীরা এই উত্তরের প্রিন্সের শাসন গ্রহণ করেছিলো। তখন সেখানে একটি প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল এবং দ্বীপের আনুষ্ঠানিক নাম মা-লে (মালা) রাখা হয়েছিল। একইসাথে নিকটতম দ্বীপের নাম রাখা হয়েছিল "হুল হু-লে"।

মালে দ্বীপের প্রধান চারটি ওয়ার্ড বা বিভাগের নামগুলো দিয়েছিল মূল গিরাভারু জেলেরা। "মাফান্নু" শব্দটি "মা" যার অর্থ বিশাল এবং "ফান্নু" (একটি স্থান যেখানে একটি গ্রামের পথ সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়) শব্দ থেকে আগত। এনবেয়ারো থেকে হেনভিরু(যেখানে জেলেরা তাদের টোপ পায়),গালু-ওলহু(পাথরের খাঁজ) থেকে গালোলহু এবং মাথি-আনগোলহি(বাতাসের গলিপথ) থেকে মাচাংগোলী।

প্রথমদিকের বিদেশি উৎসগুলিতে মালে কে বলা হত আম্ব্রিয়া বা মাহল। মালদ্বীপবাসীদের কাছে যা "ফুরমালা" অর্থাৎ "সর্বশ্রেষ্ঠ মালে" নামে পরিচিত ছিল।

১৩৩৩ সালে ইবন বতুতা মালে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি শহরটির পাশাপাশি মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জেরও একটি বিস্তৃত বিবরণ প্রদান করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে রানী রীন্দি খাদিজা মালের বাসিন্দা ছিলেন যা থেকে পরবর্তীতে দ্বীপের মধ্যস্থলে তৎকালীন সুলতান শাসকদের রাজপ্রাসাদের অন্তর্ভুক্ত থাকার ব্যাপারে আভাস পাওয়া যায়। প্রাসাদের আঙিনায় কতকগুলো গর্তের ভেতরে কড়ির মজুত ছিল,যা বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তুত রাখা হত।

ইবনে বতুতা কাঠের তৈরি কয়েকটা মসজিদের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। সুলতান মুহাম্মাদ ইমাদুদ্দিন ১৭শ শতাব্দীতে মালে দুর্গ তৈরি করেছিলেন। তিনি এ দ্বীপের উত্তর ,পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে প্রাচীর তৈরি করেছিলেন। মাছ ধরার জাহাজ ও ছোট ধোনি নৌকাগুলো একটি আভ্যন্তরীণ বন্দর ব্যবহার করত। বড় জাহাজগুলি ভিলিংলি এবং হুলহুল দ্বীপের বাহিরের বন্দরে নোঙর করা হত। দ্বীপটি এক বর্গমাইলেরও কম জায়গা দখল করেছিল এবং এর চারপাশে একটি অগভীর হ্রদ ছিল।

১৮৮৮ সালে মালেতে ২১৪৮ জন বাসিন্দা ছিল,কিন্তু জনসংখ্যার বৃদ্ধি মানুষকে বসবাসের জন্য নতুন স্থান অনুসন্ধানের দিকে ধাবিত করে। ১৯২৫-১৯২৭ সালে তৃতীয় মুহাম্মাদ শামসুদ্দিনের শাসনামলে পুরাতন দুর্গ ও জরাজীর্ণ দালানসমূহ ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং আরও ক্ষুদ্র পরিসরে পুনর্নিমাণ করা হয়েছিল। রাস্তাগুলো প্রশস্ত ও সোজা করা হয়েছিলো। প্রাক্তন বড় কবরস্থাঙ্গনগুলো মেরামত ও পরিষ্কার করা হয়েছিল আরও আবাসনের জায়গা অর্জনের জন্য।

১৯৬৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম নাসিরের শাসনামলে শহরটি পুননির্মাণ করা হলে রাজকীয় প্রাসাদ(গণদুয়ারু) , সুরম্য দুর্গগুলো (কোশি) এবং ঘাঁটিসমূহ (বুড়ুজ) ধ্বংস করা হয়। শুধু জাতীয় জাদুঘর ভবন, সুলতানের শেষ বাসভবন এবং মালে জুমার মসজিদ রয়ে গিয়েছিল। মালের জনসংখ্যা শীঘ্রই ১৯৬৭ সালে ২৯,৫২২ জনে এবং ১৯৭৭ সালে ২৯,৫২২ জনে উন্নীত হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে ১৯৮৬ সালের দিকে মালের চারপাশে অগভীর হ্রদটি দখলে নেয়া হয়।

মালের সর্বাধিক সম্মানজনক স্থানটি হল মেধুজিয়ারেই,যা মালের ফ্রাইডে মসজিদের রাস্তা জুড়ে অবস্থিত এবং সেখানে শায়খ আব্দুল বারাকাত ইউসুফের সমাধি অবস্থিত। ১৯৫৩ সালে তিনিই সর্বপ্রথম মালদ্বীপের অধিবাসীদের ইসলাম ধর্মের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন বলে বিবেচনা করা হয়।

ভূগোল[সম্পাদনা]

জলবায়ু[সম্পাদনা]

কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ এর আওতায় মালে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্গত। এপ্রিল থেকে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত মালদ্বীপে আর্দ্র মৌসুম এবং ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুকনা মৌসুম দেখা যায়। মালেতে তুলনামুলকভাবে প্রায় সারা বছরই তাপমাত্রা সামঞ্জস্যপুর্ণ থাকে। গড়ে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং গড় ন্যূনতম ২৬.৫ ডিগ্রি অথবা ৭৯.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট , যা অধিকাংশ শহরগুলোর সারাবছরের গড় তাপমাত্রার কাছাকাছি।

শহরটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে ১৯০০ মিলিমিটার বা ৭৫ ইঞ্চি। বিশ্বের সর্বাধিক নিচু স্থান হওয়ার কারণবশত মালদ্বীপের এসব জায়গায় বছরজুড়েই উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে।

উপবিভাগ[সম্পাদনা]

শহরটি ছয়টি বিভাগে বিভক্ত যার মধ্যে চারটি মালে দ্বীপে অবস্থিত। এগুলো হলঃ হেনভিরু,গালোলহু,মাফান্নু এবং মাচাঙ্গিগোহি। পঞ্চম বিভাগটি ভিলিঙ্গিলি দ্বীপের নিকটবর্তী একটি প্রাক্তন পর্যটন কেন্দ্র যা তারও পূর্বে একটি কারাগার ছিল। ষষ্ঠ বিভাগটির নাম হুলহুমালি,এক্তি কৃত্রিম দ্বীপ যা ২০০৪ সাল থেকে বসতি স্থাপন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হুলহুলে নামক বিমানবন্দর দ্বীপটি শহরটির একটি অংশ। গুলহিফালু প্রবাল দ্বীপটি উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল যা ২০০৮ সালে বাস্তবায়িত হয়।

মালে দ্বীপটি বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ এবং এটি বিশ্বের ১৬০ তম সর্বাধিক জনবহুল দ্বীপ। আশেপাশে তেমন গ্রামাঞ্চল না থাকায় প্রায় সমস্ত অবকাঠামো শহরেই স্থাপন করতে হয়। লবণমুক্ত ভূগর্ভ হতে পানি সরবরাহ করা। শহরের ৫০-৬০ মিটার (১৬০-২০০) ফুট গভীর কূপে লবণাক্ত জলকে পাম্প করে রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি লবণমুক্ত করা হয়।[১২] ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। নর্দমার তরল আবর্জনা অপ্রক্রিয়াজাত অবস্থায় সমুদ্রে নিষ্কাশন করা হয়। কঠিন বর্জ্য নিকটবর্তী দ্বীপসমূহে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে এগুলো হ্রদসমূহে পূর্ণ করা হয়। আর এভাবেই বিমানবন্দরটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে থিলাফুশি হ্রদটিও এভাবে ভরাট করা হচ্ছে।

অনেক সরকারি ভবন এবং এজেন্সি ওয়াটারফ্রন্টে অবস্থিত। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হুলহুল দ্বীপ সংলগ্ন যেখানে আভ্যন্তরীণ যাতায়াতের জন্য একটি সামুদ্রিক বিমান বেস রয়েছে। বেশ কয়েকটি ভূমি পুনর্নিমাণ প্রকল্পের দ্বারা বন্দরটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

দর্শনীয় স্থান সমূহ[সম্পাদনা]

পুরাতন ফ্রাইডে মসজিদ[সম্পাদনা]

এটি দেশের অন্যতম পুরিাতন একটি মসজিদ যা ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নান্দনিক স্থাপনা শৈলী, শৈবাল পাথরের অপূর্ব ব্যবহার ও তাতে সেটে দেয়া আছে পবিত্র কুরানের আয়াত, যার কারণে মসজিদটি বিশেষায়িত।অমুসলিমরাও মসজিদটি পরিদর্শন করতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নেয়া প্রয়োজন।

জাতীয় জাদুঘর[সম্পাদনা]

জাতীয় জাদুঘর যে বিলিডংটিতে অবস্থিত সেটি চীনের পক্ষ হতে উপহার হিসেবে প্রাপ্ত।এখানে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির বিশাল সংগ্রহ যা থেকে এই দ্বীপের ইতিহাসের অনেকখানি জানা যায়।

চীন মালদ্বীপ মৈত্রী সেতু[সম্পাদনা]

এই অসাধারণ নির্মানশৈলীর সেতুটি মালেকে হুলহুল দ্বীপের সাথে সংযুক্ত করে।

জাতীয় শিল্প জাদুঘর[সম্পাদনা]

একই ছাদের নিচে রয়েছে জাতীয় গ্রন্থগার, বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহ ও মালদ্বীপের বিভিন্ন শিল্পের অস্থায়ী প্রদর্শনী।যদিও স্থায়ী কোন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা এখানে নেই।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

পর্যটন মালদ্বীপের বৃহত্তম শিল্প। এটি জিডিপি ২৮% এবং মালদ্বীপের ৬০% বৈদেশিক মুদ্রার প্রাপ্তির পেছনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ১৯৬০ এর দশকে মাথাপিছু জিডিপি ২৬৫% এবং ১৯৯০ সালে তা আরও ১১৫% বৃদ্ধি পেয়েছিল। সরকারি করের ৯০% এরও বেশি আয় আসে আমদানি শুল্ক এবং পর্যটন কর হতে। রাজধানী মালেতে বহু পর্যটন কেন্দ্র এবং আশেপাশে অনেক রিসোর্ট রয়েছে। মালদ্বীপের কেন্দ্রীয় বন্দর এবং বন্দরটি মালেতে অবস্থিত। যা সমস্ত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। মালদ্বীপের বিমান সংস্থা মালদিভিয়ানের সদর দফতর রয়েছে মালেতে। এছাড়া ফ্লাই মি এয়ারলাইন্সের সদর দফতরও এখানে অবস্থিত।

পরিবহন[সম্পাদনা]

সড়কপথ[সম্পাদনা]

মালের দ্বীপগুলি প্রতিটি একে অপরের সাথে পাকা রাস্তার নিবিড় সংযোগের মাধ্যমে যুক্ত। এগুলো রাস্তা "মগু" (রাস্তা),হিঙ্গুন ও গোলহি( ছোট রাস্তা বা গলি) নামে পরিচিতও। রাস্তাগুলোতে ভারী মাত্রায় যাতায়াত করা হয় বিশেষকরে মালে দ্বীপের রাস্তাসমুহে। মালে ও হুলহুলে দ্বীপদুটি সিনমালে সেতুর সাথে সংযুক্ত রয়েছে, যা ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। হুলহুলে এবং হুলহুমালেকে একটি উঁচু বাঁধযুক্ত রাস্তার মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে যা তিনটি দ্বীপকে রাস্তার মাধ্যমে সংযুক্ত করার সুযোগ দেয়। গনপরিবহনের কথা বলতে গেলে সেখানে বেশ কয়েকটি বাস লাইন রয়েছে যেগুলো পাশাপাশি তিনটি দ্বীপের মধ্যে চলাচল করে।

আকাশপথ[সম্পাদনা]

মালে বিমানবন্দর

ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি হুলহুলের নিকটে অবস্থিত এবং নগরীর বিমানবন্দর ও মালদ্বীপের মূল বিমানবন্দরও এখানে অবস্থিত। সিনমালে সেতুর উদ্বোধনের সাথে সাথে বিমানবন্দরটিতে এখন মালের রাস্তা দিয়েও প্রবেশ করা যায়। ব্রিজটি উদ্বোধনের আগে বিমানবন্দর ও মালের মধ্যে প্রায়শই ফেরি চলাচল করত। হুলহুমালের উন্নয়নের পর থেকে হুলহুলে ও হুনহুমালে একটি কজওয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে । এর ফলে বিমানবন্দরটিতে পরবর্তিতে রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা সম্ভব ছিল।

সিটি কাউন্সিল[সম্পাদনা]

মালে সিটি কাউন্সিল হল মালে নগর প্রশাসনের জন্য নিবেদিত স্থানীয় সরকার। ২০১১ সালে বিকেন্দ্রীকরণ বিল কার্যকর করার মধ্য দিয়ে এই কাউন্সিলটি গঠিত হয়,যা দেশে স্থানীয় প্রশাসনের প্রবর্তনের সাক্ষী ছিল। শহরটি ১১ টি রাজনৈতিক ওয়ার্ডে বিভক্ত যার প্রতিটিতে রয়েছেন একজন করে কাউন্সিলর। ২০১৪ সালে দেশটিতে ২য় স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে কাউন্সিলরদের সিংহভাগই মালদ্বীপের ডেমোক্রেটিক পার্টি হতে আগত ছিল।

চিত্র গ্যালারি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "TABLE PP 9: TOTAL MALDIVIAN POPULATION BY SEX AND LOCALITY (ATOLLS), 2014"Statistics Maldives। National Bureau of Statistics। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৫-২৩ 
  2. Statistics Maldives. National Bureau of Statistics. Retrieved 2015-05-23.
  3. https://en.wikipedia.org/wiki/Most_densely_populated_cities
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৯ 
  5. https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_sultans_of_the_Maldives
  6. https://en.wikipedia.org/wiki/Mal%C3%A9#cite_note-5
  7. National Imagery and Mapping Agency (US) (2002). "Sector 5. The Laccadive Islands and the Maldive Islands". Sailing Directions (Enroute): India and the Bay of Bengal (PDF). United States Navy Publication 173 (seventh ed.). Bethesda, Maryland: United States National Imagery and Mapping Agency. pp. 109–110. Archived (PDF) from the original on 1 February 2017
  8. Caldwell, Comparative Dravidian Grammar, p. 27-28
  9. Xavier Romero-Frias, The Maldive Islanders, A Study of the Popular Culture of an Ancient Ocean Kingdom
  10. Maloney, Clarence (1995). "Where Did the Maldives People Come From?". IIAS Newsletter. International Institute for Asian Studies (5). Archived from the original on 29 January 2002.
  11. A Concise Etymological Vocabulary of Dhivehi Language. Hasan A. Maniku. Speedmark. Colombo 2000
  12. Malé Water & Sewage Company Pvt Ltd. "Malé Water & Sewage FAQ". Archived from the original on 11 January 2008.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

  • উইকিমিডিয়া কমন্সে মালে সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
  • উইকিভ্রমণ থেকে মালে ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।