মহাকাব্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি পাথরের টুকরায় ধারণকারী গিলগামেশের মহাকাব্য

মহাকাব্য হচ্ছে দীর্ঘ ও বিস্তৃত কবিতা বিশেষ। সাধারণতঃ দেশ কিংবা সংস্কৃতির বীরত্ব গাঁথা এবং ঘটনাক্রমের বিস্তৃত বিবরণ এতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়। সুপ্রাচীনকালে মুখে মুখে প্রচলিত কবিতাসমগ্রও মহাকাব্যের মর্যাদা পেয়েছে। মহাকাব্য নিয়ে আলবার্ট লর্ড এবং মিলম্যান প্যারী গবেষণা করেছেন। তারা উভয়েই যুক্তিপ্রদর্শন সহকারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, আধুনিককালের মহাকাব্যগুলো প্রকৃত অর্থে প্রাচীনকালের মৌখিকভাবে প্রচলিত ও প্রচারিত কবিতাসমগ্রেরই শ্রেণিবিভাগ মাত্র।

আবেদন[সম্পাদনা]

মহাকাব্য তন্ময় কাব্য। এটি ব্যক্তি-নিষ্ঠ নয়, বরঞ্চ বস্তু-নিষ্ঠ। এটি লেখকের অন্তর অনুভূতির প্রকাশ নয়, বস্তু-প্রধান ঘটনা-বিন্যাসের প্রকাশ। গীতিকাব্যোচিত বাঁশির রাগিনী নয়, যুদ্ধসজ্জার তুর্য্য-নিনাদ। এছাড়াও, এটি মহাকায়, মহিমোজ্জ্বল, ব্যাপক হিমাদ্রি-কান্তির মত ধীর, গম্ভীর, প্রশান্ত, সমুন্নত ও মহত্ত্বব্যঞ্জক। এই কাব্যে কবির আত্মবাণী অপেক্ষা বিষয়বাণী ও বিষয় বিন্যাসই আমাদের অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।[১]

বিবরণ[সম্পাদনা]

মহাকাব্য শ্রবকাব্যের একটি অংশবিশেষ। যে কাব্যে কোন দেবতা বা অসাধারণ গুণসম্পন্ন পুরুষের কিংবা একবংশোদ্ভব বহু নৃপতি বা রাজা-বাদশাহর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়, তা মহাকাব্য নামে পরিচিত।[২] যিনি মহাকাব্য রচনা করেন, তিনি মহাকবি নামে পরিচিতি পেয়ে থাকেন। দেবতা বা দেবতুল্য নায়কের বৃত্তান্ত নিয়ে বিশেষ রীতিতে রচিত বৃহৎ কাব্য রচনাকে মহাকাব্য নামে অভিহিত করা হয়।[৩]

মহাকাব্যে প্রাকৃতিক বিবিধ দৃশ্যমালা ও পরিবর্তন বর্ণিত থাকে এবং এতে কমপক্ষে আটটি কিংবা ততোধিক সর্গ বা ভাগ থাকে। যথাঃ রামায়ণ, মহাভারত, মেঘনাদবধ ইত্যাদি।

অল্প আয়তন ও ক্ষুদ্রাকৃতি খণ্ডকাব্যের (যেমনঃ মেঘদূত, সীতার বনবাস, শকুন্তলা ইত্যাদি) চেয়ে মহাকাব্যের প্রেক্ষাপট বিস্তৃত ও ব্যাপক।[২]

অবয়ব[সম্পাদনা]

সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে আশীর্বচন, নমস্ক্রিয়া অথবা বস্তুনির্দেশ দ্বারা কাব্যারম্ভ হয়। মহাকাব্যের আখ্যান-বস্তু পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক। বিশ্বনাথ বলেছেন, ইতিহাসোদ্ভবংবৃত্তমন্যদ্বা সজ্জনাশ্রয়ম্‌। নায়ক (কখনো কখনো একাধিক নায়কও থাকিতে পারে) ধীরোদাত্তগুণসমন্বিত অর্থাৎ সমস্ত সদ্‌গুণের সমষ্টিভূত; সর্গ-সংখ্যা অষ্টাধিক এবং পটভূমি স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল-প্রসারী। এতে শৃঙ্গার, বীর, শান্ত - এই তিনটির একটি রস মুখ্য বা প্রধান এবং অন্যান্য রস এদের অঙ্গস্বরূপ হবে।

প্রসঙ্গক্রমে এতে বিভিন্ন ছন্দে প্রকৃতি, যুদ্ধবিগ্রহ, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল প্রভৃতির বর্ণনাও থাকতে পারে। এর ভাষা ওজস্বী এবং গাম্ভীর্যব্যঞ্জক হবে। নায়কের জয় বা আত্ম-প্রতিষ্ঠার মধ্যে মহাকাব্যের সমাপ্তি হবে। কারণ, সাধারণতঃ এতে ট্র্যাজেডির স্থান নাই।[১]

বাংলা মহাকাব্য[সম্পাদনা]

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পর মহাকাব্য-রচয়িতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (বৃত্রসংহার) এবং নবীনচন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' যথাক্রমে রৈবতক (১৮৮৭),কুরুক্ষেত্র (১৮৯৩),প্রভাস(১৮৯৬) । এ শতকের শেষে গীতিকাব্যের বন্যাবেগ না এলে, মহাকাব্যের ধারাকে বিশ শতকের আরম্ভ পর্যন্ত টেনে আনা চলতো। বিশ শতকেরও আমরা অনেক মহাকাব্য পেয়েছি। কিন্তু সমসাময়িক গীতিকাব্যের আন্তরিকতা, সত্যবোধ এবং দীপ্তির কাছে তা অত্যন্ত নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়ায় আজ আর তার কোনও মূল্য নেই। বিশ শতকের মহাকাব্যের কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন - আনন্দচন্দ্র মিত্র (হেলেনা কাব্য), কায়কোবাদ (মহাশ্মশান), হামিদ আলী (সোহ্‌রাববধ কাব্য), সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (অনলপ্রবাহ) এবং যোগীন্দ্রনাথ বসু (পৃথ্বীরাজ)।[৪]

পাশ্চাত্য মহাকাব্য[সম্পাদনা]

সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে যা মহাকাব্য, তার সাথে পাশ্চাত্য মহাকাব্যের কোন কোন বৈসাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে ভাবগত সাদৃশ্য বর্তমান। পাশ্চাত্য আলঙ্কারিক এরিস্টটলের মতে,

এটি সাধারণতঃ বস্তু-নিষ্ঠ, আদি-মধ্য-অন্ত-সমন্বিত বর্ণনাত্মক কাব্য; এর বস্তু উপাদান জাতীয়-জীবনের ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক তথ্য; এর অনুপ্রেরণা অধিকাংশ সময়ই ঐশীশক্তি; এতে মানব, দানব, দেব-দেবীর চরিত্রের সমাবেশ এবং প্রয়োজনবোধে অতিলৌকিক স্পর্শও থাকতে পারে। মহাকাব্যের পরিসমাপ্তি সকল সময়েই শুভান্তিক হবে এমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। এতে জটিল ঘটনাবর্তের সৃষ্টি এবং বহুবিধ চরিত্র-সন্নিবেশ থাকলেও সমগ্র কাব্যটিতে একটি অখণ্ড শিল্প-সঙ্গত সৌন্দর্য্যবোধ ও মহত্ত্বব্যঞ্জক গাম্ভীর্য থাকবে। এর ভাষা প্রসাদগুণসম্পন্ন, ওজস্বী এবং অনুপ্রাস-উপমা প্রভৃতি অলঙ্কারবহুল।

সুতরাং, পাশ্চাত্য আদর্শে অনুসরণের মাধ্যমে আমরা মহাকাব্যের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলতে পারি যে, নানা সর্গে বা পরিচ্ছেদে বিভক্ত যে-কাব্যে কোন সুমহান বিষয়-বস্তুকে অবলম্বন করে এক বা বহু বীরোচিত চরিত্র অথবা অতিলৌকিক-শক্তি-সম্পাদিত কোন নিয়তি-নির্ধারিত-ঘটনা ওজস্বী ছন্দে বর্ণিত হয়, তাকে মহাকাব্য বলে[৫]

রচয়িতা[সম্পাদনা]

মহাকাব্যের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, অনেক সময় কোন কোন মহাকাব্যের রচয়িতা সম্বন্ধে নিশ্চিত করে জানা যায় না। কারণ তারা 'একলা কবির কথা' নহে। যুগে যুগে বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা লেখকের হাতে পড়ে কাব্যের মূল বিষয়টি বর্দ্ধিতায়ন হয়ে উঠেছে। অথবা, বিভিন্ন চরিত্র অবলম্বনে বিভিন্ন লোকের লেখা একত্র সংগ্রথিত হয়ে মহাকাব্য বৃহৎ সম্প্রদায়ের কথা হয়ে উঠেছে। সর্বদেশের হৃদপদ্ম-সম্ভব এই শ্রেণীর কাব্য যেন 'বৃহৎ বনস্পতির মতো দেশের ভুতল-জঠর হতে উদ্ভূত হয়ে সেই দেশকেই আশ্রয়চ্ছায়া দান করিয়াছে'। এই শ্রেণীর মহাকাব্যকে এপিক অব গ্রোথ বা অথেনটিক এপিক নামে অভিহিত করা হয়। রামায়ণ, মহাভারত, দি ইলিয়াড, ওডিসি, বিওয়াল্ফ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বলাবাহুল্য যে, বিভিন্ন লোকের রচিত মহাকাব্যের মধ্যেও সহস্র বৎসরের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন অনুভূত হয়।

কিন্তু একজন গ্রন্থকারের লিখিত যে-মহাকাব্যে কোন জাতির সর্বলোকের সাধনা, আরাধনা ও সঙ্কল্প কোন পরম গুণান্বিত নায়কের মধ্যে মুর্ত হয়ে ওঠে এবং জাতি-হৃদয়ের দর্পণরূপে আমাদের সম্মুখে উপস্থাপিত হয়, তাকেই আমরা সত্যিকারের মহাকাব্য বা লিটারেরী এপিক বা ইমিটেটিভ এপিক বলে গ্রহণ করি। এই শ্রেণীর মহাকাব্য পূর্বোক্ত শ্রেণীর মতো স্ফীতকায়, অসংহত ও অসামঞ্জস্য কলেবর-মাহাত্ম্যে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না; এর আখ্যানবস্তু, চরিত্র-সৃষ্টি, ভাষা প্রভৃতি মিলে একটি অখণ্ড মহিমাময় রস-মূর্তি সৃষ্ট হয় এবং এর শিল্প-চাতুর্য্য লেখকের দূরারোহী কল্পনা ও অনন্য সাধারণ মননশক্তি গুণে আমাদের নিকট চিরন্তন হয়ে থাকে।[১]

এই জাতীয় কাব্যাদর্শ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন -

মেঘনাদবধ কাব্য[সম্পাদনা]

মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী মহাকাব্যের গৌরব সর্বাংশে দাবী করতে পারে না। অবশ্য তিনি তার কাব্যকে অষ্টাধিক সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করিয়াছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নূতন ছন্দ ব্যবহার করেননি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেননি। যদিও তিনি বলেছিলেন -

তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে। এতদ্ব্যতীত, সংস্কৃত মহাকাব্য মিলনান্তক, মধুসূদনের মহাকাব্য বিষাদাত্মক। সর্বোপরি, মধুসূদনের কাব্যের নায়ক রাবণ এবং রাবণ অনার্য্যবংশ সম্ভূত - সদ্বংশজ এবং ধীরোদাত্তগুণ সমন্বিত নন। সুতরাং, সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে একে মহাকাব্য বলে অনেকে স্বীকার করতে চান না। কাজেই মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণ-আহৃত কাহিনীর পুণরাবৃত্তি নয় - এটি নবজাগ্রত বাঙালীর দৃষ্টি নিয়তি-লাঞ্ছিত নবমানবতাবোধের সকরুণ মহাকাব্যের রূপে অপূর্ব গীতি-কাব্য। মেঘনাদবধ কাব্য এ দিক দিয়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একক সৃষ্টি।[৬]

মধুসূদন অতি আশ্চর্য্যজনকভাবে নির্মাণ-কুশলতা গুণে মহাকাব্যোচিত কাব্য-বিগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। এ কাব্যের তাৎপর্য্য রাবণ-চরিত্রের প্রতীকতায়। তার সৃষ্ট রাবণ চরিত্রে পরম দাম্ভিকতা প্রকট হয়ে উঠেনি। রামায়ণকে তিনি তার মানবতার আলোকে বিধৌত করে যে মহাকাব্য রচনা করেছেন, তা আসলে রোমান্টিক মহাকাব্য। এ কারণে আকারে 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যোচিত হলেও, এর প্রাণ-নন্দিনী সম্পূর্ণ রোমান্টি এবং মধুসূদন এ কাব্যে জীবনের যে জয়গান করেছেন, তা বীররসের নয়, কারুণ্যের। কবি তাই, রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,

বিদ্রুপাত্মক মহাকাব্য[সম্পাদনা]

কোন লঘু বা ক্ষুদ্র বিষয়-বস্তুকে কেন্দ্র করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার জন্য মহাকাব্য লক্ষণাক্রান্ত যে কাব্য রচিত হয়, তাকে বিদ্রুপাত্মক মহাকাব্য বা মক এপিক বলে। পোপের দ্য র‍্যাপ অব দ্য লক নামক কাব্যে 'মিস আরাবেলা ফার্মর' নাম্নী কোন এক মহিলার কেশ-কর্তনের কাহিনী অবলম্বনে মহাকাব্যোচিত করে লিখিত বলে তা 'মক এপিক' নামে খ্যাত।

বাংলা ভাষায় জগদ্বন্ধু ভদ্রের 'ছুছুন্দরী-বধ' (১৮৬৮) এবং ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভারত উদ্ধার' এই শ্রেণীর কাব্য।

উল্লেখযোগ্য মহাকাব্য[সম্পাদনা]

প্রাচীন মহাকাব্য (প্রাচীনকাল থেকে ৫ম শতক)[সম্পাদনা]

  • খ্রিস্টপূর্ব ২০শ থেকে ১০ম শতক পর্যন্তঃ 'গিলগামেশ' ও 'এত্রাহ্যাসিস' (মেসোপটেমিয়ার পৌরাণিক কাহিনী); 'এনুমা এলিশ' (বেবিলনের পৌরাণিক কাহিনী)। তন্মধ্যে বেবিলনের মহাকাব্য রচনার সময়কাল সুনির্দিষ্ট করা খুবই দূরূহ ব্যাপার। কেননা এটি হাতে লেখা ছিল এবং পরবর্তীকালে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষণ এবং বিযোজন করার ফলেও সময়কাল নির্দিষ্ট করাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
  • খ্রিস্টপূর্ব ২০শ থেকে ৫ম শতক পর্যন্তঃ হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যান হিসেবে ব্যাস দেব কর্তৃক প্রণীত 'মহাভারত' ও বাল্মিকী মুনি কর্তৃক প্রণীত 'রামায়ণ'।
  • খ্রিস্টপূর্ব ৮ম থেকে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্তঃ গ্রীক পৌরাণিক উপাখ্যান হিসেবে হোমার রচিত 'ইলিয়াড' এবং 'ওডিসি'; হেসিওড রচিত 'ওয়ার্কস্‌ এন্ড ডেজ', 'থিওগোনি', 'ক্যাটালগ আব ওম্যান' এবং 'দ্য শিল্ড অব হেরাক্লেস'।
  • খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকঃ এপোলো অব রোডেস প্রণীত 'আর্গোনটিকা'।
  • খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকঃ কুইনটাস এনিয়াস প্রণীত 'অ্যানালস্‌' (রোমের ইতিহাস সংক্রান্ত)।
  • খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকঃ ভার্জিল প্রণীত 'এনিড' (ল্যাটিন পৌরাণিক কাহিনী) এবং লুক্রেটিয়াস প্রণীত 'ডি রেরাম নতুরা' (ল্যাটিন সাহিত্য, এপিকুরেন দর্শন সম্পর্কীয়)।
  • খ্রিষ্টাব্দ ১ম শতকঃ অভিড রচিত 'মেটামোরফোসেস' (ল্যাটিন পৌরাণিক কাহিনী); লুকান রচিত ফারসালিয়া ও সিলিয়াস ইটালিকাস রচিত 'পুনিকা' (রোমান ইতিহাস সংক্রান্ত); গাইয়াস ভ্যালেরিয়াস ফ্লাকাস রচিত 'আর্গোনটিকা' ও স্ট্যাটিয়াস রচিত থেবাইড এন্ড এ্যাচিলিড (রোমান কবি ও গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী)।
  • খ্রিষ্টাব্দ ২য় শতকঃ অশ্ব ঘোষ প্রণীত 'বুদ্ধকার্তিকা' এবং 'সৌন্দরানান্দকাব্য' (ভারতীয় মহাকাব্য)।
  • খ্রিষ্টাব্দ ২য় থেকে ৫ম শতকঃ তামিল সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ৫টি মহাকাব্য - প্রিন্স ইলানগো এডিগাল রচিত 'সিলাপ্পাদিক্রম', সিথালাই সাথানর রচিত 'মনিমেকালাই', তিরুতাকাকাতেভার রচিত 'সিভাকা সিন্তামণি', জনৈক বৌদ্ধ কবি রচিত 'কুন্দালেকেসি' এবং জনৈক জৈন কবি রচিত 'বলয়াপতি'।
  • খ্রিষ্টাব্দ ৩য় থেকে ৪র্থ শতকঃ কুইন্টাস অব স্মাইরনা রচিত 'পোস্থোমেরিকা'।
  • খ্রিষ্টাব্দ ৪র্থ শতকঃ জুভেনকাস রচিত 'ইভএ্যাঞ্জেলিওরামলিরি'; মহাকবি কালিদাস রচিত ভারতীয় মহাকাব্যদ্বয় 'কুমারসম্ভব' ও 'রঘুবংশ'; ক্লদিয়ান রচিত 'ডি রাপ্টু প্রোসারপিনে'।
  • খ্রিষ্টাব্দ ৫ম শতকঃ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কর্তৃক 'আর্গোনটিকা অরফিকা', নোনাস কর্তৃক 'ডাইওনিসিয়াকা'।

প্রাচীন মহাকাব্য (৫ম থেকে ১৫শ শতক)[সম্পাদনা]

  • ৭ম শতকঃ 'তায়েন বো কোয়াইলেঞ্জ' (প্রাচীন আইরিশ); পাণিনি প্রণীত রামায়ণ ও 'অষ্টদেহী' অনুসরণে সংস্কৃত ভাষায় পরিমার্জিত 'ভট্টিকাব্য'; মহাভারত অনুসরণে সংস্কৃত ভাষায় ভারবি রচিত 'কীর্তাঅর্জুনীয়া' ও মাঘ রচিত 'শিশুপালবধম্‌'।
  • ৮ম থেকে ১৯ম শতকঃ বেউলফ এবং 'ওয়ালদেয়ার' (প্রাচীন ইংরেজি); ডেভিড অব সাসুন (আর্মেনিয়ান)।
  • ৯ম শতকঃ সংস্কৃত ভাষায় রচিত 'ভাগবত পুরাণ'।
  • ১০ম শতকঃ 'শাহনামা' (ফার্সি সাহিত্য); সেন্ট গলের একেহার্ড প্রণীত 'ওয়াল্থারিয়াস' (ল্যাটিন)।
  • ১১শ শতকঃ 'তাঘরিবাত বনি হিলাল' (আরবী সাহিত্য); জনৈক জার্মান লেখক রচিত 'রুডলিয়েব' (ল্যাটিন); বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের বীরকে ঘিরে 'ডাইজেনিস একরিটাস' (গ্রীক); 'এপিক অব কিং গেসার' (তীব্বতীয় ভাষায়)।
  • ১২শ শতকঃ 'চ্যানসন ডি রোল্যান্ড' (প্রাচীন ফরাসী); শোটা রুসট্যাভেলি প্রণীত 'দ্য নাইট ইন দ্য প্যান্থার স্কীন'; ওয়াল্টার অব চাটিলন রচিত 'আলেক্সান্দ্রিস' (ল্যাটিন); জোসেফ অব এক্সটার প্রণীত 'ডি বেলো ট্রোইয়ানো' ও 'দ্য লস্ট এন্টিওচিজ'; কারম্যান ডি প্রোডিসিওন গুইনোনিস (ল্যাটিন); জন অব হভিলে প্রণীত 'আর্কিট্রেনিয়াস' (ল্যাটিন বিদ্রুপাত্মক কাব্য); পিটার অব এবোলি প্রণীত 'লিবার এ্যাড অনরেম অগাস্টি'; বাইলিনাস প্রণীত 'দ্য টেল অব ইগোর'স ক্যাম্পেইন' (১১শ-১৯শ শতক)।
  • ১৩শ শতকঃ 'নিবেলানজেনলাইড' (জার্মান ভাষা); ওলফ্রাম ভন ইসেনব্যাচ প্রণীত 'পার্জিভাল' (জার্মান ভাষা); লায়ামন প্রণীত 'ব্রুট'; অকসিটান ভাষায় রচিত 'চ্যানসন ডি লা ক্রোইসেড আলিবিজিওইস'; 'অন্তরা ইবনে সাদ্দাদ' ও 'সিরাত আল-জহীর বাইবারস' (আরবী ভাষা); 'সান্দিয়েতা কেইতা'; 'এল ক্যান্টার ডি মাইও সিড' (প্রাচীন স্পেনীশ); জোহানেস ডি গারল্যাডিয়া প্রণীত 'ডি ট্রামফিস একক্লেসিয়ে' (ল্যাটিন); উইলিয়াম অব রেনেস প্রণীত 'গেস্টা রেগাম ব্রিটানিয়ে' (ল্যাটিন); ই সিয়াং-হাইও প্রণীত 'জিওয়াং আংগি (কোরিয়ান)
  • ১৪শ শতকঃ জন গাউয়ার রচিত 'কনফেসিও অ্যাম্যানটিস'; জনৈক পাদ্রী রচিত 'কার্সর মান্ডি'; দান্তে আলিগিয়েরি রচিত 'ডিভিনা কমেডিয়া' বা দ্য ডিভাইন কমেডি (ইতালীয় ভাষায়); পেট্রাখ রচিত 'আফ্রিকা'; জাপানীদের যুদ্ধের পৌরাণিক কাহিনীকে ঘিরে রচিত 'দ্য টেল অব দ্য হিয়েকি'।
  • ১৫শ শতকঃ অ্যালিটারেটিভ মোর্তে আর্থার; ম্যাটিও মারিয়া বোয়ার্দো রচিত অরল্যান্ডো ইনামোরাতো (১৪৯৫); স্যামুয়েল-বুখ; ম্লোখিম-বুখ; বুক অব ডিডি কোরকুট।

ভাষা অনুযায়ী (অক্ষরানুক্রমে)[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-৬৮ উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "L" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  2. সরল বাঙালা অভিধান, সংকলকঃ সুবলচন্দ্র মিত্র, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৫, কলকাতা, পৃ. ৩৬৫
  3. সংসদ বাংলা অভিধান, সংকলনঃ শৈলেন্দ্র বিশ্বাস, ৫ম সংস্করণ, ২০০৯, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৬৮৯
  4. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, ৮ম সংস্করণ, ১৯৯৭ইং, পৃষ্ঠা-২০১
  5. "সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-৬৯
  6. "সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা-৭১

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]