ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে
ধরনবেসরকারী
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৮১
বিলুপ্তিকাল১৯৪৫
সদরদপ্তর,
ব্রিটিশ ভারত
বাণিজ্য অঞ্চল
ডিব্রুগড়তিনসুকিয়া,অসম
পরিষেবাসমূহরেল পরিবহন

ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে (ইংরেজি: Dibru Sadiya Railway, সংক্ষেপে DSR) ব্রিটিশ অসমের প্রথম রেল প্রতিষ্ঠান। মূলতঃ চা ও কয়লা, সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে এই মিটারগজ রেলপথটি জন বেরি হোয়াইটের প্রচেষ্টায় গঠিত হওয়া "আসাম রেলওয়ে অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানী" নির্মাণ করেছিল। ডিব্রু-শদিয়া রেলপথে ১৮৮২ সালের ১ মে'তে ডিব্রুগড়ের ডিব্ৰুমুখ থেকে জয়পুর পর্যন্ত প্রথম রেলটি চলে। ১৮৮৩ সালের ১৬ জুলাই ডিব্রুগড় থেকে মাকুম পর্যন্ত নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়া ৪০ মাইল পথে রেল চলাচল আরম্ভ হয়।[১] ১৯৪৫ সালে সালে ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়েকে 'বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে'তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২][৩][৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তিনসুকিয়া স্টেশন (১৯৪৩ সাল)

১৮৭০র দশকে অবিভক্ত ডিব্রুগড় জেলার ৬০টি চা-বাগানের উৎপাদিত সামগ্রী, চা-বাগানের বিভিন্ন যন্ত্র-পাতি, রসদ, কয়লা ইত্যাদি কঢ়িয়াব পর্যন্ত একজন চা চাষকারী ও অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যবাহিনীর কর্মচারী জন বেরি হোয়াইট ন্যারোগজ রেলপথ খোলার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চান। ভারত সরকার অনুমতি দেওয়ায় বেরি হোয়াইট লন্ডন পর্যন্ত গিয়ে একটি কোম্পানি পঞ্জীভুক্ত করেন। কিন্তু কোম্পানির শেয়ার কেনাতে আশানুরূপ সাহায্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ে এই প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয়।[৩]

রেলপথ নির্মাণ করা বিখ্যাত অভিযন্তা বেঞ্জামিন পিয়ার্সি ভাই রবার্ট পিয়ার্সি ও এডোয়ার্ড উইলসনকে সর-জমিন তদন্ত করতে উজনী অসমে পাঠান। তাঁর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার রেলপথটি ১ মিটার দীর্ঘ নির্মাণ করার ও কয়লা উত্পাদনের অনুমতি দিলে বেঞ্জামিন পিয়ার্সি এই পরিকল্পনায় সাহায্য করতে রাজি হন। সেইমত ৩০ জুলাই ১৮৮১তে 'আসাম রেলওয়ে অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানী' গঠন করে রেলপথ নির্মাণের কাজ আরম্ভ করে দেওয়া হয়। ১ মে' ১৮৮২র দিন ডিব্রুগড় থেকে জয়পুর রোড পর্যন্ত প্রথম রেল চলে। ইতিমধ্যে মাকুম পর্যন্ত রেলপথটি নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় ১৬ জুলাই ১৯৮৩ থেকে ডিব্রুগড় ও মাকুমের মধ্যে রেল চলাচল আরম্ভ হয়।[৩]

রবার্ট পিয়ার্সির মতে লিডু কয়লাখনির গুরুত্ব অধিক হওয়ায় রেলপথটি মাকুম থেকে বুঢ়ীদিহিঙ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি ১৮৮৪তে দিহিং নদীতে নির্মাণ করা কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে একটি বিশেষ রেল ডিব্রুগড় থেকে লিডু পর্যন্ত যাত্রা করে।

এদিকে মাকুম থেকে সৈখোয়াঘাট পর্যন্তও শাখাপথটির নির্মাণর কাজ দ্রুতগতিত চলি থাকে। একটি বছরে ২ মে'র দিন ডুমডুমা পর্যন্ত রেলপথ শুভমুক্তি করা হয়। এই পথটি ১৮৮৫ সালে তালাপ পর্যন্ত ও ১৯০৯ সালে অন্তিম স্টেশন সৈখোয়াঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়।

লামডিঙের দিক থেকে নির্মাণ করে আসা আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের লাইন ১৯০৩ সালে তিনসুকিয়াতে ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ করা হয় এবং তিনসুকিয়া একটি জংশন স্টেশনে রূপান্তরিত হয়।

উত্তরসূরী[সম্পাদনা]

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ডিব্রুগড় রেল য়ার্ড

ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে একটি সফল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর সময়ে সামরিক প্রয়োজনে সরকার দ্বারা যথেষ্ট পূুঁজি বিনিয়োগ করে এর উন্নয়ন সাধন করা হয়। ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারিতে আসাম বেঙ্গল রেলওয়েইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে সংযুক্ত করে সরকার বেঙ্গল আসাম রেলওয়ে গঠন করে।[৫] ১৯৪৫ সালে "লিডু অ্যান্ড টিকক মার্ঘেরিটা কোলিয়ারি রেলওয়ে"র রেলপথটির সঙ্গে ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়েকে সরকার কিনে নেয় এবং 'বেঙ্গল-আসাম রেলওয়ে'তে একে সামিল করে।[২][৩] এই ঐতিহাসিক রেলপথটি বর্তমান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অন্তর্ভুক্ত।[২]

রেলপথ[সম্পাদনা]

ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে তথ্য ফলক, তিনসুকিয়া হেরিটেজ মিউজিয়াম

১৯৪২ সালের রেল মানচিত্র অনুসারে ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ের মুখ্য পথটি ডিবরুমুখ থেকে আরম্ভ হয়ে লিডুতে শেষ হয়েছিল। এইটি পথের মুখ্য স্টেশনগুলি ছিল- ডিব্রুগড় টাউন, চাবুয়া, তিনসুকিয়া, মাকুম, ডিগব, মার্ঘেরিটা ও লিডু। মাকুম জংশন থেকে অন্যএকটি শাখা গিয়েছিল চৈখোবাঘাট পর্যন্ত। শাখাপথের মুখ্য স্টেশনগুলি ছিল- বরা-হাপজান, ডুমডুমা, তালাপ, ডাঙরী ও চৈখোবাঘাট। ১৯০৩ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে তিনসুকিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণ করায় এই স্টেশনটি ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের জংশন স্টেশনে রূপান্তরিত হয়েছিল। মার্ঘেরিটা থেকে একটি রেলপথ নামদাং ও লিডু থেকে একটি রেলপথ টিপংপানী কয়লাক্ষেত্র পর্যন্ত গিয়েছিল।[৬][৭]

বর্তমান[সম্পাদনা]

রাজ্যটির প্রথম রেলপথ ডিব্রু-শদিয়া রেলওয়ে বর্তমান উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অন্তর্গত এবং একে ব্রডগজ পর্যন্ত রূপান্তর করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে ডাঙরী ও সৈখোয়াঘাটের মধ্যে রেলপথের বিস্তর ক্ষতি হয়, যার জন্য ডাঙরী স্টেশন থেকে সৈখোয়াঘাট পর্যন্ত রেলপথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিংশ শতকের শেষ দশকে তিনসুকিয়া-ডাঙরী শাখাটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করেছিল যদিও কর্মীদের প্রবল দাবীতে একে ব্রডগজে পরিবর্তন করা হয়। বর্তমান একটি যাত্রীবাহী রেল[৮] মাকুম ও ডাঙরীর মধ্যে চলাচল করে।[১]

সঙ্গে দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "State's first railway track closed down"assamtribune.com। guwahati। assamtribune। ডিসেম্বর ১৩, ২০১১। জানুয়ারি ১১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ 
  2. "History of NF Railway"nfr। guwahati। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. রবীন্দ্র চন্দ্র বরুয়া (২০০৭)। "ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাত রেলগাড়ী"। মন্থন: ১৯, ২০।  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. http://www.irfca.org/faq/faq-history2.html
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৮ 
  6. "১৯৪২ সালের রেল মানচিত্র"। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৮ 
  8. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৮