গ্রানাডা যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গ্রানাডার যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: রিকনকোয়েস্টা

গ্রানাডার আত্মসমর্পণ; এফ. প্রদিলা দ্বারা অঙ্কিত: ফার্ডিনান্ডইসাবেলার কাছে ত্রয়োদশ মুহম্মদ আত্মসমর্পণ করছে।
তারিখফেব্রুয়ারি ১৪৮২– ২ জানুয়ারি ১৪৯২
অবস্থান
ফলাফল
বিবাদমান পক্ষ
সম্মিলিত কাস্তেল ও আর্গন রাজ্য গ্রানাডা আমিরাত
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
ফার্ডিনার্ড
রাণী ইসাবেলা
আবুল হাসান আলি 
ত্রয়োদশ মুহাম্মদ 
দ্বাদশ মুহাম্মদ (আত্মসমর্পণ)
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজানা ১০০,০০০ নিহত অথবা দাসত্ববরণ (বেসামরিক লোকসহ)[১]

গ্রানাডা যুদ্ধ (স্পেনীয়: Guerra de Granada) ১৪৮২ থেকে ১৪৯২ সাল মধ্যকার ক্যাথলিক রাজাদের শাসনামলে সংঘটিত কাস্তিলের রাণী প্রথম ইসাবেলা ও আরাগনের রাজা ফার্ডিনান্ড কর্তৃক গ্রানাডার নাসরি রাজবংশের আমিরাতের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি সম্মিলিত ধারাবাহিক সামরিক অভিযান ছিল। এটি গ্রানাডা আমিরাতের পরাজয় ও সেটি কাস্তিলে সংযুক্তির সাথে শেষ হয় এবং এটিই ইবেরীয় উপদ্বীপে ইসলামি শাসনের শেষ অবশিষ্টাংশের অবসান ঘটায়। এরপর থেকে মুসলমানদের স্পেন থেকে বিতাড়িত করা হয় বা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার শর্তে স্পেনে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়।[২]

ক্রমাগত প্রচেষ্টায় উভয়ের মাঝে দশ বছরের যুদ্ধ হয়নি বরং এটি মৌসুমী অভিযানের একটি ধারাবাহিকতা ছিল, এটি বসন্তে শুরু হয় এবং শীতকালে বন্ধ হয়ে যায়। গ্রানাডীয়রা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধের কারণে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, অন্যদিকে খ্রিস্টানরা সাধারণত একত্র ছিল। এছাড়া গ্রানাডা আমিরাত করের দ্বারাও অর্থনৈতিকভাবে রক্তাক্ত হয়েছিল; আক্রমণ ও পরাজিত হওয়া এড়াতে তাদের কাস্তিলকে নিয়মিত অর্থ প্রদান করতে হত। এই যুদ্ধে খ্রিস্টান সৈন্যদের কামানের কার্যকর ব্যবহার করতে দেখা যায় যা দ্রুত শহরগুলি জয় করার কাজে তাদের সাহায্য করে, অন্যথায় তাদের দীর্ঘ অবরোধের প্রয়োজন হত। ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারিতে গ্রানাডার তৎকালীন রাজা মুহম্মদ দ্বাদশ (যিনি রাজা আবু আব্দুল্লাহ নামেও পরিচিত) গ্রানাডা শহর ও আল হামরা প্রাসাদসহ গ্রানাডা আমিরাত কাস্তিলীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এই যুদ্ধ কাস্তিলের রাণী ইসাবেলা ও আরাগণের রাজা ফার্ডিনান্ডের একটি যৌথ প্রকল্প ছিল। যুদ্ধের জন্য সিংহভাগ সৈন্য ও তহবিল কাস্তিল থেকে এসেছিল এবং এর বিনিময়ে পরবর্তীতে গ্রানাডাকে কাস্তিলের অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং যুদ্ধে আরাগনের রাজার ভূমিকা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল: রাজা ফার্ডিনান্ডের উপস্থিতি ছাড়াও তারা নৌ সহযোগিতা, বন্দুক ও কিছু আর্থিক ঋণ প্রদান করে। যখন ফার্ডিনান্ড এবং ইসাবেলা তাদের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত ও সুসংহত করার চেষ্টা করে তখন যুদ্ধে অভিজাতদের নতুন জমির লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।

যুদ্ধের পর ইবেরীয় উপদ্বীপে ধর্মের মধ্যে সহাবস্থানের অবসান ঘটে যা ইতোপূর্বে মুসলিম আমলে প্রচলিত ছিল। ১৪৯২ সালে ইহুদিদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বা নির্বাসিত হতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ১৫০১ সালের মধ্যে গ্রানাডার সমস্ত মুসলমান খ্রিস্টান ধর্মে রূপান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছিল অথবা তাদের দাস হতে হয়েছিল বা নির্বাসিত হয়েছিল। ১৫২৬ সালের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা স্পেনের বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রানাডার মত স্পেনের অন্যান্য অঞ্চলে মুসলিম ও ইহুদিদের জোরপূর্বক খ্রিস্টানে ধর্মান্তরিত করা হয়। তখন সেখানে "নতুন খ্রিস্টান", লুকায়িত মুসলিম এবং লুকায়িত ইহুদি হওয়ার জন্যও অনেকে অভিযুক্ত হন ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন।[৩] খ্রিস্টধর্মক্যাথলিক ধর্মের অভিভাবক হিসাবে তখন স্পেন নিজের জাতীয় আকাঙ্ক্ষার নমুনা হয়ে এগিয়ে যায়। আল হামরার পতন এখনও প্রতি বছর গ্রানাডা নগর পরিষদ দ্বারা উদযাপিত হয় এবং অতি শোচনীয় বিষয় হিসেবে চর্চিত হওয়া গ্রানাডার সেই যুদ্ধকে ঐতিহ্যবাহী স্পেনীয় ইতিহাসে রিকনকোয়েস্টার চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

১৫ শতাব্দীর শেষের দিকে ইবেরিয়া ও আন্দালুস[সম্পাদনা]

গ্রানাডা যুদ্ধের সময় পর্যন্ত দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে গ্রানাডা আমিরাত ইবেরিয়ার শেষ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এছাড়া কর্ডোবার এক সময়ের শক্তিশালী কর্ডোবা খিলাফতের অবশিষ্ট আন্দালুসের রাজ্যগুলি (তাইফা) অনেক আগেই পার্শ্ববর্তী খ্রিস্ট রাজ্যগুলি কর্তৃক দখল হয়ে গিয়েছিল এবং এ কারণে গ্রানাডার মাঝে সম্ভাব্য হতাশাবাদ তার চূড়ান্ত পতনের আগেই বিদ্যমান ছিল। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ইবনে হুদাইল লিখেছিলেন "গ্রানাডা কি একটি হিংস্র সাগর ও অস্ত্রে সজ্জিত ভয়ানক অসংখ্য শত্রুর বেষ্টনীতে ঘেরা নয়, যা উভয়ই তার জনগণকে দিনরাত চাপ দেয়?"[৪] তবুও গ্রানাডা আমিরাত অত্যন্ত ধনী ও শক্তিশালী ছিল এবং খ্রিস্টান রাজ্যগুলি বিভক্ত ছিল ও নিজেদের মধ্যে তারা লড়াই করছিল। ১৪১৭ সালে আমির তৃতীয় ইউসুফ মৃত্যুবরণ করলে গ্রানাডার সমস্যা আরও খারাপ হতে শুরু করে। উত্তরাধিকার সংগ্রাম নিশ্চিত করেছিল যে, গ্রানাডা আমিরাত প্রায় অবিরাম নিম্ন-স্তরের গৃহযুদ্ধে মত্ত হবে। তখন সেখানে বংশের আনুগত্য আমিরের আনুগত্যের চেয়ে শক্তিশালী ছিল, যার ফলে ক্ষমতা একত্রীকরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং সত্যিই আমির নিয়ন্ত্রিত একমাত্র অঞ্চল ছিল গ্রানাডা শহর। এমনকি কখনো কখনো আমির সমস্ত শহরও নিয়ন্ত্রণ করতেন না, বরং তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী আমির আল হামরা এবং অন্যজন আলবায়জিন নিয়ন্ত্রণ করতেন যা গ্রানাডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা ছিল।[৫]

এই অভ্যন্তরীণ লড়াই রাষ্ট্রকে অনেকটাই দুর্বল করে দেয়। আরাগনের রাজার আওতাধীন ভালেনসিয়ার নিকটবর্তী খ্রিস্টান শহর মানিসেসের দ্বারা গ্রানাডার একসময়ের প্রধান চীনামাটির বাসন উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এ প্রতিবন্ধকতার কারণে গ্রানাডার অর্থনীতি হ্রাস পায়। দুর্বল অর্থনীতি সত্ত্বেও গ্রানাডার ব্যাপক প্রতিরক্ষা ও এর বৃহৎ সেনাবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য দেশের জনগণের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হয়েছিল। তখন সাধারণ গ্রানাডীয়রা প্রায় করমুক্ত কাস্তিলীয়দের তুলনায় তিনগুণ কর প্রদান করে।[৫] আমির আবুল হাসান আলি যে ভারি কর আরোপ করেছিলেন তা তার জনপ্রিয়হীনতার জন্য ব্যাপকভাবে অবদান রাখে। এই কর অন্তত একটি সম্মানিত সেনাবাহিনীকে সমর্থন করত এবং হাসান তার ভূমিতে খ্রিস্ট বিদ্রোহ দমন করতে সফল হয়েছিলেন। কিছু পর্যবেক্ষক অনুমান করেছিলেন যে তিনি প্রায় ৭,০০০ ঘোড়সওয়ার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৬]

গ্রানাডা ও আন্দালুসিয়ার কাস্টিলীয় ভূখণ্ডের মধ্যে সীমান্ত একটি অবিচ্ছিন্ন অবস্থার মধ্যে ছিল, "সেখানে না শান্তি ছিল, না যুদ্ধ"।[৬] সীমান্তের ওপারে অভিযান উভয়পক্ষের কাছে সাধারণ ছিল; যেমন ছিল সীমান্তের উভয় দিকের স্থানীয় অভিজাতদের মধ্যে মিশ্রিত জোট কর্তৃক অভিযান। সম্পর্কগুলি মাঝে মাঝে যুদ্ধবিরতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত এবং একদিকে যারা তাদের সীমা অতিক্রম করে অন্যদের সীমানায় অনুপ্রবেশ করতেন, তারা পরাজিতদের কাছে 'নত' দাবি করতেন। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ কখনো করেনি।[৬]

কাস্তিলের রাজা চতুর্থ হেনরি ১৪৭৪ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। তারপর হেনরির কন্যা জোয়ানা লা বেল ট্রানেজা ও রাণী হেনরির সৎ বোন ইসাবেলার মাঝে কাস্তিলীয় উত্তরাধিকারের যুদ্ধ শুরু হয়। ১৪৭৫-১৪৭৯ সাল পর্যন্ত যুদ্ধটি ইসাবেলা ও তার সমর্থক আরাগন রাজ্যের রাজা ফার্ডিনান্ড, জোয়ানা এবং তার সমর্থক পর্তগালফ্রান্সের বিরুদ্ধে অব্যাহত ছিল। এই সময়ে গ্রানাডার সাথে সীমান্ত কার্যত উপেক্ষা করা হয়েছিল; এমনকি কাস্তিলীয়রা ১৪৭৭ সালে একটি অভিযানের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া বা পাওয়ার জন্য বিরক্তিবোধ পর্যন্ত করেনি। ১৪৭৪, ১৪৭৬, ১৪৭৮ সালে উভয়পক্ষ কয়েকটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। ১৪৭৯ সালে ইসাবেলার বিজয়ের সাথে উত্তরাধিকারের যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। যেহেতু ইসাবেলা ১৪৬৯ সালে আরাগন রাজ্যের রাজা ফার্ডিনান্ডকে বিয়ে করেছিলেন, এর অর্থ হলো যে কাস্তিল ও আরাগনের দুটি শক্তিশালী রাজ্য একত্র হবে এবং উভয় গ্রানাডা আমিরাতকে এতদিন স্বস্তিতে টিকে থাকতে সহায়তাকারী আন্তঃখ্রিস্টান বিবাদ থেকে মুক্ত হবে।[৭]

১৩৬০ সালে ইবেরিয়ার পাঁচটি রাজ্য। ১৪৮২ সালে গ্রানাডারল আমিরাতের অঞ্চল হ্রাস করা হয়েছিল, কারণ এটি জিব্রাল্টার ও অন্যান্য পশ্চিম অঞ্চলের উপর তার দখল হারিয়েছিল
১৩৬০ সালে ইবেরিয়ার পাঁচটি রাজ্য। ১৪৮২ সালে গ্রানাডা আমিরাতের অঞ্চল হ্রাস পায়। কারণ এটি জিব্রাল্টার ও এর পার্শ্ববর্তী অন্যান্য পশ্চিম অঞ্চলের উপর নিজের দখল হারায়।
Territory of the Nasrid dynasty during the 15th century. In light green are territories conquered by the Christian kings during the 13th century, including Ceuta on the African coast.
১৫ শতাব্দীতে নাসরি রাজবংশীয় অঞ্চল। আফ্রিকার উপকূলে সেউতাসহ ১৩শ শতাব্দীতে খ্রিস্টান রাজাদের দ্বারা জয় করা অঞ্চলগুলি হালকা সবুজে দেখানো হয়েছে।

কালানুক্রম[সম্পাদনা]

উস্কানি ও প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

আরাগন রাজ্যের ফার্ডিনান্ডের সাথে রানী ইসাবেলার বিবাহ গ্রানাডার বিরুদ্ধে কাস্তিল ও আরাগনের ঐক্যবদ্ধ সীমান্ত নিশ্চিত করে।

১৪৭৮ সালের যুদ্ধবিরতি তখনো তাত্ত্বিকভাবে কার্যকর ছিল যখন ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গ্রানাডা একটি খ্রিস্টান অভিযানের প্রতিশোধের অংশ হিসাবে জাহারার বিরুদ্ধে একটি আকস্মিক ও বৃহৎ আক্রমণ শুরু করে।[৮] অভিযানে শহরের পতন ঘটে এবং এর জনসংখ্যাকে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী দাস করা হয়। এই প্রতিশোধমূলক আক্রমণটি একটি বড় উস্কানি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল এবং আন্দালুসিয়ায় যুদ্ধের পক্ষের দলগুলি এটিকে একটি পাল্টা হামলার সমর্থন হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে সহায়তা করেছিল এবং একটি বিস্তৃত যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। আলহামরা দখল এবং এর পরবর্তী রাজকীয় অনুমোদনকে সাধারণত গ্রানাডার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৮] আবু হাসান মার্চ মাসে অবরোধের মাধ্যমে আলহামরা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। বাকি কাস্তিল ও আরাগন থেকে শক্তিবৃদ্ধি ১৪৮২ সালের এপ্রিলে আল-হামারা পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয় এবং আরাগন–রাজা ফার্ডিনান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪৯২ সালের ১৪ মে আলহামরার সামরিক ক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করেন এবং গ্রানাডা রাজ্য প্রায় বিচ্ছিন্ন ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে খ্রিস্টানরা লোজা ঘেরাও করার চেষ্টা করে; কিন্তু তারা শহরটি দখল করতে ব্যর্থ হয়। এ ধাক্কা একটি মোড় দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল যা গ্রানাডীয়দের ব্যাপক সাহায্য করে। লোজা যেদিন মুক্ত হয়েছিল সেই দিনই আবু হাসানের পুত্র আবু আব্দুল্লাহ (যিনি বোআব্দিল নামেও পরিচিত ছিলেন) পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান রাজ্যগুলির প্ররোচনায় নিজের পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং নিজেকে গ্রানাডার আমির দ্বাদশ মুহাম্মদ নামে ভূষিত করেন।[৯] তাদের মাঝে এই গৃহযুদ্ধ ১৪৮৩ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এদিকে আবু হাসানের ছোট ভাই আল জাগাল মালাগার পূর্বে আক্সারকিয়ার পাহাড়ে একটি বড় খ্রিস্টান আক্রমণকারী বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং তাদের পিছিয়ে যেতে বাধ্য করেন। তবে লুসেনায় খ্রিস্টানরা বোয়াব্দিলকে পরাজিত ও বন্দী করতে সক্ষম হয়। পূর্বে ফার্দিনান্দ ও রাণী ইসাবেলার সমগ্র গ্রানাডা জয় করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তবে রাজা বোবদিলকে বন্দী করার সাথে সাথে রাজা ফার্দিনান্দ তাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রানাডা জয় করার কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৪৮৩ সালের আগস্ট মাসে লেখা একটি চিঠিতে ফার্দিনান্দ লিখেছিলেন, "গ্রানাডাকে বিভক্ত করতে ও এটিকে ধ্বংস করার জন্য আমরা তাকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ... এই জন্যে তাকে (বোআব্দিল) তার পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে"।[৯] ছদ্ম-খ্রিস্টান মিত্র হিসেবে বোআব্দিলের মুক্তির সাথে সাথে পুনরায় গ্রানাডার গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। একজন গ্রানাডীয় কাহিনীকার মন্তব্য করেন যে, বোআবদিলের বন্দীকরণ ছিল "পিতৃভূমির ধ্বংসের প্রধান কারণ।"[৯]

১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রানাডীয়দের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ভাগ্য আবারও বদলে যায়। হাসানের ভাই আল-জাগাল তার ক্ষমতার মূল ঘাঁটি আলবাইজিন থেকে বোআব্দিলকে বহিষ্কার করেন এবং আল-জাগল তার বৃদ্ধ বড় ভাই ও নামমাত্র আমির আবু হাসানকে সিংহাসনচ্যুত করে তার দেশ ও জাতির শাসনভার গ্রহণ করেন, যিনি অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যান।[১০] বোআব্দিল ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলার সুরক্ষায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মুসলিম রাজ্যে ক্ষমতা ও পদবী নিয়ে অব্যাহত বিভাজন এবং কাডিজের মার্কুইসের ধূর্ততা ১৪৮৫ সালে অস্বাভাবিক গতিতে গ্রানাডার পশ্চিমাঞ্চল দখল হতে সহায়তা করে। শহরের নেতাদের সাথে তার আলোচনায় বিলম্ব হওয়ায় রন্ডা পনের দিন পর তার দখলে পড়ে। রন্ডার পতনের ফলে গ্রানাডীয় নৌ-বহরের ঘাঁটি মার্বেলাকে পরবর্তী খ্রিস্টীয় অধিগ্রহণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।[১০]

গ্রানাডা নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ভূমিকা পুনরায় শুরু করার জন্য বোআব্দিল শীঘ্রই খ্রিস্টান সুরক্ষা থেকে মুক্তি পান। পরের তিন বছর তিনি রাজা ফার্দিনান্দ ও রাণী ইসাবেলার একজন পোষ্য দাস হিসেবে কাজ করেন।[১০] তিনি নাগরিকদের কাছে গ্রানাডার সীমিত স্বাধীনতা ও খ্রিস্টানদের সাথে শান্তির প্রতিশ্রুতি দেন। ক্যাথলিক রাজাদের কাছ থেকে তিনি তার নিয়ন্ত্রিত শহরগুলি পরিচালনার জন্য ডিউক উপাধি পান।[১১]

মালাগা অবরোধ[সম্পাদনা]

১৪৮৭ সালে গ্রানাডার প্রধান সমুদ্রবন্দর মালাগা যে কোনো মূল্যে দখল করা কাস্তিলীয় সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল। আমির আল-জাগল অবরোধ মুক্ত করার প্রচেষ্টায় ধীরগতিতে অগ্রসর হতে থাকেন এবং চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে তিনি খ্রিস্টান বাহিনীকে নিরাপদে হয়রানি করতেও অক্ষম ছিলেন। এমনকি মালাগাকে সাহায্য করার জন্য শহর ত্যাগ করার পরেও বোআব্দিল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শহর রক্ষা করার জন্য তাকে আলহামরাতে বহু সৈন্য ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।[১১]

খ্রিস্টীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হওয়া প্রথম প্রধান শহর ভেলেজ মালাগা ১৪৮৭ সালের ২৭ শে এপ্রিলে আত্মসমর্পণ করা হয়। যুদ্ধে বোয়াব্দিলের স্থানীয় সমর্থক বিদ্রোহীরা সরাসরি খ্রিস্টান অবরোধকারীদের সাহায্য করেছিল।[১১] ১৪৮৭ সালের ৭ মে থেকে ১৮ আগস্ট ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্ধিত মালাগা অবরোধের সময় অতিবাহিত হয়। এরপর শহরের সেনাপতি আত্মসমর্পণ করার চেয়ে মৃত্যুকে বেঁছে নেন এবং আফ্রিকান সৈন্য ও খ্রিস্টান বিদ্রোহীরা (যারা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন) পরাজয়ের পরিণতির ভয়ে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করতে থাকেন। শেষের দিকে মালাগার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেন; কিন্তু ফার্ডিনান্ড তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ উদার শর্ত দিয়ে ইতিমধ্যে দুবার তাদের প্রস্তাব করা হয়েছিল।[১২] অবশেষে যখন শহরের পতন ঘটে যায় ফার্দিনান্দ এর প্রায় সব বাসিন্দাকে তাদের অন্তিম প্রতিরোধের জন্য দাসত্বের শাস্তি দিয়েছিলেন, যখন বিদ্রোহীদের জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয় বা নল দিয়ে তাদের শরীর বিদ্ধ করা হয়। মালাগার ইহুদিরা অবশ্য এতে রক্ষা পায়; কারণ কাস্তিলীয় ইহুদিরা তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়।[১১]

ঐতিহাসিক উইলিয়াম প্রেসকট মালাগার পতনকে এই যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করেন; কারণ গ্রানাডা যুক্তিসঙ্গতভাবেই নিজের প্রধান বন্দর মালাগা ছাড়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে চালিয়ে যেতে পারে না। মালাগা বন্দর অচল হয়ে যাওয়ার ফলে গ্রানাডার আর্থিক চাকা স্থবির হয়ে পড়ে।[১৩]

বাজা অবরোধ[সম্পাদনা]

মালাগার পতন থেকে আল-জাগল নিজের প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলে এবং ১৪৮৭ সালে বোআব্দিল পুনরায় গোটা গ্রানাডা শহরের দখল নেয়। তিনি ভেলেজ-রুবি, ভেলেজ-ব্ল্যাঙ্কো ও ভেরা অঞ্চল দিয়ে দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে আল-জাগল রাজা হিসেবে তখনও বাজা, গুয়াডিক্স ও আলমেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। খ্রিস্টান বাহিনী তার কিছু ভূমি নিয়ে যাওয়ার পরেও সম্ভবত শীঘ্রই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এ কথা অনুমান করে বোআব্দিল কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।[১১]

১৪৮৯ সালের দিকে খ্রিস্টীয় বাহিনী বাজা শহরে একটি বেদনাদায়ক দীর্ঘ ও কঠোর অবরোধ শুরু করে দেয় যেটি আল–জাগলের অবশিষ্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ ছিল। বাজা অত্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক শহর ছিল; কারণ এতে খ্রিস্টানদের তাদের সৈন্যবাহিনীকে বিভক্ত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল এবং এর বিরুদ্ধে কামান খুব কমই কাজে লেগেছিল। সেনাবাহিনী সরবরাহের ফলে কাস্তিলীয়দের বিশাল অর্থের ঘাটতি দেখা দেয়। সেনাবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাখার জন্য মাঝে মাঝে বেতন ও চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার হুমকি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছিল এবং এমনকি রাণী ইসাবেলাকে অভিজাত ও সৈন্য উভয়েরই মনোবল বজায় রাখতে ব্যক্তিগতভাবে অবরোধে আসতে হয়েছিল। এর প্রায় ৬ মাস পর আল -জাগল আত্মসমর্পণ করেন, যদিও তার আওতাধীন আফ্রিকান সৈন্যরা তখন পর্যন্তও অনেকাংশেই অক্ষত ছিল। কারণ তিনি প্রায় নিশ্চিত হয়েছিলেন যে খ্রিস্টান সৈন্যরা যতক্ষণ সময় লাগবে অবরোধ বজায় রাখার বিষয়ে অনড় ছিল এবং তার সাহায্যের আশা ছাড়া আর কোন রকমের প্রতিরোধই অসম্ভব ছিল, যার কোনও লক্ষণ ছিল না।[১১] [১৪] বাজাকে আত্মসমর্পণের জন্যে উদার শর্ত দেওয়া হয়েছিল যা মালাগার ক্ষেত্রে ঘটেনি।

গ্রানাডার শেষ অবস্থান[সম্পাদনা]

আল-হামরা প্রসাদ, যেখান থেকে গ্রানাডা আমিরাত নিয়ন্ত্রিত হতো।

বাজার পতন ও ১৪৯০ সালে আল-জাগলকে বন্দী করার সাথেই মনে হয়েছিল যেন যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা বিশ্বাস করেছিলেন যে, এটি চূড়ান্তভাবেই শেষ হয়ে গিয়েছে।[১৫] যাইহোক, এদিকে বোআব্দিল ফার্দিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার সাথে তার জোটের জন্য প্রাপ্ত পুরষ্কারে অসন্তুষ্ট ছিলেন। সম্ভবত তা এই কারণে যে, তাকে যে জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সেগুলি কাস্তিলের দখলে ছিল এবং কাস্তিল দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। কেবল গ্রানাডা শহর ও আলপুজারাস পর্বতমালা দখল করে তিনি নিজের চাটুকারিতা বন্ধ করে দেন এবং তার পূর্ব-মিত্র ক্যাথলিক রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।[১৫] এটা স্পষ্ট যে, এ ধরনের অবস্থানে দীর্ঘমেয়াদে তিনি অক্ষম ছিলেন, তাই বোয়াব্দিল বহিঃসাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে অনেকের কাছে অনুরোধ পাঠান। জবাবে বুরজি মিশরীয় সুলতান কাইতবে গ্রানাডা যুদ্ধের জন্য রাজা ফার্দিনান্ডকে হালকাভাবে তিরস্কার করেন; কিন্তু অপরদিকে মিশর শাসনকারী মামলুকরা উসমানীয় তুর্কিদের সাথে প্রায় দীর্ঘদিন অবিরাম যুদ্ধে জড়িয়ে ছিলেন। কাস্তিল ও আরাগনও তুর্কিদের সহকর্মী শত্রু হওয়ার কারণে সুলতানের তুর্কিদের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্ত জোট ভাঙার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। বোআব্দিল এই সংকটে ফেজের সালতানাতের কাছেও সাহায্যের অনুরোধ করেছিলেন; কিন্তু ইতিহাসে এর কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।[১৬] উত্তর আফ্রিকা সমগ্র যুদ্ধ জুড়ে কাস্তিলে গম বিক্রি করে এবং ভালো বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিকে মূল্য দেয়। যাই হোক না কেন; গ্রানাডীয়রা কোনো উপকূলরেখারই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি যেখান থেকে কোনো বিদেশী সাহায্য পাওয়ার আশা করা যাবে। তাই গ্রানাডার জন্য কোন সাহায্য আসেনি।[১৬]

গ্রানাডা আমিরাতের পতনের পর আল-হামরায় দ্বাদশের মুহাম্মদ পরিবারকে চিত্রিত করে একটি চিত্রকর্ম।

১৪৯১ সালের এপ্রিলে গ্রানাডার আট মাসের অবরোধ শুরু হওয়ার কথা ছিল। রক্ষকদের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে ভয়ানক হয়ে ওঠে। কারণ অবরোধে হস্তক্ষেপ করার জন্য তাদের বাহিনী হ্রাস পায় এবং উপদেষ্টারা একে অপরের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা শুরু করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের ঘুষের প্রবণতা ছিল এবং সেই মূহুর্তে বোআব্দিলের অন্তত একজন প্রধান উপদেষ্টা পুরো সময় কাস্তিলের হয়ে কাজ করতেন বলে ধারণা করা হয়।[১৬] গ্রানাডা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর একটি অস্থায়ী আত্মসমর্পণ হিসেবে ১৪৯১ সালের ২৫ নভেম্বর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা শহরটিকে দুই মাস সময় দেয়।[১৭] চুক্তিতে দীর্ঘ বিলম্বের কারণ উভয় পক্ষের মাঝে এতটা অস্থিরতা ছিল না; বরং গ্রানাডীয় সরকার শহরকে গ্রাসকারী বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগের মধ্যে নিজেদের মাঝে সমন্বয় করতে অক্ষম ছিল এবং খ্রিস্টধর্মীয় পক্ষগুলি গ্রানাডা পতনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষে দীর্ঘ আলোচনার পরে বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে (যেসব প্রাথমিক দৃষ্টিতে স্থানীয় মুসলিম জনসংখ্যার জন্য উদার ধারণা করা হয়েছিল) ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারিতে শহরবাসী আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকালে অবরোধকারী খ্রিস্টান বাহিনী যদি প্রতিরোধ করা হয় এ আশঙ্কায় সেদিন আলহামরাতে তাদের সৈন্যদের লুকিয়েছিল যা আর হয়নি।[১৮] বাস্তবপক্ষে গ্রানাডার প্রতিরোধ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

কৌশল ও প্রযুক্তি[সম্পাদনা]

গ্রানাডা যুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি দিক ছিল যে, এর অনেক অবরোধকে ব্যাপকভাবে সংক্ষিপ্ত করতে বোমাবাজি এবং কামানের শক্তির ব্যবহার।[১৯] কাস্তিলীয় ও আরাগোনীয়রা মাত্র কয়েকটি কামান দিয়ে প্রাথমিক যুদ্ধ শুরু করে, কিন্তু ফার্ডিনান্ড তার সাম্প্রতিক যুদ্ধ থেকে ফরাসি ও বারগুন্ডীয় যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের কাছে অনেক বিষয়ে ধারণা পায় এবং এর ফলে খ্রিস্টান বাহিনী আক্রমণাত্মকভাবে তাদের তোপধারী বাহিনী বাড়িয়েছিল।[২০] তবে মুসলমানরা কামান ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে ছিল এবং তারা সাধারণত শুধুমাত্র মাঝে মাঝে বন্দী খ্রিস্টানদের দিয়ে কিছু টুকরা ব্যবহার করেছিল।[২১] ইতিহাসবিদ ওয়েস্টন এফ. কুক জুনিয়র লিখেছেন, 'বারুদ, আগ্নেয়াস্ত্রতোপ দিয়ে অবরোধমূলক লড়াই গ্রানাডা যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল এবং এ যুদ্ধে স্পেনীয় বিজয়ের অন্য কারণগুলি আসলে গৌণ ও অমৌলিক ছিল।"[২২] ১৪৯৫ সাল নাগাদ কাস্তিল ও আরাগন মোট ১৭৯ টি কামান নিয়ন্ত্রণ করেছিল, যা কাস্তিলীয় উরাধিকারের যুদ্ধে দেখা তুচ্ছ সংখ্যার থেকে একটি বিশাল বৃদ্ধি হিসেবে গণনা করা হয়।[২৩]

আদিম আরকেবুসেসমূহও এ যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল, যদিও তা অল্প পরিমাণে ছিল।[২৩] ভারি অশ্বারোহী নাইটরা গ্রানাডা যুদ্ধে আগের যুদ্ধের তুলনায় অনেক ছোট আকারে ছিল।[২৪] হালকা অশ্বারোহী জিনেটরা পূর্বের তুলনায় আরও বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। অশ্বারোহী বাহিনী যেখানে খোলা মাঠের যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেখানে তা বিরল ছিলো ও সংখ্যায় অধিক গ্রানাডীয়রা সাধারণত এই ধরনের যুদ্ধ এড়িয়ে চলত।[২৫] কাস্তিলীয় বাহিনীও বিপুল সংখ্যক সহায়ক পুরুষ নিয়োগ করেছিল; ১৪৮৩ সালে কাস্তিলীয় শ্রমিকদের একটি বিশাল বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে মাঠের ফসল ধ্বংস ও গ্রামাঞ্চলে লুটপাট করার জন্য একত্র হয়েছিল।[১৯] পার্বত্য অঞ্চলের কারণে বাহিনীর মাঝে সমন্বয় ও রসদ সরবরাহ করা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু খ্রিস্টান বাহিনী নিজেদের সৈন্যদের খাদ্য ও সরবরাহ সরবরাহের জন্য পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি রাস্তা নির্মাণ করে।

রাজনৈতিকভাবেই অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জোর দেন; কিন্তু ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা তখন সামগ্রিকভাবে নিজেদের সেনাবাহিনী পরিচালনা করার জন্য একটি বড় মাত্রার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে সক্ষম ছিলেন। এদিকে গ্রানাডা এমন সংকটপূর্ণ মুহুর্তেও নিজস্ব গৃহযুদ্ধে আচ্ছন্ন ছিল যা একটি ঐক্যবদ্ধ সামরিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দেয়।[২৬] খ্রিস্টান সেনাবাহিনী প্রায় সম্পূর্ণ কাস্তিলীয় ছিল; আরাগোনীয় ও বিদেশী ভাড়াটেদের অংশগ্রহণ ছিল ন্যূনতম।[২৭] কাস্তিলীয় সেনাবাহিনী অন্য আন্দালুসীয় অঞ্চলসমূহের সৈনিকদের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রেখেছিল এবং এর বেশিরভাগ জনসংখ্যা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। অভিজাত ব্যয়বহুল অশ্বারোহীদের সিংহভাগ তারাই প্রদান করে।[২৭]

জড়িত সেনাবাহিনীর শক্তি[সম্পাদনা]

জড়িত সেনাবাহিনীর প্রকৃত শক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ নেই। তবে মূল কয়েকটি সূত্র অনুসারে কাস্তিলীয় সেনাবাহিনী ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ সৈন্য নিয়ে সবচেয়ে বড় সামরিক প্রচেষ্টাময় বছরগুলিতে পৌঁছেছিল (১৪৮২, ১৪৮৩, ১৪৮৬, ১৪৮৭, ১৪৮৯ ও ১৪৯১) অথবা ১০,০০০ থেকে ২৯,০০০ এর চেয়ে বেশি সৈন্য নিয়ে একটি (১৪৮৪, ১৪৮৫, ১৪৮৮, ও ১৪৯০) স্থিতিশীল সামরিক শক্তি আয়ত্তে রেখেছিল, যা আধুনিক পণ্ডিতদের দ্বারা লাদেরো কুয়েসাদা (শক্তিশালী প্রতিরক্ষা) হিসাবে গৃহীত হয়।[২৮] তা সত্ত্বেও বিশ্লেষক গার্সিয়া দে গ্যাবিওলার মতে এই ধরনের শক্তির সৈন্যদের রাখা, বেতন দেওয়া ও খাওয়ানো সম্প্রতি তৈরি করা একটি আধুনিক রাষ্ট্রের সম্পদের বাইরে ছিলো। ইতালিতে অভিযানের জন্য (১৪৯৪ থেকে ১৫০৩ খ্রি.) স্পেনীয় সেনাবাহিনীর সংখ্যা ছিল সর্বাধিক ৫,০০০, ৯,০০০ বা ১৫,০০০ পুরুষ; তাই গ্রানাডার জন্য ৫-১০ বছর আগে নথিভুক্ত সংখ্যাটি বরং আশ্চর্যজনক। তৎকালীন (প্রতি বছর ১৩ থেকে প্রায় ২০ কোটি মারাভেডি) কাস্তিলের রাজস্বের হিসাবের দিকে তাকালে এটা খুব কমই বিশ্বাসযোগ্য যে কাস্তিল ৮,০০০ থেকে ২,০০০০ সৈন্য সংগঠিত করার সক্ষমতা রাখত।[২৯] প্রকৃতপক্ষে লাদেরো কুয়েসাদা বলতে সৈন্য নয়; বরং কয়েক বছর ধরে এটি কাস্তিল দ্বারা সংকুচিত শস্য বোঝার সংখ্যা হিসেবে নিবন্ধিত হয় এবং গার্সিয়া দে গ্যাবিওলা এই শস্য সংরক্ষণ করার মাধ্যমে খাওয়ানো যেতো এমন সৈন্যের সংখ্যা গণনা করেছেন এবং তার উপসংহার হল, ১৪৮২ (লোজা অবরোধ) সালে এর সংখ্যা ছিল ১২,০০০ জন সৈন্য; ১৪৮৩ এবং ১৪৮৪ সালের জন্য ৮,০০০ জন পুরুষ (গ্রানাডা লুটপাতসহ); ১৪৮৫ সালে ১০,০০০ পুরুষ (রোন্ডা অবরোধ); ১৪৮৬ সালে ১০- ১২,০০০ সৈন্য (দ্বিতীয় লোজা অবরোধ); ১৪৮৭ সালে ১২,০০০ (মালাগা অবরোধ); ১৪৮৮ সালে ১০-১২,০০০ (প্রথম বাজা অবরোধ); ১৪৮৯ সালে ২০,০০০ সৈন্য (দ্বিতীয় বাজা অবরোধ কালে সবচেয়ে বড় শস্য বোঝা সংরক্ষণ করা হয়, যা প্রচারাভিযানের সময় কাস্তিলের সবচেয়ে বড় রাজস্বের সাথে মিলে যায়, প্রায় ২০০ মি.) এবং ১৪৯০-৯১ সালে মোট সৈন্য সংখ্যা ১০-১২,০০০ জন পুরুষ (গ্রানাডার চূড়ান্ত অবরোধে) এবং তাদের মধ্যে সর্বদা ২০% অশ্বারোহী হওয়া উচিত।[৩০]

মুসলিম সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে গার্সি গ্যাবিওলার মতে[৩১] সূত্র দ্বারা উল্লিখিত শক্তির সংখ্যা (১৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ পদাতিক, বা ৪,৫০০-৭,০০০ জন অশ্বারোহী) কাস্তিলীয়দের সংখ্যার মত অগ্রহণযোগ্য বলা উচিত। গ্রানাডীয়দের উল্লিখিত মোট শক্তি হল ৩,০০০টি ঘোড়া (১৪৮২), ১,০০০–১,৫০০ (১৪৮৩, ১৪৮৫ ও ১৪৮৭) বা এমনকি ৩০০-৫০০ অশ্বারোহী (১৪৮৯ এবং ১৪৯১)। পদাতিক বাহিনী সম্পর্কে ডি মিগুয়েল মোরা বলেছেন যে, বাজা অবরোধের সময় কাস্তিলীয়দের দ্বারা বন্দী একজন মুসলিম সৈনিক স্বীকার করেছিলেন যে, গ্রানাডার আফ্রিকান সেনাবাহিনীর প্রকৃত পদাতিক শক্তি ছিল ৪,০০০ জন; ১৫,০০০ নয়।[৩২] তাই মুসলিম বাহিনী চার হাজার পদাতিক বাহিনী অতিক্রম করতে পারেনি। যুদ্ধের শেষে সৈন্যদের অনুপাত ছিল ২ঃ১ বা ৩ঃ১, যা কাস্তিলীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে যায়।

গ্রানাডা যুদ্ধ খ্রিস্টানদের জন্য ইতালীয় যুদ্ধের মূল্যবান প্রশিক্ষণ হিসাবে প্রমাণিত হয় যেখানে কাস্তিলীয় সেনাবাহিনী ও তাদের কৌশলগুলি টেরসিওদের মতো নিজেদের ভালভাবে (ধ্বস থেকে) উদ্ধার করে।[৩৩]

ফলাফল[সম্পাদনা]

ভিসেন্তে বার্নেটো ওয়াজকেজ কর্তৃক অঙ্কিত গ্রানাডার আত্মসমর্পণ।

গ্রানাডার আত্মসমর্পণকে ইসলামের জন্য একটি বড় আঘাত এবং খ্রিস্টধর্মের একটি বিজয় হিসাবে দেখা হয়েছিল। তৎকালীন বিশ্বের অন্যান্য খ্রিস্টীয় রাষ্ট্রসমূহ ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলাকে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানায়, অন্যদিকে ইসলামি ঐতিহাসিকগণ হতাশার সাথে এর প্রতিক্রিয়া জানায়। কাস্তিল ও আরাগনে উদযাপন এবং ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাস্তায় মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে।[৩৪] খ্রিস্টধর্মের জন্য ইসলামি শাসন থেকে গ্রানাডাকে মুক্ত করাকে চল্লিশ বছর আগে উসমানীয় তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপল হারানোর প্রতি ভারসাম্য হিসাবে দেখা হয়েছিল।[৩৫]

গ্রানাডার আত্মসমর্পণের চুক্তির শর্তাবলী মুসলিমদের জন্য গ্রানাডীয়রা যে দর কষাকষি করতে পেরেছিল সে বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে তা বেশ উদার ছিল।[৩৬] যুদ্ধের ফলাফল সন্দেহের মধ্যে থাকাকালীন পূর্বে আত্মসমর্পণকারী শহরগুলির প্রস্তাবিত শর্তগুলির মতই এই চুক্তি ছিল। চুক্তিতে ছিল যে, মোট তিন বছর পর্যন্ত মুসলমানরা অন্য দেশে হিজরত করতে পারবে এবং স্বাধীনভাবে তারা ফিরে যেতে পারে। তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তবে আগ্নেয়াস্ত্র নয় – এটি বিধানগুলোর একটি যা এক মাস পরে বাতিল করা হয়েছিল। যে কাউকে, এমনকি প্রাক্তন খ্রিস্টাদেরও যারা পূর্বে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হবে না। বোআব্দিলকে অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং পাহাড়ি আলপুজাররাসের একটি ছোট রাজ্যের শাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এটি এমন একটি অঞ্চল, যা যে কোনও ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল।[৩৬] প্রথমে বিজয়ীরা গ্রানাডীয়দের সাথে সম্মানের সাথে আচরণ করেছিল এবং তাই সাত বছর পর্যন্ত গ্রানাডা প্রধানত স্থিতিশীল ছিল; যদিও ১৪৯২ সালের আলহামরা ডিক্রি ইহুদিদের বহিষ্কারের নির্দেশ দেয় যারা কনভার্সো মারানো (পূর্বে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত) ছিল না।

রাজা বোআব্দিল শীঘ্রই নিজের অবস্থানে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তিনি ১৪৯৩ সালের অক্টোবরে মরক্কো চলে যান যেখানে তিনি প্রায় চল্লিশ বছর পরে মারা যান।[৩৭] অবশেষে কাস্তিলের চুক্তি আরও অনেক সহনশীল বৈশিষ্ট্য প্রত্যাহার করতে শুরু করে। তার এ উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন আর্চবিশপ সিসনেরোস, যিনি ব্যাপক ধর্মান্তরকরণ, মূল্যবান আরবি পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলা এবং স্থানীয় মুসলিমদের (ও ইহুদিদের) জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৩৭]

উদ্যোগগুলো একটি বিদ্রোহের জন্ম দেয় যা অনেক মুসলমানদের বাপ্তিস্ম, নির্বাসন বা মৃত্যুদণ্ডের যে কোনো একটি বেছে নিতে বাধ্য করা। তারপর থেকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও কাস্তিল ভবিষ্যত বিদ্রোহ রোধ করতে গ্রানাডায় একটি বড় সামরিক বাহিনী জারি করতে বাধ্য হয়। রাণী ইসাবেলা স্পেনীয় ধর্মীয় বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করে এবং ফার্দিনান্দ তার ধর্মীয় বিচারবিভাগকে আরগনে নিয়ে আসেন যেখানে আগে এর কোনো ক্ষমতা ছিল না।

কাস্তিল এ যুদ্ধের প্রধান সুবিধাভোগী ছিল। কারণ এটি মামলা চালানোর জন্য বেশিরভাগ অর্থ ও জনশক্তি ব্যয় করেছিল এবং সম্পূর্ণরূপে গ্রানাডাকে তার সাথে সংযুক্ত করেছিল। গ্রানাডা জয়ের অর্থ আরাগনের কৌশলগত অবস্থানের জন্য সামান্যই ছিল; কিন্তু এটি ইতালিফ্রান্সে কাস্তিলীয় সমর্থন সুরক্ষিত করতে সাহায্য করেছিল, যেখানে আরগনের রাজনৈতিক স্বার্থ নিহিত ছিল।[৩৮] এই যুদ্ধের অর্থায়নের কাজটি ছিল খুবই ভয়াবহ; যুদ্ধে মোট খরচ অনুমান করা হয়েছিল প্রায় ৪৫,০০,০০,০০০ মারাভেডি।[৩৯]

গ্রানাডায় মুরদের (মুসলিম; স্পেনীয়রা মুসলমানদের মুর বলে ডাকতেন) তথা পরবর্তীতে মরিস্কোস বা "নতুন খ্রিস্টান" নামে পরিচিতদের উপর ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন ও ১৫৬৮-৭১ সালে সংঘটিত আলপুজার্রাসের বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করে। মুরদের পরাজয়ের পরে (যা মোটেই সহজ ছিল না) প্রাক্তন গ্রানাডা রাজ্যের প্রায় সমস্ত মরিস্কোকে স্পেনের অন্যান্য অংশে নির্বাসিত করা হয়েছিল।[৩৯]

সাংস্কৃতিক প্রভাব[সম্পাদনা]

একটি সম্পূর্ণ ঔপন্যাসিক ও কল্প-কাহিনীসমৃদ্ধ ধারা গ্রানাডীয় যুদ্ধের গল্প এবং গ্রানাডীয় সীমান্তের যুদ্ধের বিভিন্ন চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা গ্রানাডার পতনের সময়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। গিনেস প্রেয ডে হিটা ঐতিহাসিক কথা-সাহিত্যের একটি প্রাথমিক উদাহরণ হিসেবে গ্রন্থ "গ্যারিস সিভিলস ডে গ্রানাডা" (Guerras civiles de Granada) লিখেছেন, যা যুদ্ধের একটি কল্পনাময় বিবরণ, এখানে উভয় পক্ষের বীর এবং তাদের বীরত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য ইস্পাতসম মনোবলকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করার উদ্দেশে রাজকীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৪৭৯ সালে "সোবরে বাজা" নামে একটি গ্রন্থ রচিত হয়েছিল যা একটি দীর্ঘ অবরোধের অধ্যবসায়কে উৎসাহিত করে। ১৪৮৪ সালে লেখা "সেটেনিল, অ্যায় সেটেনিল " গানটিতে আশা করা হয়েছিল যে, রাজা ফার্দিনান্দ "সুদূর জেরুজালেম" জয় করবেন।[৪০] জুয়ান দেল এনসিনার "উনা সানোসা পোরফিয়া " গানটি রাজা বোআব্দিল ঠোঁটে যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেছে।

স্পেনীয় বারোক নাট্যকার ক্যাল ডেরন ডে লা বার্কা গ্রানাডা বিজয়ের বিষয়ে একটি নাটক লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল আমার দেসপুয়েস দে লা মুয়ের্তে। এটি ১৮৫৩ সালে ডেনিস ফ্লোরেন্স ম্যাক্কার্থি দ্বারা এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় রয় ক্যাম্পবেল দ্বারা (আরো জানতে ইংরেজি অনুবাদে ক্যাল ডেরনের নাটকের তালিকা নিবন্ধটি দেখুন) দ্বারা মৃত্যুর পরে প্রেম হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছিল। ইংরেজ নাট্যকার জন ড্রাইডেন ১৬৭২ সালে প্রকাশিত একটি বীরত্বপূর্ণ নাটক দ্য কনকোয়েস্ট অফ গ্রানাডা লিখেন যা একটি রোমান্টিক প্রেমের ত্রিভুজ ও দুটি গ্রানাডীয় গোষ্ঠীর মধ্যে অবরোধকারী কাস্তিলীয়দের পটভূমিতে রেখে তাদের আনুগত্যের সংঘর্ষের উপর আলোকপাত করে।

দিয়া দে লা তোমা দে গ্রানাডা হল একটি নাগরিক ও ধর্মীয় উৎসব, এটি প্রতি বছর গ্রানাডায় শহর বিজয়ের বার্ষিকী হিসেবে ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে বাম দলগুলি এ তারিখটির সমালোচনা ও বর্জন করে এবং এর পরিবর্তে গ্রানাডার উৎসবটি ১৯ শতাব্দীর একজন নায়িকা মারিয়ানা পিনেদার স্মরণে হওয়ার প্রস্তাব করে।[৪১][৪২] ২০১৯ এবং ২০২০ সালে পিপি পার্টি অনুষ্ঠানটি উদযাপন করেছিল। এছাড়াও ভক্স' ও "গ্রুপ হোগার সোশ্যাল" এতে অংশ নিয়েছিল এবং তারা স্পেনীয় পতাকা বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিতরা স্পেনীয় পরিচয়ের প্রশংসায় স্লোগান দেয়, যখন অন্যান্য রাজনৈতিক দল; যেমন: বামপন্থি বিপ্লবী পুঁজিবাদী (Revolutionary Anticapitalist Left) এই উদযাপনের বিরোধিতা করেছিল; সর্বোপরি, বিজয়কে একটি গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৪৩] অনুষ্ঠান উদযাপনের সময় স্পেনীয় সেনাবাহিনী নিজের সঙ্গীত দলের সাথে কুচকাওয়াজ করে এবং অনুষ্ঠানটি অতি-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি সমাবেশস্থল হয়ে উঠে, যা বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিয়েছে৷ স্পেনীয় সমাজবাদীরা উদযাপন অপসারণ থেকে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে "সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের একটি চিহ্ন হিসাবে মুর প্যারিং (মুসলিম ও খ্রিস্টান সহাবস্থান) অনুষ্ঠান যোগ করার প্রস্তাব করে।[৪৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kamen, Henry. "Spain 1469–1714 A Society of Conflict." Third edition. pp. 37–38
  2. কামরুজ্জামান, ড মো। "স্পেনে মুসলমানদের উত্থান-পতন"DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৩ 
  3. Harvey, L. P. (২০০৫)। Muslims in Spain, 1500 to 1614। University Of Chicago Press। আইএসবিএন 978-0-226-31963-6 
  4. Hillgarth, p. 367.
  5. Hillgarth, p. 368.
  6. Hillgarth, p. 369.
  7. Hillgarth, p. 370.
  8. Hillgarth, p. 370.
  9. Hillgarth, p. 381.
  10. Hillgarth, p. 382.
  11. Hillgarth, pp. 383–384.
  12. Prescott, p. 207.
  13. Prescott, p. 211.
  14. Prescott, p. 224.
  15. Hillgarth, p. 385.
  16. Hillgarth, p. 386.
  17. Prescott, William Hickling (১৯০৪)। History of the reign of Ferdinand and Isabella, the Catholic। J. B. Lippincott Company। পৃষ্ঠা 242। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৫ 
  18. Hillgarth, p. 373.
  19. Hillgarth, p. 376.
  20. Prescott, p. 30.
  21. Prescott, p. 29.
  22. Prescott, p. 27.
  23. Hillgarth, p. 377.
  24. Prescott, p. 18.
  25. Hillgarth, p. 374.
  26. Hillgarth, p. 377.
  27. Hillgarth, p. 378.
  28. Ladero, Granada, p. 100 and 108, and Irving.
  29. Amounts calculated by García de Gabiola, p. 63, from revenues registered by Ladero, Granada, pp. 121–127, and Ladero, Hermandad, pp. 52–58, 67.
  30. Amounts calculated by García de Gabiola, pp. 63–69, from grain loads registered by Ladero Quesada.
  31. García de Gabiola, pp. 63–64.
  32. De Miguel Mora, pp. 12, 16.
  33. Prescott, p. 16.
  34. Hillgarth, p. 388.
  35. Prescott, William Hickling (১৮৬৮)। History of the Reign of Ferdinand and Isabella, the Catholic, of Spain (ইংরেজি ভাষায়)। Harper & brothers। 
  36. Hillgarth, p. 387.
  37. Hillgarth, p. 390.
  38. Hillgarth, p. 393.
  39. O'Callaghan, Joseph F. (২০১৪)। The Last Crusade in the West: Castile and the Conquest of Granada। University of Pennsylvania Press। পৃষ্ঠা 224। আইএসবিএন 978-0812245875 
  40. Hillgarth, p. 371.
  41. Gómez, Miguel (২ জানুয়ারি ২০১৪)। "La Toma de Granada se celebra entre acusaciones de fomentar el racismo y de "intolerancia""eldiario.es (Spanish ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২১ 
  42. Cano, José A. (২ জানুয়ারি ২০১৫)। "La Toma de Granada: año nuevo, polémica vieja"eldiario.es (Spanish ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২১ 
  43. López, Álvaro (২ জানুয়ারি ২০২০)। "Una trifulca marca la Toma de Granada más tensa de los últimos años"eldiario.es (Spanish ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২১ 
  44. López, Álvaro (২০১৯-০১-০২)। "La Toma de Granada: entre gritos de "yo soy español" y "no hay nada que celebrar""elDiario.es (স্পেনীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৬ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Benito Ruano, Eloy. "Un cruzado inglés en la Guerra de Granada", Anuario de estudios medievales, 9 (1974/1979), 585–593.
  • Cristobal Torrez Delgado. El Reino Nazari de Granada, 1482–92 (1982).
  • De Miguel Mora, Carlos। La Toma de Baza (পিডিএফ)। ১৩ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  • García de Gabiola, Javier। La Guerra que puso fin al Medievo: Granada (1482–92)। Revista Medieval nº 55. 2015. Ed. Gram Nexo। ২০১৮-০৮-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-১১ 
  • García de Gabiola, Javier (২০১৫)। "La Genesis del estado moderno: Granada (1482–92)"Medievalia। Medievalia nº 45. 2015. Universidad Nacional Autónoma de México (47): 34–42। 
  • García de Gabiola, Javier। Todo empezó en Granada। Historia de Iberia Vieja. nº 116। 
  • Hillgarth, J. N. (১৯৭৮)। The Spanish Kingdoms: 1250–1516. Volume II: 1410–1516, Castilian Hegemony। Oxford: Clarendon Press, Oxford University Press। পৃষ্ঠা 367–393। আইএসবিএন 0-1982-2531-8 
  • Irving, Washington (১৮২৯)। Conquest of Granada From the Manuscript of Fray Antonio Agapida। New York: A. L. Burt  (Republished in 2002 by Simon Publications, আইএসবিএন ১-৯৩১৫-৪১৮০-৯)
  • Ladero Quesada, Miguel Ángel. La Guerra de Granada. Granada Dip. 2001.
  • Ladero Quesada, Miguel Ángel. La Hermandad de Castilla. Real Academia de la Historia. 2005.
  • Prescott, William H. (১৯৯৫)। Albert D. McJoynt, সম্পাদক। The Art of War in Spain: The Conquest of Granada, 1481–1492। London: Greenhill Books। আইএসবিএন 1-8536-7193-2  (An extract from Prescott's 1838 book History of the Reign of Ferdinand and Isabella the Catholic, updated with modern scholarship and commentary.