পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখা। পদার্থবিজ্ঞান বলতে বলা যেতে পারে এটা হলো গণিতের বাস্তব রূপ। এখানে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব নিকাশ দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়। অত্যন্ত বিমূর্তভাবে বলতে গেলে, পদার্থবিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যার লক্ষ্য আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করা।[১] পদার্থবিজ্ঞানে পদার্থ, পদার্থের গতি এবং স্থান ও সময় মাধ্যমে তার আচরণ, শক্তি ও বল সংক্রান্ত রাশি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে একটি । পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের আচরণ সম্পর্কে অনুধাবন করা ।[ক][২][৩][৪]

একটি নিউটনের দোলনা , বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের নামে যার নামকরণ করা হয়েছে

এটা হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীনতম শাখা। তাই এর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।

পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা যার প্রাথমিক বিষয় বস্তু শক্তি। পদার্থবিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি এর উপর।এখনকার পদার্থবিজ্ঞানকে শাস্ত্রীয়/সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে বিভক্ত করা যেতে পারে।

‌‌ প্রাচীন যুগ[সম্পাদনা]

পদার্থবিজ্ঞানের উপাদানগুলি প্রাথমিকভাবে জ্যোতির্বিদ্যা, আলোকবিদ্যা এবং বলবিদ্যার ক্ষেত্রগুলি থেকে শুরু হয়েছিল, যা জ্যামিতি অধ্যয়নের মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে একত্রিত হয় । এই গাণিতিক শাখাগুলি প্রাচীনকালে ব্যাবিলনীয়দের এবং আর্কিমিডিস এবং টলেমির মতো হেলেনিস্টিক লেখকদের সাথে শুরু হয়েছিল। প্রাচীন দর্শন, ইতিমধ্যে, "পদার্থবিদ্যা" নামে পরিচিত ।

গ্রিকদের অবদান[সম্পাদনা]

গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিসের (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬-৬২৪) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ তিনিই প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া শুধু ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন থেলিস, সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং লােডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন। সেই সময়ের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে পিথাগােরাস (৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) একটি স্মরণীয় নাম। জ্যামিতি ছাড়াও কম্পমান তারের ওপর তার মৌলিক কাজ ছিল। গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস (৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম ধারণা দেন যে পদার্থের অবিভাজ্য একক আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল এটম (এই নামটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকে)। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তার ধারণাটি প্রমাণের কোনাে সুযােগ ছিল না বলে সেটি সবার কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। সেই সময়কার সবচেয়ে বড় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি হওয়ার মতবাদটিই অনেক বেশি গ্রহণযােগ্য ছিল। (আরিস্তারাকস (৩১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তার অনুসারী সেলেউকাস যুক্তিতর্ক দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছিলেন, যদিও সেই যুক্তিগুলাে এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে । গ্রিক বিজ্ঞান এবং গণিত তার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের (২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় । তরল পদার্থে উধ্বমুখী বলের বিষয়টি এখনাে বিজ্ঞান বইয়ের পঠনসূচিতে থাকে। গােলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দূর থেকে শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে তিনি যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতেস্থিনিস (২৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।

মুসলিম সভ্যতার অবদান[সম্পাদনা]

আর্কিমিডিসের পর কয়েক শতাব্দীকাল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মন্থরগতিতে চলে। একে বিজ্ঞানের বন্ধ্যাকাল বলা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ইউরোপে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার পুনর্জীবন ঘটেনি। এই সময় পশ্চিম ইউরোপীয় সভ্যতা বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিল বাইজানটাইন ও মুসলিম সভ্যতার জ্ঞানের ধারা । আরব জগতের গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুবাদের মাধ্যমে পরিচিত ছিল । আরবরা বিজ্ঞান, গণিত, জাতিবিদ্যা, রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল । মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান (Jabir Ibn Haiwan) ও ইবনে সিনা (৯৭৯-১০৩৭) 'আলকেমির' উন্নতি সাধন করেন । 'আলকেমির' বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে এর মধ্যে এক দিকে যেমন ধর্ম আধ্যাত্মিকতার যোগ ছিল তেমনি আবার রাসায়নিক শিল্পকৌশল কুশলতার ঐতিহ্যের সাথেও সম্পর্কযুক্ত ছিল । 'আলকেমি' থেকে বর্তমান কেমিস্ট্রি বা রসায়ন নামের উদ্ভব । ইবনে সিনা একাধারে ছিলেন রসায়নবিদ, চিকিৎসক, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ এবং জ্যাতির্বিদ । তিনি আর্থিক (প্রকৃতপক্ষে এশিয়া মাইনরের অধিবাসী) চিকিৎসাবিদ গ্যালনের (Galen, জন্ম 129) তত্ত্বের উন্নতি সাধন করেন । আরব রসায়নবিদরা বহু রাসায়নিক যন্ত্রপাতির উদ্ভব ঘটান । পাতন (Filtration), উর্ধ্বপাতন (Distillation), উর্ধ্বপাতন (Sublimation), প্রভৃতি প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক রূপ দান করেন আরবরা এবং চিকিৎসায় রসায়নের প্রয়োগ তাদের হাতেই পূর্ণতা পায় । আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা আল-খোয়ারিজমি(Abu Abdullah Ibn Mus Al-Khwarizmi. মৃত্যু 850) বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতির ভীত প্রতিষ্ঠা করেন । তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'আল জিবর ওয়াল মুকাবিলা' এর নাম থেকে 'আলজেবরা' শব্দের উৎপত্তি । তার উত্তরসূরীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পরিব্রাজক আল-বেরুনী (Al Beruni, 973-1016) এবং বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম (Omar Khaiyam, 1019-1135) ।[৫]মুসলিম জ্যোতির্বিদদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন আল বাত্তানী (Al Battani, 858-929), আল ফারাজী (Al Farazi, মৃত্যু 77)। গ্রহ নক্ষত্রের উন্নতি নির্ণয়ের জন্য অ্যাস্ট্রোলাব (Astrolab) নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন । জ্যাতির্বিদ্যা গবেষণার আর একটি অতীব প্রয়ােজনীয় যন্ত্র সেক্সট্যান্ট (Sextant) একাদশ শতকে প্রথম আবিষ্কার করেন আল খুজান্দী নামে একজন মুসলিম বৈজ্ঞানিক। আলোকতত্ত্বের ক্ষেত্রে ইবনে আল হাইথাম (Ibn-A-Haitham, 965-1039) ও আল হাজেন (AI Hazhen, 965-1038) এর অবদান বিশেষ উল্লেখযােগ্য। টলেমী (Ptolemy 127-151) ও অন্যান্য প্রাচীন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে কোনো বস্তু দেখার জন্য চোখ নিজে আলোকরশ্মি পাঠায়। আল-হাজেন এই মতের বিরােধিতা করেন এবং বলেন যে বস্তু থেকে আলাে আমাদের চোখে আসে বলেই আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। ম্যাগনিফাইং গ্লাস বা আতশী কাচ নিয়ে পরীক্ষা তাঁকে উত্তল লেন্সের আধুনিক তত্ত্বের কাছাকাছি নিয়ে আসে। প্রতিসরণ সম্পর্কে টলেমীর স্থূল (Crude) সূত্র সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আপতন কোণ প্রতিসরণ কোণের সমানুপাতিক এটি শুধু ক্ষুদ্র কোণের বেলায় সত্য ।

ভৌত বিজ্ঞনের বিকাশে ভারতীয় উপমহাদেশের অবদান‌[সম্পাদনা]

ভারতীয় উপমহাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে কণাদ, আর্যভট্র (জন্ম ৪৭৬), করাহ মিহির (জন্ম ৫০৫) ও মহাবীরের নাম উল্লেখযােগ্য। মহাবীর "সিদ্ধান্ত' নামক গ্রল্থে ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক কাজ তুলে ধরেন। আর্যভ্ট্র গণিতে অবদান রাখেন, তিনি গাণিতিক প্রমাণের যােগফল পর্থালােচনা করেন এবং দ্বিযাত সমীকরণ সমাধানের প্রচেষ্টা নেন। মহাবীর যােগ, বিয়ােগ, গুণ ও ভাগের কাজ এবং শূন্যের ব্যবহার আলােচনা করেন। উপমহাদেশের দার্শনিক কণাদ পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু। ভাস্করাচার্য প্রাচীন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জে্যাতির্বিদ। তিনি নির্ভুলভাবে পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয় করতে সমর্থ হন। তাঁর গণনায় পৃথিবীর ব্যাস পাওয়া গিয়েছিল ৭১৮২ মাইল। বর্তমানকালের গণনায় তার মান ৭৯২৬ মাইল। পৃথিবীর ব্যাস থেকে পরিধি নির্ণয় করতে হলে π-এর মান জানার প্রয়ােজন। প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতের π-এর মান ৩.১৬২৩ নির্ণয় করেন। ভাস্করাচার্য ২২/৭ কে বর্তমানকালের হিসাব থেকে এই মান পাওয়া যায় প্রায় ৩.১৪১৬ বা প্রায় ২২/৭। π-এর মান হিসেবে প্রচার করেন।

পদার্থবিজ্ঞানে চীনা সভ্যতার অবদান[সম্পাদনা]

চীনা সভ্যতার গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীরাও পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তাদের মাঝে শেন কুয়ো উল্লেখ করা যেতে পারে (খ্রিস্টপূর্ব ১০৩১)। তিনি চুম্বক নিয়ে অনেক কাজ করেছেন এবং ভ্রমণের সময় কম্পাস ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।

মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

নবম থেকে দ্বাদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে আরবের নিবিড় সংযােগের ফলে উভয় পক্ষই লাভবান হয়েছিল । ইউরােপীয় সভ্যতার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসার পুনরুজ্জীবনের ফলে বিশ্বজগৎকে নতুন করে দেখার তাগিদ অনুভূত হলো এবং এভাবেই হলো পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের জন্ম। চারদিকে নতুন নতুন পরীক্ষা সম্পাদিত হতে থাকে আর এসব পরীক্ষার ব্যাখ্যার জন্য জন্ম লাভ করতে থাকে নতুন নতুন ধারণার। ত্রয়াদশ শতকের সবচেয়ে পণ্ডিত মানুষ ছিলেন অ্যালবার্টাস ম্যাগনাস (AIbertus Magnus, 1193-1280) তাঁর মতে - 'বিজ্ঞান যা শােনা যায় তাকেই বিশ্বাস করা নয় । বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক ঘটনার যথার্থ কারণের অনুসন্ধান ।' মধ্যযুগে যখন নিয়মের প্রতি অন্ধ আনুগত্যই ছিল সাধারণ নিয়ম, সে সময় তাঁর এই বৈজ্ঞানিক মানসিকতা লক্ষ করার মত । রজার বেকন (Roger Bacon, 1214-129) ছিলেন পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা । তাঁর মতে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমেই বিজ্ঞানের সব সত্য যাচাই করা উচিত ।

আধুনিক যুগ[সম্পাদনা]

মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন যে, বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া রয়েছে। এরপর পদার্থবিজ্ঞানের মঞ্চে আবির্ভূত হন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)। তিনি বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে একীভূত করে চারটি অসাধারণ সূত্র প্রদান করে। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানে ম্যাক্সওয়েলের সূত্র নামে পরিচিত। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় বেতার তরঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় ও এর উপর গবেষণা চলে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই প্রথম বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণে সক্ষম হন। তবে তার এ আবিষ্কারের পেটেন্ট না করানোর কারণে তিনি নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত হন। প্রায় একই সময় ইতালিয়ান বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনিও বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণ করেন। তিনি তার কাজের পেটেন্ট করানোর ফলে প্রথম স্বীকৃতভাবে রেডিও আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হন। তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উইলহেলম রন্টজেন (১৮৪৫-১৯২৩) এক্স রে আবিষ্কার করেন। এ কাজের জন্য তিনি ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া হেনরি বেকেরেল ও কুরি দম্পতি এ সময় তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। প্রমুখ বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই এ সময় পদার্থবিজ্ঞান এগোতে থাকে।

নিকোলাস কোপার্নিকাস যিনি সূর্যকে কেন্দ্রে বসিয়ে সৌরজগতের নতুন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।
গ্যালিলিও
স্যার আইজাক নিউটন

ষোড়শ শতক[সম্পাদনা]

ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে একটি বিস্ময়কর বিপ্লব সংগঠিত হয়। এই সময়টাকে ইউরোপীয় রেনেসাঁর যুগ বলে। কোপারনিকাস সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বই লিখেন। ১৫৪৩ সালে হ্বিটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী রেটিকাস ও রেইনহোল্ড কেপারনিকাসকে এই বইটি প্রকাশের অনুরোধ করেন এবং অনেক জটিলতার পর এটি প্রকাশিত হয়। এটির নাম কেপারনিকাস দ্য রেভিলিউশনিবাস রাখলেও প্রকাশক এটির নাম দেয় দ্য রেভিলিউশনিবাস অর্বিউম কোয়েলেস্তিউম। কোপারনিকাসের তত্ত্বটি দীর্ঘ দিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। গ্যালিলিও এটি সবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি একটি গাণিতিক সূত্র দেওয়ার পর সেই সূত্র টি প্রমাণ করার এক নতুন বৈজ্ঞানিক ধারার সূচনা করেন। এজন্য গ্যালিলিও কে অনেক সময় আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

সপ্তদশ শতক[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতক[সম্পাদনা]

Table of Mechanicks,১৭২৮ সালে প্রকাশিতCyclopaedia হতে চিত্রটি গৃহীত হয়েছে।.

বিংশ শতক[সম্পাদনা]

পদার্থবিজ্ঞানের ভবিষ্যত রূপ[সম্পাদনা]

১৯ শতকের শেষের দিকে, পদার্থবিজ্ঞান এমন পর্যায়ে বিকশিত হয় যে সে শাস্ত্রীয় বলবিদ্যা ম্যাক্রোস্কোপিক পরিস্থিতির সাথে জড়িত অত্যন্ত জটিল সমস্যাগুলির সাথে মোকাবিলা করতে পারে; তাপগতিবিদ্যা এবং গতিতত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়; জ্যামিতিক এবং ভৌত আলোকবিদ্যাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যায়; এবং শক্তি এবং ভরবেগের (এবং ভর) জন্য সংরক্ষণনিতী ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়। এগুলি এবং অন্যান্য উন্নয়নগুলি এতই গভীর ছিল যে এটি সাধারণত গৃহীত হয়েছিল যে পদার্থবিজ্ঞানের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এখন থেকে, গবেষণাটি ছোটখাটো সমস্যাগুলি পরিষ্কার করার সাথে এবং বিশেষত পদ্ধতি এবং পরিমাপের উন্নতির সাথে সম্পর্কিত হবে। যাইহোক, প্রায় ১৯০০ সালের দিকে ধ্রুপদী তত্ত্বগুলির সম্পূর্ণতা সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ দেখা দেয়-উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বগুলির বিজয় অপ্রতুলতা দ্বারা হ্রাস করা হয়েছিল যা ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত হতে শুরু করেছিল-এবং শক্তি বিতরণের মতো নির্দিষ্ট শারীরিক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে তাদের অক্ষমতা। ব্ল্যাকবডি বিকিরণ এবং ফটোইলেক্ট্রিক প্রভাব, যখন কিছু তাত্ত্বিক সূত্র সীমার দিকে ঠেলে প্যারাডক্সের দিকে পরিচালিত করে। হেনড্রিক লরেন্টজ, এমিল কোহন, আর্নস্ট উইচের্ট এবং উইলহেম ভিয়েনের মতো বিশিষ্ট পদার্থবিদরা বিশ্বাস করতেন যে ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের কিছু পরিবর্তন সমস্ত ভৌত আইনের ভিত্তি প্রদান করতে পারে। ধ্রুপদী পদার্থবিজ্ঞানের এই ত্রুটিগুলি কখনই সমাধান করা যায় নি এবং নতুন ধারণার প্রয়োজন ছিল। ২০ শতকের শুরুতে একটি বড় বিপ্লব পদার্থবিজ্ঞানের বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল, যা একটি নতুন যুগের দিকে নিয়ে যায়, যা সাধারণত আধুনিক পদার্থবিদ্যা হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. H.D. Young & R.A. Freedman, University Physics with Modern Physics: 11th Edition: International Edition (2004), Addison Wesley. Chapter 1, section 1.1, page 2 -এ বলা হয়েছে: "Physics is an experimental science. Physicists observe the phenomena of nature and try to find patterns and principles that relate these phenomena. These patterns are called physical theories or, when they are very well established and of broad use, physical laws or principles."
  2. "Physics is one of the most fundamental of the sciences. Scientists of all disciplines use the ideas of physics, including chemists who study the structure of molecules, paleontologists who try to reconstruct how dinosaurs walked, and climatologists who study how human activities affect the atmosphere and oceans. Physics is also the foundation of all engineering and technology. No engineer could design a flat-screen TV, an interplanetary spacecraft, or even a better mousetrap without first understanding the basic laws of physics. (...) You will come to see physics as a towering achievement of the human intellect in its quest to understand our world and ourselves.Young ও Freedman 2014, পৃ. 1
  3. "Physics is an experimental science. Physicists observe the phenomena of nature and try to find patterns that relate these phenomena."Young ও Freedman 2014, পৃ. 2
  4. "Physics is the study of your world and the world and universe around you." (Holzner 2006, পৃ. 7)
  5. মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। ২০১২। পৃষ্ঠা ২। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি