ফিকহ শাস্ত্রে দারুল উলুম দেওবন্দ
দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলায় অবস্থিত একটি মাদ্রাসা, যা ১৮৬৬ সালের ৩০ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিকহের ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমগণ হানাফি মাযহাবের অনুসারী এবং আইনগত বিষয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আবু হানিফা এবং তার শিষ্যদের রেখে যাওয়া বিশাল সাহিত্য তাদের মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। তারা এক্ষেত্রে মধ্যপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা শুধু ইরাকের ফুকাহাদের অনুসরণ করেননি বরং বিভিন্ন স্থানে হিজাজের ফুকাহাদের অনুসরণ করেছেন। তারা প্রচলিত ৪ ফিকহি মাযহাবকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে তা হয়ে ওঠে উপমহাদেশে ফিকহ ও ফতওয়ার কেন্দ্র। এটি এমন পণ্ডিতদের জন্ম দিয়েছে যারা ফিকহকে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। বিভিন্ন উপায়ে ফিকহের ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখেছে। যেমন: তারা প্রতিষ্ঠান ও একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছে, সেমিনারের আয়োজন করেছে, আইনশাস্ত্রের উপর বিভিন্ন বই লিখেছে, পুরানো কাজের উপর ভাষ্য দিয়েছে, নতুন সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছে, মানুষের সুবিধার্থে ফরমান জারি করেছে ইত্যাদি। সংক্ষেপে ফিকহের এমন একটি অঙ্গনও ছিল না যা মাদ্রাসার নজরে পড়েনি। ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় দারুল ইফতা বা ফাতওয়া বিভাগ চালু করা হয়।[১] এই বিভাগের অনলাইন ওয়েবসাইট দারুলইফতা-দেওবন্দ.কম।[২][৩][৪]
প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আরবের মক্কায় ইসলামের প্রচার শুরু করেন মুহাম্মদ (স.)। ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কুরআনে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ব্যাপ্তি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীকার।[৫] এ যুগে আরবের সামাজিক জীবন ছিল সাধাসিধা ও সরল। প্রয়োজন সীমিত ও সমস্যার সমাধান ছিল সীমাবদ্ধ। তাই তাদের সামাজিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সর্বযুগের সমোপযোগী ও সর্বসাধারণের বোধগম্য করে সম্পাদনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে সাহাবা ও তাবেয়ীদের যুগে ইসলাম সারাবিশ্বে ছড়ায়ে পড়ে। মুসলমানগণ বিভিন্ন জাতির সংস্পর্শে আসে। নতুন নতুন সভ্যতা ও সাংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচয় ঘটে। মুসলিম সমাজে নতুন নতুন সমস্যা দানা বেঁধে উঠে। এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষণে তাবেয়ীদের যুগের শেষের দিকে একদল আলেম সম্প্রদায় কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এমন একটি সার্বজনীন আইন শাস্ত্র সম্পাদনায় হাত দেন যা সকল স্থান কাল ও পাত্রের জন্য প্রযোজ্য, সকল অবস্থায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে সক্ষম, এর পূর্ণাঙ্গ রূপই আজ ফিকহ বা ইসলামি আইন শাস্ত্র নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[৬]
ফিকহ (فقھ) একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ফকিহ হওয়া, জানা, জ্ঞাত হওয়া বা অবহিত হওয়া। ইসলামের বিধি বিধানগুলোর সমষ্টিকে ফিকহ বলা হয়। ইসলামি গবেষকগণ স্বীয় প্রজ্ঞা তথা ইজতিহাদের ভিত্তিতে (চূড়ান্ত গবেষণা) ও একনিষ্ঠভাবে মুসলিম মিল্লাতের জন্য যে জীবন প্রণালী ও পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন তাই হল ‘ইলমুল ফিকহ’ তথা ফিকহ শাস্ত্র। তারা ইবাদত-বন্দেগী পারষ্পরিক লেনদেন, আচার-ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে যে শিক্ষা ও নির্দেশ কুরআন ও হাদিসে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ছিল, সে সবগুলোকে একস্থানে নিজেদের ক্রম বিন্যাসে সাজিয়ে একত্র করেছেন। সেটাই ফিকহে ইসলামি বা ইলমে ফিকহ। এক কথায় এটা হল ইসলামের আইন শাস্ত্র। ইসলাম যে জীবনের বাণী নিয়ে এ পৃথিবীতে এসেছে বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ বিধিই ফিকহ শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। ফিকহ শাস্ত্রের মূল লক্ষ্যই হল, আল্লাহ ও বান্দার অধিকার সমূহ সম্পর্কে অবগত হয়ে তদানুযায়ী কর্ম সম্পাদন করা। আর এ বিষয়গুলো অবগত হয়ে তদানুযায়ী আমলকরত: আল্লাহর সন্তোষ এবং ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ অর্জন করা। আর ফিকহ শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হল জাতিকে ইসলামি শরিয়ত জানানো এবং তদানুযায়ী আমল করানো। ফিকহ শাস্ত্রের বিষয়বস্তু হচ্ছে ইসলামি শরিয়তের প্রতিষ্ঠিত আহকাম তথা বিধি-বিধান অনুযায়ী বান্দা ও তার জীবনের সামগ্রীক কাযার্বলী। মানুষের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তজার্তিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক, নৈতিক, ইবাদত ও মুআমিলাত ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে শরিয়তের বিধান মেনে চলার জন্য চিন্তা-গবেষণা ও অবগত হওয়াই হচ্ছে এ শাস্ত্রের মূল বিবেচ্য বিষয়। ফিকহশাস্ত্র মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষের গতিশীল জীবনে ইসলামী শরিআতের ব্যাপারে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। আর এ জটিলতা ও সমস্যা সমাধানের জন্য ফিকহ শাস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে।[৭]
ফিকহের ন্যায় অন্য কোন ইলম মুসলমানদের নিকট অধিক গুরুত্ব লাভ করেনি। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগেই ফিকহকে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সাহাবীগণকে ফিকহ শিক্ষা দিতেন এবং তাদেরকেও ইজতিহাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। যুগের ভিত্তিতে ফিকহের ক্রমবিকাশের ধারাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:[৮]
- প্রথম যুুগ: রাসুলুল্লাহ (সা.) এর যুগ (তার নবুওয়াত প্রাপ্তি থেকে দশম হিজরী সন পর্যন্ত)।
- দ্বিতীয় যুগ: সাহাবাদের যুগ। এ যুগ খুলাফায়ে রাশিদীনের সমাপ্তি লগ্নে এসে শেষ হয়েছে।
- তৃতীয় যুগ: সাহাবা ও তাবিঈদের যুগ। এ যুগ খুলাফায়ে রাশিদীনের সমাপ্তিকালের পর থেকে শুরু হয়ে হিজরি প্রথম শতকের শেষ সময় পর্যন্ত অথবা হিজরী দ্বিতীয় শতকের প্রারম্ভকাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
- চতুর্থ যুগ: এ যুগ দ্বিতীয় শতক থেকে তৃতীয় শতকের শেষ লগ্ন পর্যন্ত। অথবা চতুর্থ শতাব্দীর অর্ধকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ফিকহ সংকলন, সম্পাদন ও ইজতিহাদের যুগ এবং ইলমে ফিকহ স্বতন্ত্র এক শাস্ত্রের রূপ পরিগ্রহ করার যুগ। এ যুগেই ঐ সমস্ত ফকিহ আবির্ভূত হয়েছেন যাদের অবিস্মরণীয় ও অনবদ্য কীর্তি যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে আসছে। এ যুগে তাদের শিষ্যবৃন্দও ফিকহ শাস্ত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ইমাম আবু হানিফা সর্বপ্রথম ফিকহ শাস্ত্রকে একটি স্বতন্ত্র ইসলামি শাস্ত্রের মযার্দায় অধিষ্ঠিত করেন।
- পঞ্চম যুগ: এ যুগ হচ্ছে ফিকহ সংকলন ও সম্পাদনার পূর্ণাঙ্গতার যুগ এবং তাকলীদের যুগ। উলামা এবং সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সকলেই বিশিষ্ট ইমামগণের তাকলিদ বা অনুসরণ করতে থাকেন। চতুর্থ যুগে ইমামগণ কুরআন ও হাদিস গবেষণা করে যে সব মাসআলা মাসাইলের উদ্ভাবন করেছিলেন- এ সময় এসে সে সব মাসাইলের তাহ্কীক, তাফতীশ তথা বিশ্লেষণ পযার্লোচনা ও সমর্থনে পক্ষে-বিপক্ষে মুনাযারা এবং বাহাস -বিতর্কের সূচনা হয়। অবশেষে প্রধান চার ইমাম আবু হানিফা, ইমাম ইমাম শাফি, ইমাম মালেক এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের তাকলীদ করার উপর মুসলিম উম্মাহ নির্ভরশীল হয়ে যায়।
- ষষ্ঠ যুগ: পঞ্চম যুগের শেষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ষষ্ঠ যুগ হিসেবে বিবেচিত। এটি খালিস তাকলিদের যুগ। বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ৭৫% মুসলমান হানাফি। অন্য তিনটি মাযহাব হল: শাফেঈ, মালিকি, হাম্বলি।[৮]
বাণিজ্যের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে আরবের মুসলিম ধর্ম প্রচারকদের আনাগোনা শুরু হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রচুর মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।[৯] ১২শ থেকে ১৬শ শতাব্দীতে মুসলমানদের ভারত বিজয়ের সূচনা হয়। ১৭০৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরই ভারতে মুসলমানদের শাসন ক্ষমতা খর্ব হতে থাকে। এ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে কোম্পানি শাসনের সূচনা ঘটে যা পরবর্তীতে ভারতকে ব্রিটিশদের অধীনে চলে যেতে সাহায্য করে। ব্রিটিশদের হাতে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে ১৮৫৭ সালে মুসলমানরা সিপাহি বিদ্রোহ সংগঠিত করে। এটি ব্যর্থ হবার পর এর ক্ষত মিটানোর উদ্দেশ্যে আপাততঃ সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা স্থগিত রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ও ইসলামের চেতনায় একদল কর্মী তৈরির লক্ষ্যে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কির ইঙ্গিতে ও কাসেম নানুতুবির নেতৃত্বে এবং সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তরপ্রদেশস্থ সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক বস্তিতে সাত্তা মসজিদের প্রাঙ্গনে ছোট্ট একটি ডালিম গাছের ছায়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের গোড়া পত্তন করা হয়।[১০] হাদিস, তাফসীর, সীরাতের ন্যায় ফিকহ শাস্ত্রেও দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমগণ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।
দারুল ইফতা
[সম্পাদনা]দারুল উলুম দেওবন্দে দারুল ইফতা প্রতিষ্ঠার পূর্বে মাদ্রাসার বিভিন্ন আলেমদের দ্বারা পৃথকভাবে ফতোয়া লেখার কাজ করা হতো। কাসিম নানুতুবি, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, ইয়াকুব নানুতুবি, আশরাফ আলী থানভী প্রমুখ শিক্ষকগণ এটি সম্পাদন করতেন এবং ধর্মীয় বিষয়ে জনগণকে পথপ্রদর্শন করতেন। যখন, ফতোয়া চাওয়া লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষকদের জন্য পাঠদানের সাথে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তখন দারুল উলুমের শুরা এই উদ্দেশ্যে একটি পৃথক দারুল ইফতা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাস করে। তাই ১৩১০ হিজরিতে একটি স্থায়ী দারুল-ইফতা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজিজুর রহমান উসমানি এর প্রথম মুফতি নির্বাচিত হন যিনি সেই সময়ে মাদ্রাসার নায়েব-ই-মুহতামিম ছিলেন।
১৮৯২ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।[১১] সৈয়দ মেহবুব রিজভীর মতে এই বিভাগের প্রথম প্রধান মুফতি আজিজুর রহমান উসমানি তার সময়কালে ৩৭, ৫৬১টি ফতোয়া প্রদান করেছেন। ইজাজ আলী আমরুহী তার দুই মেয়াদে প্রায় ২৪,৮৫৫টি ফতোয়া দিয়েছেন। তৃতীয় মুফতি রিয়াজউদ্দিন বিজনুরী প্রদানকৃত ফতোয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০০০ এবং মুহাম্মদ শফি উসমানি তার দুই মেয়াদে জারি করেছিলেন ২৬,০০০ টি ফতোয়া। মুহাম্মদ সাহুল ভাগলপুরী ১৫,১৮৫ টি, কেফায়তুল্লাহ গাঙ্গুহী ৫,৮৪০টি এবং ফারুক আহমদ প্রায় ৮৪৭৫ টি ফতোয়া জারি করেছিলেন। মাহদী হাসান শাহজাহানপুরী তার বিশ বছর সময়কালে প্রায় ৭৫,৩৩৪ টি ফতোয়া প্রদান করেছিলেন।[১২]
এই বিভাগ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে রয়েছে:
- ফতোয়া দারুল উলুম দেওবন্দ (এই বইয়ে আজিজুর রহমান উসমানি প্রদত্ত ফতোয়াগুলো সংকলিত হয়েছে, ১৯৬২–১৯৭২ সালে এগুলো সংকলিত করেছেন জাফিরুদ্দিন মিফতাহি, যা ১২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।)[১৩]
প্রধান মুফতি
[সম্পাদনা]দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি | |
---|---|
দারুল ইফতা, দারুল উলুম দেওবন্দ | |
নিয়োগকর্তা | মজলিশে শুরা |
গঠন | ১৮৯২ |
প্রথম | আজিজুর রহমান উসমানি |
ওয়েবসাইট | darulifta-deoband |
# | নাম | শুরু | শেষ | তথ্যসূত্র |
---|---|---|---|---|
১ | আজিজুর রহমান উসমানি | ১৮৯২ | ১৯২৮ | [১৪] |
২ | ইজাজ আলী আমরুহী | ১৯২৮ | ১৯২৯ | [১২] |
৩ | রিয়াজউদ্দিন বিজনুরী | ১৯২৯ | ১৯৩১ | [১২] |
৪ | মুহাম্মদ শফি উসমানি | ১৯৩১ | ১৯৩৫ | [১২] |
৫ | মুহাম্মদ সাহুল ভাগলপুরী | ১৯৩৫ | ১৯৩৭ | [১২] |
৬ | কেফায়েতুল্লাহ গাঙ্গুহি | ১৯৩৭ | ১৯৪০ | [১২] |
৭ | মুহাম্মদ শফি উসমানি | ১৯৪০ | ১৯৪৩ | [১২] |
৮ | ফারুক আহমদ | ১৯৪৩ | ১৯৪৪ | [১২] |
৯ | ইজাজ আলী আমরুহী | ১৯৪৪ | ১৯৪৬ | [১২] |
১০ | মাহদি হাসান শাহজাহানপুরী | ১৯৪৭ | ১৯৬৭ | [১২] |
১১ | মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী | ১৯৬৭ | ১৯৭০ | [১২] |
১২ | নিজামুদ্দিন আজমি | ১৯৭০ | ১৯৯৩ | [১৫] |
১৩ | জাফিরুদ্দিন মিফতাহি | ১৯৯৩ | ২০০৮ | [১৩] |
১৪ | হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী | ২০০৮ | বর্তমান | [১১] |
ফিকহি সংগঠন
[সম্পাদনা]ফিকহ ও ফতওয়ার উন্নয়নে দারুল উলুম দেওবন্দের আলেমগণ বিভিন্ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। যার মধ্যে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো হল:
দারুল কাজা, ইমারতে শরিয়াহ
[সম্পাদনা]এই একাডেমিটি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, মুসলমানদের একত্রিত করা, ইসলামি আইনের প্রচার এবং মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক পথে পরিচালিত করা। একাডেমির প্রধান প্রস্তাবক ছিলেন আবুল কালাম আজাদ, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ এবং সৈয়দ সুলাইমান নদভী। শাহ বদরুদ-দীন একাডেমির প্রথম আমীর নির্বাচিত হন।
ইদারা মাবাহিছে ফিকহিয়্যাহ
[সম্পাদনা]এটি জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭০ সালে ইসলামি আইনজ্ঞ মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি ফিকহ গবেষণা কেন্দ্র। এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ইসলামি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নীতি ও বিধিগুলোর সাথে সঙ্গতি রেখে শরিয়াহ সংক্রান্ত উদ্ভুত বিভিন্ন নতুন সমস্যা নিয়ে ইসলামি আইনজ্ঞদের সমষ্টিগত চিন্তাভাবনা, পারস্পরিক পরামর্শ ও সহযোগিতার মাধ্যমে যাতে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়।
ইসলামি ফিকহ একাডেমি, ভারত
[সম্পাদনা]সংক্ষেপে আইএফএ ১৯৮৮ সালে নয়াদিল্লিতে প্রতিষ্ঠিত একটি ফিকহ (ইসলামি আইন) ইনস্টিটিউট। এটি ১৯৯০ সালে দাতব্য ট্রাস্ট হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল। কাজী মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমি এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আমৃত্যু মহাসচিব ছিলেন। একাডেমি একটি নিবন্ধিত এনজিও যা তখন থেকেই গবেষণা-ভিত্তিক সংস্থা হিসেবে কাজ করে।
আল-মাহাদ আল-আলি আল-ইসলামি, হায়দ্রাবাদ
[সম্পাদনা]বিভিন্ন মাদ্রাসার গ্রাজুয়েটদের ফিকহের একটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের জন্য একাডেমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪২০ হিজরিতে খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য ফকিহ
[সম্পাদনা]আজিজুর রহমান উসমানি
[সম্পাদনা]কেফায়াতুল্লাহ দেহলভি
[সম্পাদনা]ইজাজ আলী আমরুহী
[সম্পাদনা]মুফতি মেহদী হাসান
[সম্পাদনা]শফি উসমানি
[সম্পাদনা]মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি
[সম্পাদনা]মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি
[সম্পাদনা]মুজাহেদুল ইসলাম কাসেমি
[সম্পাদনা]ফিকহি গ্রন্থ
[সম্পাদনা]ফিকহের বিকাশের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দের পণ্ডিতগণ প্রচুর সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন এবং পূর্ববর্তীদের বিভিন্ন কাজ অনুবাদ করেছেন৷ তার মধ্যে রয়েছে:
ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়া
[সম্পাদনা]এই গ্রন্থে রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি প্রদত্ত ফতোয়া সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। গ্রন্থটির খণ্ড সংখ্যা ৩। এতে ইলমুল গাইব, তাজিয়াহ পরস্তি, তাফসীর, হাদিস, ইতিকাদাত সম্পর্কিত বিষয়গুলো তর্কমূলকভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
জদিদ মাসায়েল কে শরঈ আহকাম
[সম্পাদনা]শফি উসমানি এই বইটিতে বিমান, জাহাজ, রোয়ত-ই-হিলাল, ভবিষ্য তহবিল, রিবা, মেশিন দ্বারা জবাই, ভোট এবং ভোটার ইত্যাদি আধুনিক বিষয়ে উত্তর দিয়েছেন।
ব্যাংক বীমা এবং সরকারী কর্জ
[সম্পাদনা]বুরহান আল দীন এই বইয়ে ব্যাংকের বীমা, সরকারী ঋণ সম্পর্কে ইসলামের মৌলিক নীতিগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিষয়ানুযায়ী এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
ইসলামি আদালত
[সম্পাদনা]কাজী মুজাহেদুল ইসলাম কাসেমির এই বইটি বিচার বিষয়ে চার মাজহাবের একটি ভূমিকা প্রদান করে। নবীর সময় থেকে মুয়াবিয়ার সময়কাল পর্যন্ত বিচারিক ব্যবস্থা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
কেফায়েতুল মুফতি
[সম্পাদনা]বইটি লিখেছেন কেফায়েতুল্লাহ দেহলভি। বইটি ৯ টি খণ্ডে বিভক্ত। এতে ইমাম, তাফসির, হাদীস, ইতিহাস, বিচার, পবিত্রতা, নামাজ, জানাজাহ, জাকাত, বিয়ে, হিজাব, ইসলামি শরীয়াহের আলোকে পরিবার পরিকল্পনা ও তালাক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অন্যান্য গ্রন্থ
[সম্পাদনা]নং | নাম | ভাষা | লেখক |
---|---|---|---|
১ | আহকামুল কুরআন | উর্দু | জাফর আহমদ উসমানি, শফি উসমানি, ইদ্রিস কান্ধলভি |
২ | আহকামুল হজ্জ | উর্দু | শফি উসমানি |
৩ | আসান হজ্জ | উর্দু | মনজুর নোমানী |
৪ | ইসলাম কিয়া হে? | উর্দু | মনজুর নোমানী |
৫ | আলাতে জাদিদাহ কে উর্দু শরঈ আহকাম | উর্দু | শফি উসমানি |
৬ | ইমদাদুল ফতওয়া | উর্দু | আশরাফ আলী থানভী |
৭ | বেহেশতী জেওর | উর্দু | আশরাফ আলী থানভী |
৮ | তরজুমায়ে কুদুরী | উর্দু | আবুল হাসান বারাবানক্বী |
৯ | তালিমুল ইসলাম | উর্দু | কেফায়াতুল্লাহ দেহলভি |
১০ | হাশিয়ায়ে কানজুল দাকায়েখ | আরবি | ইজাজ আলী আমরুহী |
১১ | জাওয়াহিরুল ফিকহ | উর্দু | শফি উসমানি |
১২ | ফতওয়ায়ে ইমদাদিয়া | উর্দু | আশরাফ আলী থানভী |
১৩ | ইসলাম আওর জাদিদ মাশরাতি মাসায়িল | উর্দু | খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি |
১৪ | জাদিদ ফিকহি মাসায়িল | উর্দু | খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি |
১৫ | ইসলাম কা মুকাম্মাল নিজামে তালাক | উর্দু | কাজী আব্দুল জলিল কাসেমী |
১৬ | ইসলামি তাকরিবাত | উর্দু | মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি |
১৭ | হালাল ওয়া হারাম | উর্দু | খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি |
১৮ | মুরওয়াজাহ সিয়াসাত কে শরয়ী আহকাম | উর্দু | মুহাম্মদ জাইদ মাজহারী |
১৯ | কওল আল ইমাম ফি-ফাসাদ-ইমামত আল গোলাম | উর্দু | আহমদ আল দ্বীন |
২০ | বিউটি পার্লার কি শরীয়ত | উর্দু | ইনান আল হক |
২১ | আল তাসভীরুল আহকামুল তাসভীর | উর্দু | শফি উসমানি |
২২ | সাবিল আল-রিশাদ | উর্দু | রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "ফতোয়া - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৮।
- ↑ মুহাম্মদুল্লাহ (২০১৮)। The Contribution of Deoband School to Hanafi Fiqh A Study of Its Response to Modern Issues and Challenges [হানাফি ফিকহে দেওবন্দিদের অবদান, আধুনিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের প্রতি এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি অধ্যয়ন] (গবেষণাপত্র)। ভারত: জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৪। hdl:10603/326073।
- ↑ আফতাব গাজী কাসেমী; আব্দুল হাসিব কাসেমী (২০১১)। ফুজালায়ে দেওবন্দ কি ফিকহি খিদমাত (উর্দু ভাষায়)। কুতুবখানা নঈমিয়া। পৃষ্ঠা ১১৭–১১৮। ওসিএলসি 813691816।
- ↑ "A STUDY OF CONTRIBUTION OF DARUL ULUM DEOBAND TO THE DEVELOPMENT OF FIQH"। scholar.google.co.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১৮।
- ↑ "ইসলামের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক"। জাগোনিউজ২৪.কম। ৩ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ গোলাম ছরোয়ার, মুহা. (২০১৩)। বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার (পিডিএফ) (পিএইচডি)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৭। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২১।
- ↑ গোলাম ছরোয়ার ২০১৩, পৃ. ৮,১৩,১৫,১৮।
- ↑ ক খ গোলাম ছরোয়ার ২০১৩, পৃ. ২৭–৪৬।
- ↑ জিয়া, আশরাফ (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "আমরা যেভাবে ইসলাম পেলাম"। দৈনিক যুগান্তর।
- ↑ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আবুল ফাতাহ (১৯৯৮)। দেওবন্দ আন্দোলন: ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান (পিডিএফ)। ঢাকা: আল-আমীন রিসার্চ একাডেমী বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১৫৮।
- ↑ ক খ রাজাভিয়ান, ক্রিস্টোফার পুয়া (২০১৮)। "দ্যা ফতোয়াস অব দারুল উলুম দেওবন্দ"। মডার্ন ইসলামিক অথরিটি এন্ড সোশ্যাল চেইঞ্জ, খণ্ড ১। পৃষ্ঠা ২৪৪–২৬৮। আইএসবিএন 9781474433228। জেস্টোর 10.3366/j.ctv7n0978.15।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট রিজভী, সৈয়দ মেহবুব, হিস্টোরি অব দারুল উলুম দেওবন্দ, ২, মুর্তজ হুসাইন এফ কুরাইশি কর্তৃক অনূদিত, পৃষ্ঠা ১৮৩–১৯৫
- ↑ ক খ নূর আলম খলিল আমিনী। পাসে মার্গে জিন্দা (উর্দু ভাষায়)। দেওবন্দ: ইদারা ইলম ওয়া আদব। পৃষ্ঠা ৯৩১।
- ↑ "পাকিস্তান জার্নাল অব হিস্টোরি এন্ড কালচার"। ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ আকিব আঞ্জুমান আফি (২০১৯)। "মুফতি নিজামুদ্দিন আজমি: জীবন ও কর্ম"। পাসবন (উর্দু ভাষায়)। আজমগড়: ইদারা পাসবন ইলম ওয়া আদব। ২ (৫): ৩৪–৩৬।