সাইপ্রাসের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে


সাইপ্রাসে মানব বসতি গড়ে উঠে প্যালিওলিথিক যুগে। সাইপ্রাসের ভৌগোলিক অবস্থান সাইপ্রাসকে হাজার বছর ধরে বৈচিত্র্যপূর্ণ পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত করেছে।

মৃৎপাত্রের ফলকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ১০৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে সাইপ্রাসের ইতিহাসের সময়কাল নিম্নরূপ অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে:

  • সাইপ্রো-জিওমেট্রিক-১ : ১০৫০-৯৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • সাইপ্রো-জিওমেট্রিক-২ : ৯৫০-৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • সাইপ্রো-জিওমেট্রিক-৩ : ৮৫০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • প্রাচীন-সাইপ্রো-১ : ৭০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • প্রাচীন-সাইপ্রো-২ : ৬০০-৪৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • প্রাচীন-সাইপ্রো-৩ : ৪৭৫-৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
  • প্রাচীন-সাইপ্রো-৪ : ৪০০-৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

প্রাগৈতিহাসিক কালে সাইপ্রাস[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধঃ প্রাগৈতিহাসিক সাইপ্রাস

সাইপ্রিয়ট ধর্মানুষ্ঠান প্রতিমা। ‘লাল পলিশকরা বস্তু’ ২১০০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। জু আলেরহেইলিগেন যাদুঘর

পুরা প্রস্তর যুগে (পাথর যুগ নামে পরিচিত) প্রথম সাইপ্রাসে স্থায়ী মানব বসতি গড়ে উঠে, তারা বিভিন্ন প্রজাতির বামন প্রাণী যেমন বামন হাতি (Elephas cypriotes) এবং বেটে হিপ্পোস (Hippopotamus minor) এর সাথে যুগপতভাবে বাস করত। সাইপ্রাসের দক্ষিণ উপকূলের লিমাসোলের কাছে এটোক্রেমনোসের পুরাতন প্রস্তর যুগের হস্তশিল্পের সাথে এই প্রাণীদের সম্পর্ক আছে বলে এসম্পর্কিত একটি সংগঠন দাবি করে।[১] তবে এবিষয়ে সবাই একমত যে, খ্রীষ্টপূর্ব নবম (বা সম্ভবত দশম) সহস্রাব্দে ভূমধ্যসাগেরের পূর্বাঞ্চল থেকে আগমনের মাধ্যমে প্রথম উপনিবেশের প্রতিষ্ঠা ঘটে। প্রথম বসতীস্থাপনকারীরা ছিল তথাকথিত পিপিএনবি (প্রি-পটেরি নিওলিথিক বি) যুগের কৃষিজীবী। কিন্তু তখনও কোন মৃৎশিল্প উৎপাদন করেনি (এসারমিক নিওলিথিক)।

কুকুর, ভেড়া, ছাগল ও সম্ভাব্য গবাদি পশু এবং শূকর পালন ‍শুরু করা হয়েছিল, পাশাপাশি অনেক বন্যপ্রাণী যেমন- শিয়াল (Vulpes vulpes), পার্সিয়ান লালচে-হলুদ হরিণ (Dama mesopotamica) এর আবির্ভাব ঘটেছিল যা আগে কখনো এই দ্বীপে ছিল না। পিপিএনবি বসতিস্থাপনকারীরা বৃত্তাকার ঘর তৈরি করত যার মেঝে ছিল পোড়া চুনের টেরাজো (terrazzo) দিয়ে নির্মিত (যেমন, ক্যাস্ট্রস, শিলৌরোকাম্বাস) । তারা ইনকর্ণ (এক ধরনের ভূমধ্যসাগরীয় গম) ও এমরি (এক ধরনের ইউরোশিয়ান গম) চাষ করতো। শূকর, ভেড়া, ছাগল এবং গবাদিপশু পালন করতো, কিন্তু তাদের বেশির ভাগই ছিল আচরণগতভাবে বন্য। শিলৌরোকাম্বাসে পশুদের থাকার সাপেক্ষে প্রমাণ খুবই বিরল। খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দে যখন তারা দৃশ্যত মারা যায় তাদেরকে সিরামিক নবপ্রস্তর যুগ (ceramic Neolithic) পর্যন্ত আর পুন:প্রতিস্থাপিত করা হয়নি।

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দে, এসিরামিক খিরোকিশিয়া সংস্কৃতিটি বৃত্তাকার ঘর, পাথরের তৈরি বাসনপত্র এবং ভেড়া, ছাগল ও শূকর ভিত্তিক অর্থনীতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। গবাদিপশু ছিল অপরিচিত এবং পার্সিয়ান লালচে-হলুদ হরিণ শিকার করা হতো। এটি সিরামিক সোতিরা কাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইনিওলিথিক যুগ চিহ্নিত করা হয় প্রসারিত হাত যুক্ত প্রস্তর মূর্তি দ্বারা।

খিরোকিটিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল।

পশ্চিম সাইপ্রাসে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ৯০০০ থেকে ১০৫০০ বছরের পুরাতন প্রস্তর যুগের পানির কূপ আবিষ্কার করেছেন। ধারণা করা হয় এগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম কূপ।[২]

২০০৪ সালে সাইপ্রাসের নব-প্রস্তরযুগের প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে ৮ মাস বয়সি একটি বিড়ালের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়।[৩] এটিকে তার মালিক মানুষের সাথে কবরস্থ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় কবরটি ৯৫০০ বছরের পুরোনো, মিশরীয় সভ্যতার পূর্বেকার এবং তা প্রাচীনকালে প্রচলিত বিড়াল জাতীয় প্রাণী ও মানুষের সহবস্থানে নিয়ে যায়।[৪]

ব্রোঞ্জ যুগ[সম্পাদনা]

এনকোমি থেকে লাল পালিশ করা সিরামিক, ১৯০০-১৭২৫ খ্রি.পূর্ব। সেন্ট বার্নাবাস প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর, সালামিস, সাইপ্রাস

ব্রোঞ্জ যুগেই প্রথম নগরগুলো (যেমন, এনকোমি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন পদ্ধতিগত তামার খনির খনন কাজ শুরু হয়েছিল এবং এই সংস্থান ব্যপকভাবে প্রচলিত হয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় ব্রোঞ্জ যুগের শেষ পর্যায় থেকে মাইসেরীয় গ্রিকরা সাইপ্রাসে বসবাস শুরু করে। ইতিমধ্যে দ্বীপটির গ্রিক নাম খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চদশ শতাব্দীর লিনিয়ার বি লিপিতে প্রত্যায়িত হয়েছিল।[৫][৬]

শেষ ব্রোঞ্জযুগের (LCIB) প্রথম দিকে সাইপ্রিয়ট বর্ণলিপি প্রথম ব্যবহৃত হয় এবং এটি ক্রমাগতভাবে ৫০০ বছর যাবৎ LCIIIB এর মধ্যে, সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব একবিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি স্থানীয় সাইপ্রিয়ট ভাষা (ইটিওসাইপ্রিয়ট) হিসেবে ব্যবহৃত হতো যা খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দি পর্যন্ত টিকে ছিল, কিন্তু এর স্বপক্ষে বাস্তব প্রমাণ খুবই কম, যেমন ফলকগুলোর লিপির সম্পূর্ণরূপে পাঠোদ্ধার করা এখনো সম্ভব হয়নি।

LCIIC (১৩০০ থেকে ১২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) সময়কালটি ছিল স্থানীয় সমৃদ্ধ কাল। শহরগুলো (যেমন ,এনকোমি) আয়তাকার গ্রিড পরিকল্পনায় পুননির্মান করা হয়েছিল, যেখানে শহরের প্রবেশদ্বারগুলো গ্রিড অক্ষের সাথে মিলিত হতো। বহু সংখ্যক বিশাল ভবনের সামনে রাস্তার ব্যবস্থা ছিল বা নতুনভাবে নির্মান করা হচ্ছিল। বৃহৎ সরকরি ভবনগুলো চতুষ্কোন পাথর দ্বারা নির্মান করা হয়েছিল যা ছিল সামাজিক আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণের প্রতিক। এগুলোর মধ্যে কিছু সংখ্যক ভবন যেমন, ক্যালভাসোস-আইয়োস ধিমিত্রিওস এর ভবন এক্স এবং মারোনি-ভর্নস এ অলিভ অয়েল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। মির্টু পিসদেস-এ বড় বর্গাকার পাথর দ্বারা নির্মিত শিংযুক্ত বেদীসহ একটি উপাসনালয় পাওয়া গেছে, অন্যান্য মন্দিরগুলো এনকোমি, কিশন এবং কুকুলিয়ায় (প্যালিপাফোস) অবস্থিত। শহরের নিয়মিত নকশা এবং নতুন স্থাপত্য কৌশল উভয়ই তাদের নিকটতম প্রতিবেশী সিরিয়া বিশেষ করে ইউগারিট (আধুনিক রাস শামারা) সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আয়তক্ষেত্রকার কোরবেল্ড সমাধিস্থল সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের স্বাক্ষ্যবহণ করে।

সাইপ্রিয়ট বর্ণলিপিতে লিখিত ফলক রাস সামারায় (যা ইউগারিট এর ফিনিশিয় শহর) পাওয়া যায়। রাস শামারা থেকে প্রাপ্ত ইউগারিটি গ্রন্থে ‘ইয়া” উল্লেখিত আছে, এটি সাইপ্রাসের আসিরিয় নাম যা ইতিমধ্যে ব্রোঞ্জ যুগের শেষ দিকে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

উলু বুরুন, ইরিয়া এবং কেপ গেলিডোনিয়ায় প্রাপ্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে তামার পিন্ড উদ্ধার করা হয়েছে, যেটি ব্যাপক ধাতব বাণিজ্যের স্বাক্ষ্য দেয়। এনকোমি এবং কালাভ্যাসোসে প্রাণীর আকৃতির বাটখারা পাওয়া যায়, যা সাইরো-ফিলিস্তিন, মেসোপটেমিয়, হিট্টিটি এবং এজিয়ান মানদন্ড অনুসরণ করে। এগুলো বহুদূর বিস্তৃত বাণিজ্যের প্রমাণ দেয়।

ব্রোঞ্জ যুগের শেষ দিকে সাইপ্রাস হিট্টিটি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, কিন্তু এটি আগ্রাসনের অংশহিসেবে কেবলমাত্র সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং ইউগারিট শাসক রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো।[৭] যেন সাইপ্রাস মূলত “সাইপ্রিয়টদের বিষয়ে সামান্য হস্তক্ষেপ ছাড়া উপেক্ষিত” ছিল।[৭] তবে তুধালিয়ার শাসনকালে দ্বীপটি হয় কপার উৎসের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে অথবা জলদস্যুতা প্রতিরোধের কারণে সংক্ষিপ্তভাবে আক্রান্ত হয়। এর কিছুদিন পর ১২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের দিকে তার পুত্র পুনর্দখল করে নেয়।

যদিও আকিয়ান গ্রিকরা চতুর্দশ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ থেকে সাইপ্রাসে বাস করছিল,[৮] তবে তাদের অধিকাংশই ট্রোজান যুদ্ধের পর থেকে দ্বীপে বসবাস করছে। আকিয়ানরা ১২১০ থেকে ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সাইপ্রাসে উপনিবেশ স্থাপন করে। ডোরিয়ান গ্রিকরা ১১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ সাইপ্রাসে আসে এবং নিদর্শনগুলো থেকে বুঝা যায় গ্রিক মূল ভূ-খন্ডের প্যাটার্নের বিপরীতে তারা সাইপ্রাসে শান্তিপূর্ণ ভাবেই বসবাস করে।

অন্যান্য বিষযগুলোর মধ্যে নতুন ধরনের কবরস্থান (লম্বা ড্রোমাই) দ্বারা, মৃৎশিল্পের নকশায় মাইসেনাইন প্রভাব থেকে বিশ্বাস করা হয় পরবর্তী শতাব্দিতে (LCIIIB, ১১০০-১০৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) গ্রিক বসতিস্থাপনকারিদের আরেকটি ঢেউ সাইপ্রাসে জায়গা করে নেয়।

মৃত্শিল্প[সম্পাদনা]

আরও দেখুন: প্রাচীন সাইপ্রাসের মৃৎশিল্প

ব্রোঞ্জ যগের শেষদিকের রিঙ ভিত্তিক পাত্র

ব্রোঞ্জ যুগের শেষের পর্যায়ে (LCIIIA, ১২০০–১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) স্থানীয়ভাবে প্রচুর পরিমাণে 'মাইসেনিয়ান' IIIC: 1B মৃৎশিল্প উৎপাদিত হতো। নতুন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে গ্রীক মূল ভূখণ্ডে পাওয়া সাইক্লোপিয়ান দেয়াল এবং সাইপ্রাসের স্থানীয় একটি নির্দিষ্ট ধরনের আয়তক্ষেত্রাকার সিঁড়িযুক্ত দ্রব্য। সমাধি কক্ষগুলি কবরস্থানের পক্ষে দেওয়া হয়। মধ্য ফিলিস্তিনেও প্রচুর পরিমাণে এই সময়ের IIIC:1b মৃৎশিল্প পাওয়া যায়। যদিও এটি আগে আক্রমণের প্রমাণ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল (’সমুদ্রের মানবসম্প্রদায়’), এটিকে আদিবাসী উন্নয়ন হিসাবে আরও বেশি বেশি দেখা যায়, সাইপ্রাস এবং ক্রিটের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য সূত্রপাত করে। প্রাচীন ক্রেটের একটি শক্তিশালী নগর কেন্দ্র সাইডোনিয়া থেকে পাওয়া মৃৎশিল্পের সাইপ্রাসে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিস্কারে ক্রিটের সাথে প্রাথমিক ব্যবসায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।[৯]

সাইপ্রিয়ট নগর রাজ্য[সম্পাদনা]

বেশিরভাগ লেখকের দাবি যে, খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে লিখিত উত্সগুলিতে প্রথম বর্ণিত হয় সাইপ্রিয়ট নগর রাজ্যগুলি খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যান্য পণ্ডিতরা দেখেন যে দ্বাদশ এবং অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে সরদারদের নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে সামাজিক জটিলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দে (জ্যামিতিক সময়কাল) জনবসতির সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায় এবং প্রথমবারের মতো সালামিসের 'রাজকীয়' সমাধির মতো স্মৃতিচিহ্ন সমাধির উপস্থিতি দেখা যায়। সাইপ্রিয়ট রাজ্যের উপস্থিতির জন্য এটি আরও ভাল ইঙ্গিত।

প্রারম্ভিক লৌহ যুগ[সম্পাদনা]

সাইপ্রাস আয়রন যুগের প্রথম দিক শেষ ব্রোঞ্জ যুগের সাবমাইসিনিন কাল (খ্রিস্টপূর্ব ১১২৫-১০৫০) অনুসরণ করে। এটি জ্যামিতিক (১০৫০–৭০০), এবং প্রত্নতাত্ত্বিক (৭০০-৫২৫) যুগে বিভক্ত।

ধ্রুপদী লেখকদের লেখা পৌরাণিক ভিত্তিক কাহিনীগুলোতে দেখা যায় ট্রোজান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে অভিবাসী গ্রীক নায়কদের সাথে অসংখ্য সাইপ্রিয়ট নগরগুলির ভিত্তি তৈরিতে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, আয়াসের ভাই টিউসার সালামিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশীয় শাসক কিনারাসের পরিবর্তে তেজিয়’র আর্কিডিয়ান আগাপেনোর রাজা হন এবং পাফোস প্রতিষ্ঠা করেন বলে মনে করা হয়। কিছু বিশেষজ্ মনে করেন এটি একাদশ শতকের মধ্যেই গ্রীকের উপনিবেশে পরিনত হয়। একাদশ শতাব্দীতে প্যালেপাফোস-স্কেলস-এ ৪৯ সালের সমাধিতে সাইপ্রিয়ট বর্ণলিপিতে লেখা তিনটি ব্রোঞ্জ  স্মারকস্তম্ভ পাওয়া গেছে, যার একটিতে ওফেল্টাসের নাম রয়েছে। এটি দ্বীপে গ্রীক ভাষার ব্যবহারের প্রথম নিদর্শন।

দাফনকৃত্য হিসাবে শবদাহ করাকে গ্রীকদের প্রবর্তন বলে করা মনে করা হয়। একাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের তারিখাঙ্কিত (LCIIIB) কুরিয়ন-কালোরিজিকির ৪০ নম্বর সমাধিতে শবদাহের ব্রোঞ্জের পাত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কবরের খাদে দুটি ব্রোঞ্জর তেপায়া, ঢালের অবশিষ্টাংশ এবং সোনার রাজদণ্ড পাওয়া যায়। ইত:পূর্বে কোরিওনের প্রথম আর্গিভ প্রতিষ্ঠাতাদের রাজকীয় কবর হিসাবে দেখা হত, এখন এটিকে একজন স্থানীয় সাইপ্রিয়ট বা ফিনিশিয় রাজপুত্রের সমাধি হিসাবে মনে করা হয়। শীর্ষদেশে থাকা বাজপাখি সহ রাজদণ্ডের মাথার ক্লোজন্নে-এনামেলিংয়ের সাথে এজিয়ানের কোন সাদৃশ্য নেই, তবে এতে প্রবল মিশরীয় প্রভাব দেখা যায়।

ফিনিসিয়[সম্পাদনা]

অষ্টম শতাব্দীতে কার্ট-হ্যাডাশ্ট ('নতুন নগরী') বর্তমান লারনাকা এবং সালামিসের মতো কয়েকটি ফিনিশিয়ান উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। সালামিসের প্রাচীনতম কবরস্থান প্রকৃতপক্ষে কনানাইট জারের শিশুদের কবরস্থান, যা একাদশ শতাব্দীতে (LCIIIB) ফোনিশিয়ান উপস্থিতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। কুকলিয়ার নিকটবর্তী কোরিওন-কালরিজিকি এবং পালাপাফোস-স্কলেসে কবরস্থানে একই জাতীয় জারের কবরস্থানের সন্ধান পাওয়া গেছে। স্কেলেসে অনেক লেভানটাইন আমদানি এবং লেভানটাইন আকৃতির সাইপ্রিয়ট অনুকরণ পাওয়া গেছে যা একাদশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই  ফিনিশিয়ান সম্প্রসারণকে নির্দেশ করে।

প্রাচীন সাইপ্রাস[সম্পাদনা]

প্রধান নিবন্ধ: সাইপ্রাসের প্রাচীন ইতিহাস এবং রোমান সাইপ্রাস

কোরিওনের একটি প্রাচীন গ্রীক নাট্যশালা।

প্রথম লিখিত দলিলে সাইপ্রাসকে আসিরিয়া শাসনের অধীনে দেখা যায়। ১৮৪৫ সালে কিশনে একটি স্টেলা (পাথরের খাড়া ফলক বা স্তম্ভ) পাওয়া যায়, যা ইদনানা বা আতনানা জেলার লা’র ভূমির সাত রাজার বিরুদ্ধে ৭০৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রাজা দ্বিতীয় সারগনের (৭২১-৭০৫ বিসি) বিজয়ের স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল। আগেরটি সম্ভবত দ্বীপের আসিরিয়ান নাম, যদিও কিছু লেখক পরবর্তীকালে গ্রীসকে বোঝায় (দানোই দ্বীপপুঞ্জ)। খোরসবাদের সারগনের প্রাসাদে লা’ সম্পর্কিত আরও শিলালিপি আছে। খ্রিস্টপূর্ব ৬৭৩/২ সালের এশারহাদনের শিলালিপিতে তালিকাভুক্ত দশটি রাজ্য যথা, উপকূল এলাকার রাজ্য সালামিস, কিশন, আমাথাস, কুরিয়ন, পাফোস এবং সোলি এবং অভ্যন্তরের রাজ্য তামাসোস, লেদ্রা, ইডালিয়াম এবং চিত্রি সনাক্ত করা হয়েছে।

সাইপ্রাস ৬৬৯ সালের দিকে কিছু সময়ের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করে কিন্তু মিশরের আমাসিস (৫৭০-৫২৬/৫২৫) আবার দখল করে নেয়। দ্বীপটি খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৫ সালের দিকে পার্সিয়ানরা অধিকার করে। সোলির নিকটে উত্তর উপকূলে মেরিয়ন অঞ্চলে একটি পার্সিয়ান প্রাসাদ খনন করা হয়েছে। আয়নিয়দের উত্থানে বাসিন্দারা অংশ নিয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শুরুতে সালামিসের রাজা প্রথম ইউগোরাস পুরো দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেন এবং পারস্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করেন। আর একটি বিদ্রোহ ৩৫০ সালে সংঘটিত হয় তবে আর্টেক্সারেক্সিস ৩৪৪ সালে এটিকে চূর্ণ করে দেন।

টায়ার অবরোধের সময় সাইপ্রিয়ট রাজারা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর বিপক্ষে যায়। খিস্টপূর্ব ৩২১ সালে চার সাইপ্রিয়ট রাজা প্রথম টলেমির সাথে ছিলেন এবং অ্যান্টিগনোসের বিরুদ্ধে দ্বীপটিকে রক্ষা করেন। টলেমি ৩০৬ থেকে ২৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মধ্যে দিমাট্রিয়স পলিওরকেটাসের নিকট সাইপ্রাসকে হারান, কিন্তু এর পরেও এখানে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দ পর্যন্ত টলেমি আইন বলবৎ ছিল। এটি মিশরের একজন গভর্নর দ্বারা শাসিত হয় এবং ২য় ও ১ম শতাব্দীর ক্ষমতার দ্বন্দের সময় মাঝে মাঝে এটি ক্ষুদ্র টলেমিয় রাজ্য গঠন করে। প্রাচীনকালের উন্নত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এথেন্স এবং আলেকজান্দ্রিয়ার মধ্যে দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সম্পূর্ণ হেলেনিয়বাদ কেবলমাত্র টলেমিয় আইনের অধীনে হয়েছিল। ফিনিশিয়ান এবং স্থানীয় সাইপ্রিয়ট বৈশিষ্ট্যগুলি পুরানো সাইপ্রিয়ট বর্ণ লিপির সাথে মিলে যায়। এই সময়ে বেশ কয়েকটি শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেমন দ্বিতীয় টলেমি পুরানো এবং নতুন পাফোসের মধ্যে আর্সিনোয় প্রতিষ্ঠা করেন।

গ্রীক ইতিহাসবিদ স্ট্রাবোর মতে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দে সাইপ্রাস একটি রোমান প্রদেশে পরিণত হয়েছিল, কারণ রোমান রাজনীতিবিদ পাবলিয়াস ক্লোডিয়াস পলচার সাইপ্রাসের রাজা টলেমির বিরুদ্ধে বিরক্তি পোষণ করতেন এবং ট্রাইবুন হওয়ার পর মার্কাস কাতোকে দ্বীপটি জয় করার জন্য প্রেরণ করেন। মার্ক অ্যান্টনি এই দ্বীপটি মিশরের সপ্তম ক্লিওপেট্রা এবং তার বোন চতুর্থ আরসিনয়েকে দান করেন, কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালে অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে (খ্রিস্টপূর্ব ৩১) পরাজয়ের পরে এটি আবার রোমান প্রদেশে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২২ সাল থেকে এটি সেনেট শাসিত প্রদেশ ছিল। ১১৫/১১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদিদের অভ্যুত্থানের সময় এই দ্বীপটির বড়ধরনের ক্ষতি হয়।

ডায়োক্লেটিয়ানের সংস্কারের পরে এটি কনসুলারিস ওরিয়েনের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় এবং একজন প্রোকনসুল দ্বারা পরিচালিত হয়।[১০] চতুর্থ শতাব্দীর শুরুতে বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প সালামিসকে  ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে, একই সময়ে এই দ্বীপে খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

বাইজেনটাইন সাইপ্রাস[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: মধ্যযুগে সাইপ্রাস

ইয়ারোস্কিপুতে আইয়া পারাশকেভি বাইজেন্টাইন গির্জা।

রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব এবং পশ্চিম দুই অর্ধে  বিভাজনের পরে সাইপ্রাস বাইজেন্টাইনের অধীনে আসে। সেই সময়ে, এর বিশপ, যদিও তখনও চার্চের অধীন ছিল, এফিসাস কাউন্সিল কর্তৃক অটোসেফালুস নিযুক্ত হন।

আরবমুসলমানরা ৬৫০ এর দশকে সাইপ্রাস আক্রমণ করে, কিন্তু ৬৮৮ সালে সম্রাট দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান এবং খলিফা আবদ আল-মালিক একটি নজিরহীন চুক্তিতে পৌঁছান। পরবর্তী তিনশো বছর ধরে মূল ভূখণ্ডে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় অবিরত যুদ্ধ সত্ত্বেও সাইপ্রাস আরব এবং বাইজেন্টাইন উভয়েই কনডমিনিয়াম (দুই সার্বভৌম সরকারের যুগ্ম শাসন) হিসাবে যৌথভাবে শাসন করেছে। বাইজান্টাইনরা এরপরে স্বল্প সময়ের জন্য দ্বীপে নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছিল, তবে স্থিতাবস্থা সর্বদা প্রতিষ্ঠিত ছিল।

এই সময়কাল ৯৬৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, সেসময় পুনরুত্থানশীল বাইজান্টাইনের নিকেতাস চালকাউটজেস দ্বীপটি জয় করেন। ১১৮৫ সালে সাইপ্রাসের শেষ বাইজেন্টাইন গভর্নর ইম্পেরিয়াল হাউসের একটি ক্ষুদ্র বংশের সাইপ্রাসের আইজাক কমনেনাস বিদ্রোহ করেন এবং সিংহাসন দখলের চেষ্টা করেন। তার অভ্যুত্থান প্রয়াস ব্যর্থ হয়, তবে কমনেনাস দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হন।

কমনেনাসের বিরুদ্ধে বাইজেন্টাইন পদক্ষেপ ব্যর্থ হয় কারণ তিনি সিসিলির দ্বিতীয় উইলিয়ামের সমর্থন লাভ করেন। ক্রুসেডারদের কাছে সাইপ্রিওট বন্দর বন্ধ করার জন্য সম্রাট মিশরের সুলতানের সাথে একটি চুক্তিস্বাক্ষর করেন।

দ্বিতীয় ধর্মযুদ্ধ (ক্রুসেড)[সম্পাদনা]

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে দ্বীপটি ক্রুসেডারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট তার বোন এবং তার বাগদত্তা বেরেনগারিয়ার সন্ধানে ১১ জুন ১১৯১ সালে লিমাসোলে অবতরণ করেন, তার জাহাজটি ঝড়ের সময় বহর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। যখন রিচার্ডের সেনাবাহিনী অবতরণ করে তখন আইজ্যাক জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করলে (রিচার্ডের বোন, তার বাগদত্তা এবং বেশ কয়েকজন জাহাজ ভাঙা সৈনিক) আইজাককে লিমাসল থেকে পালাতে বাধ্য করে। অবশেষে আইজাক আত্মসমর্পণ করেন এবং ইংল্যান্ডের রাজার কাছে দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ সমর্পন করতে রাজি হন। রিচার্ড ১১৯২ সালের ১২ মে লিমাসোলে বেরেনগারিয়ারকে বিয়ে করেন। অ্যাভেরাক্সের বিশপ জন ফিৎসলুক তাকে ইংল্যান্ডের রানী হিসেবে অভিষিক্ত করেন। ক্রুসেডারদের বহর ৫ জুন সেন্ট জ্যান ডি'এক্রার (সিরিয়া) দিকে চলতে শুরু করে।

রিচার্ড দ্য লায়নহার্টের সেনাবাহিনী সাইপ্রাসে দখলদারিত্ব চালিয়ে যায় এবং কর বাড়িয়ে দেয়। তিনি দ্বীপটি নাইট টেম্পলারের কাছে বিক্রি করে দেন। এর পরপরই ফ্রান্স (লুসিগনানস) দ্বীপটি দখল করে সাইপ্রাস রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা লাতিনকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষণা করে, পরে এর পরিবর্তে ফরাসিকে সরকারি ভাষা করে; অনেক পরে গ্রীক একটি দ্বিতীয় সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ১১৯৬ সালে লাতিন চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অর্থোডক্স সাইপ্রিয়ট চার্চ ধারাবাহিক ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়। ম্যারোনাইটরা ক্রুসেডের সময় সাইপ্রাসে বসতি স্থাপন করে এবং এখনও উত্তরের কয়েকটি গ্রামে বসবাস করছে।

সাইপ্রাস রাজ্য[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: সাইপ্রাস রাজ্য

নিকোসিয়া কৃত্রিম নালা
ফামাগুস্তায় লালা মোস্তফা পাশা মসজিদ, যেখানে সাইপ্রাসের রাজারাও জেরুজালেমের রাজা হিসাবে মুকুট পরেছেন।
১৪৮২ সালে সাইপ্রাস
হাডজিগিওর্গাকিস কর্নেসিওস অট্টালিকা।

সাইপ্রাসের প্রথম আমালরিক পবিত্র রোমান সম্রাট ষষ্ঠ হেনরির কাছ থেকে রাজকীয় মুকুট এবং উপাধি লাভ করেন। দ্বীপে কিছু সংখ্যালঘু রোমান ক্যাথলিক বাস করতো। তারা মূলত কিছু উপকূলীয় শহরের মধ্যে যেমন সীমাবদ্ধ ছিল, যেমন ফামাগুস্তার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রাজধানী নিকোসিয়ার অভ্যন্তরে। রোমান ক্যাথলিকরা ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের লাগাম ধরে রেখেছিল, এসময় গ্রীক বাসিন্দারা গ্রামাঞ্চলে বাস করত; জেরুজালেম রাজ্যে যে ব্যবস্থা ছিল এখানে ঠিক তেমনই ব্যবস্থা ছিল। সাইপ্রাসের পূর্বাঞ্চলিয় অর্থোডক্স চার্চ, যার নিজস্ব আর্চবিশপ ছিল এবং কোনও পিতৃপুরুষের বশীভূত ছিল না, তাদের দ্বীপে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তবে লাতিন চার্চ ব্যাপকভাবে এর মর্যাদা ও ভূ-সম্পত্তির অধিকার কমিয়ে দেয়।

লুসিগনানের আমারলিকের মৃত্যুর পর ক্রমাগতভাবে রাজ্যটি রাজা হয়ে বেড়ে ওঠা একাধিক তরুণ ছেলের হাতে চলে যায়। ইবেলিন পরিবার, যারা জেরুজালেমে পতনের পূর্বে অনেক ক্ষমতার অধিকারি ছিল, তারা প্রথম বছরগুলিতে রাজপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। ১২২৯ সালে ইবেলিনের একজনকে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন, তিনি দ্বীপের গুয়েলফ্স এবং গিবেলিনের মধ্যে বিবাদ লাগিয়েছিলেন।

এই সংগ্রামে ১২৩৩ সালের মধ্যে ফ্রেডরিকের সমর্থকরা পরাজিত হয়, যদিও এটি দীর্ঘকাল জেরুজালেম এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ফ্রেডরিকের হোহেনস্টাফেন বংশধররা ১২৬৮ সাল অবধি জেরুজালেমের রাজা হিসাবে শাসন অব্যাহত রাখেন, এরপর জেরুজালেমের তৃতীয় কনরাডের মৃত্যুর পর সাইপ্রাসের তৃতীয় হিউ  উপাধি এবং এর ভূখণ্ড এক্রা  দাবি করেন, এভাবে দুটি রাজ্যকে এক করে দিয়েছিল। ১২৯১ সালে দ্বিতীয় হেনরির রাজা হওয়ার পর  ফিলিস্তিনের অঞ্চলটি শেষ অবধি হাতছাড়া হয়ে যায়, কিন্তু সাইপ্রাসের রাজারা এর উপাধি গ্রহণ অব্যাহত রেখেছিলেন।

জেরুজালেমের মতো সাইপ্রাসের হাউট কোর (উচ্চ আদালত) ছিল, যদিও এটি জেরুজালেমের চেয়ে কম শক্তিশালী ছিল। জেরুজালেমের চেয়ে দ্বীপটি অধিক সমৃদ্ধ এবং সামন্তবাদী ছিল, তাই রাজার আরও বেশি ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল এবং হাউট কোর্ট উপেক্ষা করার সামর্থ ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামন্ত পরিবার ছিল ইবেলিনের বহু-শাখা পরিবারগুলো। তবে রাজা প্রায়শই ইতালীয় বণিকদের সাথে দ্বন্দ্ব পোষণ করতেন, বিশেষ কারণ হলো ১২৯১ সালে এক্রার পতনের পরে সাইপ্রাস আফ্রিকা এবং এশিয়ার সাথে ইউরোপীয় বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।

চতুর্দশ শতাব্দীতে জেনোসের বণিকদের এই রাজ্যটি আরও বেশি করে প্রাধান্য পায়। পাশ্চাত্যে বিবেদে সাইপ্রাস এই আশায় অ্যাভিগনন পাপাসির পক্ষে ছিল যে ফরাসিরা ইতালীয়দের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। এরপরে ১৪২৬ সালে মামেলুকরা রাজ্যটিকে একটি করদ রাজ্য বানায়; ১৪৮৯ সালে শেষ রাণী ক্যাথরিন কর্নারো দ্বীপটি ভেনিসের নিকট বিক্রি করতে বাধ্য হলে, বাকী রাজা ধীরে ধীরে ১৪৮৯ অবধি প্রায় সমস্ত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। উসমানীয়রা এরপরেই সাইপ্রাসে আক্রমণ শুরু করে এবং ১৫৭১ সালে এটি দখল করে নেয়।

শেক্সপিয়রের ওথেলোর এটি সেই ঐতিহাসিক স্থাপনা, নাটকের নাম ভূমিকার চরিত্র ভেনিশিয়ান গ্যারিসনের কমান্ডার উসমানীয়দের বিরুদ্ধে সাইপ্রাসকে রক্ষা করে।

অটোমান সাইপ্রাস[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: উসমানীয় সাইপ্রাস

১৮৭৮ সালে রুশ-তুর্কি যুদ্ধ সাইপ্রাসের উপর উসমানীয় নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটায়। এরপর সাইপ্রাস সম্মেলনের শর্তের আলোকে সাইপ্রাস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরে ১৯১৪ সালে গ্রেট ব্রিটেন একতরফাভাবে এই দ্বীপটিকে দখল না করা পর্যন্ত দ্বীপের সার্বভৌমত্ব উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বারা বজায় ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ‍লুসান চুক্তির বিধান অনুসারে তুরস্ক সাইপ্রাসের উপর সমস্ত দাবী ও অধিকার ত্যাগ করে।

ব্রিটিশ শাসনের অধীনে দ্বীপটি বর্ধিত বাক স্বাধীনতা ভোগ করে, যা গ্রীক সাইপ্রিয়টের এনোসিসের (গ্রিসের সাথে একীকরণ) ধারণাকে আরও বিকাশের সুযোগ করে দেয়।

আধুনিক সাইপ্রাস[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: সাইপ্রাসের আধুনিক ইতিহাস

এনোসিস (গ্রীসের সাথে দ্বীপের মিলন) এর জন্য সাইপ্রিয়ট বিক্ষোভ।
সাইপ্রাসের স্বাধীনতার প্রতীক স্ট্যাচু অফ লিবার্টি।

১৮৭৮ সালে সাইপ্রাস সম্মেলনের ফলস্বরূপ, যুক্তরাজ্য উসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছ থেকে একটি আশ্রিত রাজ্য হিসেবে সাইপ্রাস সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাজ্য সাইপ্রাসের দখল নেয়। ১৯২৫ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিলুপ্তির পরে সাইপ্রাসকে রাজার উপনিবেশ করা হয়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে গ্রীক সাইপ্রিয়টরা EOKA তৈরি করে এবং জর্জি গ্রিভাসের নেতৃত্বে এনোসিস (গ্রীসের সাথে দ্বীপের মিলন) আন্দোলন করে। তবে EOKA অভিযানের কারণে গ্রিসের সাথে মিলন ঘটেনি, বরং ১৯৬০ সালে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র, রিপাবলিক অফ সাইপ্রাস গঠিত হয়।

১৯৬০ সালের সংবিধানে ক্ষমতা ভাগাভাগি বা একীকরণমূলক সরকার গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়, এবং সাইপ্রাসের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং সংসদে কমপক্ষে ৩০% সদস্য তুর্কি সাইপ্রিয়ট থেকে হওয়া বাধ্যতামূলক করে তুর্কি সাইপ্রিয়ট সংখ্যালঘুদের ছাড় দেওয়া হয়। আর্চবিশপ তৃতীয় মাকারিওস রাষ্ট্রপতি হবেন এবং ডাঃ ফজল কাক উপ-রাষ্ট্রপতি হবেন। সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদ হলো পৃথক স্থানীয় পৌরসভা তৈরি করা যাতে গ্রীক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টরা বড় বড় শহরে তাদের নিজস্ব পৌরসভা পরিচালনা করতে পারে।

দ্বীপের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র লড়াইয়ে রূপান্তরিত হয়, যার ফলে ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করে; এই বাহিনী আজও বিদ্যমান আছে। ১৯৭৪ সালে গ্রীক জাতীয়তাবাদীরা গ্রীসের সামরিক জান্তার সহায়তায় একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বহুপাক্ষিক সমর্থন আদায় করতে না পেরে তুরস্ক দ্বীপের উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ করে। যুদ্ধবিরতির পর তুর্কি বাহিনী থেকে যায়, ফলে দ্বীপটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।[১১] আন্তঃসম্প্রদায় সহিংসতা, অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী আগ্রাসনের ফলে কয়েক লক্ষ সাইপ্রিয়ট বাস্তুচ্যুত হয়।[১২][১৩]

১৯৭৫ সালে উত্তর সাইপ্রাসের ডি ফ্যাক্টো রাজ্যটি সাইপ্রাসের তুর্কি সংযুক্ত রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর এটির বর্তমান নাম উত্তর সাইপ্রাসের তুর্কি প্রজাতন্ত্রতে পরিবর্তিত হয়। শুধুমাত্র তুরস্কের দ্বারা স্বীকৃত উত্তর সাইপ্রাসকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে।

২০০২ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান দ্বীপের একীকরণের জন্য আলোচনার নতুন দফা শুরু করেন। ২০০৪ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরে দ্বীপের একীকরণের জন্য একটি পরিকল্পনা উঠে আসে। ফলস্বরূপ পরিকল্পনাটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। উভয় পক্ষের জাতীয়তাবাদীরা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের জন্য প্রচারণা চালায়, ফলস্বরূপ যে তুর্কি সাইপ্রিয়টরা এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং গ্রীক সাইপ্রিওটদের সিংহভাগ এটি অপ্রত্যাখ্যান করে।

২০০৪ সালে সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার পরে, ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারী পূর্বে ব্যবহৃত সাইপ্রিয়ট পাউন্ডের পরিবর্তে ইউরোকে তার ব্যবহৃত মুদ্রা হিসাবে চালু করে; উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি লিরা ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

সাধারণ:

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Schule, William (জুলাই ১৯৯৩)। "Mammals, Vegetation and the Initial Human Settlement of the Mediterranean Islands: A Palaeoecological Approach"Journal of Biogeography2: 407। জেস্টোর 2845588ডিওআই:10.2307/2845588 
  2. "Stone Age wells found in Cyprus"BBC News। ২০০৯-০৬-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-৩১ 
  3. Wade, Nicholas, "Study Traces Cat's Ancestry to Middle East", The New York Times, June 29, 2007
  4. Walton, Marsha (এপ্রিল ৯, ২০০৪)। "Ancient burial looks like human and pet cat"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৩ 
  5. Through the Mycenaean Greek Linear B 𐀓𐀠𐀪𐀍, ku-pi-ri-jo, meaning "Cypriot" and corresponding to the later Greek form Κύπριος, Kyprios.
  6. Strange, John (১৯৮০)। Caphtor : Keftiu : a new investigation। Leiden: Brill। পৃষ্ঠা 167। আইএসবিএন 978-90-04-06256-6 
  7. Thomas, Carol G. & Conant, C.: The Trojan War, pages 121-122. Greenwood Publishing Group, 2005. আইএসবিএন ০-৩১৩-৩২৫২৬-X, 9780313325267.
  8. Andreas G Orphanides, "Late Bronze Age Socio-Economic and Political Organization, and the Hellenization of Cyprus", Athens Journal of History, volume 3, number 1, 2017, pp. 7–20
  9. C. Michael Hogan, C. Michael Hogan, Cydonia, The Modern Antiquarian, Jan. 23, 2008
  10. Flourentzos, P. (১৯৯৬)। A Guide to the Larnaca District Museum। Ministry of Communications and Works - Department of Antiquities। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 9789963364251 
  11. Danopoulos, Constantine Panos. Civil-military relations, nation building, and national identity: comparative perspectives (2004), Greenwood Publishing Group. p. 260
  12. Barbara Rose Johnston, Susan Slyomovics. Waging War, Making Peace: Reparations and Human Rights (2009), American Anthropological Association Reparations Task Force, p. 211.
  13. Morelli, Vincent. Cyprus: Reunification Proving Elusive (2011), DIANE Publishing, p. 10.

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  1. সাধারণ ইতিহাস
    • Paul W Wallace & Andreas G. Orphanides (eds.), "Sources for the History of Cyprus", vols I - XV, (Albany, NY, Greece and Cyprus Research Center, University at Albany (SUNY) 1990-2007)
    • C. D. Cobham, Excerpta Cypria: materials for a history of Cyprus (Cambridge 1908). Nice Collection of written sources.
    • D. Hunt, Footprints in Cyprus (London, Trigraph 1990).
  2. প্রাগৈতিহাসিক
    • Vassos Karageorghis, Cyprus (1969). Includes bibliography.
    • Andreas G Orphanides, "Late Bronze Age Socio-Economic and Political Organization, and the Hellenization of Cyprus", Athens Journal of History, volume 3, number 1, 2017, pp. 7–20 [১]
    • Veronica Tatton-Brown, Cyprus BC: 7000 years of history (London, British Museum 1979).
    • Stuart Swiny, Earliest Prehistory of Cyprus (American School of Oriental Research 2001) আইএসবিএন ০-৮৯৭৫৭-০৫১-০
    • J. M. Webb/D. Frankel, "Characterising the Philia facies. Material culture, chronology and the origins of the Bronze Age in Cyprus" in American Journal of archaeology 103, 1999, 3-43.
    • S. Gitin/A. Mazar/E. Stern (eds.), Mediterranean peoples in transition, thirteenth to early 10th century BC (Jerusalem, Israel exploration Society 1998). Late Bronze Age and transition to the Iron Age.
    • J. D. Muhly, "The role of the Sea People in Cyprus during the LCIII period. In: Vassos Karageorghis and J. D. Muhly (eds.), Cyprus at the close of the Bronze Age (Nicosia 1984), 39-55. End of Bronze Age
  3. সর্বোত্তম সময়কাল, উৎস
    • Paul W Wallace & Andreas G Orphanides (eds.), "Sources for the History of Cyprus: Greek and Latin Texts to the Third Century A.D.", vol. I, (Nicosia, The Institute of Cypriot Studies, University at Albany (SUNY) & Cyprus College 1990)[২]
    • Herodotus, "The Histories"
    • Isocrates, "Nicocles"
    • Diodorus Siculus, "Bibliothiki" (Library)
    • Arrian, "The Campaigns of Alexander the Great"
    • T. Bekker-Nielsen, The Roads of Ancient Cyprus. Copenhagen: Museum Tusculanum 2004. * [১]
  4. মধ্যযুগে
  5. ইতিহাস, বিশ শতক
    • C. Spyridiakis, The education policy of the English government in Cyprus (1878–1954).
    • C. Spyridiakis, A brief history of Cyprus.
  6. পৌরাণিক কাহিনীসমূহ

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]

  1. <https://www.academia.edu/30822917/Andreas_G._Orphanides_Late_Bronze_Age_Socio-Economic_and_Political_Organization_and_the_Hellenization_of_Cyprus_Athens_Journal_of_History_volume_3_number_1_2017_pp._7-20>
  2. <https://www.academia.edu/10335676/Paul_W._Wallace_and_Andreas_G._Orphanides_Sources_for_the_History_of_Cyprus_Greek_and_Latin_Texts_to_the_Third_Century_A.D._Volume_I>